কেন্দ্রীয় আইন মন্ত্রকের দায়িত্ব পাচ্ছেন বর্ষীয়াণ কংগ্রেস নেতা কপিল সিব্বল। রেলমন্ত্রকের অতিরিক্ত দায়িত্বভার দেওয়া হচ্ছে সি পি যোশীকে। অশ্বিনী কুমারের পদত্যাগের পর আইনের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রকের দায়িত্ব সিব্বলের মতো অভিজ্ঞ হাতেই তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল কংগ্রেস। সেই সঙ্গে পবন বনসলের জায়গায় যোশীকে বসিয়ে আপাতত কাজ চালানোর ব্যবস্থা করছে কেন্দ্র। এমনটাই মত রাজনৈতিক মহলের। আগামী সপ্তাহেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার রদবদল। তার আগে পর্যন্ত অস্থায়ী ভাবে মন্ত্রক সামলাবেন দু'জন। গতকাল রাতেই প্রধানমন্ত্রীকে ইস্তফা দিয়েছেন অশ্বিনী কুমার ও পবন বনসল।
শুক্রবার সন্ধেই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছিলেন কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী। তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ৭ রেস কোর্স রোডে পৌঁছন রেলমন্ত্রী পবন বনসল ও কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী অশ্বিনী কুমার। প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন থেকে বেড়িয়ে আসার পথেই ইশারায় বনসল বুঝিয়ে দেন, মন্ত্রিত্ব খুইয়েছেন তিনি। পরে তিনি সাংবাদিকদের জানান, "হ্যাঁ, আমি ইস্তাফা দিয়েছি।" কংগ্রেস সূত্রে জানা গিয়েছে, পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন অশ্বিনী কুমারও। তবে দুই মন্ত্রীর ইস্তফা নিয়ে সরকারি ভাবে এখনও কেউই মুখ খোলেননি।
বিরোধীদের একটানা চাপের মুখেও ক্যাবিনেটের দুই গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীর পাশেই ছিল সরকার। কিন্তু সোনিয়া গান্ধী কখনই দলের ভাবমূর্তির সঙ্গে আপোষ করতে চাননি। ফলেই কোপ পড়ল পবন-অশ্বিনীর মন্ত্রকে। এমনই ব্যাখ্যা রাজনৈতিক মহলের।
সতর্কতা! ধেয়ে আসছে `মহাসেন`। না, নতুন কোনও চিটফান্ড মালিকের হদিশ নয়। এই সেন মহাশয় হলো ঘূর্ণিঝড় মহাসেন। বৃহস্পতিবার মায়ানমার-বাংলাদেশ উপকূলে আছড়ে পড়ার কথা ঘুর্ণিঝড় `মহাসেন`। এমনই জানাল আলিপুর আবহাওয়া দফতর।
এর জেরে মঙ্গলবার গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা দিয়েছেন আবহাওয়া দফতর।
তবে বড় কোনও ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনে নেই এ রাজ্যে। তবে আশার খবর, সোমবার থেকেই কমবে তাপমাত্রা। মেঘলা আকাশ থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। মহাসেনের আগমনে আন্দামান উপকূলে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে রাজ্যের উপকূলকেও।
সারদা কাণ্ডের পিছনে চক্রান্ত রয়েছে বলে অভিযোগ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর দাবি, মে মাসে পঞ্চায়েত ভোট হবে ধরে নিয়ে, সিপিআইএম এবং কংগ্রেসই এই কাণ্ড ঘটিয়েছে। পরিকল্পিত ভাবেই রাজ্যের বড় অংশের মানুষকে বিপদে ফেলা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
চিটফান্ড নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধীদের কার্যত একহাত নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বর্ধমানের উত্সব ময়দানে বিকেল পাঁচটায় এই সভা হয়। চিটফান্ড নিয়ে সরকারের এটি তৃতীয় সভা। এর আগে শ্যামবাজার এবং পানিহাটিতে জনসভা করেন মুখ্যমন্ত্রী।
সারদা কেলেঙ্কারির পিছনে সিপিএম-কংগ্রেসের হাত দেখছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ বর্ধমানের সভা থেকে বিরোধীদের খোঁচা দিয়ে তাঁর প্রশ্ন, পরিকল্পিতভাবেই কি সারদা কেলেঙ্কারি?
সারদাকাণ্ডকে ঘিরে উত্তাল রাজ্য রাজনীতি৷ শাসক-বিরোধীরা, একে অপরের বিরুদ্ধে লগ্নি সংস্থার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার অভিযোগকে হাতিয়ার করে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে চাইছে৷ এই পরিস্থিতিতে শুক্রবার বর্ধমানের সভা থেকে সারদাকাণ্ডে বিরোধীদের নতুন অস্ত্রে বিঁধলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ তাঁর অভিযোগ, সারদা কেলেঙ্কারির পিছনে সিপিএম-কংগ্রেস পরিকল্পিত চক্রান্ত রয়েছে৷
সারদাকাণ্ডে বিরোধীরা সিবিআই তদন্তের দাবিতে সরব৷ অন্যদিকে, সিবিআই তদন্তে রাজি নয় শাসক দল৷ এই পরিস্থিতিতে, কয়লাকাণ্ডের তদন্তে সুপ্রিম কোর্টের সিবিআই- ভর্তসনাকে হাতিয়ার করলেন মুখ্যমন্ত্রী৷ পাশাপাশি, নন্দীগ্রাম, নেতাই, ছোট আঙারিয়াকাণ্ডের কথা তুলে ধরে কেন সিবিইয়ের উপর ভরসা রাখতে পারছেন না, সেই ব্যাখ্যাও দিলেন৷
লগ্নি সংস্থাগুলির সঙ্গে সিপিএমের ঘনিষ্ঠতার অভিযোগের স্বপক্ষে এ দিনের জনসভাতেও বেশ কিছু তথ্য-প্রমাণ তুলে ধরেন মমতা৷ সেই সঙ্গে তিনি জানান, কোন কোন রাজনৈতিক দলের কটা ট্রাস্ট, এনজিও রয়েছে, তা নিয়ে সরকার তদন্ত শুরু করেছে৷
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের ব্যাখ্যা, বিরোধীরা যেমন সারদাকাণ্ডকে হাতিয়ার করে সরকারকে চাপে ফেলতে চাইছে, তেমনই বিরোধীদের সঙ্গে লগ্নি সংস্থার ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ তুলে এবং তদন্তের কথা বলে তাদের পাল্টা চাপে ফেলার কৌশল নিয়েছে শাসক দলও৷
http://www.abpananda.newsbullet.in/state/34-more/36571-2013-05-11-04-17-19
মেজাজ হারিয়ে কু-কথা মমতার মুখে
বর্ধমান: পানিহাটির জনসভাতেই কেন্দ্রে পরিবর্তনের ডাক দিয়েছিলেন৷ শুক্রবার বর্ধমানের সভায় 'বাংলা বনাম দিল্লির যুদ্ধ'ই ঘোষণা করে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ দিল্লির কংগ্রেস সরকারকে সরাসরি যুদ্ধে নামার ডাক দেওয়ার পাশাপাশি দেশের সমস্ত আঞ্চলিক দলকে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে একজোট করে দিল্লির তখত বদলে দেওয়ারও হুঁশিয়ারি দিলেন চড়া সুরে৷ মমতার ঘোষণা, 'যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় অনধিকার চর্চা করছে কেন্দ্র৷ আমি যদি সত্যি বাংলার মেয়ে হই, আগামী দিনে দিল্লি বদলাবই৷ দিল্লি কারও কেনা জায়গা নয়৷ সবাইকে এগিয়ে দেব৷ আমি পিছনের সারিতে থাকব৷'
সারদা-কেলেঙ্কারির জেরে মা-মাটি-মানুষের নেত্রীকে খানিক বিচলিত দেখালেও মুখে হাওড়া উপ-নির্বাচন বা পরবর্তী পঞ্চায়েত ভোটকে নিজের 'অগ্নিপরীক্ষা' বলে মানতে রাজি নন তৃণমূল নেত্রী৷ তাঁর মন্তব্য, 'আমার বার বার অগ্নিপরীক্ষা দেওয়ার দরকার নেই৷ সীতাকে এক বার অগ্নিপরীক্ষা দিতে হয়েছিল৷ আমি কিন্ত্ত চৌত্রিশ বছর ধরে অগ্নিপরীক্ষা দিয়ে এসেছি৷' কিন্ত্ত সামনের ভোট যে তাঁকে ভাবাচ্ছে--গোপন থাকেনি মমতার কথাতেই৷ খানিক স্বতঃপ্রণোদিত হয়েই তাঁর মন্তব্য, 'হাওড়ায় ৮৪ ব্যাটেলিয়ন আধাসেনা পাঠিয়েও লাভ নেই৷ খেতে দেব, বসতে দেব৷ ভোটটা কিন্ত্ত তোমরা পাবে না কংগ্রেস-সিপিএম! মনে রেখো বাহিনী দিয়ে ভোট হয় না৷' এই মন্তব্য যাঁর, সেই তিনিই কিন্ত্ত অতীতে কেন্দ্রীয় বাহিনী তো বটেই এমনকি রাজ্যে ৩৫৬ ধারা জারি করে রাষ্ট্রপতি শাসনে ভোট করারই দাবি তুলতেন৷ মুখ্যমন্ত্রীর ভাষণে আধাসেনার প্রসঙ্গ পঞ্চায়েত ভোটের নিরাপত্তা নিয়ে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আইনি লড়াইয়ে তাঁর সরকারের পরাজয়জনিত উদ্বেগেরই প্রকাশ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল৷ প্রসঙ্গত, কমিশনের দাবি মেনেই শুক্রবার হাইকোর্ট জানিয়েছে, কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপস্থিতিতেই পঞ্চায়েত ভোট করতে হবে৷
সারদা-কেলেঙ্কারির তদন্ত সিবিআইয়ের হাতে যাবে কি না--তা জানতেও সব মহল তাকিয়ে এখন হাইকোর্টেরই দিকে৷ সরকার সিবিআই চায় না৷ মঙ্গলবার রায় জানাতে পারে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ৷ সে নিয়েও উদ্বেগের চোরাস্রোত গোপন থাকেনি মুখ্যমন্ত্রীর ভাষণে৷ শ্যামবাজার, পানিহাটির পর বর্ধমানেও এটাই শুধু প্রমাণ করতে চেয়েছেন যে, লগ্নি-কেলেঙ্কারি সিপিএম এবং কংগ্রেস শাসিত রাজ্যগুলিকেও স্পর্শ করেছে৷ বার বার অসম, ত্রিপুরা, উত্তরাখণ্ডের উদাহরণ টানা নিজেদের দোষ গোপনেরই মরিয়া চেষ্টা বলে যদিও কটাক্ষ করেছে বিরোধীরা৷ মুখ্যমন্ত্রী এ দিন আবার এমন তত্ত্বও দিয়েছেন যে, 'মে মাসে পঞ্চায়েত ভোট ঠেকাতেই এই সময়েই চিট-ফান্ড চক্রান্ত তৈরি করা হয়েছে৷'
লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস এবং সিপিএমের ফের সমঝোতা হবে বলে আগে থেকেই প্রচার শুরু করেছিলেন মমতা৷ বৃহস্পতিবার বাম প্রতিনিধিদলকে প্রধানমন্ত্রী আলাদা সময় দেওয়ায় আরওই চটেছেন তিনি৷ তাই কথাবার্তাও খানিক অসংলগ্ন হয়েছে এ দিন৷ সেটা এতটাই যে, সিপিএম নেতাদের 'কানা, খোঁড়া, বোবা, ল্যাঙড়া' বলেও বিদ্রুপ করেছেন৷ তবে শারীরিক প্রতিবন্ধীদের অনুভূতিতে আঘাত লাগতে পারে বিবেচনায় পরমুহূর্তেই ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টায় বলেছেন, 'আমি মস্তিষ্কের প্রতিবন্ধকতার কথা বলতে চেয়েছি৷'
দুর্নীতির অভিযোগের নৈতিক দায় মাথায় নিয়ে শুক্রবারই ইস্তফাপত্র পেশ করেছেন রেলমন্ত্রী পবনকুমার বনশল এবং আইনমন্ত্রী অশ্বিনী কুমার৷ পবনকুমার যখন ৭ নম্বর রেসকোর্সে মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় ব্যস্ত তখনই বর্ধমানের মঞ্চে কয়লা-দুর্নীতি নিয়ে একাধারে প্রধানমন্ত্রী এবং ইউপিএ চেয়ারপার্সন সনিয়া গান্ধীর বিরুদ্ধে গর্জন করেছেন মমতা৷ কারও নাম না-করেই তাঁর কটাক্ষ, 'চোর-ডাকাতের সরকার৷ কোলগেট কেলেঙ্কারির নায়ক-নায়িকারা৷' কিন্ত্ত ঠিক এখানেই প্রশ্ন উঠছে, দুর্নীতির অভিযোগে দুই হেভিওয়েট কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে যদি গদি ছাড়তে বলতে পারেন কংগ্রেস নেতৃত্ব, তা হলে সারদা-কেলেঙ্কারিতে কলঙ্কিত তৃণমূল সাংসদ ও মন্ত্রীরা বহাল তবিয়তে থেকে যান কী করে?
সিবিআই-সহ কেন্দ্রীয় বাহিনীকে হাতিয়ার করে তাঁকে ও তাঁর দলকে কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা করছে কংগ্রেস৷ কিন্তু কোনও লাভ হবে না৷ বর্ধমানের সভা থেকে এ ভাবেই সুর চড়ালেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ ফের ডাক দিলেন কেন্দ্রে পরিবর্তনের৷
৪ মে পানিহাটির সভা থেকে কেন্দ্র তথা কংগ্রেসের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ শুক্রবার বর্ধমানের সভা থেকে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আরও সুর চড়িয়ে সর্বাত্মক লড়াইয়ের ডাক দিলেন তৃণমূলনেত্রী৷ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বঞ্চনার অভিযোগে সরব মমতা৷ একাধিকবার তিনি অভিযোগ করেছেন, কেন্দ্র চক্রান্ত করে রাজ্যকে ভাতে মারার চেষ্টা করছে৷ এদিন তাঁর দাবি, কেন্দ্রের চক্রান্ত ব্যর্থ করে রাজ্য উন্নয়নের পথে হাঁটছে৷ এটা সহ্য করতে না পেরে, সিবিআই-সহ একাধিক কেন্দ্রীয় সংস্থাকে কাজে লাগিয়ে তাঁকে ও তাঁর দল তৃণমূলকে কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা করছে কংগ্রেস৷ মুলায়ম, মায়াবতী, জয়ললিতার মতো তাঁকেও এক পংক্তিতে বসাতে চাইছে তারা৷ কিন্তু এসব চক্রান্ত করে কোনও লাভ হবে না বলে হুঁশিয়ারি দেন মুখ্যমন্ত্রী৷ বলেন, মুলায়ম, মায়াবতীর মতো আমাদের কেশাগ্র স্পর্শ করতে পারবে না ওরা৷।
এদিন ফের কেন্দ্রে পরিবর্তনের ডাক দেন মুখ্যমন্ত্রী৷ তাঁর অভিযোগ, শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, অকংগ্রেসি অনেক রাজ্যের বিরুদ্ধেও চক্রান্ত চালাচ্ছে কংগ্রেস৷ এই সব অকংগ্রেসি রাজ্যগুলিকে একত্রিত হওয়ার আর্জি জানিয়ে কেন্দ্র থেকে কংগ্রেস সরকারকে উত্খাত করার এ দিন ডাক দেন মুখ্যমন্ত্রী৷ বলেন, এজন্য সব ছোট দলকে জোট বাঁধতে হবে৷
সারদাকাণ্ডে বিরোধীরা সিবিআই তদন্তের দাবিতে সরব৷ আবার, কয়লাকাণ্ডের তদন্তে সেই সিবিআইকেই তীব্র ভর্ত্সনা করেছে সুপ্রিম কোর্ট৷ এই পরিস্থিতিতে এ দিন তাত্পর্যপূ৪ণ ভাবেই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সিবিআইকে ব্যবহার করার অভিযোগে সরব হন মুখ্যমন্ত্রী৷ একইসঙ্গে, কেন্দ্রের কংগ্রেস সরকার নানা কারণে তাঁকে অপদস্থ করার খেলায় মেতেছে এই অভিযোগে শুধু সরব হলেন না, তিনি যে এর শেষ দেখে ছাড়বেন, পাল্টা সেই হুঁশিয়ারিও দিয়ে রাখলেন মমতা৷ এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক মহল৷
http://www.abpananda.newsbullet.in/state/34-more/36565-2013-05-10-16-15-34
চ্যালেঞ্জ জানিয়ে উচ্চতর বেঞ্চে যাওয়ার প্রস্তুতি | ||||||
অরুণোদয় ভট্টাচার্য • কলকাতা | ||||||
রাজ্য নির্বাচন কমিশন ১। রাজ্য সরকার ০। পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে প্রথম পর্বের লড়াই শেষে এটাই ফল। শুক্রবার পঞ্চায়েত মামলায় অন্তর্বর্তী রায় দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। বিচারপতি বিশ্বনাথ সমাদ্দার তাঁর এই রায়ে সব দিক থেকে কমিশনের আর্জি মেনে নিয়েছেন। যে চারটি বিচার্য বিষয় ছিল (নিরাপত্তা বাহিনী, পর্যবেক্ষক, অর্থের ব্যবস্থা ও জেলা বিন্যাস), তার সব ক'টিতেই কমিশনকে এগিয়ে রাখা হয়েছে। রায়ে বলা হয়েছে, আজ, শনিবারের মধ্যে রাজ্যকে পর্যবেক্ষকের সংখ্যা জানাতে হবে। একই ভাবে কমিশনের
রাজ্য সরকারের সব দাবিই নস্যাৎ হয়ে গিয়েছে এ দিনের রায়ে। তাদের বক্তব্য ছিল, ভোটের দিন ঘোষণার দায়িত্ব তাদের। সেইমতো জেলাবিন্যাসও তারাই করে দেবে। কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রশ্নে অর্থ সঙ্কটের যুক্তি দিয়েছিল রাজ্য। আরও বলেছিল, রাজ্যের সশস্ত্র পুলিশ দিয়ে ভোট করানো সম্ভব। প্রয়োজনে ভিন রাজ্যের পুলিশও আনা যেতে পারে। এ দিনের রায় থেকে স্পষ্ট, এর কোনওটিই মানেননি বিচারপতি। তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, রাজ্যে তিন দফায় পঞ্চায়েত নির্বাচন হবে। অবাধ নির্বাচনের জন্য কমিশনকে কেন্দ্রীয় বাহিনী-সহ অন্য সব পরিকাঠামোগত সাহায্য দেবে রাজ্য সরকার। রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে কমিশনই নির্বাচনের দিন ঠিক করবে। কোন জেলায় কবে ভোট হবে সেটাও ঠিক করবে নির্বাচন কমিশন। রাজ্য সরকার শুধু ভোটের দিন ঘোষণা করবে। রাজ্য যে সাংবিধানিক সঙ্কট এড়াতে ১০ জুনের মধ্যে ভোট করানোর কথা বলছিল, তার উল্লেখ করে বিচারপতি এখনই উদ্যোগী হতে বলেছেন রাজ্যকে। আজ, শনিবারের মধ্যে পর্যবেক্ষক ও কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে তথ্য জানাতে নির্দেশ দিয়েছেন। বলেছেন, হাইকোর্ট চায়, সাংবিধানিক সঙ্কট এড়াতে জুনের মধ্যেই রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোট হোক।
এই মন্তব্য থেকে অনেকে মনে করছেন, ডিভিশন বেঞ্চে হেরে গেলে রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টে যাবে। আর ডিভিশন বেঞ্চ যদি বিচারপতি বিশ্বনাথ সমাদ্দারের এ দিনের রায় খারিজ করে দেয়? তা হলে কমিশনও যে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হবে, সেই ইঙ্গিতও মিলেছে কমিশন সূত্রে। অর্থাৎ, পঞ্চায়েত মামলা নিয়ে জল এখনও বহু দূর গড়াবে বলেই মনে করা হচ্ছে। ফলে জুন মাসের মধ্যে পঞ্চায়েত ভোট হবে কি না, তাই নিয়ে সংশয়ে পঞ্চায়েত দফতর। জুনেই শেষ হচ্ছে পঞ্চায়েতগুলির মেয়াদ। তার পরে সেগুলি কী ভাবে চলবে, সে ব্যাপারে রাজ্য সরকারের পরবর্তী নির্দেশের অপেক্ষায় রয়েছে দফতর। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, রাজ্য সরকার যদি এই রায়কে সোমবার চ্যালেঞ্জ জানানোই মনস্থ করে ফেলে, তা হলে কি তারা আজ, শনিবার
নির্বাচন কমিশনের স্বাভাবিক ভাবেই খুশির ছবি। কমিশন সূত্রে জানানো হয়েছে, তারা রায়ে খুশি। রায় দিতে গিয়ে বিচারপতি সমাদ্দার প্রতিটি পর্যায়ে যে ভাবে নির্বাচন কমিশনের দাবির যর্থাথতা বর্ণনা করেছেন, তাতে ডিভিশন বেঞ্চেও ফল তাদের পক্ষেই যাবে বলে কমিশন সূত্রে আশা প্রকাশ করা হয়েছে। এ দিন রায়ে কী বলেছেন বিচারপতি সমাদ্দার? বলেছেন, নির্বাচন পরিচালনা, নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলারক্ষার ব্যবস্থা, নিয়ন্ত্রণ, এ সবই রাজ্য নির্বাচন কমিশনের এক্তিয়ারভুক্ত। এখানে রাজ্য সরকারের হস্তক্ষেপের কোনও অবকাশ নেই। নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ, অরাজনৈতিক ও সাংবিধানিক সংস্থা। বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, "আইনশৃঙ্খলা রাজ্যের এক্তিয়ার ঠিকই। কিন্তু ভোটের সময় তা রাজ্য সরকারের হাতে ছাড়া যায় না। মনে রাখতে হবে, সরকার পরিচালনা করে রাজনৈতিক দল। সব রাজনৈতিক দলেরই লক্ষ্য থাকে ভোটে জেতা। নির্বাচন যদি রাজ্য সরকার পরিচালনা করে, তা হলে তা নিরপেক্ষ হওয়া সম্ভব নয়। তাই নির্বাচন কমিশনের প্রয়োজন।" আর সে জন্যই কোন বাহিনী কত সংখ্যায় ব্যবহার করবে, সেটা গোটাটাই কমিশনের নিজস্ব সিদ্ধান্ত বলে জানিয়ে দেন তিনি। হাইকোর্ট আরও জানিয়েছে, পর্যবেক্ষকও কমিশনই ঠিক করবে। কমিশন রাজ্য সরকারের কাছে চারশো পর্যবেক্ষকের নাম চেয়েছিল। রাজ্য সরকার ২৬০ জনের নাম দেয়। এ দিন রায়ে বলা হয়েছে, আজ শনিবারেই রাজ্য সরকারকে বাকি পর্যবেক্ষকদের নাম কমিশনের কাছে পাঠিয়ে দিতে হবে। কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে অর্থ সঙ্কটের যুক্তিও দিয়েছিল রাজ্য সরকার। রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল বিমল চট্টোপাধ্যায় প্রথমে জানান, ভোটের টাকা দিতে অসুবিধা হবে না। পরে বলেন, রাজ্যের আর্থিক সঙ্কট চলছে। এই অবস্থায় ৮০০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী আনতে হলে বিশাল টাকা খরচ হবে। নির্বাচনের জন্য রাজ্য সরকার কমিশনকে এ পর্যন্ত ১০০ কোটি টাকা দিয়েছে। বলা হয়েছিল, ২০৯ কোটি টাকা দেওয়া হবে। বিচারপতি এই বিষয়ে বলেন, গণতন্ত্রের মূল বিষয় হল, সকলে যাতে নির্ভয়ে নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন। আর্থিক সঙ্কটের জন্য এই গণতান্ত্রিক অধিকারের সঙ্গে আপস করা যায় না। এর পরেই বলা হয়, ক'দফায় ভোট হবে, জেলা বিন্যাস কী হবে, সব ঠিক করবে কমিশন। কমিশন ভোট পরিচালনা করবে, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার দিন থেকে ফল ঘোষণার পর বেশ কিছু দিন পর্যন্ত রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা তাদের দায়িত্বে থাকবে। দেশের ভোট করতে জাতীয় নির্বাচন কমিশনকে যে ক্ষমতা দিয়েছে সংবিধান, একই ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে রাজ্য কমিশনকেও। গণতন্ত্র রক্ষার স্বার্থে তাই তারাই পঞ্চায়েত নির্বাচন পরিচালনার শেষ কথা বলবে। | ||||||
পুরনো খবর: কমিশন-সরকার আইনি কাজিয়ায় যবনিকা কাল |
পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চের রায়কে ডিভিশন বেঞ্চে চ্যালেঞ্জ জানাতে চলেছে রাজ্য সরকার৷ সারদাকাণ্ডের জেরে এখন তৃণমূল কংগ্রেস পঞ্চায়েত ভোটে যেতে চাইছে না বলেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে দাবি বিরোধীদের৷ যদিও সঠিক সময়েই ভোট হবে বলে বর্ধমানে মন্তব্য করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷
পঞ্চায়েত-যুদ্ধের প্রথম রাউন্ডে জয়ী রাজ্য নির্বাচন কমিশন৷ সিঙ্গল বেঞ্চে হারের পর এবার ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হচ্ছে রাজ্য সরকার৷ কিন্তু সরকারের এই পদক্ষেপ ঘিরে রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠছে৷ অনেকেই বলছেন, কলকাতা হাইকোর্টে সিঙ্গুর মামলায় ধাক্কা খাওয়ার পর সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে এখনও কোনও সুরাহা হয়নি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের৷ উল্টে সিঙ্গুরের কৃষকদের মধ্যে অসন্তোষ পুঞ্জীভূত হতে শুরু করেছে৷ তাহল একই পথে হেঁটে কেন পঞ্চায়েত ইস্যুতেও সিঙ্গল বেঞ্চের রায় না মেনে ফের ডিভিশন বেঞ্চে যাচ্ছে রাজ্য সরকার? কেন পঞ্চায়েত নির্বাচন বিলম্বিত হতে পারে জেনেও এই সিদ্ধান্ত নিল তারা?
সরকারের এই সিদ্ধান্তের নেপথ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক বাধ্যবাধ্যকতাই মূল কারণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা৷ বিরোধীদের দাবি, সারদা কেলেঙ্কারির পর যে রাজনৈতিক আবহ তৈরি হয়েছে, তাতে এখনই পঞ্চায়েত ভোট হলে সমস্যায় পড়বে তৃণমূল৷ তাই ভোটে যেতে চাইছে না তারা৷ সিপিএম নেতা গৌতম দেব বলেছেন, লোকসভা নির্বাচনের আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পঞ্চায়েত ভোটে যেতে চাইবেন না।
যদিও, মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, সঠিক সময়েই ভোট হবে৷তিনি বলেছেন, রাজ্যের বিরোধীদলগুলি ভোট আটকাতে চেয়েছে। তাই কোর্টে গেছে।কিন্তু তাঁরা সঠিক সময়েই নির্বাচন চেয়েছেন।
কিন্তু, এই সঠিক সময়টা কার জন্য সঠিক? তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে রাজনৈতিক মহলে৷
লগ্নি কেলেঙ্কারিতে শাসক দলের একাধিক সাংসদ-মন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে৷ প্রায় প্রতিদিনই উঠে আসছে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পাল্টা আক্রমণের পথে হাঁটলেও তৃণমূলের একাংশের বিরুদ্ধে সারদা ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ কিন্তু ক্রমেই জোরালো হচ্ছে৷ রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, তহবিল গড়ে, কমিশন তৈরি করে, আইন প্রণয়ন করে আমানতকারীদের ক্ষোভ প্রশমনে মুখ্যমন্ত্রী উদ্যোগ নিলেও তা যে এখনই আগুনে জল ঢালতে পারছে না, তা বুঝতে পারছে তৃণমূল নেতৃত্ব৷ তাদের চিন্তা আরও বেড়ে গিয়েছে, কারণ ব্যাঙ্গচিত্রকাণ্ড কিংবা ত্রিফলা কেলেঙ্কারির মতো বিষয়গুলির প্রভাব মূলত শহুরে এলাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও, এই প্রথম এমন একটা সমস্যা তৈরি হয়েছে যার মূল প্রভাব গ্রামীণ এলাকায়৷ সারদা-কাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্থ কয়েক কোটি গ্রামীণ মানুষ৷ যাঁদের সিংহভাগই তৃণমূলের কর্মী কিংবা সমর্থক৷ আর তাতেই তৃণমূল নেতৃত্ব প্রমাণ গুনেছে বলে মত রাজনৈতিক মহলের৷ কারণ, পেটে টান পড়লে দলীয় আনুগত্য কাজে আসে না৷ সিঙ্গুরকাণ্ডের পর জমিতে হাত পড়ার আশঙ্কায় বাংলা জুড়ে গ্রামীণ ভোটারদের বড় অংশ সিপিএমের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল৷ একইভাবে সারদাকাণ্ডে সর্বস্ব হারানো মানুষগুলোর রাগও তাদের ওপর পড়তে পারে, এই আশঙ্কা এখন তৃণমূল নেতৃত্বের মনে কাজ করছে বলে মত রাজনৈতিক মহলের৷ তারা বুঝতে পারছে, এখনই পঞ্চায়েত ভোট হলে ফল বেগতিক হতে পারে৷ তাই সারদাকাণ্ডের রেশ মানুষের মন থেকে কিছুটা ফিকে হয়ে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে চাইছে তারা৷ সম্ভবত সেজন্যই পঞ্চায়েত ভোট পিছিয়ে দিতে সিঙ্গল বেঞ্চের রায়ের বিরুদ্ধে রাজ্য সরকার ডিভিশন বেঞ্চে যাচ্ছে বলেই মত রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের৷
http://www.abpananda.newsbullet.in/state/34-more/36573-2013-05-11-05-54-47
ভোট পিছোতেই মরিয়া মুখ্যমন্ত্রী, সুর চড়িয়ে তোপ বিরোধীদের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা ও নয়াদিল্লি |
কেন্দ্রীয় বাহিনীর তত্ত্বাবধানে তিন দফায় পঞ্চায়েত ভোট চেয়ে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের অবস্থানের পক্ষেই সওয়াল করে আসছিল বিরোধী শিবির। কলকাতা হাইকোর্ট কমিশনের বক্তব্য সমর্থন করায় নিজেদের যুক্তির জয়ই দেখছে বিরোধীরা। উপরন্তু, সরকারকে নিশানা করার আরও হাতিয়ার শুক্রবার হাতে পেয়েছে তারা। কারণ, রাজ্য সরকার হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চের রায়ের বিরুদ্ধে ডিভিশন বেঞ্চে যাওয়ার কথা বলেছে। তাতে বিরোধীরা আরও সরব হতে পারছে এই বলে যে, রাজ্য সরকার শুধু পঞ্চায়েত ভোট পিছোতেই চায়! আদালতের বক্তব্য জানার পরে প্রায় এক সুরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার তথা শাসক দলকে আক্রমণ করেছে সিপিএম এবং কংগ্রেস। দু'দলেরই বক্তব্য, সময়ে পঞ্চায়েত ভোট না-হলে রাজ্যের উন্নয়নের কাজ থমকে যাবে। কিন্তু শাসক দল কিছুতেই পঞ্চায়েত ভোটের মুখোমুখি হতে চাইছে না। বিশেষত, এখন সারদা-কাণ্ডের পরে রাজ্য সরকার সিঙ্গল থেকে ডিভিশন বেঞ্চ, সেখান থেকে সুপ্রিম কোর্ট এই ভাবে আরও কালক্ষেপ করতে চাইবে বলে বিরোধীদের অভিযোগ। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য গৌতম দেবের অভিযোগ, ফল খারাপের ভয়ে লোকসভা ভোটের আগে পঞ্চায়েত নির্বাচন করতে চান না মমতা। আর রেল প্রতিমন্ত্রী তথা কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরীর কটাক্ষ, "রাজ্য সরকার বলছে ডিভিশন বেঞ্চে যাবে। এখন এক কান কাটা গিয়েছে। ডিভিশন বেঞ্চে হেরে দু'কান কাটা যাবে!" বস্তুত, শাসক শিবির হাইকোর্টের রায়কে ডিভিশন বেঞ্চে চ্যালেঞ্জ করার ঘোষণা করার আগেই সর্বভারতীয় কংগ্রেসে পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা শাকিল আহমেদ বলে দিয়েছিলেন, "চিট ফান্ড নিয়ে যে অরাজক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে এবং রাজ্যের বিরুদ্ধে অনাস্থা তৈরি হয়েছে, তাতে মমতা কোনও ভাবেই চান না এখন পঞ্চায়েত নির্বাচন হোক। তাই উনি যেন তেন ভোটটা পিছিয়ে দিতে চাইছেন, এটা বুঝতে কোনও রকেট বিজ্ঞানের প্রয়োজন নেই!" দিল্লিতে এ দিন পলিটব্যুরো বৈঠকের ফাঁকে হাইকোর্টের রায় জানার পরে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু বলেছেন, "রাজ্য সরকার পঞ্চায়েত ব্যবস্থাটাকেই কালিমালিপ্ত করে নষ্ট করে দিতে চেয়েছিল। আশা করব, এ বার শুভবুদ্ধি জাগ্রত হবে! নতুন সরকারের প্রায় দু'বছর হয়ে গেল। এখনও তারা বুঝে উঠতে পারল না, কী করে সরকার চালাতে হয়!" সিপিএমের তরফে গৌতমবাবুর আরও সংযোজন, "পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় যুক্তি দিচ্ছেন, ভোটের দিন ঘোষণা না-হলে কী ভাবে তাঁরা কেন্দ্রীয় বাহিনী চাইবেন? সে ক্ষেত্রে রাজ্য সরকার ডিভিশন বেঞ্চে না গিয়ে এই বিচারপতিকেই বলতে পারত, আপনি পঞ্চায়েতের দিন ঘোষণার জন্য কমিশনকে নির্দেশ দিন। আসলে সুব্রতবাবুও জানেন, মমতা পঞ্চায়েত ভোট করতে চাইবেন না! বিশেষত সারদা-কাণ্ডে গ্রামাঞ্চলে তৃণমূলের বিরুদ্ধে যে জনমত সৃষ্টি হয়েছে, তাতে ভোট করলে বহু জায়গায় তাদের ফল খারাপ হবে।" প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্যের বক্তব্য, "ভোট ঠিক সময়ে না-করার জন্য প্রথম থেকেই রাজ্য সরকার নানা কৌশল নিয়েছে। ভোট করার সদিচ্ছা নেই বলেই কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রয়োজনীয়তা মেনে নিচ্ছে না তারা।" পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে আদালতে নিজেরাই মামলা করেছিল বিজেপি। দলের রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ তাই এ দিন বলেছেন, "আমাদের কথার সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে আদালতের রায়ে। শুরু থেকেই বুঝতে পারছিলাম, তৃণমূল নির্বাচন পিছোতে চায়। যা আশঙ্কা ছিল, সুব্রতবাবুর ঘোষণা থেকে সেটাই সত্য হল!" http://www.anandabazar.com/11raj3.html |
সরকারের মাথায় কোটি টাকা ঋণের বোঝা। বিভিন্ন সময়ে এই নিয়ে সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু সেই আর্থিক সংকটের কোনও ছাপই পড়েনি সরকারের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে। ঢালাও বিজ্ঞাপন, স্টল বা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বাবদ খরচ হচ্ছে কোটি কোটি টাকা। বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানের বিপুল খরচের যৌক্তিকতা নিয়েই দেখা দিয়েছে প্রশ্ন।
কোষাগারে টাকা নেই। একই সঙ্গে আর্থিক বঞ্চনার অভিযোগে একাধিকবার কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অর্থ সংকটের মোকাবিলায় নিজের আঁকা ছবি বিক্রি করে টাকা তোলার পথও বেছে নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। আর্থিক সংকটের এই কঠিন পরিস্থিতিতেই সরকারের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে জমকালো আয়োজন ঘিরে দেখা দিয়েছে প্রশ্ন। রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় একাধিক প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। বর্ষপূতি অনুষ্ঠানে শিলিগুড়ির বাঘাযতীন পার্ক ও রবীন্দ্র মঞ্চে বারো দিন ব্যাপী রকমারি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। উত্সব প্রাঙ্গন সাজানো হয়েছে বিশাল আকৃতির মুখ্যমন্ত্রীর হোর্ডিং কাটআউটে। রয়েছে একাধিক স্টল। কৃত্রিম ফোয়ারায় খরচ হয়েছে প্রায় আট লক্ষ টাকা।
শিল্পীদের যাতায়াত ও টিফিন খরচ দুলক্ষ টাকা।এছাড়াও রয়েছে অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচ। বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে রাজ্যজুড়ে সরকারের এই বিপুল ব্যয়ের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিরোধী দল সিপিআইএম।
বিরোধী দলের দাবিকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব।
অনুষ্ঠানের বিপুল খরচ নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারাও।
বিচারপতিকে সুব্রতর চ্যালেঞ্জ
পঞ্চায়েত মামলার রায় প্রসঙ্গে এবার হাইকোর্টের বিচারপতিকেই চ্যালেঞ্জ জানালেন পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়৷ সমালোচনায় সরব আইনজীবীমহলের একাংশ৷ নিম্নরুচির পরিচয়, বললেন কলকাতা পুরসভার প্রাক্তন মেয়র তথা আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য৷ রায় কার্যকর করতে না পারার কথা হলফনামা দিয়ে বললে জেল পর্যন্ত হতে পারে বলে হুঁশিয়ারি দিলেন কংগ্রেস নেতা তথা আইনজীবী অরুণাভ ঘোষ৷
পঞ্চায়েত মামলার রায়ে হাইকোর্টে কোণঠাসা রাজ্য৷ সরকার গোড়া থেকে কমিশন-বিরোধিতার পথে হাঁটলেও রাজ্য নির্বাচন কমিশনের সমস্ত দাবিকে মান্যতা দিয়েছে আদালত৷ রাজ্য অবশ্য এখনই রায় মেনে নেওয়ার কোনও লক্ষ্মণ দেখায়নি৷ শুক্রবার পঞ্চায়েতমন্ত্রী বলেন, রায় অবাস্তব৷ শনিবার একধাপ এগিয়ে এবার হাইকোর্টের বিচারপতিকেই চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন তিনি৷ কতগুলো প্রশাসনিক প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে সরকারকে যেতে হয়৷ হাইকোর্টের গতকালের পঞ্চায়েত রায় মানা তাই রাজ্য সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়৷ এদিন পুরুলিয়া সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেছেন, এই প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে গেলে বিচারপতিও পারবেন না৷ এব্যাপারে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে তিনি বলেন,এই অবাস্তব রায় সমর্থন করা যাচ্ছে না৷
পঞ্চায়েত ভোটের দিনক্ষণ নিয়ে কমিশনের মতো সাংবিধানিক সংস্থার সঙ্গে চরম সংঘাতের রাস্তায় হেঁটেছে সরকার৷ এবার সেই মামলার রায় প্রসঙ্গে হাইকোর্টের বিচারপতিকে চ্যালেঞ্জ করাকে ভাল চোখে দেখছেন না আইনজীবীমহলের একাংশ৷ সমালোচনার সুরে বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, এটা নিম্নরুচির পরিচয়৷ আইনজীবী অরুণাভ ঘোষের হুঁশিয়ারি, রায় কার্যকর করতে না পারার কথা হলফনামা দিয়ে বললে, জেল পর্যন্ত হতে পারে৷
সুব্রত মুখোপাধ্যায় শুক্রবারই জানান, কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সোমবারের মধ্যেই ডিভিশন বেঞ্চে যাচ্ছে রাজ্য সরকার৷ কিন্তু, ডিভিশন বেঞ্চও যদি সেই রায় বহাল রাখে? সেক্ষেত্রে তারা সুপ্রিম কোর্টে যাবেন বলেও এদিন সাফ জানিয়েছেন পঞ্চায়েতমন্ত্রী৷
পাশাপাশি পঞ্চায়েতমন্ত্রী এদিন অভিযোগ করেন, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো নষ্ট করার চক্রান্ত চলছে৷ তাঁর প্রশ্ন,আইনশৃঙ্খলা তো রাজ্যের বিষয়, তাহলে কেন এটা নিয়ে অন্য পক্ষ টানাটানি করবে?
http://www.abpananda.newsbullet.in/state/34-more/36593-2013-05-11-12-48-20
পুলিস হেফাজতে থেকেই লিখিত বিবৃতিতে নিজের সাফাই দিলেন দেবযানী মুখোপাধ্যায়। প্রায় আড়াই পাতার এই বিবৃতিতে সারদাকাণ্ডে অভিযুক্ত দেবযানী নিজেকে নির্দোষ প্রমাণে ব্যস্ত থেকেছেন। বিবৃতির ছত্রে ছত্রে ধরা রয়েছে সেন স্যার অর্থাৎ সুদীপ্ত সেনের বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ। কিন্তু এই বিবৃতির মধ্যেই ধরা পড়েছে একাধিক অসঙ্গতিও। ২০০৮ এর জানুয়ারিতে সারদায় যোগ দেওয়া সামান্য চাকুরে দেবযানী ওই বছরেরই জুলাই মাসে সারদার ডিরেক্টর হলেন কীভাবে, তা বিবৃতিতে উল্লেখ করেননি তিনি। প্রশ্ন উঠছে, পুলিস হেফাজতে থাকাকালীন একজন অভিযুক্ত আদৌ কি বিবৃতি দিতে পারেন?
আইনজীবী মারফৎ পেশ করা বিবৃতিতে সেন স্যারের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ এনেছেন তাঁরই ছায়াসঙ্গী দেবযানী। সারদাতে যোগ দেওয়ার পর যখন টের পান `অন্যরকম কিছু হচ্ছে` তখনই নাকি সারদা কর্তাকে প্রশ্ন করেছিলেন তানিয়ে। কিন্তু তাতে রুষ্ট হয়ে উত্তর দেননি সুদীপ্ত। উল্টে দেবযানীকে খোয়াতে হয়েছে ৩৫টি সংস্থার ডিরেক্টরের পদ। দেবযানীর কথায়, "বসকে মন থেকে বিশ্বাস করতাম। বসের নির্দেশেই কাজ করতাম। প্রশাসনিক দ্বায়িত্ব সামলাতাম আমিই।" তবে তহবিল দেখার দায়িত্ব তাঁর ছিল না বলে দাবি করেছেন দাবিযানী।
মুখ খুলেছেন সমাজের তাবর মানুষদের সারদা কর্তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠাটা নিয়েও। বিবৃতির বয়ান অনুযায়ী, ``সামাজের প্রথমসারির বেশকিছু মানুষের সঙ্গে বসের ঘনিষ্ট সম্পর্ক ছিল।" চিটফান্ড সংস্থা সারদা গোষ্ঠীর সঙ্গে ঘনিষ্ট সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও, বিপদের দিনে `প্রথম সারির` সবাই মুখ ঘুড়িয়ে নিয়েছিলেন বলে অভিযোগ দেবযানী ম্যাডামের।
সারদা কাণ্ড প্রকাশ্যে আসার পর এবং কাশ্মীর থেকে সঙ্গিনী সমেত সুদীপ্ত সেন ধরা পড়ার পর থেকেই ফিসফাস শুরু হয় দেবযানী-সুদীপ্তর সম্পর্ক নিয়ে। এ দিনের বয়ানে দেবযানীর সাফাই, "স্যার বিজনেস ট্যুরে আমাকে নিয়মিত নিয়ে যেতেন। তবে কোনও আলাদা সম্পর্ক ছিল না আমাদের। কোনও দিন এক ঘরে থাকিনি আমরা।" দেবযানী এও বলেন, সংস্থার বেআইনি কাজের প্রতিবাদ করেন তিনি। ফলে অধিকর্তার পদ থেকে সরতে হয় তাঁকে। এ নিয়ে কোথাও যে অভিযোগ জানাননি, সেও স্পষ্ট করেছেন দেবযানী। এক বছর আগে সংস্থার পদ থেকে পদত্যাগ করলেও সুদীপ্ত সেনের কথা রাখতেই তাঁকে দিল্লি ছুটে যেতে হয়েছিল বলে দাবি করেছেন তিনি।
সুদীপ্ত সেনকে জেরা করে উঠে এসেছে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্যও। সারদার কর্ণধার সুদীপ্ত সেন যে পরিকল্পনা করেই পালিয়েছিলেন, ক্রমশ জোরাল হচ্ছে সেই দাবি। পরিকল্পিতভাবে সিবিআইকে চিঠি লেখার পর কয়েকদিন অপেক্ষা করেন তিনি। তারপর অবস্থা বুঝে ফেরার হয়ে যান। এমনকী এদেশ ছেড়ে তিনি নেপালেও পৌঁছে গিয়েছিলেন। কিন্তু একটি ফোন পেয়ে ফিরে এসেছিলেন ভারতে।
গত ২০ এপ্রিল মহাকরণে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, "সুদীপ্ত সেনের সন্ধানে তল্লাসি চলছে। যতদূর সম্ভব তিনি উত্তর ভারতে রয়েছেন।" মুখ্যমন্ত্রীর ওই মন্তব্যের পরই নেপাল থেকে ভারতে ফিরেছিলেন সুদীপ্ত সেন। নেপালে গিয়ে পুলিসের ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যেতে পারতেন তিনি। কিন্তু তা তিনি করেননি। ভারতে ফিরে কয়েকজনের সঙ্গে কথাও বলেছিলেন। দীর্ঘ জেরার পর অবশেষে পুলিসের কাছে এমনই চাঞ্চল্যকর স্বীকারোক্তি দিয়েছেন সুদীপ্ত সেন।
পরিকল্পনামাফিক পালিয়েছিলেন সারদাকর্তা। পুলিসি জেরায় ক্রমশ জোরালো হচ্ছে সেই তথ্য। দেশ ছেড়ে তিনি নেপাল পৌঁছে গেলেও একটি ফোন পেয়ে ভারতে ফিরে এসেছিলেন বলে জেরায় জানিয়েছেন সুদীপ্ত সেন। গত সতেরোই এপ্রিল মহাকরণে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, সুদীপ্ত সেন উত্তর ভারতে রয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রীর ওই মন্তব্যের পরই ফোন পেয়ে নেপাল থেকে ভারতে ফেরেন সুদীপ্ত সেন। প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে কার ফোনে এতোটা ঝুঁকি নিলেন তিনি?
সারদার কর্ণধার সুদীপ্ত সেন যে পরিকল্পনা করেই পালিয়েছিলেন, ক্রমশ জোরাল হচ্ছে সেই দাবি। পরিকল্পিতভাবে সিবিআইকে চিঠি লেখার পর কয়েকদিন অপেক্ষা করেন তিনি। তারপর অবস্থা বুঝে ফেরার হয়ে যান। সারদার প্রতারণার খবর প্রকাশ্যে আসার আগে গত দশই এপ্রিল উধাও হয়েছিলেন সংস্থার কর্ণধার সুদীপ্ত সেন।
তাঁর সঙ্গী ছিলেন দেবযানী মুখোপাধ্যায়, অরবিন্দ সিং চৌহানও।
ঝাড়খণ্ড হয়ে দিল্লি থেকে তাঁরা পৌঁছে যান দেরাদুনে। এরপর হরিদ্বার, জিম করবেট ন্যাশানাল পার্ক হয়ে তাঁরা পৌঁছেন হলদোয়ানি। তবে এখানেই শেষ নয়। কনকপুরে দেশের সীমান্ত পাড় হয়ে নেপালের ধাংরি পৌঁছে য়ান তাঁরা। তবে নেপাল থেকে রাতারাতি সদলবলে ভারতের পিরে এসেছিলেন সারদাকর্তা। এরপর রুদ্রপুর, সোনপথ, কিরাত্পুর, কুলু, উধমপুর হয়ে শ্রীনগরের সোনমার্গ পৌঁছোন তাঁরা। সেখান থেকেই গত তেইশে এপ্রিল ধরা পড়েন সুদীপ্ত।
জেরায় নিজের পালানোর ছকের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ দিয়েছেন সারদার কর্ণধার। তবে নেপাল থেকে আনায়াসে ভারতীয় পুলিসের ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যেতে পারতেন চিটফাণ্ড কাণ্ডের মূল কারিগর। কিন্তু তা তিনি করেননি। কেন? সেবিষয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে ইতিমধ্যেই।
পুলিসি জেরায় সারদাকর্ণধার অবশ্য জানিয়েছেন একটি ফোন পেয়েই দেশে ফিরে এসেছিলেন তিনি। সারদাকাণ্ডের জেরে গত ষোলোই এপ্রিল মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির সামনে তুমুল বিক্ষোভ দেখান এজেন্ট এবং আমানতকারীরা। এরপরেই সতেরোই এপ্রিল মহাকরণে মুখ্যমন্ত্রী জানান, সুদীপ্ত সেনের সন্ধানে তল্লাসি চলছে। যতদূর সম্ভব তিনি উত্তর ভারতে রয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রীর ওই মন্তব্যের পরই রাতারাতি নেপাল থেকে ভারতে ফিরেছিলেন সুদীপ্ত সেন। ভারতে ফিরে কয়েকজনের সঙ্গে কথাও বলেছিলেন। দীর্ঘ জেরার পর পুলিসের কাছে এমনই চাঞ্চল্যকর স্বীকারোক্তি দিয়েছেন সুদীপ্ত সেন। তবে প্রশ্ন উঠছে কে সেই ব্যক্তি যাঁর ফোন পেয়ে, হাজারও ঝুঁকি নিয়ে দেশে ফিরে এসেছিলেন সরাদা কর্ণধার? প্রশ্ন উঠছে, ফোনে এমনি কী তাঁকে বলা হয়েছিল যাতে আশ্বস্ত হয়ে তিনি দেশে ফিরে আসেন?
হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য সরকার। পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের গুরুত্বপূর্ণ রায়ে হোঁচট খাওয়ার পর বৈঠকে বসেন পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখার্জি ও আইনমন্ত্রী। বর্ধমানের সভা থাকায় বৈঠকে উপস্থিত নেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পঞ্চায়েতমন্ত্রীর মত, আদালতের 'অবাস্তব' রায় রাজ্য সরকারের পক্ষে মানা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, "একদিনের মধ্যে ৪০০ পর্যবেক্ষকের তালিকা দেওয়া সম্ভব নয়। কেন্দ্রীয় বাহিনীর তালিকা আগামিকালের মধ্যে জমা দেওয়া অবাস্তব।" তিনি প্রশ্ন তুলেছেন নির্দেশ অনুযায়ী কমিশন যদি ভোটের দিনক্ষণ পরে ঠিক করে, "তাহলে কোন তারিখের ভিত্তিতে আমরা কেন্দ্রীয় বাহিনী চাইব?" তিনি আরও জানান, ''সোমবারই আমরা ডিভিশন বেঞ্চে স্থগিতাদেশের জন্য আবেদন করব।''
শুক্রবার তিন দফায় পঞ্চায়েত ভোট করার নির্দেশ দেয় কলকাতা আদালত। তারিখ ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন। রাজ্য সরকারের হার নিশ্চিত করে কমিশনের পক্ষেই সায় দিয়েছে আদালত। কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে পঞ্চায়েত ভোট করার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। ভোটের দিন ঘোষণা করতে রাজ্য সরকারের এক তরফা এক্তিয়ার নেই বলে জানানো হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করে রাজ্য সরকারকে নির্বাচনের দিন ঘোষণা করতে হবে। এমনই নির্দেশ এসেছে বহু প্রতীক্ষিত পঞ্চায়েত মামলা রায়ে।
কমিশনের দাবিকে মেনে নিয়েই রাজ্য সরকারকে ৪০০ পর্যবেক্ষক দেওয়ার কথা জানিয়েছে আদালত। ৩০০ কেন্দ্রীয় বাহিনী এনে মনোনয়ন জমা দেওয়ার দিন থেকেই কেন্দ্রীয় বাহিনী দিতে হবে। পর্যবেক্ষকদের তালিকা আগামিকালের পাঠাতে হবে। ভোটের প্রয়োজনীয় টাকা দেবে সরকারই। এমনই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আরোও ১০৯ কোটি টাকা ব্যবস্থা করতে হবে রাজ্য সরকারকেই।
পয়লা এপ্রিল থেকে এই মামলার শুনানি শুরু হয় হাইকোর্টে। শুনানি শেষ হয় তেসরা মে। নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী সমরাদিত্য পাল মূলত তিনটি ইস্যুতে রাজ্য সরকারকে জবাব দেওয়ার জন্য আদালতে আর্জি জানান। এগুলি হল, ক-দফায় ভোট হবে, নির্বাচনে কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকবে কিনা এবং পশ্চিমবঙ্গ পঞ্চায়েত আইনের বিয়াল্লিশ নম্বর ধারা নির্বাচন কমিশন আইনের তিনশো চব্বিশ নম্বর ধারার পরিপন্থী কিনা।
পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে আদালতের রায় খুশি রাজ্য নির্বাচন কমিশনার। আদালত কমিশনের মূল দাবি মেনে নেওয়ায় স্বস্তির হাওয়া কমিশনের দফতরে। পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করতে শুক্রবার বিকেলেই বৈঠকে বসে কমিশন। আইনজীবীর সঙ্গে বৈঠকের পরই ঠিক হবে পরবর্তী পদক্ষেফ, জানিয়েছেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার মীরা পাণ্ডে। বিকেল চারটে নাগাদ পঞ্চায়েত মামলা নিয়ে আদালতের রায়ের খবর পৌঁছে যায় কমিশনের দফতরে। ততক্ষণে কমিশনের দফতরে পৌঁছতে শুরু করেছে শুভে্চ্ছা বার্তা। দমবন্ধ করা পরিবেশ কিছুটা হাল্কা হতে শুরু করেছে। আদালতের রায়ে কমিশন যে স্বস্তিতে, জানান নির্বাচন কমিশনার। আদালত কমিশনের মূল দাবি মেনে নেওয়ায় খুশি কমিশন।
রাজ্য সরকার জানিয়েছেন এই রায়ের বিরুদ্ধে তারা ডিভিশন বেঞ্চে যাবে। সে বিষটি নিয়েও বিকেলে আলোচনায় বসে কমিশন। আলোচনায় উঠে আসে পাঁচটি বিষয়। সেগুলি হল কদফায় ভোট, কেন্দ্রীয় বাহিনী, পর্য়বেক্ষক নিয়োগ, নির্বাচনের তহবিল এবং নির্বাচনের দিন। কমিশনের আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলেই স্থির হবে পরবর্তী পদক্ষেপ, জানিয়েছেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার। আপাতত পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে তাদের কাজ চালিয়ে যাবে কমিশন। নির্দিষ্ট সময়েই ভোট হবে, আশা রাজ্য নির্বাচন কমিশনারের।
আদালতের অনুমতি নিয়ে এই প্রথম সারদাকাণ্ডের তদন্তে হস্তক্ষেপ করল কেন্দ্রীয় সরকার। শুক্রবার অর্থমন্ত্রকের অধীনস্থ সিরিয়াস ফ্রড ইনভেসটিগেটিং অর্গানাইজেশনের দুই কর্তা পুলিসের থেকে তদন্তের গতিপ্রকৃতি বিস্তারিতভাবে জানেন। একইসঙ্গে সুদীপ্তকে জেরায় জানা গিয়েছে কেন্দ্র ও রাজ্য উভয় সরকারের যাঁদের এই বেআইনি চিটফাণ্ডের ওপর নজর রাখারা কথা ছিল তাঁরা নিয়মিত মাসোহারার বিনিময়ে আদতে সুদীপ্ত সেনকেই সহযোগিতা করেছেন।
সাধারণ মানুষদের টাকা আত্মসাত্ করতে বেশ আঁটঘাঁট বেঁধেই কাজ শুরু করেছিলেন সুদীপ্ত সেন। কেন্দ্র ও রাজ্যের যেসমস্ত সংস্থার ওপর দায়িত্ব ছিল এই বেআইনি চিটফান্ডের ওপর নজরদারির উল্টে তাদেরকেই কার্যত নিজের কর্মী করে নিয়ে ছিলেন সারদাকর্তা। মোটা টাকা মাসোহারার বিনিময়ে রক্ষকই হয়ে উঠেছিল ভক্ষক। অর্থাত্ আর্থিক দুর্নীতির ওপর নজরদারির বদলে তাঁরা ছিলেন বেআইনি চিটফান্ডের উপদেষ্টা। কে নেই সেই তালিকায়?
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ননব্যাঙ্কিং ফিন্যান্সিয়াল কোম্পানির অ্যাসিসট্যান্ট ম্যানেজার, সেবির একজন শীর্ষকর্তা, রাজ্য অর্থ দফতরের এক অফিসার, আয়কর দফতরের এক কর্তা। ছিলেন কয়েকজন আমলা এবং পুলিকর্তাও।
অর্থাত্ রাজনৈতিক নেতাদের মদতে এবং এই সমস্ত কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের কর্তাদের সহযোগীতায় যথেচ্ছ বেআইনি কাজ করেছেন সারদাকর্তা। এঁদের অনেকের সঙ্গেই তাঁর যোগাযোগ করিয়ে দেন এক ক্লাবকর্তা। আরবিআইয়ের কর্তার সঙ্গেও তিনিই সুদীপ্ত সেনের যোগাযোগ করিয়ে দেন। আরবিআইয়ের ওই অবসরপ্রাপ্ত অফিসারকে শুক্রবার ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন গোয়েন্দারা। গোয়ন্দারা জানতে পরেছেন বর্তমানে তিনি অবসর নিলেও চাকুরিরত অবস্থাতেই সুদীপ্ত সেনের থেকে মোটা টাকা মাসোহার নিতেন তিনি। অন্যদিকে সারদাকাণ্ডের সম্পত্তি সংক্রান্ত তদন্তে হিমাচল প্রদেশের সিমলায় একশো বিঘা জমির হদিশ পেয়েছে পুলিস। চিটফান্ড কেলেঙ্কারি নিয়ে এবার নড়চড়ে বসল কেন্দ্রীয় সরকারও। শুক্রবারই তদন্তের গতিপ্রকৃতির বিষয়ে বিধাননগর পুলিসের থেকে বিস্তারিত খোঁজখবর নিয়েছেন কেন্দ্রীয় সরকারের দুই আধিকারিক। এর আগে তদন্ত সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে বিধাননগর মহকুমা আদালতে আবেদন জানায় কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থমন্ত্রকের অধীনস্থ সিরিয়াস ফ্রড ইনভেসটিগেটিং অর্গানাইজেশন। সেই আবেদন মঞ্জুর হওয়ায় শুক্রবারই এসএফআইওর দুই আধিকারিক প্রথমবারের জন্য মামলা সম্পর্ক খোঁজখবর নেন বিধাননগর পুলিসের থেকে।
সারদা কর্তা সুদীপ্ত সেনের অতীত নিয়ে মুখ খুললেন খোদ `সেন স্যার` নিজে। জেরায় চাঞ্চল্যকর স্বীকারক্তি সুদীপ্ত সেনের, "অতীতে আমার নাম শঙ্কর সেন ছিল না।" সার্ভে পার্কের বাড়ি তাঁর কখনই ঠিকানা ছিল না বলে দাবি করেছেন সুদীপ্ত। কীভাবে তিলে তিলে গড়ে তুললেন প্রতারণার পাহাড়? তদন্তকারী অফিসারেরা জানতে পেড়েছেন, ২০০০-২০০১ সালে নাকতলায় প্রমোটারির ব্যাবসা শুরু করেন তিনি। ২০০৩ সালে ব্যবসা বদলে চামরার রপ্তানির ব্যবসায় ভাগ্য যাচাই। রমরমা ব্যবসায় রপ্তানি হত স্পেন, দুবাইতে।
এরপর কেরিয়ারের শিখরে ওঠার আশায় ২০০৮ সালে মানি মার্কেট ব্যবসায় আসেন সুদীপ্ত সেন। আজ সারদার প্রাচীর ভেঙে পড়েছে। সাধারণ মানুষকে কল্পতরু স্বপ্ন দেখানো সত্বেও কোনও স্বপ্নই বাস্তব হয়নি সুদীপ্তর। তাঁর আক্ষেপ, "তরুণ শিক্ষিত কর্মীরাই আমাকে ডুবিয়েছে।"
জেরায় ১৪ কোটি ৭৪ লক্ষ পলিসির হদিশ পেয়েছে পুলিস। চিটফদান্ড করে বাজার থেকে বিপুল অঙ্কের টাকা তুলেছিলেন সুদীপ্তর সারদা গোষ্ঠী। সারদা সংস্থার ১০০০ কোটি টাকার বেশি সম্পত্তির হদিশ পেয়ছে গোয়েন্দারা। বিষ্ণুপুর ৫০০ কোটি মূল্যের জমির সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। এখন পর্যন্ত ৫০০ কোটি টাকার বেশি মূল্যের সম্পত্তি উদ্ধার করা গিয়েছে বলে পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে।
ভাঙচুর-গ্রেফতার অব্যাহত
সারদাকাণ্ডের রেশ চলছেই৷ পাণ্ডবেশ্বর ও দুর্গাপুরে বর্ধমান সানমার্গের অফিসে ভাঙচুর আমানতকারীদের৷ মেদিনীপুরে এটিএম গ্রুপ অফ কোম্পানিজের কর্তাকে নিয়ে তল্লাশি পুলিশের৷ ৷ নদিয়ায় রোজ ভ্যালির হয়ে প্রচারের অভিযোগে গ্রেফতার ৪৷
সারদা কাণ্ড প্রকাশ্যে আসার পর থেকে অস্বস্তি বেড়েছে অন্য লগ্নি সংস্থাগুলির৷ সময় যত গড়াচ্ছে ততই বাড়ছে আমানতকারীদের টাকা ফেরানোর চাপ৷ দাবি না মিটলে চলছে বিক্ষোভ-ভাঙচুর৷
শনিবার আসানসোলের পাণ্ডবেশ্বরে লগ্নি সংস্থা বর্ধমান সানমার্গের অফিসে ভাঙচুর চালায় আমানতকারী ও এজেন্টরা৷ অভিযোগ, লুঠ হয়েছে অফিসের কম্পিউটার এবং আসবাব৷গতকাল রাতে ভাঙচুর চালানো হয় এই লগ্নি সংস্থার দুর্গাপুর অফিসেও৷
ধৃত এটিএম গ্রুপের জেনারেল ম্যানেজার প্রদীপ দাসকে নিয়ে সংস্থার ঝাড়গ্রাম অফিসে তল্লাশি চালায় পুলিশ৷ আমানতকারীদের হামলার আশঙ্কায় পুলিশের দ্বারস্থ অফিস বাড়ির মালিক৷ পলাতক সংস্থার কর্ণধার তৈমুর আলি গায়েন৷
আইএনটিটিইউসির ব্যানারে লগ্নি সংস্থা রোজভ্যালির পক্ষে প্রচার চালানো হয়েছে, গ্রামবাসীদের এই অভিযোগের ভিত্তিতে নদিয়ার কোতয়ালিতে গ্রেফতার ৪৷ মন্ত্রী উজ্জ্ব ল বিশ্বাসের অভিযোগ, তৃণমূলের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে ষড়যন্ত্র করছে সিপিএম-বিজেপি এবং কংগ্রেস৷
লগ্নি সংস্থা কাণ্ডের জের ত্রিপুরাতেও৷ আমানতকারীদের অভিযোগের ভিত্তিতে আগরতলায় গ্রেফতার লগ্নি সংস্থা রোজভ্যালির ২ ম্যানেজার৷ বাজেয়াপ্ত কম্পিউটার এবং গুরুত্বপূর্ণ নথি৷
http://www.abpananda.newsbullet.in/state/34-more/36592-2013-05-11-11-58-44
অসত্ নেতাদের ঘুরিয়ে সতর্কতা শোভনদেবের
এই সময়, বর্ধমান: কারও নাম না করে সারদা গোষ্ঠীর প্রতারণায় জড়িত দলের নেতাদের বার্তা দিলেন বিধানসভায় তৃণমূলের মুখ্য সচেতক শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়৷ ক্ষমতাকে ব্যবহার করে আর্থিক অসততা না করতে তিনি পরামর্শ দিলেন দলীয় কর্মীদের৷ মুখ্যমন্ত্রীর বর্ধমানে আসার কয়েক ঘণ্টা আগে এখানে বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মচারী সংগঠনের ভাষণ দেন এই প্রবীণ শ্রমিক নেতা৷ কিছু দিন ধরে তাঁর সঙ্গে তৃণমূলের কিছু নেতার সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না৷ বিশেষ করে শ্রমমন্ত্রী পুর্ণেন্দু বসু ও আইএনটিটিইউসি-র রাজ্য সভাপতি দোলা সেনের সঙ্গে তাঁর তিক্ততা সবারই জানা৷
সারদার গোষ্ঠীর সঙ্গে দলের অনেকে জড়িয়ে পড়ায় কিছু দিন ধরেই তিনি ঘনিষ্ঠ মহলে বিরক্তি প্রকাশ করছিলেন৷ তাঁর সেই অসন্তোষই শুক্রবার ফুটে উঠল বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃণমূল সমর্থিত কর্মচারী সংগঠনের সভায়৷ সভায় শোভনদেববাবু বলেন, 'ক্ষমতার অপব্যবহার করে সম্পত্তি বাড়াবেন না৷ যাতে রাস্তায় হেঁটে যাওয়ার সময় কেউ আপনার দিকে আঙুল তুলতে না পারে৷' তিনি জানেন, সেই আঙুল ইতিমধ্যে উঠেছে দলের কিছু শীর্ষস্থানীয় নেতাদের দিকে৷ তাই কর্মীদের উদ্দেশ্যে বললেও, তৃণমূলের মুখ্য সচেতক সেই নেতাদেরই সমালোচনা করলেন বলে মনে করছেন কর্মীরা৷ মুখ্যমন্ত্রীর সততাকে অনুসরণ করার আবেদন জানিয়ে টালিগঞ্জের বিধায়ক বলেন, 'মুখ্যমন্ত্রীকে লক্ষ কোটি টাকা দিয়েও কেনা যায় না৷'
পঞ্চায়েত যু্দ্ধে মমতাকে হারিয়ে বাজিমাত মীরার
শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি বিশ্বনাথ সমাদ্দার যে রায় দিয়েছেন, তা পুরোপুরি রাজ্য নির্বাচন কমিশনের পক্ষেই গিয়েছে৷ কমিশনের দাবি মেনে এ দিন আদালত জানিয়েছে, পঞ্চায়েত ভোট হবে তিন দফাতেই৷ ভোটের দিনক্ষণ এবং জেলাওয়াড়ি বিন্যাসও ঠিক করবে কমিশনই, সরকার নয়৷ অবাধ, স্বাধীন ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য কমিশনের দাবিমতো সরকারকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তারও ব্যবস্থা করতে হবে৷ রাজ্য পুলিশের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় বাহিনী এবং অন্য রাজ্য থেকেও পুলিশ আনতে হবে৷ এমনকি কমিশনের দাবিমতো সরকারকে ভোটের জন্য আইএএস এবং ডব্লিউবিসিএস অফিসারদের মধ্যে থেকে ৪০০ পর্যবেক্ষকও নিয়োগ করতে হবে৷ আজ, শনিবারের মধ্যেই সরকারকে ভোটের নিরাপত্তা এবং পর্যবেক্ষক নিয়োগের ব্যাপারে তাদের পরিকল্পনা কমিশনকে জানাতে হবে বলেও বিচারপতি নির্দেশ দিয়েছেন৷ কমিশন সূত্রের খবর, আদালতের এই রায়ের পরেও অবশ্য জুনের দ্বিতীয় সন্তাহের আগে ভোট সম্ভব নয়৷ আর রাজ্য সরকার জানিয়েছে, তারা আপিল করবে ডিভিশন বেঞ্চে৷ সেখানেও যদি হার হয়, তাহলে সুপ্রিম কোর্টে যাবে সরকার--ঘনিষ্ঠমহলে এমনও ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী৷ ফলে, কবে পঞ্চায়েত ভোট হবে তা এখনও ঘোরতর অনিশ্চিত৷
এর আগে রাজ্য সরকার প্রথমে ২৬ এবং ৩০ এপ্রিল, পরে ৫ ও ৮ মে ভোট করতে চেয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল৷ হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চের রায়ই ঘোষণা হল ৮ মে পেরিয়ে৷ সরকারের আগের বিজ্ঞপ্তি প্রাসঙ্গিকও নয় আর৷ আদালতও তা খারিজ করে দিয়েছে৷
অবশ্য ২০০৩-এর রাজ্য পঞ্চায়েত নির্বাচন আইনের ৪২ নম্বর ধারা বাতিল করেনি আদালত৷ কমিশন এই ধারার বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করেছিল৷ বিচারপতি বলেন, ওই ধারায় বলা হয়েছে, কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করে ভোটের বিজ্ঞপ্তি জারি করবে সরকার, যা এ ক্ষেত্রে সরকারের তরফে করা হয়নি৷ কিন্ত্ত ধারাটি যথার্থ৷ শাসকদলের তরফে বারংবার দাবি করা হয়েছে, আইনটি পূর্বতন বাম আমলে করা৷ সেই আইন মোতাবেকই তারা ভোটের বিজ্ঞন্তি জারি করেছে৷
কমিশনের আইনজীবী সমরাদিত্য পালের দাবি, 'এ দিনের রায়ে বিচারব্যবস্থার প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থাই আরও বাড়বে৷ কমিশন তার যে অধিকারের দাবিতে আদালতে গিয়েছিল, তা-ও সুপ্রতিষ্ঠিত হল৷' রাজ্য সরকারের তরফে আইনজীবী অশোক বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, 'এই রায়ে সরকারের, বিশেষ করে মুখ্যমন্ত্রীর মুখ পোড়ার মতো কিছু ঘটেনি৷ মুখ্যমন্ত্রী সময়েই নির্বাচন চেয়েছেন৷'
সরকারি আইনজীবী এমন দাবি করলেও রাজনৈতিক মহলের ব্যাখ্যা, আদালতের রায়ে শুধু সরকারই নয়, জোর ধাক্কা খেল শাসক তৃণমূলও৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিরোধী নেত্রী থাকাকালীন অবাধ, স্বাধীন এবং শান্তিপূর্ণ ভোটের জন্য নির্বাচন কমিশনের সার্বভৌম ক্ষমতার পক্ষে বার বার সওয়াল করেছেন৷ অথচ, সেই মমতাই মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে কমিশনের সঙ্গে আলোচনার রাস্তাতেও হাঁটেননি৷ হারের ভয়েই রাজ্য সরকার কমিশনের সুপারিশ অগ্রাহ্য করে রাজ্যের পুলিশ দিয়ে প্রথমে এক দফায় ভোট করাতে চেয়েছিল বলে বিরোধীদের অভিযোগ৷ হাইকোর্ট অবশ্য কমিশনকে বলেছে, পঞ্চায়েত মামলার রায়কে রাজনৈতিক দলগুলি যাতে প্রচারে হাতিয়ার না করে তা নিশ্চিত করতে হবে তাদের৷
বিচারপতি এ দিন তাঁর রায় দিতে গিয়ে বলেন, সরকারের সঙ্গে কমিশনের বহু চিঠি আদানপ্রদান হয়েছে৷ কিন্ত্ত, ভোটের দফার ব্যাপারে কমিশনের পরামর্শ যে সরকার মানতে রাজি ছিল, তার একটিও উদাহরণ নেই৷ রাজ্য সরকার এবং কমিশনের মধ্যে কোনও কার্যকরী এবং অর্থবহ আলোচনা হয়নি৷ প্রসঙ্গত, শুনানির সময়ে কমিশনের তরফেও বারে বারে এই অভিযোগই করা হয়েছে৷
রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি নিয়ে কমিশন আদালতে সরব হয়েছিল৷ জবাবে, সরকার জানিয়েছিল আইনশৃঙ্খলা রাজ্যের এক্তিয়ারভুক্ত বিষয়৷ ভোট-প্রক্রিয়া শুরুর আগে কমিশনের এ ব্যাপারে বলার এক্তিয়ার নেই৷ বিচারপতি অবশ্য এই বিষয়েও কমিশনের বক্তব্যকেই সমর্থন করেছেন৷ তাঁর মন্তব্য, 'সরকার তার রাজনৈতিক ব্যবস্থাপনা দিয়ে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করে৷ শাসকদলের মধ্যে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার বাসনা থাকতে পারে৷ এই অবস্থায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির পর্যালোচনার দায়িত্ব কখনও সরকারের হাতে ছেড়ে দেওয়া যায় না৷ ভোটের জন্য আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে নির্বাচন কমিশনই যথার্থ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান৷'
সুপ্রিম কোর্টের একাধিক রায়ের উল্লেখ করে বিচারপতি বলেন, রাজ্য নির্বাচন কমিশন এবং ভারতের নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা সমান৷ সংবিধানের ২৪৩ (কে) ধারার উল্লেখ করে তিনি জানান, পঞ্চায়েত ভোটের ভোটার-তালিকা তৈরি থেকে নির্বাচন পরিচালনার তদারকি, নির্দেশ প্রদান এবং নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা রাজ্য নির্বাচন কমিশনের উপরেই ন্যস্ত৷ তাই কমিশনকে অগ্রাহ্য করে সরকার কখনও একতরফা ভাবে ভোটের বিজ্ঞন্তি জারি করতে পারে না৷ তাঁর মন্তব্য, 'ভোট পরিচালনার ক্ষেত্রে কমিশনের ক্ষমতায় হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে জানার পর কোনও রকম সমঝোতা চলতে পারে না৷'
ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন এবং রাজ্য পুলিশের অপ্রতুলতার প্রশ্নেও বিচারপতি কমিশনের যুক্তিই মেনে নিয়েছেন৷ তিনি বলেন, গত ১ জানুয়ারির চিঠিতেই রাজ্য পুলিশের ডিজি মেনে নিয়েছিলেন, নিরাপত্তার জন্য সমস্ত বুথে রাজ্যের পুলিশ দেওয়া যাবে না৷ এমনকী ভোটের জন্য কিছু কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হবে বলেও তিনি জানিয়েছিলেন৷ বিচারপতির মন্তব্য, 'এর পরে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের ব্যাপারে রাজ্যের বিরোধিতার কোনও যুক্তিই টেকে না৷' রাজ্য পুলিশের সংখ্যার ব্যাপারেও আলোচনার সময় সরকার কমিশনকে কিছু জানায়নি বলে মন্তব্য করে বিচারপতি বলেন, আদালতে সরকার যে হলফনামা জমা দেয়, তাতেই বিষয়টি প্রথম জানা যায়৷ বিচারপতির মন্তব্য, 'কিন্ত্ত তা সত্ত্বেও সরকার এক বারের জন্যও জানায়নি রাজ্যে পুলিশের বিরাট ঘাটতি রয়েছে৷ কমিশন জেলাগুলি থেকে পুলিশের সংখ্যার ব্যাপারে যে রিপোর্ট আনায় তাতেই বিষয়টি ধরা পড়ে৷'
পঞ্চায়েত ভোটের জন্য ২০৯ কোটি টাকা চাইলেও সরকার এখনও ১০০ কোটি টাকার বেশি দেয়নি বলে কমিশন আদালতকে জানিয়েছিল৷ এই প্রসঙ্গে অ্যাডভোকেট জেনারেল জানিয়েছিলেন, রাজ্যের অর্থ-সঙ্কট চলছে৷ তবে কমিশনকে ভোটের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ দেওয়া হবে৷ বিচারপতি বলেন, অবাধ, স্বাধীন এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচন মানুষের অধিকার এবং এ ব্যাপারে অর্থ কোনও বাধা হতে পারে না৷ তিনি এ ব্যাপারে আলাদা করে বাজেট-বরাদ্দ করার কথাও বলেন৷ ভোটে পর্যবেক্ষক নিয়োগের ব্যাপারেও সরকার কমিশনের আর্জি মানতে উত্সাহী ছিল না বলে মন্তব্য করেছেন বিচারপতি৷
পঞ্চায়েতমন্ত্রীর মন্তব্য, 'এই রায় অবাস্তব৷ পদ্ধতিগত দিকে থেকে এটা রূপায়ণ করা বা মেনে নেওয়া যায় না৷ রাজ্যে সময়মতো পঞ্চায়েত নির্বাচন যারা চায় না, এই রায় তাদের অভিসন্ধিই পূরণ করবে৷ জুনে পঞ্চায়েতের সময়সীমা শেষ হচ্ছে৷ ফলে সব মিলিয়ে একটা সাংবিধানিক সঙ্কটের আশঙ্কা সৃষ্টি করছে৷'
এই রায় কেন 'অবাস্তব', তার ব্যাখ্যা দেওয়ারও চেষ্টা করেছেন পঞ্চায়েতমন্ত্রী৷ হাইকোর্ট চায় শনিবারের মধ্যে প্রায় ৪০০ পর্যবেক্ষকের তালিকা কমিশনকে জানাক রাজ্য৷ পাশাপাশি, কোন জায়গায় ভিন রাজ্যের কত পুলিশ ও আধাসামরিক বাহিনীর জওয়ান বহাল করা হবে, শনিবারের মধ্যে সেই বিস্তারিত খতিয়ানও পেশ করতে বলা হয়েছে রাজ্য সরকারকে৷ সুব্রতবাবুর কথায়, 'এগুলো কী করে সম্ভব? শনিবার ছুটির দিন৷ উপরন্ত্ত অন্য রাজ্যের পুলিশ বা আধাসামরিক বাহিনী আনতে গেলে কেন্দ্রের কাছে লিখতে হয়, কেন্দ্র অনুমোদন দিলে তবে অন্য রাজ্য থেকে পুলিশ আসবে৷ আর নির্বাচন কমিশন যদি পরে নির্বাচনী পর্যায় বা দিনক্ষণ ঘোষণা করে, তবে কোথায় কত পুলিশ নিয়োগ করা হবে, তার খতিয়ান এখনই কী করে দেওয়া সম্ভব? পুলিশি বন্দোবস্তের জন্য তো আগে দিনক্ষণ জানা চাই৷ সেই হিসাবনিকাশ তো আগে কষতে হবে৷'
পঞ্চায়েতমন্ত্রীর অনুযোগ, সরকারি নিয়মনীতির সঙ্গে এই রায়ের কোনও 'সাযুজ্য'ই নেই৷ এই প্রসঙ্গে তাঁর মন্তব্য, 'পঞ্চায়েত আইনের ৪২ ও ৪৩ ধারা কী ভাবে কার্যকরী হবে, সেটাও আদালত বলে দেয়নি৷ আমরা যতটুকু জেনেছি, সাংবিধানিক বৈধতার ব্যাপারে আদালত কিছুই বলেনি৷ আমাদের আপত্তি প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক স্তরে রয়েছে৷ আমরা আদালতের রায় মানছি না, তা বলছি না৷ কিন্ত্ত এই রায় রূপায়ণের ক্ষেত্রে পদ্ধতিগত ক্ষেত্রে বড় সমস্যা রয়েছে৷'
রাজ্য যে আইন মোতাবেক যথাসময়ে নির্বাচন করাতে চেয়েছিল, এ দিন ফের সে দাবিও তুলেছেন সুব্রতবাবু৷ তাঁর বক্তব্য, নির্বাচন সংক্রান্ত নির্দেশিকা চার-চার বার জারি করেছিল সরকার৷ মুখ্যসচিব অন্তত দশ বার কমিশনে গিয়ে আলোচনাও করেছেন৷ সরকার আইনের মধ্যে থেকেই দ্রুত নির্বাচনের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়েছে এবং ভবিষ্যতেও তাই-ই করবে বলে দাবি পঞ্চায়েতমন্ত্রীর৷ বরং তাঁর শাণিত আক্রমণ, 'অনেকেই চাইছিল না নির্বাচন হোক৷ এই রায়ে তারাই জয়লাভ করল৷ নির্বাচন যাতে না হয়, সে জন্য কায়েমি স্বার্থ কাজ করছিল৷'
সাংবাদিক বৈঠকে প্রশ্ন ওঠে--কারা এই 'কায়েমি স্বার্থ'? পঞ্চায়েতমন্ত্রীর চটজলদি জবাব, 'সিপিএম-কংগ্রেস-বিজেপিই কায়েমি স্বার্থ৷' তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, 'এই রায় কি রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট মনে করছেন?' তিনি বলেন, 'তা জানি না৷ তবে, বলতে পারি অবাস্তব৷'
এই মুহূর্তে অবশ্য যে প্রশ্নটা সবচেয়ে বড় হয়ে দাঁড়াচ্ছে, তা হল, নির্দিষ্ট সময়ে নির্বাচন না হলে রাজ্যের পঞ্চায়েত কাঠামোর কী হাল দাঁড়াবে? কী ভাবে চলবে পঞ্চায়েতের দৈনন্দিন কাজকর্ম? এ ব্যাপারে সুব্রতবাবুর তাত্ক্ষণিক জবাব, 'কেন, মহারাষ্ট্রে তো প্রশাসক নিয়োগ করা হয়েছে৷ অন্ধ্রপ্রদেশেও দু'বছর নির্বাচন হয়নি৷'
বিরোধীরা সুব্রতবাবুর এই মন্তব্যকেই অস্ত্র করে বলছেন, তৃণমূল সরকার প্রশাসক বসাতেই চেয়েছে, তাই সময়ে নির্বাচনের ব্যাপারে আন্তরিক হয়নি৷ এখন আদালতের রায় নিয়েও জলঘোলা করছে৷
দেশের রিয়েল এস্টেট শিল্পে মন্থর গতির জন্য বিক্রি কমে যাওয়া, নির্মাণের খরচ অসম্ভব বেড়ে যাওয়া, অর্থনৈতিক বৃদ্ধির গতি শ্লথ হয়ে পড়া, মুদ্রাস্ফীতির হার বেড়ে যাওয়া ও শিল্পোত্পাদন হার কমে যাওয়াকে দায়ী করা হয়েছে৷ এই পরিস্থিতির জন্যই দেনার দায় কমাতে জমি বিক্রি করতে হয়েছে ডেভেলপারদের, ফলে বেসরকারি সংস্থাগুলোও রিয়েল এস্টেট থেকে মুখ ফেরাচ্ছে৷ গত অর্থবর্ষে ১ এপ্রিল বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জ খোলার সময় রিয়েল এস্টেট সূচক ছিল ১৭৭৮.৪৬ এবং ৩১ মার্চ বাজার বন্ধের সময় সূচক ছিল ১৭৮০.০৯৷ অর্থাত্ এই সেক্টরের সূচকে কার্যত কোনও উত্থানই হয়নি৷
রিপোর্ট দিল অ্যাসোচ্যাম৷
No comments:
Post a Comment