বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেছেন, মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার বানচাল করতে সাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর ও মন্দিরে হামলা করে তাদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করা হচ্ছে। এ অপপ্রচার ও অপশক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
আজ বুধবার রাজধানীর পল্টনের কার্যালয়ে ১৪ দলের সভায় রাশেদ খান মেনন এসব কথা বলেন।
মেনন বলেন, বিএনপি-জামায়াত ধর্মকে ব্যবহার করে স্বতঃস্ফূর্তভাবে গড়ে ওঠা শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চকে বিতর্কিত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের বিভ্রান্ত করে তাদের উসকে দেওয়া হচ্ছে। এ অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সর্বত্র সঠিক বিষয়টি তুলে ধরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন করতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ বিষয়ে পাড়া-মহল্লায় প্রতিরোধ ব্রিগেড গড়ে তুলতে হবে।
ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় আরও বক্তব্য দেন ওয়ার্কার্স পার্টির কামরুল আহসান, সাম্যবাদী দলের হারুন চৌধুরী, জাসদের আসাদুজ্জামান, গণতন্ত্রী পার্টির মনজুরুল কবীরসহ স্থানীয় নেতারা।
সাঈদীর রায়ের পর সংঘর্ষে প্রাণহানি প্রসঙ্গে খালেদা জিয়া
এই গণহত্যার জন্য ট্রাইব্যুনাল হবে, বিচার হবে
বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের ধরপাকড় ও 'গণহত্যা' বন্ধের আহ্বান জানিয়ে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, 'না হলে এর পরিণাম হবে ভয়ংকর।' আগামীতে এই 'গণহত্যার' বিচার করতে ট্রাইব্যুনাল করার ঘোষণাও দেন তিনি।
আজ বুধবার সন্ধ্যায় রাজধানীর নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় পরিদর্শনে গিয়ে বিরোধীদলীয় নেতা সরকারের উদ্দেশে এই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। গত সোমবার পুলিশ বিএনপির কার্যালয়ে অভিযান চালানোর পর আজ কার্যালয়ের অবস্থা দেখতে সেখানে যান দলের চেয়ারপারসন। সেখানে তিনি কার্যালয়ের দ্বিতীয় তলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন।
খালেদা জিয়া বলেন, আগামীকাল বৃহস্পতিবারের মধ্যে দলটির কারাবন্দি নেতাদের মুক্তি না দিলে ১৮ ও ১৯ মার্চ সর্বাত্মক হরতাল হবে। তিনি ওই হরতাল সফল করার প্রস্তুতি নিতে দলের নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান। নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে খালেদা বলেন, 'কষ্ট করতে হবে, তা হলে ফল মিলবে ইনশাল্লাহ।'
'গণহত্যার বিচার হবে'
জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে রায়ের পর জামায়াত-শিবিরের সহিংসতা ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে প্রাণহানির ঘটনাকে 'গণহত্যা' উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, 'এই গণহত্যার জন্য ট্রাইব্যুনাল হবে, বিচার হবে। প্রধানমন্ত্রী নিজেও এর দায় এড়াতে পারেন না।' এই গণহত্যায় ১৭০ জন নিহত হয়েছে দাবি করে বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, 'সরকারের এক নম্বর থেকে শুরু করে সবাইকে মানবতাবিরোধী অপরাধে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হবে।'
খালেদা জিয়া বলেন, 'সরকারের পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেছে। সরকার ডেসটিনি, হল-মার্ক, শেয়ারবাজার, পদ্মা সেতু ইস্যুগুলো ধামাচাপা দেওয়ার জন্য গণহত্যা চালাচ্ছে।' তিনি বলেন, 'জনগণের আন্দোলন কখনো বৃথা যায় না, যাবে না।'
শাহবাগের সমালোচনা
সরাসরি শাহবাগের নাম উচ্চারণ না করলেও আবারও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে গড়ে ওঠা শাহবাগের আন্দোলনের কড়া সমালোচনা করেছেন খালেদা জিয়া। সরকারের উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেন, 'এই সরকারকে আর সময় দেওয়া যায় না। একদিকে আমাদের মিছিলে গুলি করছে, সমাবেশ করতে দিচ্ছে না। অন্যদিকে নাস্তিকদের পাহারা দিয়ে, খাওয়া-দাওয়া দিয়ে লালন করছে।' মানুষের দৃষ্টি ফেরাতে এটি করা হচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
খালেদা আরও বলেন, 'এসব মঞ্চ-ফঞ্চ বানানো বন্ধ করুন। জনগণের মঞ্চ তৈরি হলে রক্ষা পাবেন না।
'ক্ষমতা ছেড়ে দিন'
সরকারকে উদ্দেশ করে খালেদা জিয়া বলেন, 'পরিষ্কার বলতে চাই, এখনো সময় আছে, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করে ক্ষমতা ছেড়ে দিন।' এ সময় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, 'আপনারা কি রাজি আছেন?' নেতা-কর্মীরা সমর্থন জানালে তিনি বলেন, 'লক্ষ হাত জেগে উঠেছে সরকারকে বিদায় দেওয়ার জন্য। সরকার অবশ্যই বিদায় নেবে।' এ জন্য তিনি নেতা-কর্মীদের প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানান।
বোমা উদ্ধার পরিকল্পিত
গত সোমবার পুলিশ নিজেরাই বোমা ফাটিয়ে বিএনপির সমাবেশ পণ্ড করেছে এবং বিএনপির কার্যালয়ে বোমা রেখে তা উদ্ধার করেছে বলে দাবি করেন বিএনপির চেয়ারপারসন। তিনি সোমবারের ঘটনাকে সরকারের পূর্বপরিকল্পিত বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, 'আমরা রাজনীতি করি, বোমাবাজি করি না।'
পুলিশের সদস্যদের উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেন, 'আপনারা এ দেশের নাগরিক। আপনারা জনগণের ট্যাক্সের টাকায় চলেন। কথায় কথায় গুলি চালানো বন্ধ করুন। এ জন্য আপনাদের জবাব দিতে হবে।'
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে 'রাজাকার' আখ্যায়িত করে খালেদা জিয়া বলেন, 'আওয়ামী লীগে বহু রাজাকার আছে। তাদের আগে ধরতে হবে।' তিনি বলেন, 'আমরাও মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই। তবে তা হতে হবে স্বচ্ছ ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন।' ক্ষমতায় গেলে সেভাবেই যুদ্ধাপরাধের বিচার করা হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা, তাদের বাড়িঘর ভাঙচুর করার জন্য সরকারকে দায়ী করে বিএনপির চেয়ারপারসন বলেন, 'এর দায় সরকারকে বহন করতে হবে।' তিনি বলেন, 'আমাদের লোকজন খবর রাখছে। সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য সব রকম সহায়তা দেওয়া হবে।'
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আজ বুধবার বিকেল পৌনে ছয়টায় নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পৌঁছান। এ সময় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি উপেক্ষা করেও বিএনপির নেতা-কর্মীরা স্লোগানে স্লোগানে তাঁকে স্বাগত জানান।
পরে খালেদা জিয়া কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পুলিশি অভিযানে ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন কক্ষ পরিদর্শন করেন।
এর আগে খালেদা জিয়ার আগমনকে কেন্দ্র করে বেলা দুইটার পর বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হতে থাকেন। নেতা-কর্মীরা সরকারবিরোধী স্লোগান দিয়ে নয়া পল্টন এলাকা মুখরিত করে তোলেন।
সময়চিত্র
আওয়ামী লীগ-বিএনপি: কবে হবে বোধোদয়
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেছেন, মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার বানচাল করতে সাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর ও মন্দিরে হামলা করে তাদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করা হচ্ছে। এ অপপ্রচার ও অপশক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
আজ বুধবার রাজধানীর পল্টনের কার্যালয়ে ১৪ দলের সভায় রাশেদ খান মেনন এসব কথা বলেন।
মেনন বলেন, বিএনপি-জামায়াত ধর্মকে ব্যবহার করে স্বতঃস্ফূর্তভাবে গড়ে ওঠা শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চকে বিতর্কিত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের বিভ্রান্ত করে তাদের উসকে দেওয়া হচ্ছে। এ অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সর্বত্র সঠিক বিষয়টি তুলে ধরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন করতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ বিষয়ে পাড়া-মহল্লায় প্রতিরোধ ব্রিগেড গড়ে তুলতে হবে।
ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় আরও বক্তব্য দেন ওয়ার্কার্স পার্টির কামরুল আহসান, সাম্যবাদী দলের হারুন চৌধুরী, জাসদের আসাদুজ্জামান, গণতন্ত্রী পার্টির মনজুরুল কবীরসহ স্থানীয় নেতারা।
সাঈদীর রায়ের পর সংঘর্ষে প্রাণহানি প্রসঙ্গে খালেদা জিয়া
এই গণহত্যার জন্য ট্রাইব্যুনাল হবে, বিচার হবে
বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের ধরপাকড় ও 'গণহত্যা' বন্ধের আহ্বান জানিয়ে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, 'না হলে এর পরিণাম হবে ভয়ংকর।' আগামীতে এই 'গণহত্যার' বিচার করতে ট্রাইব্যুনাল করার ঘোষণাও দেন তিনি।
আজ বুধবার সন্ধ্যায় রাজধানীর নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় পরিদর্শনে গিয়ে বিরোধীদলীয় নেতা সরকারের উদ্দেশে এই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। গত সোমবার পুলিশ বিএনপির কার্যালয়ে অভিযান চালানোর পর আজ কার্যালয়ের অবস্থা দেখতে সেখানে যান দলের চেয়ারপারসন। সেখানে তিনি কার্যালয়ের দ্বিতীয় তলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন।
খালেদা জিয়া বলেন, আগামীকাল বৃহস্পতিবারের মধ্যে দলটির কারাবন্দি নেতাদের মুক্তি না দিলে ১৮ ও ১৯ মার্চ সর্বাত্মক হরতাল হবে। তিনি ওই হরতাল সফল করার প্রস্তুতি নিতে দলের নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান। নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে খালেদা বলেন, 'কষ্ট করতে হবে, তা হলে ফল মিলবে ইনশাল্লাহ।'
'গণহত্যার বিচার হবে'
জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে রায়ের পর জামায়াত-শিবিরের সহিংসতা ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে প্রাণহানির ঘটনাকে 'গণহত্যা' উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, 'এই গণহত্যার জন্য ট্রাইব্যুনাল হবে, বিচার হবে। প্রধানমন্ত্রী নিজেও এর দায় এড়াতে পারেন না।' এই গণহত্যায় ১৭০ জন নিহত হয়েছে দাবি করে বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, 'সরকারের এক নম্বর থেকে শুরু করে সবাইকে মানবতাবিরোধী অপরাধে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হবে।'
খালেদা জিয়া বলেন, 'সরকারের পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেছে। সরকার ডেসটিনি, হল-মার্ক, শেয়ারবাজার, পদ্মা সেতু ইস্যুগুলো ধামাচাপা দেওয়ার জন্য গণহত্যা চালাচ্ছে।' তিনি বলেন, 'জনগণের আন্দোলন কখনো বৃথা যায় না, যাবে না।'
শাহবাগের সমালোচনা
সরাসরি শাহবাগের নাম উচ্চারণ না করলেও আবারও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে গড়ে ওঠা শাহবাগের আন্দোলনের কড়া সমালোচনা করেছেন খালেদা জিয়া। সরকারের উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেন, 'এই সরকারকে আর সময় দেওয়া যায় না। একদিকে আমাদের মিছিলে গুলি করছে, সমাবেশ করতে দিচ্ছে না। অন্যদিকে নাস্তিকদের পাহারা দিয়ে, খাওয়া-দাওয়া দিয়ে লালন করছে।' মানুষের দৃষ্টি ফেরাতে এটি করা হচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
খালেদা আরও বলেন, 'এসব মঞ্চ-ফঞ্চ বানানো বন্ধ করুন। জনগণের মঞ্চ তৈরি হলে রক্ষা পাবেন না।
'ক্ষমতা ছেড়ে দিন'
সরকারকে উদ্দেশ করে খালেদা জিয়া বলেন, 'পরিষ্কার বলতে চাই, এখনো সময় আছে, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করে ক্ষমতা ছেড়ে দিন।' এ সময় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, 'আপনারা কি রাজি আছেন?' নেতা-কর্মীরা সমর্থন জানালে তিনি বলেন, 'লক্ষ হাত জেগে উঠেছে সরকারকে বিদায় দেওয়ার জন্য। সরকার অবশ্যই বিদায় নেবে।' এ জন্য তিনি নেতা-কর্মীদের প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানান।
বোমা উদ্ধার পরিকল্পিত
গত সোমবার পুলিশ নিজেরাই বোমা ফাটিয়ে বিএনপির সমাবেশ পণ্ড করেছে এবং বিএনপির কার্যালয়ে বোমা রেখে তা উদ্ধার করেছে বলে দাবি করেন বিএনপির চেয়ারপারসন। তিনি সোমবারের ঘটনাকে সরকারের পূর্বপরিকল্পিত বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, 'আমরা রাজনীতি করি, বোমাবাজি করি না।'
পুলিশের সদস্যদের উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেন, 'আপনারা এ দেশের নাগরিক। আপনারা জনগণের ট্যাক্সের টাকায় চলেন। কথায় কথায় গুলি চালানো বন্ধ করুন। এ জন্য আপনাদের জবাব দিতে হবে।'
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে 'রাজাকার' আখ্যায়িত করে খালেদা জিয়া বলেন, 'আওয়ামী লীগে বহু রাজাকার আছে। তাদের আগে ধরতে হবে।' তিনি বলেন, 'আমরাও মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই। তবে তা হতে হবে স্বচ্ছ ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন।' ক্ষমতায় গেলে সেভাবেই যুদ্ধাপরাধের বিচার করা হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা, তাদের বাড়িঘর ভাঙচুর করার জন্য সরকারকে দায়ী করে বিএনপির চেয়ারপারসন বলেন, 'এর দায় সরকারকে বহন করতে হবে।' তিনি বলেন, 'আমাদের লোকজন খবর রাখছে। সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য সব রকম সহায়তা দেওয়া হবে।'
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আজ বুধবার বিকেল পৌনে ছয়টায় নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পৌঁছান। এ সময় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি উপেক্ষা করেও বিএনপির নেতা-কর্মীরা স্লোগানে স্লোগানে তাঁকে স্বাগত জানান।
পরে খালেদা জিয়া কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পুলিশি অভিযানে ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন কক্ষ পরিদর্শন করেন।
এর আগে খালেদা জিয়ার আগমনকে কেন্দ্র করে বেলা দুইটার পর বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হতে থাকেন। নেতা-কর্মীরা সরকারবিরোধী স্লোগান দিয়ে নয়া পল্টন এলাকা মুখরিত করে তোলেন।
আজ বুধবার রাজধানীর পল্টনের কার্যালয়ে ১৪ দলের সভায় রাশেদ খান মেনন এসব কথা বলেন।
মেনন বলেন, বিএনপি-জামায়াত ধর্মকে ব্যবহার করে স্বতঃস্ফূর্তভাবে গড়ে ওঠা শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চকে বিতর্কিত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের বিভ্রান্ত করে তাদের উসকে দেওয়া হচ্ছে। এ অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সর্বত্র সঠিক বিষয়টি তুলে ধরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন করতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ বিষয়ে পাড়া-মহল্লায় প্রতিরোধ ব্রিগেড গড়ে তুলতে হবে।
ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় আরও বক্তব্য দেন ওয়ার্কার্স পার্টির কামরুল আহসান, সাম্যবাদী দলের হারুন চৌধুরী, জাসদের আসাদুজ্জামান, গণতন্ত্রী পার্টির মনজুরুল কবীরসহ স্থানীয় নেতারা।
আজ বুধবার সন্ধ্যায় রাজধানীর নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় পরিদর্শনে গিয়ে বিরোধীদলীয় নেতা সরকারের উদ্দেশে এই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। গত সোমবার পুলিশ বিএনপির কার্যালয়ে অভিযান চালানোর পর আজ কার্যালয়ের অবস্থা দেখতে সেখানে যান দলের চেয়ারপারসন। সেখানে তিনি কার্যালয়ের দ্বিতীয় তলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন।
খালেদা জিয়া বলেন, আগামীকাল বৃহস্পতিবারের মধ্যে দলটির কারাবন্দি নেতাদের মুক্তি না দিলে ১৮ ও ১৯ মার্চ সর্বাত্মক হরতাল হবে। তিনি ওই হরতাল সফল করার প্রস্তুতি নিতে দলের নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান। নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে খালেদা বলেন, 'কষ্ট করতে হবে, তা হলে ফল মিলবে ইনশাল্লাহ।'
সময়চিত্র
আওয়ামী লীগ-বিএনপি: কবে হবে বোধোদয়
আসিফ নজরুল | তারিখ: ১৩-০৩-২০১৩
গত আমলে বিএনপির পুলিশ আওয়ামী লীগ অফিসে ঢুকে কাঁদানে গ্যাসের শেল মেরেছিল। এ ঘটনার নিন্দায় সারা দেশের বিভিন্ন মহল সোচ্চার হয়েছিল। কিন্তু এবারের ঘটনা তাকেও ছাড়িয়ে গেছে। গণতান্ত্রিক আমল দূরের কথা, কোনো সামরিক আমলেও এভাবে প্রধান বিরোধী দলের অফিসে চড়াও হওয়া, জামিনে থাকা নেতাদের গণগ্রেপ্তার ও হাতুড়ি দিয়ে কার্যালয় ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেনি। এই তাণ্ডবের পর পুলিশ যথারীতি মামলা করেছে বিএনপির আক্রান্ত নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধেই!
পুলিশের এই আগ্রাসী ভূমিকার কারণ কী? বিএনপি জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে সমাবেশ করছে বলে? যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এতে বিঘ্নিত হতে পারে বলে? আমার মনে হয় না, এত মহৎ বা আদর্শিকভাবে বিষয়টি দেখার কোনো কারণ আছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে দেশে জামায়াত-শিবিরের তাণ্ডবলীলা শুরু হওয়ার বহু আগেও সরকার বিএনপির বিরুদ্ধে বিভিন্ন নিপীড়ন চালিয়েছিল। বিএনপির নেতা ইলিয়াস আলী ও চৌধুরী আলম গুম হওয়ার ঘটনা, খেলো অভিযোগে বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতাদের গণহারে গ্রেপ্তার করে দিনের পর দিন জেলে আটক রাখা, বিরোধীদলীয় চিফ হুইপকে নির্মমভাবে রাস্তায় ফেলে পেটানোর মতো বহু ঘটনা ঘটেছিল এমন একসময়ে, যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ইস্যু নিয়ে কোনো অনিশ্চয়তা দেশে ছিল না। আবার সিপিবির সভা, তেল-গ্যাস রক্ষা আন্দোলন বা শিক্ষকদের শহীদ মিনারে অনশন কর্মসূচির সঙ্গে জামায়াতকে কোনোভাবে রক্ষা করার কোনো দূরতম সম্পর্কও ছিল না। কিন্তু তখনো আমরা পুলিশকে নির্বিচার আক্রমণ করতে দেখেছি তাদের ওপর। কাজেই প্রকৃতভাবে আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী দল ও ভিন্নমতের প্রতি চরম অসহনশীল, এ জন্য তারা দেশের জনগণের অর্থে পরিচালিত পুলিশকে নিপীড়কের ভূমিকায় নামিয়েছে এবং এরই ধারাবাহিকতায় ১২ মার্চ বিএনপির অফিসে হানা দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে, এটি বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।
সরকারের আসল এজেন্ডা কি তাহলে দেশে একদলীয় আধিপত্য কায়েম করা? আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আগে বলেছিলেন যে তাঁরা বাকশালীয় আদর্শে বিশ্বাস করেন। বাকশালীয় আদর্শ ও চেতনার মানে হচ্ছে, দেশে কোনো বিরোধী দল থাকতে পারবে না, দেশে কোনো ভিন্নমত সহ্য করা হবে না, গণমাধ্যমকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেওয়া হবে না। সরকারকে তার ক্ষমতার শেষ বছরে কিছু ক্ষেত্রে আমরা তা-ই করতে দেখছি আরও স্পষ্টভাবে। আগামী নির্বাচনের দিন যতই এগোচ্ছে, সরকার ততই যেন অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে বিরোধী দল ও মতের প্রতি।
আমাদের মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সবচেয়ে বড় উপাদান হচ্ছে দেশে প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা। একদলীয় আধিপত্য যেকোনো মূল্যে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী। দুর্নীতি, সন্ত্রাস আর দলীয়করণ করে রাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্ভাবনা কুক্ষিগত করা মুক্তিযুদ্ধের আরেকটি বড় চেতনার (অর্থনৈতিক সাম্য প্রতিষ্ঠার) সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। ১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করার উদ্যোগ নিয়ে সরকার সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে। কিন্তু এই বিচার করছে বলে মুক্তিযুদ্ধের অন্য মূল চেতনাগুলো ধূলিসাৎ করার অধিকার তার নেই। দেশ পরিচালনায় সরকারের ব্যর্থতা বা পছন্দমতো আগামী নির্বাচন করে অসৎভাবে আবারও ক্ষমতায় যাওয়ার চেষ্টার প্রতিবাদ বিরোধী দল করবে না, এটিও সরকার আশা করতে পারে না।
এই লেখা তৈরি করার সময় আমরা জেনেছি যে মির্জা ফখরুলসহ বিএনপির আরও তিন নেতাকে পুলিশ ছেড়ে দিয়েছে, আরও কয়েকজনকে হয়তো পরে ছেড়ে দেওয়া হবে। কিন্তু এরপর? বিএনপি বা ১৮ দলীয় জোট কি এরপর নির্বিঘ্নে তাদের কর্মসূচি পালন করতে পারবে? যে প্রশ্নবিদ্ধ মামলা বিএনপির নেতাদের বিরুদ্ধে হয়েছে, সেগুলোর কী হবে? ককটেল-পুলিশি হামলা-গ্রেপ্তার, এরপর মামলা—এই চক্রের অবসান কবে হবে?
আমরা বিশ্বাস করি, যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল ও এর বিচার-প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার যেকোনো তাণ্ডবলীলা আইনগত পন্থায় কঠোর হস্তে দমন করার দায়িত্ব সরকারের রয়েছে। কিন্তু এই দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বা অন্যান্য দলের কর্মসূচি (যেমন ইসলামি দলগুলোর কর্মসূচি) দমন করতে গিয়ে পুলিশ মাত্রাতিরিক্ত বা বেআইনি শক্তি প্রয়োগ করেছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলার অধিকার বিরোধী দলের থাকবে না কেন? আর যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য আওয়ামী লীগ জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন করেছে, সেই একই সরকার পুনর্বহালের জন্য জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপি আন্দোলন করলে আওয়ামী লীগের তাতে রুষ্ট হওয়ার কোনো নৈতিক অধিকার আছে কি?
তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য বিএনপি জোটবদ্ধ আন্দোলন করতেই পারে। তবে এই আন্দোলন করতে গিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রতিরোধে জামায়াতের ষড়যন্ত্রের সহায়ক হওয়া কোনোভাবেই বিএনপির উচিত হবে না। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আমাদের সাংবিধানিক ও আইনি দায়িত্ব। এই বিচার ঠিকমতো হচ্ছে কি না, তা নিয়ে বিরোধী দলগুলো যৌক্তিক প্রশ্ন তুলতে পারে, কিন্তু বিচার ও ট্রাইব্যুনাল বাতিল করার কোনো দাবি তোলা এবং বিশেষ করে এর জন্য জনগণের জানমালের ক্ষতি করার কোনো অধিকার কারও নেই।
বিএনপিকে বুঝতে হবে, এই বিচার আমাদের জাতীয় কর্তব্য। বিএনপি এই বিচার অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার করেছে। কিন্তু এই অঙ্গীকার সুস্পষ্ট নয়, বিশ্বাসযোগ্যও নয়। ভবিষ্যতে ক্ষমতায় গেলে ট্রাইব্যুনাল অব্যাহত ও সচল রাখা এবং দোষীদের রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে ক্ষমা না করার ওয়াদা বিএনপিকে জনগণের কাছে করতে হবে। কয়েকটি বিচারের রায় ঘোষণার পর জামায়াত যেসব স্থানে তাণ্ডবলীলা চালিয়েছে, তার সমালোচনা বিএনপিকে করতে হবে। সরকার তত্ত্বাবধায়কব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় বা অন্য কোনোভাবে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে (যেমন নিরপেক্ষ ব্যক্তির অধীনে সর্বদলীয় নির্বাচনকালীন সরকার, সবার সম্মতির ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন এবং নির্বাচনী আইনের সংস্কার) অর্থবহ আলোচনায় রাজি হলে বিএনপিকে জামায়াতের সঙ্গে সব যৌথ কর্মসূচি পরিহার করতে হবে।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপির এই বোধোদয় প্রয়োজন যে দেশের বর্তমান অচলাবস্থা নিরসনে তাদের মধ্যে সমঝোতার কোনো বিকল্প নেই। এটি না হলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আরও বেশি বিঘ্নিত হতে পারে। দেশে সাম্প্রদায়িক শক্তি, পুলিশ, মাস্তান আর গুপ্তঘাতকদের আরও দৌরাত্ম্য আমাদের দেখতে হতে পারে। দেশের গণতন্ত্র এমনকি ভবিষ্যৎ পর্যন্ত বিপন্ন হতে পারে এতে। বিভক্ত ও ক্ষতবিক্ষত বাংলাদেশকে নানাভাবে শোষণ করার সুযোগ পেতে পারে বহুজাতিক পুঁজি, আন্তর্জাতিক ক্ষমতাবলয় এবং তাদের এ দেশীয় দোসররা।
আমরা রাজনীতিবিদদের বহু সমালোচনা করি। কিন্তু সংকট নিরসনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালনের অবকাশ তাঁদেরই রয়েছে। একসময় দেশে নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যম রাজনৈতিক সংকট নিরসনে যে নিরপেক্ষ ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করত, সেই অবস্থান তাদের এখন আর আছে বলে মনে হচ্ছে না। গত কয়েক বছরে নানা ধরনের সমালোচনা করে সরকার বিচারপতি হাবিবুর রহমান, ড. ইউনূস, কামাল হোসেন, এবিএম মূসা বা আকবর আলি খানদের মতো অভিভাবকসুলভ ব্যক্তিদেরও বিতর্কিত করে ফেলেছে। বাকি যেসব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এই সংকটে সরকার ও প্রধান বিরোধী দলের মধ্যে সমঝোতার জন্য ভূমিকা রাখতে পারত, তাদের অধিকাংশ বরং অন্ধভাবে বিভিন্ন পক্ষ নিয়েছে বা নীরব দর্শকের ভূমিকা গ্রহণ করেছে। সবচেয়ে যা ভয়াবহ, সারা দেশে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হয়েছে যে শাহবাগের গণজাগরণকে নাস্তিকদের আন্দোলন না বললেই কেউ ধর্মবিরোধী হিসেবে অভিহিত হচ্ছেন, আবার সরকারের কোনো কাজের সমালোচনা করলেই কেউ স্বাধীনতাবিরোধী হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছেন।
এই পরিস্থিতির আশু উত্তোরণ প্রয়োজন। সমঝোতার জন্য যা করার, তা-ই করতে হবে প্রধান দুটি দলের রাজনীতিবিদদের। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার অবশ্যই অব্যাহত রাখার এবং সুষ্ঠুভাবে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার প্রশ্নে দুই দল সমঝোতায় পৌঁছাতে পারলে অন্য কোনো শক্তির পক্ষে দেশে অরাজক অবস্থা সৃষ্টি করা সম্ভব নয়। সেই সমঝোতা না হলে আমাদের সবার ভবিষ্যৎ এক ভয়ংকর অনিশ্চয়তার মধ্যে থেকে যাবে।
আসিফ নজরুল: অধ্যাপক, আইন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
শাহবাগে সাইবার যুদ্ধ
হাদিস : নবী (স.) বলেছেন, "শিঙ্গা লাগানো সর্বশ্রেষ্ঠ চিকিৎসা" (আবু দাউদ-২০৯৮), "নবী রোযা, ইহরাম ও স্বাভাবিক অবস্থায় রক্তমোক্ষণ (শিঙ্গা) করিয়েছেন এবং শিঙ্গাকে সবচেয়ে উত্তম চিকিৎসা বলেছেন" (বুখারী-৫২৮২-৪), "মিরাজের রাতে দেখা হওয়া সকল ফিরিস্তা নবীকে ও তার উম্মতকে শিঙ্গা লাগাতে বলেছেন" (তিরমিযী-২০০৩)
এখন ১৩-দফা প্রদান ও সমর্থনকারীগণ দয়া করে বলুন, বাংলাদেশ কিংবা বিশ্বের অন্য কোন দেশে (এমনকি সৌদি আরবসহ মুসলিম দেশগুলোতে) বর্তমানে শিঙ্গা লাগানোর চিকিৎসা আছে কি? আপনারা কি আধুনিক চিকিৎসার বদলে 'শিঙ্গা চিকিৎসা' ব্যবহার করেন? বর্তমান হাসপাতালে-চিকিৎসায় এটা কি বাস্তবায়ন সম্ভব? যদি বর্তমান বাস্তবতায় আপনারা বিষয়টি মানতে না পারেন, তবে অন্যের জন্য ১৩-দফা মানতে বলছেন কেন?
সুতরাং দেশের লাখো কোমলমতি অল্পবয়স্ক মাদরাসা শিক্ষার্থীকে অনুরোধ করবো, রাজনৈতিক স্বার্থে তোমাদেরকে ব্যবহারকারী হেফাজত জামাত-শিবির নেতাদের ফাঁদে পা দিওনা, যারা পবিত্র কোরান পুড়িয়ে বিপদের সময়ে মতিঝিলে তোমাদের একা ফেলে নিজেরা যার-যার নিরাপদ আশ্রমে চলে যায়।
////ড. লজিক্যাল বাঙালি
15th May-1971
কেমন ছিল মুক্তিযুদ্ধের সেই দিনগুলি?
১৫ মে, ১৯৭১
সিলেটের নালুয়া চা বাগানে সিলেট-ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়কে মুক্তিযোদ্ধারা পাকবাহিনীর একটি বড় সামরিক বহরকে এ্যামবুশ করে এবং ভয়ংকর যুদ্ধ হয়। এতে পাকবাহিনীর একটি ট্রাক সম্পূর্ণ ধ্বংস হয় এবং ২৭জন পাকসেনা নিহত হয়। পাকবাহিনীর পাল্টা আক্রমণে মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন মতিউর রহমান সহযোদ্ধাদের নিয়ে নিরাপদ এলাকায় চলে আসেন।
লে. মোরশেদের নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনীর একদল যোদ্ধা সিলেট-ঢ...See More
হেডকোয়ার্টারেও দুর্দশা জামায়াতের!
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
সেই সাক্ষাতকার দেখার পর থেকে তুমুল আগ্রহ ছিল, লাহোরে বা পাকিস্তানে জামায়াতের অবস্থানটা আসলে কি তা জানার? আর সেটি পরিমাপের প্রধান উপায়- নির্বাচন। তাই এবারের পাকিস্তানের নির্বাচনের ফলাফলের উপর চোখ রাখছিলাম।
ভেবেছিলাম জামায়াত আমাদের দেশে ইসলামের নামে যেভাবে তাণ্ডব চালায়, নিশ্চয়ই পাকিস্তানে তাদের হেডকোয়ার্টারেও ভোটের বন্যা বইয়ে দিবে। কিন্তু দুঃখের ও হতাশার ব্যাপার, জামায়াত সেখানে ন্যাশনাল এসেম্বলিতে আসন পেয়েছে মাত্র ৩টি!
১৯৪১ সালে জামায়াত প্রতিষ্ঠার পর পাকিস্তানের প্রথম নির্বাচন হয় ১৯৫৪ সালে। সেখানে তারা অংশ নেয়নি। এরপর ১৯৬২ তেও নয়। ১৯৬৫ সালে সিওপি'র (কম্বাইন্ড অপজিশন পার্টি) মাধ্যমে নির্বাচনে অংশ নেয়। তারা মূলত একক ও স্বাধীন নির্বাচন করে ১৯৭০ সালে। তখন পুরো পাকিস্তানে জামায়াতের আসন ছিল চারটি, তার মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানে একটিও ছিল না!
৪৩ বছর আগে তারা আসন পেয়েছিল ৪টি, এখন ৩। এই দীর্ঘ সময়ে জামায়াতের অগ্রগতি কি?
তারা আসলে একই জায়গায় স্থির হয়ে চার দশক দাঁড়িয়ে আছে। ভোটে যেমন, মননেও তেমন। ১৯৪১ সালে জামায়াত প্রতিষ্ঠার পর থেকে আজ পর্যন্ত তাদের চলনে, বলনে, কর্মে এবং ধর্মে কোনো পরিবর্তন হয়নি। যা কিছু পরিবর্তন তাদের চর্মে। অর্থাৎ চামড়ার রঙ পরিবর্তন করে, মুখে এনামেল মেখে, মুখোশ পরে বারবার তারা আমাদের সামনে আসে। কিন্তু ভাগ্য এতোটাই খারাপ যে, প্র্রতিবারই তাদের ধরাশায়ী হতে হয় ভোটারদের কাছে। পাকিস্তানের ভোটার হোক, কিংবা বাংলাদেশের। বাংলাদেশের চেয়ে পাকিস্তানে তাদের অবস্থা বেশি মুমূর্ষু।
প্রশ্ন হতে পারে, হেডকোয়ার্টারে জামায়াতের এই দুর্দশা, কিন্তু বাংলাদেশে তাদের এতো লম্ফঝম্প কিভাবে? এর কারণ আমাদের গ্রামীণ সমাজ ব্যবস্থার ধর্মান্ধতা, মাদ্রাসামুখী অনাধুনিক তরুণ সমাজকে ইসলামের ভয় দেখিয়ে প্রতারিত করা, মানসিকভাবে প্রভাবিত করা।
কিন্তু তাই বলে পাকিস্তান কি ধর্মান্ধ রাষ্ট্র নয়? তারা কি আমাদের চেয়ে বেশি অগ্রসর? আমি বলবো, নির্বাচনের ফলাফলে চোখ রাখুন, সেখানেই উত্তর খুঁজুন।
জামায়াত আমাদের দেশে যে খুব শক্তিশালী অবস্থানে আছে, সেটাও নয়। তারা সর্বশেষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসন পেয়েছে দু'টি। জন্মের পর জামায়াত এখানে নিষিদ্ধ হয়েছিল একবার, স্বাধীনতার পর। পাকিস্তানেও একবার আইয়ুবের আমলে দাঙ্গা বাধানোর দায়ে নিষিদ্ধ হয়েছিল।
শুধু তাই নয়, জন্মের পর থেকে এখন পর্যন্ত এই দলটি আমির-ওমরা পর্যায়ের সব নেতাই হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত। পাকিস্তানে জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা মওদূদী কাদিয়ানি-মুসলিম দাঙ্গা লাগিয়ে প্রায় হাজার লোক হত্যার দায়ে বিচারের সম্মুখীন হয়ে মৃত্যুদণ্ড পেয়েছিলেন। পরে রাজনৈতিক কারণে সাধারণ ক্ষমা পান।
বিভিন্ন সময়ে জামায়াতকে নিয়ে পাকিস্তান চরম বিপদে ছিল এবং এখনও আছে। সেখানে জামায়াতকে নিয়ে সবচেয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি হয় ১৯৭০ সালের পহেলা নভেম্বর। ফিরোজ খান নামে এক জামায়াত কর্মী ট্রাক ড্রাইভার করাচি বিমানবন্দরে পাকিস্তান সফরে থাকা পোলান্ডের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জিগফ্রিড ওলনিয়াকসহ চারজনকে গাড়ি চাপা দিয়ে হত্যা করে। যদিও পরে জামায়াত নেতারা ওই ড্রাইভার তাদের কর্মী নয় বলে দাবি করেন। পাকিস্তান বৈদেশিক সম্পর্ক রক্ষার্থে একে স্রেফ দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দিতে চাইলেও পরে এ নিয়ে পানি কম ঘোলা হয়নি।
শুধু এটিই নয়, ইতিহাসে জামায়াত দিয়ে যতোগুলো হত্যাকাণ্ড হয়েছে, তার সবগুলোরই দায় অস্বীকার করে দলটি। তারা অত্যন্ত কৌশলে মানুষের ভেতরের পশুটিকে জাগিয়ে দেয়। পরে তাকে সরাসরি জঙ্গিতে পরিণত করে। ১৯৭০ সালের সেই ফিরোজ খান থেকে শুরু করে ২০০৭ সালের বাংলা ভাই পর্যন্ত জঙ্গি তালিকায় যুক্ত প্রায় সবাই কোনো না কোনো বয়সে জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। এছাড়া সরাসরি হত্যাকাণ্ডের মদদ দিয়েছেন জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা সৈয়দ আবুল আলা মওদূদী, একেএম ইউসুফ, গোলাম আজম, মতিউর রহমান নিজামী, কাদের মোল্লা, কামারুজ্জামান, চৌধুরী মঈনুদ্দীন প্রমুখ।
ধর্মীয় বিভ্রান্তমূলক অপব্যাখ্যা দিয়ে এসব হত্যাকাণ্ড ও সামাজিক অস্থিতিশীলতা তৈরি করা হয়।
এদেশ, ওদেশ- দু'দেশেই নির্বাচনে জামায়াতের পরাজয়ের আরেকটি কারণ হলো সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে না পারা। একাত্তরে যেমন জামায়াতের বাংলাদেশ বিরোধী ভূমিকা ছিল, তেমন ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাজনের প্রথম ভাগেও তাদের পাকিস্তান বিরোধী ভূমিকা ছিল। তারা বরাবরই স্বাধীনতা ও পরিবর্তনের ব্যাপারে গোঁয়ার, নিজেরাই নিজেদের নিয়ে বিভ্রান্ত।
'মাদ্রাসার দেশ' পাকিস্তানে জামায়াতের লোকজনকে ধর্মীয়ভাবে বিভ্রান্ত বা গাফেল মনে করা হয়। মওদূদীকে গাফেল বা ভ্রান্ত ধারণার অনুসারী মনে করা হয়। মুসলমান হলেও তারা ইসলামের অনেক তত্ত্ব বিকৃত ও নিজের সুবিধার মতো করে প্রচার করে। সম্ভবত এসব কারণেই জামায়াতের মতো ভ্রান্ত নীতির দলগুলো পরাজিত হয় দেশে দেশে। পরাজিত হয় তাদের হেডকোয়ার্টারেও।
এবার আমাদের পালা তাদের পরাজিত করার। সামনে নির্বাচন তো আসছেই।
লেখক: ব্লগার ও অনলাইন এক্টিভিস্ট
ইমেইল: monowarrubel@yahoo.com
বাংলাদেশ সময়: ২০০০ ঘণ্টা, মে ১৪, ২০১৩
সম্পাদনা: হাসান শাহরিয়ার হৃদয়, নিউজরুম এডিটর/জেডএম
গণতন্ত্র রক্ষার দায়িত্ব কি কেবল শেখ হাসিনার একার?মাসুদা ভাট্টি, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম | ||||||||
বিগত কয়েকদিন যাবত দেশে এক নতুন হাওয়া বইছে। সন্দেহ নেই হাওয়াটি ইতিবাচক। বহু নেতিবাচক ঘটনার ভেতর দিয়ে বাংলাদেশকে প্রতিনিয়ত এগুতে হচ্ছে, এর ভেতর সামান্য ইতিবাচক ইশারাও মানুষকে আশাবাদী করে তোলার জন্য যথেষ্ট। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন বিরোধী দলী নেতা বেগম খালেদা জিয়াকে হরতাল প্রত্যাহারের আহ্বান জানালেন এবং বেগম জিযা যখন তা গ্রহণ করলেন এবং তারপর প্রধানমন্ত্রী তাকে পাল্টা ধন্যবাদ জানালেন তখন এদেশের মানুষ অনেকদিন পরে প্রাণভরে শ্বাস নিতে পেরেছে। যদিও উন্নত গণতান্ত্রিক দেশে এসব খুবই স্বাভাবিক ঘটনা, সেখানে সরকারি দল ও বিরোধী দল দু'পক্ষই দেশের কথা ভাবে, জাতীয় স্বার্থকে সবার ওপরে স্থান দেয় এবং এ ব্যাপারে ঐকমত্যে পৌঁছুতে না পারলে জনগণের ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে, যার প্রভাব শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে গিয়ে পড়ে। কিন্তু এদেশে এরকম কোনো ঘটনা ঘটে না, এদেশে "স্বাভাবিক" প্রক্রিয়াকে "অস্বাভাবিক" বানিয়ে জনগণকে জিম্মি করে জ্বালাও-পোড়াও-নির্যাতন শেষে, অনেক হত্যাকাণ্ডের পরে দু'পক্ষ ইঙ্গিতের ভাষায় কথা বলেন আর এতেই জনগণকে গদগদ থাকতে হয় - কারণ, এছাড়া জনগণের আর কোনো উপায় নেই।
লেখক: সাংবাদিক, গল্পকার, masuda.bhatti@gmail.com বাংলাদেশ সময়: ১১৪৫ ঘণ্টা, মে ০৪, ২০১৩
|
No comments:
Post a Comment