Saturday, May 11, 2013

শাসক প্রভুদের রাজনৈতিক গড়াপেটার বলি হচ্ছে বহুজন...




শাসক প্রভুদের রাজনৈতিক গড়াপেটার বলি হচ্ছে...
Saradindu Uddipan 6:21pm May 11
শাসক প্রভুদের রাজনৈতিক গড়াপেটার বলি হচ্ছে বহুজন সমাজ।
হয় কংগ্রেসের সাথে থাকো নয় বামফ্রন্ট। অথবা তৃণমূল না হলে বিজেপি। চোলাইয়ের মত গেলাতে গেলাতে এই আপ্ত বাক্যটি প্রায় অমৃত ভাষণে পরিণত হয়েছে। অর্থাৎ পবিত্র প্রভূদের ছাড়া গতি নেই। কলৌ নাস্তেবঃ নাস্তেবঃ গতিরন্যথা।

একদা গরীবের হাড়ে দুব্বা গজানোর জমিদার প্রভূদের অপত্য গর্ভের সন্তানদের নিয়ে গঠিত কংগ্রেস দল। ৮০% উপর বামুন প্রভুদের নিয়ে গড়া এই দলটি বহুজন মানুষের কাছে ঢাক ঢোল পিটিয়ে নিজেদের মহিমা কীর্তন করেছে ক্ষমতা হস্তান্তরের আগে থেকে। ক্ষমতা হস্তান্তরের পর প্রতিবছর স্বাধীনতার একফালি ছেড়া কাপড় উড়িয়ে বিস্কুট লেবেঞ্চুস বিতরণ করে দায়িত্ব শেষ
করেছে। খাদি বস্ত্রে মালকোঁচা মেরে কাটিয়ে দিয়েছে ২৫ বছর। উদ্দেশ্য একটাই,"আমরা রক্তের বিনিময়ে তোমাদের স্বাধীনতা দিয়েছি, তোমরা ঘাম-রক্ত দিয়ে সেই কর্জ শোধ কর। আমাদের ছানাপুনাগুলোকে নাদুসনুদুস করে লালনপালন করো। কর্মেই তোমাদের অধিকার। মাফলেসু কদাচন"। ২৫ বছর ধরে পেটে, মুখে, পশ্চাতে ও মাথায় পবিত্র প্রভূদের আশীর্বাদ বহন করছে বাংলার বহুজন।

বঞ্চনা ঘনীভূত হলে একসময় রায়তির অধিকার ও তেভাগা আন্দোলন প্রবলতর হয়ে ওঠে। এই আন্দোলনে ভেজাল মেশাতে কংগ্রেসেরই বাম্পন্থী অংশকে লাল পতাকা হাতে নামিয়ে দেওয়া হয় ময়দানে। এদের একটি অংশ পুলিসের সাথে যোগসাজশ করে বহুজনের ঘর ভেঙেছে। জ্বালিয়ে পুড়িয়ে শেষ করে দিয়েছে ভিটেমাটি। অন্য দলকে তৈরি রাখা হয়েছে ত্রান শিবিরের জন্য। আর
একদল মঞ্চ বেঁধে জুড়ে দিয়েছে ধোঁকাবাজির গান, "কারা আমার ঘর ভেঙেছে স্মরণ আছে"!

সরল,নিরীহ বহুজনের কাছে এ এক মস্ত ধাঁধাঁ। নাগপাশের ভুলভুলাইয়া। নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে আপাত বেঁচে থাকার নিরব স্বীকৃতি স্বরূপ মাক্সবাদীদেরই তারা আপন করে নিয়েছিলেন। মনে করেছিলেন মাক্সবাদই বহুজনের আন্দোলনের প্রকৃত ধারা। শাসক প্রভুরা সহাস্যে,শঙ্খবাদনে, পুস্পবর্ষণে শেষোক্ত বিবর্তনটি আপন করে নিয়েছিলেন। পুরানো চৌখুপির আদল ঠিক রেখে
কেবল সাইন বোর্ডের পরিবর্তন করা হয়েছিল সেদিন। শুরু হয়েছিল মাক্সবাদী পতাকা হাতে মনুবাদের প্রয়োগ। মার্কটুইনের সাথে গোয়েবলসের মিক্সার।

মাক্সবাদীরা বুঝেছিলেন যে,সর্বহারার মতবাদ টিকিয়ে রাখতে হলে,সমাজে সর্বহারা চাই। গুরুবচনের মতোই তারা আউড়ে যেতে থাকলেন, মেহনতি মানুষের সরকার হবে। খেটে খাওয়া মানুষেরাই রাষ্ট্র ক্ষমতায় উঠে আসবে। একটি প্রলোভনের মুলো ক্ষুধার্ত, বঞ্চিত মানুষের সমানে খুড়োর কলের মতো ঝুলিয়ে রেখে আরামে কাটিয়ে দিলেন ৩৪ বছর। সরল মেহনতি মানুষ প্রাণ
দিয়ে আগলে রাখতে চাইলেন বর্ণচোরা বামপন্থীদের। সবকাজের তারাই কাজি। প্রভুরা সুরক্ষিত। তাদের কোন কাজ নেই। নাই কাজ তো খই ভাঁজ। বসে বসে ফন্দী আঁটো। বাঙালী মস্তিষ্কের যতটুকু ঘিলু আছে তার মধ্যে ছাইপাঁশ দিয়ে ঠেশে দাও। যুবকদের মেরুদণ্ডহীন করে দাও। ওরা দালালীতে ব্যস্ত থাকুক। পাক্কা দালাল হয়ে উঠুক সব। অথবা মস্তান। পাড়ায় পাড়ায় ক্লাবগুলি ওদের মাস্তানি আর গুলতানি মারার আখড়া হয়ে উঠুক। পঞ্চায়েতি রাজ কায়েম হোক। প্রভুরা ডিক্লাসড হয়ে পঞ্চায়েতের মাথায় বসে যাক। বহুজন মানুষেরা আহা আহা করে প্রভুদের সেবা কাজে ব্যস্ত থাকুক। ইত্যবসরে সমাজের চিরায়ত স্থিতিশীল আন্তগঠনটি ভেঙেচুরে চুরমার করে দেওয়া হোক যাতে বহুজন সমাজ আর কোনদিন তার নিজের ঘর খুঁজে না পায়। তাদের শ্রম এবং উপার্জনের সবটাই যেন প্রভুরা গণ্ডে পিন্ডে গিলতে পারে তার চিতায়ত ব্যবস্থা করা হোক।

মাক্সবাদীরা মুখে Inclusion'র কথা বললেও আসলে প্রয়োগ করলেন সাম-দাম-দন্ড-ভেদের ডিভাইন নীতি। discrimination theory বা বর্ণবাদ। Declassification তত্ত্বের বহুল প্রয়োগে বামুন ঘরের ছেলে/মেয়েরা জাতীয় স্তর থেকে একেবারে আলু-পটল কারবারীদের ইউনিয়নের নেতা হয়ে উঠলেন। বামপন্থী দলগুলোর ৬৪% ভাগীদারী দখল করে নিলেন মনুবাদীরা। মাক্সবাদী স্কুলে ১০০ বছর ধরেও কোন শোষিত শ্রেণীর প্রতিনিধি উঠে এলো না। অথবা উঠতে দেওয়া হল না। আধুনিকরণ,কর্মসংস্থান,নগরায়ন,শিল্পায়ন ও বিশ্বায়ন হয়ে উঠল উন্নয়নের পরিভাষা। বেছে বেছে
এসসি/এসটি, ওবিসি ও মাইনরিটি অধ্যুষিত এলাকায় sez ঘোষণা করা হল,যাতে ৮৫% বহুজনের হাতে থাকা মাত্র ৮% জমি কেড়ে নেওয়া যায়। অর্থাৎ ভারতীয় মাক্সবাদ হয়ে দাঁড়ালো চিরাচরিত ব্রাহ্মন্যবাদী বা মনুবাদের প্রয়োগশালা। মহান প্রভুদের একচ্ছত্রবাদ হাসিল করার আখড়া।

সিঙ্গুর,নন্দীগ্রাম থেকেই রাজনৈতিক গড়াপেটার এই শয়তানী চক্র বহুজন সমাজের গলায় ফাঁস হয়ে এঁটে বসে। লাল গড় আন্দোলনের শেষ ভাগে এসে হাড়ে হাড়ে অনুভুত হয় শ্বাসরোধকারী যন্ত্রণা। দিনের আলোর মত পরিষ্কার হয়ে যায় যে চিরায়ত প্রভুরা চাইছেন না সাধারণ মানুষের নেতৃত্বে জনগণতান্ত্রিক বিপ্লব কায়েম হোক। সিধো সোরেন,ছত্রধর মাহাতোরা রাজনৈতিক
ভাগিদারী আদায় করার জন্য উঠে আসুক। জনগণকে বিপথ চালিত করার জন্যই তারা মাওবাদী ঘাতকদের আমদানি করে। দালালী করার জন্য বুদ্ধিজীবীদের ভাড়া করা হয়। এই সব বুদ্ধিজীবী ও মাওবাদীরা আবার মঞ্চ বেঁধে তোড়জোড় করে গাইতে শুরু করেন,
"হেই সামালো ধান হো,
কাস্তেটা দাও শান হো
জান কবুল আর মান কবুল
আর দেবোনা আর দেবোনা
রক্তে বোনা ধান মোদের প্রাণ হো"।
গোপনে গোপনে তৃণমূলের পতাকা উড়িয়ে দিয়ে গোটা জনগণতান্ত্রিক আন্দোলনকে তৃণমূলের জিম্মায় গচ্ছিত করে দেয় মাওবাদীরা। কিষাণজি মমতাকেই মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চাই বলে দাবী করেন। মেট্রো চ্যানেলে অনশন মঞ্চ,জাতীয় সড়ক অবরোধ করে অবস্থান এবং ছত্রধর মাহাতোর বিরুদ্ধে লিফলেট বিলি করে তৃণমূলকে ভোট দেওয়ার জন্য অনুরোধ করে বামপন্থীরাও মমতার উত্থানকে সহযোগিতা করেন। হ্যাঁ,এ যেন আবার সেই বামপন্থী ধোঁকা। বাম ছেড়ে অতিবাম। Nine circle of hell। তাপসী মালিকে দগ্ধ উলঙ্গ দেহ, ধর্ষিতা রাধারানী আড়ির আর্তনাদ, সিধো সোরেন সহ অসংখ্য লাশ। লাশ আর লাশ। প্রনম্য প্রভুদের রেড কার্পেট অভিবাদনের জন্য বহুজনের সস্তা লাশ।

তৃণমূলের এই ২ বছরের শাসনকাল আসলে জনগণের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধের কাল। অন্নদাতা বহুজন সমাজ প্রভূদের জন্য কতটা আত্মবলিদান করতে পারে তা দেখেনেবার কাল। সমীক্ষণের কাল। মুল্যায়নের কাল এবং আগামী দিনে প্রভূসমাজের অস্তিত্ব সুনিশ্চিত করার জন্য নির্দেশিকা রচনা করার কাল। সারদা কাণ্ডে জনগণের বিরুদ্ধে শোষক প্রভুদের যুদ্ধের কৌশল জনগণ যদি বুঝতে পেরে যায়; অথবা মা-মাটি-মানুষ শ্লোগানের ভণ্ডামির ভেক যদি শেষ পর্যন্ত ধরা পড়ে যায় তবে প্রবল ভাবে কংগ্রেস, বিজেপি বা বামপন্থীদের এগিয়ে দেবে প্রভুরা। তাদের মিডিয়াগুলোতে ২৪ ঘণ্টা পালা কীর্তন চলবে। কোন একটি ধারাকে মহিমান্বিত করে সর্বজন গ্রহণযোগ্য করে তোলা হবে। বহুজন সমাজকে প্রতিশ্রুতি দিয়ে, প্রলোভন দেখিয়ে পুরে দেওয়া হবে নির্দিষ্ট খোঁয়াড়ে। শাসক প্রভূদের স্বার্থেই পরিকল্পিত ভাবে বলি প্রদত্ত হবে বহুজন সমাজ।

View Post on Facebook · Edit Email Settings · Reply to this email to add a comment.

No comments:

Post a Comment