Thursday, May 2, 2013

নৃশংসতার কাছে শেষ পর্যন্ত হার মানলেন সরবজিত্ সিংহ হার মানলেন ভারতের ব্রাহ্মণ্যতান্ত্রিক ধর্মান্ধ জাতীয়তাবাদী জায়নবাদী কর্তৃত্ব ও পাকিস্তানের ইসলামি সৈন্যতন্ত্রের কাছে৤ স্বৈরাচারের কাছে৤ হার মানলিন ভারতীয় রাজনীতি ও বিদেশ নীতির কাছে ইতিমদ্যেই আদালত থেকে বেকসুর খালাস হয়েছে কংগ্রেসী নেতা ও শিউ নিধন যজ্ঞের পুরোহিত৤ শিখদের হিন্দু বলে প্রতারিত করার ছক এভাবেই চলবে৤ ইতিমধ্যে নানা রকম তদন্তের মধ্য, তোলপাড় রাজনীতির আবহে দিন প্রতিদিন যারা রাজনৈতিক সংরক্ষণে চিটফান্ডে টাকা রেখে সর্বস্বান্ত হয়েছেন, তাঁদের জন্য কোনো সুখবর নেই৤ রাজ্যের পক্ষে শারদা গ্রুপের বিরুদ্ধে এফআঈআর এখনো হয় নি৤ তাঁদেরএকটি সম্পত্তিও বাজেয়াপ্ত হয়নি৤ পলাশ বিশ্বাস

বিশেষ বিমানে সরবজিতের দেহ ভারতে আনা হবে

 নৃশংসতার কাছে শেষ পর্যন্ত হার মানলেন সরবজিত্ সিংহ হার মানলেন ভারতের ব্রাহ্মণ্যতান্ত্রিক ধর্মান্ধ জাতীয়তাবাদী জায়নবাদী কর্তৃত্ব ও পাকিস্তানের ইসলামি সৈন্যতন্ত্রের কাছে৤ স্বৈরাচারের কাছে৤ হার মানলিন ভারতীয় রাজনীতি ও বিদেশ নীতির কাছে ইতিমদ্যেই আদালত থেকে বেকসুর খালাস হয়েছে কংগ্রেসী নেতা ও শিউ নিধন যজ্ঞের পুরোহিত৤ শিখদের হিন্দু বলে প্রতারিত করার ছক এভাবেই চলবে৤ ইতিমধ্যে নানা রকম তদন্তের মধ্য, তোলপাড় রাজনীতির আবহে দিন প্রতিদিন যারা রাজনৈতিক সংরক্ষণে চিটফান্ডে টাকা রেখে সর্বস্বান্ত হয়েছেন, তাঁদের জন্য কোনো সুখবর নেই৤ রাজ্যের পক্ষে শারদা গ্রুপের বিরুদ্ধে এফআঈআর এখনো হয় নি৤ তাঁদেরএকটি সম্পত্তিও বাজেয়াপ্ত হয়নি৤


 পলাশ বিশ্বাস

দয়া করে দেখুনঃ


বিশেষ বিমানে সরবজিতের দেহ ভারতে আনা হবে

 নৃশংসতার কাছে শেষ পর্যন্ত হার মানলেন সরবজিত্ সিংহ হার মানলেন ভারতের ব্রাহ্মণ্যতান্ত্রিক ধর্মান্ধ জাতীয়তাবাদী জায়নবাদী কর্তৃত্ব ও পাকিস্তানের ইসলামি সৈন্যতন্ত্রের কাছে৤ স্বৈরাচারের কাছে৤ হার মানলিন ভারতীয় রাজনীতি ও বিদেশ নীতির কাছে ইতিমদ্যেই আদালত থেকে বেকসুর খালাস হয়েছে কংগ্রেসী নেতা ও শিউ নিধন যজ্ঞের পুরোহিত৤ শিখদের হিন্দু বলে প্রতারিত করার ছক এভাবেই চলবে৤ ইতিমধ্যে নানা রকম তদন্তের মধ্য, তোলপাড় রাজনীতির আবহে দিন প্রতিদিন যারা রাজনৈতিক সংরক্ষণে চিটফান্ডে টাকা রেখে সর্বস্বান্ত হয়েছেন, তাঁদের জন্য কোনো সুখবর নেই৤ রাজ্যের পক্ষে শারদা গ্রুপের বিরুদ্ধে এফআঈআর এখনো হয় নি৤ তাঁদেরএকটি সম্পত্তিও বাজেয়াপ্ত হয়নি৤
ছদিনের লড়াই শেষ। নৃশংসতার কাছে শেষ পর্যন্ত হার মানলেন সরবজিত্ সিং। ভারতীয় সময় রাত দেড়টা নাগাদ লাহোরের জিন্না হাসপাতালে মৃত্যু হয় সরবজিত্ সিংয়ের। তাঁর দেহ জিন্না হাসপাতালের মর্গে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য তৈরি হয়েছে বিশেষ মেডিক্যাল টিম। সরবজিত সিংয়ের দেহ তাঁদের হাতে তুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে তাঁর পরিবার। সরবজিতকে শহীদের স্বীকৃতি দেওয়ারও দাবি জানিয়েছে তাঁরা। একইসঙ্গে তাঁদের দাবি, পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সরবজিত সিংয়ের শেষকৃত্য হোক। 

সারদার কলকাতা: লাভের ফাঁদে পা দিয়ে সর্বস্বান্ত কয়েক লাখ মানুষ৷ হাজার হাজার কোটি টাকার ক্ষতির পাশাপাশি এই কেলেঙ্কারি আঘাত হেনেছে সাধারণ মানুষের বিশ্বাসেও৷ সারদাকাণ্ডের প্রভাব পড়েছে অন্যান্য ছোট-বড় লগ্নি সংস্থাগুলির ওপর৷ তার প্রমাণ গত কয়েকদিনের ছবি৷ রাজ্যজুড়ে কোথাও লগ্নি সংস্থার দফতরে বিক্ষোভ-ভাঙচুর, কোথাও বা মেয়াদ ফুরনোর আগেই টাকা ফেরত চাইতে ভিড়৷ প্রকাশ্যে আসছে একাধিক প্রতারণার অভিযোগও৷ 
২৫ এপ্রিল শ্যামনগরের রামকৃষ্ণ পল্লির এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে সানমার্গ সংস্থার এক কর্তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ৷ পুলিশের দাবি, তাঁর কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় তিনটি বিস্কুটের পেটিতে রাখা ৭২ লক্ষ টাকা৷ ২৭ এপ্রিল টাকা ফেরতের দাবিতে মুর্শিদাবাদের রানিনগরের পীরতলাতে 'জেম ড্রিম অফ ইন্ডিয়া নামে' লগ্নি সংস্থার সামনে বিক্ষোভ দেখান এজেন্ট ও আমানতকারীরা৷ ভাঙচুর করা হয় সংস্থার কর্তার বাড়িতে৷ ২৯ এপ্রিল টাকা ফেরতের দাবিতে বেলেঘাটায় সানমার্গ সংস্থার দফতরের সামনে জড়ো হন এজেন্ট ও আমানতকারীরা৷ শুক্লা সাহা নামে এক এজেন্টের নেতৃত্বে প্রায় এক কোটি টাকা তোলা হয়েছিল বলে তাঁরা অভিযোগ করেন৷ ২৯ এপ্রিল হুগলির আরামবাগে ইউরো গ্রুপের অফিস সিল করে দেয় পুলিশ৷ আমানতকারীদের অভিযোগ, তাঁদের মেয়াদ উত্তীর্ণ টাকা ফেরত দেয়নি ওই সংস্থা৷ সারদা কাণ্ড প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই বন্ধ করে দেওয়া হয় অফিসটি৷ শুধু প্রতারণার অভিযোগই নয়, লগ্নি সংস্থার সঙ্গে রাজনৈতিক নেতাদের যোগাযোগের অভিযোগেও সরব স্থানীয় বাসিন্দারা৷ ৩০ এপ্রিল
দুর্গাপুরের বাসিন্দা অজিত দাস অভিযোগ করেন, ২০০৯ সাল থেকে কিস্তিতে টাকা জমা রাখেন তিনি৷ সংস্থার তরফে জমি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও, হঠাত্‍ সংস্থাটি দফতরে তালা ঝুলিয়ে চম্পট দেয়৷ অভিযোগের ভিত্তিতে মঙ্গলবার সংস্থার দফতরে তল্লাশি চালায় পুলিশ৷ 
৩০ এপ্রিল নদিয়ার কোতোয়ালিতে ডিওয়াইএফআই কৃষ্ণগর উত্তর লোকাল কমিটির সদ্যস সুজিত মিত্রর বিরুদ্ধেই লগ্নি সংস্থার নামে প্রতারণার অভিযোগ ওঠে৷ দলীয় নেতৃত্ব অবশ্য জানিয়েছে, প্রমাণ মিললে ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷ ৩০ এপ্রিল হুগলির গোল্ড মাইন লগ্নি সংস্থায় আমানতকারীরা টাকা ফেরত চাইতে গেলে কর্তারা তা দিতে অস্বীকার করেন বলে অভিযোগ৷ এই ঘটনা গড়ায় বচসা, মারামারি পর্যন্ত৷ আজ লগ্নির নামে প্রতারণার অভিযোগে কলকাতায় গ্রেফতার করা হয় আস্থা ইনফ্রাকন নামে এক লগ্নি সংস্থার দুই অধিকর্তাকে৷ আজই হুগলির আরামবাগে একটি লগ্নি সংস্থার অফিসে তল্লাশি চালিয়ে বেশ কিছু নথি বাজেয়াপ্ত করে পুলিশ৷ সংস্থার এক কর্মী গ্রেফতার হয়েছেন৷ 

সারদায় লাভের লোভে সর্বস্বান্ত হয়েছেন অসংখ্য মানুষ৷ যার জেরে গত কয়েকদিনে কার্যত বিপর্যস্ত অন্য লগ্নি সংস্থাগুলিও৷ কমছে লগ্নি৷ ফেরত মিলবে তো টাকা? নাকি সারদার মতো সবই যাবে জলে? সারদাকাণ্ডের পর প্রতি মুহূর্তে মুখোমুখি হতে হচ্ছে অসংখ্য প্রশ্নের৷

এবিপি আনন্দ

আকাশছোঁয়া সুদের হাতছানিতে সাড়া দিয়ে লগ্নি সংস্থায় টাকা রেখে বিপর্যস্ত হয়ে আত্মহত্যা চলছেই৷বুধবার মুর্শিদাবাদের আজিমগঞ্জ রেল স্টেশনের কাছে লাইনের ধার থেকে উদ্ধার হয় এক যুবকের দেহ৷ মৃতের নাম নবীন মাহাত৷ প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, এ দিন সকালে ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি৷ তাঁর বাড়ি জিয়াগঞ্জ থানার বরানগরের মাহাতপাড়ায়৷ সাতদিন আগে বাবা হন৷ একটি ছোট মেয়েও আছে৷
প্রতিবেশীদের দাবি, লগ্নি সংস্থায় টাকা খুইয়ে মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন ওই যুবক৷ তার জেরেই আত্মঘাতী হয়েছেন তিনি৷ গত ২৬ এপ্রিল পুরুলিয়ার বলরামপুরে তপন বিশ্বাস নামে এক যুবকের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়৷ তাঁর দাদা শক্তিপদ বিশ্বাসের অভিযোগ, তপন লক্ষাধিক টাকা লগ্নি করেছিলেন সারদার বিভিন্ন প্রকল্পে৷ এজেন্টের সঙ্গে যোগাযোগ করেও টাকা ফেরত পাননি৷ সেই অবসাদ থেকেই আত্মহত্যা করেছেন বলে দাবি তাঁর পরিবারের৷ ২১ এপ্রিল দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুরে ঊর্মিলা প্রামাণিক নামে লগ্নি সংস্থায় আমানতকারী এক মহিলার অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়৷ পরিবারের দাবি, সারদা গোষ্ঠীতে ৩০ হাজার টাকা রেখেছিলেন ওই মহিলা৷ সারদাকাণ্ডের পর গায়ে আগুন দেন তিনি৷ বাঁকুড়ার যুবক যাদব মাঝি৷ থাকতেন দুর্গাপুর৷ মায়াবাজারের দোকানে কাজ করতেন৷ এলাকাবাসীরা জানিয়েছেন, সারদার এজেন্ট ছিলেন৷ সারদাকাণ্ডের পর ১৯ এপ্রিল তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়৷ প্রতিবেশীদের দাবি, অনেকের থেকে টাকা তুলেছিলেন যাদব৷ কী ভাবে টাকা ফেরত দেবেন, সেই দুশ্চিন্তা থেকেই আত্মহত্যার পথ বেছে নেন তিনি৷ এই পরিস্থিতিতে লগ্নি সংস্থা নিয়ে কঠোর আইনের পক্ষে সওয়াল করেছেন বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সেবি-র চেয়ারম্যান ইউ কে সিংহ৷ অন্যদিকে, লগ্নি সংস্থাগুলির বেআইনি কারবার রুখতে নতুন বিল পাস করেছে রাজ্য সরকারও৷ সরকার আশাবাদী, নতুন আইন দিয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া যাবে প্রতারকদের বিরুদ্ধে৷ 

দেশের মাটিতে আর ফেরা হল না সরবজিতে। প্রায় এক সপ্তাহ গভীর কোমায় থাকার পর লাহোরের জিন্না হাসপাতালে মৃত্যু হল সরবজিত্‍ সিং-এর। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে হৃদযন্ত্র পুরোপুরি ভাবে বন্ধ হয়ে যায় সরবজিতের। স্থানীয় সময় রাত একটা নাগাদ সরবজিতের মৃত্যুর খবর তাঁকে জানিয়ে হাসপাতাল থেকে ফোন করা হয় বলে জানিয়েছেন তাঁর চিকিত্‍সার দায়িত্বে থাকা মেডিক্যাল বোর্ডের প্রধান মেহমুদ শৌকত।

তাঁকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা কম হয়নি। পরিবারের হাজার অনুরোধ, রাজনৈতিক মহলের চাপ, সবই ব্যর্থ হয়েছে বারবার। পাকিস্তানের জেলে এভাবেই কেটে গিয়েছে দীর্ঘ বাইশ বছর। যৌবনে ফেলে আসা স্ত্রী প্রৌঢ় হয়েছেন, বড় হয়ে গিয়েছে সন্তান। একাধিকবার আশার আলো দেখা দিয়েছিল। এই হয়তো ছাড়া পেলেন সরবজিত্‍। পাক জেল থেকে তাঁর মুক্তি পাওয়ার গুজবও রটে যায়। কিন্তু কোথায় কী? সুস্থ অবস্থায় নয়, এমনকী, চিকিত্‍সার জন্যও দেশে ফেরা হল না কোমাচ্ছন্ন সর্বজিতের। শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানের মাটিতেই মৃত্যু হল তাঁর।

লাহোরের যে জেলে বন্দি ছিলেন সরবজিত্‍ গত শুক্রবার সেই কোট লাখপত জেলে ছয় জন বন্দি মিলে তাঁর উপর হামলা চালায়। ইঁট দিয়ে মাথায় আঘাত করা হত তাঁকে। ছুরি দিয়ে মুখে মারা হয়, ক্ষতবিক্ষত করে দেওয়া হয় ঘিয়ের টিনের ধারালো অংশ দিয়ে। যে ভাবে অস্ত্র জোগাড় করে সুযোগ বুঝে তাঁর উপর হামলা চালানো হয়েছিল, তাতে রীতিমতো পরিকল্পনা করেই এই আক্রমণ বলে স্পষ্ট। সেই থেকেই গভীর কোমায় আচ্ছন্ন হয়ে লাহোরের জিন্না হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন সরবজিত্‍ সিং। বুধবার সকালেই হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছিল যে সরবজিতের শারীরিক অবস্থারও আরও অবনতি ঘটেছে। তাঁর সুস্থ হয়ে ওঠার আর কোনও সম্ভাবনাই নেই বলে জানানো হয়। হৃদযন্ত্র তখনও কাজ করলেও, মস্তিষ্কের ক্রিয়া পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় তাঁর। এরপর বৃহস্পতিবার গভীর রাতে হদযন্ত্রও কাজ করা বন্ধ যায় সরবজিত্‍ সি-এর।

গত মঙ্গলবার তাঁকে দেখতে হাসপাতালে যান সরবজিতের স্ত্রী সুখপ্রীত কউর, দুই মেয়ে পুনম ও স্বপনদীপ ও বোন দলবীর কউর। ১৯৯০ সালে লাহোরের বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় অভিযুক্ত হিসেবে গ্রেফতার হন সরবজিত্‍। তবে ভুল করে তাঁকে গ্রেফতার করা হয় বলে দাবি তাঁর পরিবারের। সরবজিতের মৃতদেহ ভারতে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছে পাকিস্তান সরকার।


১৯৮৪-এর শিখ দাঙ্গায় অভিযুক্ত কংগ্রেস নেতা সজ্জন কুমারের বেকসুর খালাসের প্রতিবাদে রাস্তায় নামল দিল্লি। প্রতিবাদকারীদের মধ্যে বেশীরভাগই দাঙ্গার শিকার হওয়া পরিবারগুলির সদস্য। গতকাল কারকাডুমার বিশেষ সিবিআই আদালত সজ্জন কুমারকে ১৯৮৪-র দাঙ্গা সংক্রান্ত মামলায় মুক্তি দেয়।

বুধবার তিলক নগর পুলিস স্টেশনের কাছে বেশকিছু মানুষ বিক্ষোভ দেখান। তাঁদেরই কয়েকজন সুভাষ নগর মেট্রো স্টেশনে ঢুকে লাইনে নেমে পড়ে। ফলে মেট্রো কতৃপক্ষ স্টেশন বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়। প্রতিবাদ জানানো হয় জম্বু-পাঠানকোট জাতীয় সড়কেও। সকালে রাস্তা অবরোধ করে ইউপিএ সরকারের বিরুদ্ধে মুখর হন প্রতিবাদকারীরা। 

দিল্লি ক্যান্টনমেন্ট অঞ্চলে ৮৪-এর দাঙ্গায় খুন, ডাকাতি, দাঙ্গা সংগঠিত করা, হিংসায় উস্কানি এবং সাধারণ মানুষের সম্পত্তি নষ্ট করার মত গুরুতর অভিযোগ আনা হয়েছিল সজ্জন কুমারের বিরুদ্ধে। সব কটি অভিযোগ থেকেই মুক্তি দেওয়া হয়েছে তাঁকে।

নানাবতী কমিশনের রিপোর্টের ভিত্তিতে সজ্জন কুমারের বিরুদ্ধে ২০০৫ সালে মামলা দায়ের হয়। ২০১০-এর জানুয়ারিতে সিবিআই সজ্জন কুমারের বিরুদ্ধে দুটি চার্জশিট পেশ করে।


চিটফান্ড কেলেঙ্কারি মামলায় আজ হাইকোর্টে হলফনামা দেবে রাজ্য সরকার। হলফনামার বয়ান স্থির করতে গতকাল জরুরি বৈঠকে বসেন মুখ্যমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী, মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব এবং রাজ্য পুলিসের ডিজি।ভিও- চিটফান্ড কেলেঙ্কারি রুখতে এখনও পর্যন্ত কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে রাজ্য সরকারের কাছে তা জানতে চেয়েছে হাইকোর্ট।  দায়ের হওয়া একটি জনস্বার্থ মামলার প্রেক্ষিতেই সরকারের কাছে এবিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে।  

বৃহস্পতিবার আদালতে হলফনামা জমা দিয়ে সেবিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দেবে সরকার।  তার আগে বুধবার হলফনামার বয়ান চূড়ান্ত করতে জরুরি বৈঠকে বসেন মুখ্যমন্ত্রী। বৈঠকে হাজির ছিলেন অর্থমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী, মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব এবং রাজ্য পুলিসের ডিজি। বৃহস্পতিবার রাজ্য সরকার হলফনামায় যেবিষয়গুলি জানাতে চলেছে...
 
হলফনামার বয়ান

মালিক সুদীপ্ত সেন সহ সারদাকাণ্ডে অভিযু্ক্তরা এই মুহুর্তে পুলিসি হেফাজতে
 
সেবি পাঠানো তালিকা অনুযায়ী তিয়াত্তরটি চিটফান্ড কোম্পানির বিষয়ে ইতিমধ্যেই খোঁজ খবর শুরু করেছে অর্থ ও স্বরাষ্ট্র দফতর
 
তালিকাভুক্ত সংস্থাগুলির আয়ব্যয়ের হিসেব খতিয়ে দেখতে সংশ্লিষ্ট জেলার এসপিদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে
 
সেবির তালিকায় নাম নেই এমন চিটফান্ড সংস্থার বিষয়েও খোঁজ নিচ্ছে রাজ্য সরকার
 
ভুঁইফোড় অর্থলগ্নি সংস্থা সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে ইতিমধ্যেই ১১ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে
 
লিফলেট ও গানের মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে
 
বিভিন্ন সরকারি স্বল্পসঞ্চয় প্রকল্পে মানুষের উত্সাহ বাড়ানোর দিকে নজর দেওয়া হচ্ছে 
 
সেবি ও আরবিআইয়ের তালিকা নাম নেই এমন মোট ৫টি সংস্থার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চলেছে রাজ্য সরকার


সারদা কাণ্ডে সুদীপ্ত সেন ও দেবযানী মুখার্জিকে জেরা করে উঠে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য। দু'জন নতুন ব্যক্তির নাম উঠে এসেছে তদন্তে। এর ভিত্তিতেই গণেশ দে ও অঞ্জন ভট্টাচার্যকে জেরা শুরু করে গোয়েন্দারা। বুধবার প্রায় আধ ঘণ্টা তাঁদের জেরা করা হয়। গণেশ দে প্রাক্তন অর্থমন্ত্রীর আপ্তসহায়ক। পরিচয় জানা গিয়েছে অঞ্জন বাবুরও। তিনি হিটকোর প্রাক্তন পিআরও। 

এ দিনের জেরার পর পুলিস সুত্রে জানা গিয়েছে, ভরাডুবির আঁচ আগেই পেয়েছিল সারদাকর্তা সুদীপ্ত সেন। ফেব্রুয়ারিতে সল্টলেকে সংস্থার এজেন্টের সঙ্গে মিটিং হয় তাঁর। সেই মিটিংয়ে এজেন্টদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন তিনি। এজেন্টরা অভিযোগ তোলেন চেক বাউন্সের। কাজ করতে অসুবিধা হচ্ছে বলেও জানান তাঁরা। এই নিয়েই সুদীপ্তর সঙ্গে ঝামেলা শুরু হয়। সে বারের মতো পরিস্থিতে সামাল দেন দেবযানী মুখার্জি। ১০ দিন পর ফের সল্টলেকে মিটিং হয়। সেখানেও এজেন্টরা সুদিপ্ত সেনের সামনে ক্ষোভ উগড়ে দেন। এমনকী, জুতো ছুঁড়ে মারার হুমকি দেওয়া হয় সংস্থার সর্বময় কর্তাকে। এজেন্টরা গালিগালাজ করে সুদীপ্তকে। অবস্থা বেগতিক দেখে ১৬ এপ্রিলের মধ্যে সমস্যা মেটানোর আশ্বাস দেন সুদীপ্ত। কিন্তু তার আগেই গা ঢাকা দেন তিনি। 

জেরায় সুদীপ্ত সেন জানিয়েছিলেন, এ রাজ্যে ব্যবসা করতে গিয়ে অনেক পুলিসকর্তাকেও তুষ্ট করতে হয়েছে তাঁকে। পুলিসকর্তাদের সঙ্গে সারদার যোগের সেই বিষয়টিই এবার প্রকাশ্যে এল। গোয়েন্দাদের দাবি, জেরায় সুদীপ্ত সেন জানিয়েছেন, বারুইপুর থানার আইসি সুব্রত কংসবণিককে বছরখানেক আগে একটি দামি গাড়ি উপহার দেন তিনি। গাড়ির নম্বর WB-20U640। পুলিসকর্তাকে উপহার দেওয়া গাড়িটি বাজেয়াপ্ত করেছে ইলেকট্রনিক্স কমপ্লেক্স থানার পুলিস।

এই ঘটনার তদন্তে আজ নিউটাউন থানায় যান দক্ষিণ ২৪ পরগনার অতিরিক্ত পুলিস সুপার কঙ্করপ্রসাদ বারুই। সুদীপ্ত সেনকে জেরা করার পাশাপাশি বিধাননগর পুলিসের গোয়েন্দাদের সঙ্গেও কথা বলেন তিনি। এদিকে সুদীপ্ত সেনের বিরুদ্ধে নতুন করে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলায় আত্মহত্যায় প্ররোচনা এবং প্রতারণার চারটি অভিযোগ জমা পড়েছে। সারদা কর্তার বিরুদ্ধে বারুইপুর এবং সোনারপুর থানায় ৩০ কোটি টাকা প্রতারণার অভিযোগ এনেছেন এজেন্টরা। আজ নিউটাউন থানায় এবিষয়েও সুদীপ্ত সেনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার অতিরিক্ত পুলিস সুপার।  

সারদা কর্তা সুদীপ্ত সেনের বয়ান আদপেও কতটা সত্যি তা খতিয়ে দেখতে এ দিন জেরা তাঁকে করে বিধাননগর থানার পুলিস। বুধবার সারদা গোষ্ঠীর এক কর্মীর গোপন জবানবন্দি নেওয়া হয় বিধাননগর আদালতে। এরপর আরও কয়েকজন কর্মীর গোপন জবানবন্দি নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে পুলিস।


উনিশশো নব্বই সাল থেকে পাকিস্তানের জেলে বন্দি ছিলেন সরবজিত্ সিং। তিনি লাহোর ও মুলতানে বিস্ফোরণের ষড়যন্ত্রে অভিযুক্ত। সরবজিতকে মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি দেয় পাক আদালত। সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আবেদন খারিজ করে দেয় পাক সুপ্রিম কোর্টও। সরবজিতের প্রাণভিক্ষার আবেদন খারিজ করে দেন প্রাক্তন পাক প্রেসিডেন্ট পারভেজ মুশারফ। এরপরে পাকিস্তান পিপলস পার্টি নেতৃত্বাধীন পাক সরকার অনির্দিষ্টকালের জন্য সরবজিতের প্রাণদণ্ড কার্যকরের প্রক্রিয়া স্থগিত করে দেয়। এই পরিস্থিতিতেই গত শুক্রবার লাহোরের কোট লাখপত জেলে সরবজিতের ওপর হামলা চালায় ছয় পাক বন্দি। তাঁর মাথায় ইট দিয়ে বারবার আঘাত করা হয়। উদ্ধার করার পর লাহোরের জিন্না হাসপাতালে ভর্তি করা হয় সরবজিতকে। দ্রুত কোমাচ্ছন্ন হয়ে পড়েন তিনি। উপযুক্ত চিকিত্সার জন্য সরবজিতকে দেশে ফেরানোর অনুমতি চেয়ে পাকিস্তান সরকারকে বার বার অনুরোধ জানায় ভারত। কিন্তু তাতে  সাড়া দেয়নি ইসলামাবাদ। যদিও, সরবজিতের বোন, স্ত্রী ও দুই মেয়ের পনেরোদিনের ভিসা মঞ্জুর করে পাকিস্তান। রবিবার তাঁরা হাসপাতালে গিয়ে সরবজিতকে দেখে আসেন। 

সরবজিতের মৃত্যুর পর থেকে ক্ষোভে ফুটছে দেশ, ভারত-পাক সম্পর্ক অবনতির ইঙ্গিত, টাইম-লাইন

১১টা ১৬: প্রত্যেক ভারতীয়ের এখন একটাই প্রশ্ন। ভারত পাকিস্তানকে এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কী বার্তা দেবে। মন্তব্য বিজেপি নেত্রী স্মৃতি ইরানির। 

১১টা১৫: কংগ্রেস সহসভাপতি রাহুল গান্ধী দিল্লিতে সরবজিতের পরিবারের সঙ্গে দেখা করলেন

১১টা ০৫: এসএডি সাংসদ হরসিমরাত কাউর জানালেন পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন সরবজিতকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেওয়া হপবে। তাঁর দুই কন্যা চাকরি পাবেন বলেও জানআলেন তিনি। 

১১টা: কেন্দ্রীয় বিদেশমন্ত্রী সলমন খুরশিদ জানালেন সরবজিতের মৃত্যু ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কে আঘাত হানল। খুরশিদ জানালেন সরবজিতের মৃত্যু নিয়ে সরকার সংসদে বিবৃতি প্রকাশ করবে। 

১০টা ৪৫: সমস্ত নিয়মকানুন শেষ করেই সরবজিতের মৃত দেহ ভারতীয় হাইকমিশনের হাতে তুলে দেওয়া হবে বলে জানাল পাকিস্তানের বিদেশ মন্ত্রক।

১০টা ৪৫: জিন্না হাসপাতালের সেরা এবং ঐকান্তিক প্রচেষ্টা সত্বেও সরবজিতকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। মন্তব্য পাক বিদেশ মন্ত্রকের।

১০টা ৪০: 'নিষ্পাপ সরবজিতকে হত্যা করেছেন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারি।' 'জারদারি একজন ভারতীয়কে হত্যা করেছেন।' 'সরবজিতে শহীদ।' মন্তব্য করলেন সরবজিতের বোন দলবির কাউর। 

১০টা ৩৩: এই ঘটনা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। পাকিস্তান আবার তার আসল রঙ দেখাল। মন্তব্য সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী কমলনাথের। 

১০টা ১৫: একজন ভারতীয়কে ঠাণ্ডা মাথায় হত্যা করা হল পাকিস্তানে। এই ঘটনা বর্বরোচিত এবং অমানবিক। কোনও সভ্যদেশ তাদের বন্দীদের সঙ্গে এই ধরনের আচরণ করে না। পাকিস্তানকে এই ঘটনার জবাবদিহি করতে হবে। মন্তব্য কংগ্রেসের মণীশ তেওয়ারির। 

১০টা ৫: সরবজিতের মৃত্যু হয়েনি। তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। পাকিস্তানে কোনও রকম আইন নেই। নেই মানবাধিকার। ভারতের সরকারও ইসলামাবাদের উপর চাপ বাড়িয়ে সরবজিতকে রক্ষা করতে ব্যর্থ। মন্তব্য বিজেপির মীনাক্ষী লেখির। 

১০টা: সরবজিত অপরাধী ছিলেন না। তাঁকে মানবিকতার খাতিরেও মুক্তি দেওয়া হল না। পুরো ঘটনাতেই ষড়যন্ত্রের আভাস স্পষ্ট। জানালেন এসজিপিসি প্রেসিডেন্ট অবতার সিং মাক্কার। 

৯টা ৫৫: কংগ্রেসের রশিদ আলভি জানালেন এই ঘটনার জন্য পাকিস্তান সম্পূর্ণ দায়ী। তিনি সরবজিতের মৃত্যুকে হত্যা বলে দাবি করলেন।

৯টা ৪৫: সরবজিতের শহর পাঞ্জাবের ভিখিউইন্ড প্রতিবাদে উত্তাল।

৯টা ১৫:  সরবজিতের দেহ ফিরিয়ে আনার জন্য পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার কথা ঘোষণা ভারতীয় হাই কমিশনার শরত শাভারওয়ালের। 

৯টা ১০: সম্ভবত বিশেষ হেলিকপ্টারে সরবজিতের দেহ ফিরিয়ে আনা হবে ভারতে। 

৮টা ৪৫: চার সদস্যের মেডিক্যাল দল সরবজিতের দেহের ময়নাতদন্ত করবেন।

৮টা ৩৫: ''সরবজিতের মৃত্যু আসলে পাকিস্তানের জেল হাজতে আমাদের নাগরিকের হত্যা'', ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের সূত্রে মন্তব্য।

৮টা ৩০: সরবজিতের পরিবারের স্নগে সাক্ষাৎ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্ডে। পরিবারকে আশ্বাস দিলেন সরবজিতের দেহ ফিরিয়ে আনার সবরকম চেষ্টা করবেন কেন্দ্র। 

৮টা ১০: বিজেপির মুখতার আব্বাস নকভি মন্তব্য করলেন সরবজিতের মৃত্যু সারা দেশের ক্ষোভ সঞ্চার করেছে।

৮টা: পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ সিং বাদল সরবজিতের মৃত্যুর স্বাধীন তদন্ত দাবি করলেন। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সরবজিতের শেষকৃত্য সম্পন্নের প্রতিশ্রুতি।

৭টা ৫০: সরবজিতের উপর বর্বরোচিত হামলার জন্য দায়ীদের উপযুক্ত শাস্তি দাবি করলেন প্রধানমন্ত্রী।

৭টা ৫০:  ভারতের আবেদনে সারা দিয়ে সরবজিতের বিষয়টি মানবতার সঙ্গে বিচার করেনি পাকিস্তান। অভিযোগ প্রধানমন্ত্রীর। 

সকাল ৭টা ৫০: সরবজিতের মৃত্যুতে গভীর শোকপ্রকাশ করলেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। 

ভোর ৩টে ৩০: সরবজিতকে শহীদের মর্যাদা দেওয়ার দাবি জানাল তাঁর পরিবার।

২টো: পাকিস্তানের সময় রাত একটার মৃত্যু হয়েছে সরবজিতের। ঘোষণা পাক মেডিক্যাল বোর্ডের

রাত ১টা ৫৫: সরকারি ভাবে সরবজিতের মৃত্যুর  কথা ঘোষণা করল পাকিস্তান।

রাত ১টা ৫০: সরবজিতের মৃত্যু হয়েছে। জানাল পাকিস্তানি টিভি চ্যানেল। কোনও সরকারী ঘোষণা নেই। 

কলকাতা: সংস্থার বিরুদ্ধে প্রাপ্য টাকা না মেটানোর অভিযোগ তুললেন সারদা প্রপার্টিজের একদা অংশীদার কৃষ্ণা ভট্টাচার্য৷ প্রাপ্য চাইতে গিয়ে একাধিকবার দুর্ব্যবহারের শিকার হতে হয়েছে বলেও অভিযোগ জানিয়েছেন তিনি৷ সারদা কেলেঙ্কারির জেরে বাজার থেকে গায়েব হয়ে গিয়েছে আমানতকারীদের হাজার হাজার কোটি টাকা৷ অর্থনীতিবিদদের মতে, সে টাকা ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত ক্ষীণ৷ এবার সারদার বিরুদ্ধে প্রাপ্য টাকা না মেটানোর অভিযোগে সরব সারদা প্রপার্টিজের এককালের অংশীদাররা৷ সারদা প্রপার্টিজে ২৫ শতাংশ অংশীদারিত্ব ছিল কৃষ্ণাদেবীর৷ বাকি ৭৫ শতাংশের মধ্যে ২৫ শতাংশ অংশীদারিত্ব ছিল সুদীপ্ত সেনের৷ আর ৫০ শতাংশ বিশ্বনাথ অধিকারীর৷ কৃষ্ণাদেবীর দাবি, একটা সময় তিনি অংশীদারিত্ব ছেড়ে দেবেন বলে মনস্থ করেন৷ মৌখিক বোঝাপড়াও হয়৷ এর মধ্যেই ১৯৯৯ সালের ২৯ জানুয়ারি সারদা গার্ডেনে খুন হন অপর অংশীদার বিশ্বনাথ অধিকারী৷ কৃষ্ণাদেবী জানিয়েছেন, এরপরই তিনি অংশীদারিত্ব ছাড়ার পাকাপাকি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন৷ ঠিক হয়, শেয়ার হস্তান্তর বাবদ তাঁকে দেওয়া হবে ২০ লক্ষ টাকা৷ কৃষ্ণাদেবীর দাবি, তাঁকে এক লক্ষ-দেড় লক্ষের চেক দেওয়া হলেও তার মধ্যে অনেকগুলি বাউন্স করে৷ বহু কাঠখড় পুড়িয়ে অবশেষে টাকা মেলে ২০১০ সালে৷ কিন্তু তাও পুরো নয়৷ তিনি অভিযোগ করেছেন, প্রাপ্য টাকা নিতে গিয়ে বহুবার দুর্ব্যবহারের শিকারও হতে হয়েছে তাঁকে৷ কিন্তু ১৯৯৯ সালে যে অঙ্কটা ২০ লক্ষ ঠিক হল, ১০ বছর পেরিয়ে সারদার ব্যবসা এত বিস্তারের পরও পুরো অঙ্কটা মিলল না কেন, সারদা প্রপার্টিজের একদা অংশীদার সেই প্রশ্নের উত্তর পাননি আজও৷ 
প্রাপ্য টাকা না মেলার অভিযোগ করেছেন অপর এক অংশীদার বিশ্বনাথ অধিকারীর পরিবারও৷ তাঁদের দাবি, বিশ্বনাথবাবুর মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রীকে অধিকর্তা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়৷ কিন্তু তাঁরা সেই পদের বদলে শেয়ার বিক্রির টাকা চেয়েছিলেন৷ সেই নিয়ে মামলা এখনও ঝুলছে৷ বিশ্বনাথবাবুর পরিবারের অভিযোগ, সুরাহা তো হয়নি, সেই টাকা এখনও ভোগ করছে সারদাই৷ 

মন্ত্রী-নেতা থেকে পুলিশকর্তা৷ লগ্নিকারী সংস্থার অনুষ্ঠানে হাজির বহু হর্তাকর্তার ছবি এবিপি আনন্দে৷ সারদা গোষ্ঠীর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নেতা-মন্ত্রীদের মঞ্চ আলো করে থাকার ঘটনায় বাম-ডানে কোনও ফারাকই নেই৷ এবিপি আনন্দের ফুটেজে এই ছবি প্রকাশিত হওয়ার পর নেতা-আমলাদের যুক্তি,এসব অনুষ্ঠানে যাওয়া তো অপরাধ নয়৷ অনেকেই ডাকে, তাই যাই৷


ক্ষমতাসীন দলের নেতা-মন্ত্রীদের সঙ্গে লগ্নিকারী সংস্থার কর্তাব্যক্তিদের একই মঞ্চে হাজির থাকার ছবি ধরা পড়েছে এবিপি আনন্দের ফুটেজে৷ বাম জমানায় তত্কালীন মন্ত্রী কান্তি বিশ্বাস, সিপিএম বিধায়ক আনন্দ বিশ্বাস থেকে শুরু করে বর্তমানে তৃণমূল জমানায় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, মদন মিত্র,সাংসদ সোমেন মিত্র, মন্ত্রীত্ব থেকে পদত্যাগের আগে কংগ্রেস নেতা মানস ভুঁইয়া ও  মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়রা লগ্নিকারী সংস্থাগুলির অনুষ্ঠানে হাজির থেকেছেন৷
লাটে ওঠা কোম্পানি সারদা গোষ্ঠীর সঙ্গে মদন মিত্রর সম্পর্ক নিয়ে রাজনৈতিক মহলে জোর জল্পনার মধ্যেই এবিপি আনন্দর হাতে নতুন ফুটেজ৷ ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, সারদা গোষ্ঠীর অনুষ্ঠানে উপস্থিত মদন মিত্র৷ এক মঞ্চে পাশাপাশি তিনি ও সুদীপ্ত সেন৷ বিষ্ণুপুরের এই অনুষ্ঠানে পরিবহণমন্ত্রীর গলায় ছিল সারদার কর্ণধার সুদীপ্ত সেনের প্রশাংসা৷ এর আগে,নেতাজি ইন্ডোর সারদা গোষ্ঠীরই অন্য একটি অনুষ্ঠানেও সুদীপ্ত সেনের প্রশাংসা করতে শোনা গিয়েছে মদন মিত্রকে৷ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকলেও, সারদার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করেছেন মদন মিত্র৷ 
২০১১ সালের ২৭ জুলাই৷ প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে রাজ্যের একাধিক লগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন তৃণমূল সাংসদ সোমেন মিত্র৷ যা অস্বস্তি বাড়ায় তৃণমূলের৷ রাজনৈতিক মহলে জল্পনা তৈরি হয়, লগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে চিঠি লিখে দলের মধ্যেই কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন সোমেন৷    
কিন্তু, এবিপি আনন্দের হাতে এমন কিছু ছবি এসেছে, যাতে দেখা যাচ্ছে সারদা গোষ্ঠীর অনুষ্ঠানে উপস্থিত রয়েছেন খোদ সোমেন মিত্রই৷ ছবিতে একই ফ্রেমে সোমেন মিত্র ও সুদীপ্ত সেনকে দেখা যাচ্ছে৷ এবিষয়ে সোমেন মিত্রর বক্তব্য, তিনি চিঠি লেখার আগে সারদার অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন৷ যা অপরাধ নয়৷ সারদার সঙ্গে তাঁর কোনও যোগ নেই৷
সারদার অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে দেখা গিয়েছিল সিপিএমের প্রাক্তন মন্ত্রী কান্তি বিশ্বাসকেও৷ দলের একাংশের সঙ্গে সারদা গোষ্ঠীর সম্পর্ক ইতিমধ্যেই অস্বস্তি বাড়িয়েছে তৃণমূলের৷ যদিও, প্রকাশ্যে কখনওই তা স্বীকার করতে রাজি হয়নি দলীয় নেতৃত্ব৷ এরইমধ্যে এবিপি আনন্দর হাতে এসেছে এমন কিছু ছবি যেখানে সারদা গোষ্ঠীর অনুষ্ঠানে হাজির থাকতে দেখা গিয়েছে এক সিপিএম নেতাকেও৷ কান্তি বিশ্বাস৷ বর্তমানে সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য৷ ১৯৭৭ সাল থেকে ২০০৬ পর্যন্ত রাজ্যের মন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন৷ ভোটে পরাজয়ের জন্য মাঝে অবশ্য সামান্য সময়ের জন্য মন্ত্রী ছিলেন না৷ পরে উপ-নির্বাচনে জিতে ফের মন্ত্রী হন৷ তথ্য সম্প্রচারমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেছেন কান্তি বিশ্বাস৷ দীর্ঘদিন স্কুলশিক্ষা মন্ত্রীও ছিলেন৷ 
সিপিএমের এহেন পরিচিত মুখকেই দেখা গিয়েছে সারদা গোষ্ঠীর অনুষ্ঠানে৷ ছবিতে বক্তব্যও রাখতে দেখা যাচ্ছে কান্তি বিশ্বাসকে৷ যদিও, এরকম কোনও অনুষ্ঠানের কথা মনে পড়ছে না বলে জানিয়েছেন কান্তি বিশ্বাস৷
তবে, প্রাক্তন স্কুলশিক্ষামন্ত্রী সারদার কোনও অনুষ্ঠানের কথা মনে করতে না পারলেও, ছবি কিন্তু অন্য কথা বলছে৷ 
আনন্দ বিশ্বাস৷ বিষ্ণুপুর পূর্ব বিধানসভার প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক৷ যদিও, সারদার অনুষ্ঠানে তাঁর উপস্থিত থাকার যে ছবি দেখা যাচ্ছে, তখন তিনি প্রাক্তন হননি, সিপিএমের বিধায়কই ছিলেন৷ সারদা গার্ডেনে বিশ্বকর্মা পুজো থেকে শুরু করে নেতাজি ইন্ডোরে এজেন্ট মিট, সবেতেই তিনি৷ পাশে সুদীপ্ত সেন৷ গলায় সারদা গোষ্ঠীর ভূয়সী প্রশংসা৷ যদিও, এখন এ বিষয়ে কিছু বলতে নারাজ প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক৷ দু'হাজার এগারো পর্যন্ত সিপিএমের বিধায়ক থাকার পর, আর ভোটে দাঁড়াননি আনন্দ বিশ্বাস৷
২০১১-য় লগ্নি সংস্থা আই কোরের বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, কংগ্রেস বিধায়ক তথা প্রাক্তন সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়া ও  কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়৷ তাঁরা প্রত্যেকেই সংস্থার প্রশংসাও করেছিলেন৷ এই ফুটেজ এসেছে এবিপি আনন্দের হাতে৷ শিল্পমন্ত্রী এ বিষয়ে কিছু বলতে রাজি না হলেও, মানস ভুঁইয়া কিন্তু আই কোরের অনুষ্ঠানে হাজির হওয়ার মধ্যে আপত্তির কিছু দেখছেন না৷ উল্লেখ্য, সোমেন মিত্রর প্রশ্নের উত্তরে সংসদে দাঁড়িয়ে কোম্পানি বিষয়ক মন্ত্রী সচিন পাইলট, রাজ্যের যে সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে নিয়ম লঙ্ঘনের অভিযোগ জমা পড়েছে, তার একটি তালিকা প্রকাশ করেন৷ সেই তালিকায় রয়েছে আইকোর৷
এবিপি আনন্দর হাতে এসেছে এমন কিছু ছবি যেখানে সারদা গোষ্ঠীর অনুষ্ঠানে দেখা গিয়েছে পুলিশের একাধিক শীর্ষ কর্তাকে৷ 
সারদা গোষ্ঠীর অনুষ্ঠানে কলকাতার বর্তমান পুলিশ কমিশনার সুরজিত্ করপুরকায়স্থকেো দেখা গিয়েছে৷ এক ফ্রেমে সুদীপ্ত সেন-সুরজিত্ করপুরকায়স্থ৷ সুরজিত্ করপুরকায়স্থ বক্তব্য পেশ করছেন৷ পাশে দাঁড়িয়ে তা শুনছেন সুদীপ্ত৷ কখনও আবার দু'জনে কথপোকথনে ব্যস্ত৷ ছবিতে দেখা যাচ্ছে সুরজিত্ করপুরকায়স্থর হাতে পুষ্পস্তবক তুলে দেওয়া হচ্ছে৷ এ বিষয়ে কলকাতার বর্তমান পুলিশ কমিশনারের প্রতিক্রিয়া, বিভিন্ন ধরনের মানুষ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাঁকে আমন্ত্রণ জানান৷ অনেক সময় তিনি গিয়েও থাকেন৷ 
সারদা গোষ্ঠীর অনুষ্ঠানে দেখা গিয়েছে বর্তমানে কাউন্টার ইনসার্জেন্সি ফোর্সের এডিজি, কুন্দনলাল টামটাকেও৷ ছবিতে দেখা যাচ্ছে তিনি বক্তব্য পেশ করছেন৷ পাশে দাঁড়িয়ে সুদীপ্ত সেন৷ সারদার অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার কথা অস্বীকার করেননি কুন্দনলাল টামটা৷ 
সারদা গোষ্ঠীর অনুষ্ঠানে দেখা গিয়েছে প্রাক্তন আইপিএস অফিসার তথা রানাঘাট পূর্ব বিধানসভা কেন্দ্রের সিপিএমের প্রাক্তন বিধায়ক দেবেন বিশ্বাসকেও৷ সুদীপ্ত সেনের সঙ্গে একই ফ্রেমে দেখা গিয়েছে তাঁকেও৷ এ বিষয়ে অবশ্য কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে চাননি এই প্রাক্তন আইপিএস অফিসার৷


এবার লগ্নি সংস্থাকে হিমঘর পরিচালনার দায়িত্ব ঘিরে শাসক-বিরোধী চাপানউতোর৷ ২০১১ সালের ১ নভেম্বর হুগলির চাপাডাঙায় সরকারি একটি হিমঘরের উদ্বোধন করেন কৃষি বিপণনমন্ত্রী অরূপ রায়৷ হিমঘরটির পরিচালনায় দায়িত্বে ছিল লগ্নি সংস্থা এমপিএস৷ কিন্তু মাস তিনেকের মধ্যেই হিমঘরটি বন্ধ হয়ে যায়৷


কিন্তু কীভাবে সরকারি হিমঘরের পরিচালনার দায়িত্ব একটি লগ্নি সংস্থার হাতে তুলে দিল কৃষি বিপণন দফতর? তাই নিয়েই এবার শাসক-বিরোধী চাপানউতোর৷ কৃষি বিপণনমন্ত্রী অরূপ রায়ের দাবি, ২০১০ সালে বাম আমলেই হিমঘরটির পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে এমপিএসের সঙ্গে চুক্তি করা হয়৷ তিনি উদ্বোধন করেন মাত্র৷
তবে, কৃষি বিপণনমন্ত্রীর অভিযোগ, বাম আমলে অধিকাংশ হিমঘরই অবৈজ্ঞানিকভাবে তৈরি করা হয়৷ ওই লগ্নি সংস্থাও চাপাডাঙার হিমঘরটি বন্ধ করার জন্য এই কারণ দেখিয়ে রাজ্য সরকারকে চিঠি দিয়েছিল৷
২০১০ সালে কৃষি বিপণন নিগমের চেয়ারম্যান তথা ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা নরেন চট্টোপাধ্যায় অবশ্য বর্তমান কৃষি বিপণনমন্ত্রীর এই অভিযোগ খারিজ করে দিয়েছেন৷ তাঁর দাবি, 'অরূপ রায় মিথ্যে কথা বলছেন৷ আমার সময়ে হিমঘর তৈরির কাজই শেষ হয়নি৷ তাই ওই সময়ে এমপিএসকে হিমঘর দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না৷ শুধুমাত্র নদিয়ার নোকারিতে একটি হিমঘর বানানো হয়েছিল৷ বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সেই হিমঘরটির উদ্বোধন করেন৷'
এজেন্ট সূত্রে খবর, আমানতকারীদের বিনিয়োগে আকর্ষণ করে ব্যবসা বাড়াতে লগ্নি সংস্থাগুলি তাঁদের অধীনে একাধিক সংস্থা রয়েছে বলে প্রচার করে৷ কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় তার বেশিরভাগই ভুয়ো৷ চাপাডাঙার বাসিন্দাদের অভিযোগ, পরিচালনার দায়িত্ব পাওয়ার পর এমপিএসও হিমঘরটিকে দেখিয়ে ব্যবসা বাড়ানোর কাজ করেছিল৷ কিন্তু কীভাবে একটি লগ্নি সংস্থার হাতে সরকারি হিমঘর পরিচালনার দায়িত্ব তুলে দেওয়া হল? কৃষি বিপণনমন্ত্রী অরূপ রায় বলছেন, বাম আমলে চুক্তি হয়েছিল৷ কিন্তু রাজ্যে পালাবদলের পর নতুন সরকারও কেন কোনও ব্যবস্থা নিল না? দায় কার? উঠছে প্রশ্ন৷

http://www.abpananda.newsbullet.in/state/34-more/36216-2013-05-01-09-51-25


কুণাল ঘোষের পর অঞ্জন ভট্টাচার্য। সারদা কাণ্ডে শাসক দলের ঘনিষ্ঠ আরও একজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠালেন তদন্তকারীরা। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে অস্বস্তিতে রাজ্য সরকার।  

পালাবদলের পর একাধিক ঘটনায় বর্তমান শাসক দলের সঙ্গে নাম জড়িয়েছে, হিডকোর প্রাক্তন জনসংযোগ আধিকারিক অঞ্জন ভট্টাচার্যের। দুহাজার বারো সালের বিশে এপ্রিল পূর্ব মেদিনীপুরে, মুখ্যমন্ত্রীর ভাই পরিচয় দিয়ে প্রশাসনিক সুবিধা আদায় করতে গিয়ে ধরা পড়েন তিনি। সেই সময়েই তাঁর কাছ থেকে উদ্ধার হয় শাসক দলের ঘনিষ্ঠ একটি টেলিভিশন চ্যানেলের পরিচয়পত্র। দুহাজার বারোর তেইশে এপ্রিল সেই ঘটনার তদন্ত শুরু করে সিআইডি। সিআইডি তদন্তে উঠে আসে শাসক দলের ঘনিষ্ঠ একটি চিটফান্ড সংস্থার সঙ্গে অঞ্জন ভট্টাচার্যের ঘনিষ্ঠতার একাধিক তথ্য। এমনকি বর্তমান শাসকদলের কিছু নেতামন্ত্রীর নামও সেই তদন্তে উঠে এসেছিল বলে খবর। পরবর্তী ক্ষেত্রে সারদা গোষ্ঠী কেলেঙ্কারিতেও নাম জড়ায় অঞ্জন ভট্টাচার্যের। 

বুধবার অঞ্জন ভট্টাচার্যকে বিধাননগর কমিশনারেটে ডেকে পাঠিয়ে দীর্ঘক্ষণ জেরা করা হয়। ঠিক কী জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল তাঁকে? প্রশ্নের উত্তরে অঞ্জন ভট্টাচার্য যা বলেছেন, তা অত্যন্ত তাত্পর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

সরকারি কাজ বলতে ঠিক কী বলতে চেয়েছেন অঞ্জন ভট্টাচার্য? এর ফলে কী শাসক দলের সারদা যোগই স্পষ্ট হচ্ছে না? প্রশ্ন তুলছেন বিরোধীরা। কুণাল ঘোষের পর শাসক দলের ঘনিষ্ঠ আরও একজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠানোয় সরকারের অস্বস্তি বাড়লো বলেই মনে করা হচ্ছে। 


সারদা গোষ্ঠীর সঙ্গে আরও এক তৃণমূল সাংসদের ঘনিষ্ঠতার প্রমাণ মিলল। সঙ্গে প্রমাণিত হল মিথ্যা বলেছিলেন তৃণমূলের অভিনেত্রী-সাংসদ শতাব্দী রায়। এক্সক্লুসিভ সেই ছবিই এই মুহূর্তে চব্বিশ ঘণ্টার হাতে। 

২০১০ বসালে সায়েন্সসিটি অডিটোরিয়ামে সারদা গোষ্ঠীর এক অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন তৃণমূল সাংসদ শতাব্দী রায়। সারদা গোষ্ঠীর অনুষ্ঠানে সেদিন তৃণমূল সাংসদ শতাব্দী রায় বলেছিলেন, "আমি সারদার ব্যান্ড অ্যাম্বাসাডার। আমরা সবাই সারদার সঙ্গে যুক্ত। আমাকে ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডার করায় আমি সুদীপ্ত সেনকে ধন্যবাদ জানাই।" সঙ্গে বলেন," কুণাল ঘোষ সংসদে আমার সহকর্মী। উনি অনেক মানুষকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন"।

দিন কয়েক আগেই অবশ্য দিল্লিতে সারদা গোষ্ঠীর সঙ্গে কোনওরকম সম্পর্কের কথা অস্বীকার করেছিলেন তৃণমূল সাংসদ শতাব্দী রায়। স্পষ্টই জানিয়েছিলেন তিনি কখনোই সারদার ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডার ছিলেন না। 

সায়েন্স সিটি অডিটোরিয়ামে সারদা গোষ্ঠীর অনুষ্ঠানে তৃণমূল সাংসদ শতাব্দী রায় আরও এক তৃণমূল সাংসদের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি তৃণমূল সাংসদ কুনাল ঘোষ। তাঁর সম্পর্কে কী বলেছিলেন শতাব্দী রায়। আসুন শুনে নেওয়া যাক। 

সারদার অনুষ্ঠানে কী বলেছিলেন শতাব্দী, দেখতে ক্লিক করুন এখানে



বিধানসভায় বিল পাস হয়ে গেছে। বামেরাও সমর্থন করেছে। অনেকটাই রিল্যাক্সড মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু ধন্যবাদ জ্ঞাপন করতে গিয়ে নিজেই নিজের কথার ফাঁদে জড়িয়ে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী।

বিল পাসের পরে দৃশ্যতই রিল্যাক্সড মুখ্যমন্ত্রী ওঠেন ধন্যবাদ জানাতে। তখনই হঠাত্‍ তুললেন বাম আমলে ফাইল নিখোঁজের অভিযোগ। প্রতিবাদে ওয়াক আউট করে বামেরা। রাজ্যের বৃহত্তম আর্থিক কেলেঙ্কারীর সঙ্গে দলের নাম জড়িয়ে গেছে। 

মুখ্যমন্ত্রীর দুটি মন্তব্য ঘিরে সমালোচনার ঝড়। গ্রামবাংলার ভোটব্যাঙ্ক নিয়ে তুমুল দুশ্চিন্তা। এমনকী নিজের সততার প্রতীক ইমেজও প্রশ্নের মুখে। এরকম পরিস্থিতির মুখে সম্ভবত এই প্রথম পড়তে হল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। সুদীপ্ত সেনকে গ্রেফতার, পাঁচশো কোটি টাকার রিলিফ ফান্ডের ঘোষণাও ক্ষোভের আগুনে জল ঢালতে পারেনি। 

তৃণমূল সূত্রের খবর, শুক্রবার সাতসকালে নিজের বাড়িতে অতি বিশ্বস্ত ছয় নেতাকে নিয়ে গোপন বৈঠকে স্ট্রাটেজি ঠিক করেন মুখ্যমন্ত্রী। ড্যামেজ কন্ট্রোলে তৃণমূল নেত্রী সবচেয়ে বেশি জোর দেন, বাম আমলের বিল প্রত্যাহার করে নতুন বিল পাশের উপর। মঙ্গলবার সেই বিল পেশের সময় বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রীর তত্পরতা ছিল চোখে পড়ার মতো। আলোচনার বেশির ভাগ সময়ই ছিলেন অধিবেশনে। মাঝেমধ্যেই পরামর্শ দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী বা আইনমন্ত্রীকে। 

ধন্যবাদ জানানোর সময় বিল নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যও বিতর্ক তৈরি করেছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাষ্ট্রপতিকে বলেছিলাম বিলটাকে ফেরত পাঠানোর জন্য। রাষ্ট্রপতিকে ধন্যবাদ। প্রতারিত মানুষদের স্বার্থরক্ষার জন্য সরকার বদ্ধপরিকর। কেন্দ্রীয় সরকার যে তিয়াত্তরটি প্রতারক সংস্থার তালিকা পাঠিয়েছে, এই সময়ের মধ্যে তার সঙ্গে আরও কয়েকটি সংস্থা গজিয়ে উঠেছে। চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে প্রশাসনকে বলেছি ওই সংস্থাগুলি বন্ধ করতে। 

বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছেন, প্রতারক সংস্থা বন্ধে আইনি অধিকার নেই বলেই তো নতুন আইনের কথা বলছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাহলে প্রতারক সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে কী ভাবে ব্যবস্থা নেবে রাজ্য সরকার? তবে কি চালু আইনেই কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া যায়? 

বিলের ভবিষ্যত নিয়ে ইতিমধ্যেই নানা আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। কিন্তু অধিবেশন থেকে নিজের চেম্বারে যাওয়ার সময়ও মুখ্যমন্ত্রীকে রীতিমতো আত্মবিশ্বাসী দেখিয়েছে। তাহলে কি, স্রেফ বিধানসভায় বিল পাশ করিয়ে মানুষের মুখ বন্ধ করাটাই মুখ্যমন্ত্রীর একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল? প্রতারিত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর সদিচ্ছা না রাজনৈতিক জমি অটুট রাখার গেমপ্ল্যান-কোনটা তাঁর আসল উদ্দেশ্য?


রাজ্যের শাসক দল যেন কোনও ভাবেই রুষ্ট না হয়। তার দিকেই সদা সতর্ক নজর থাকত সারদা কর্তা সুদীপ্ত সেনের। এ জন্য মিডিয়ার প্রধানকে লিখিত নির্দেশও দিয়েছেন। কলকাতা থেকে অসমের সংবাদপত্রের প্রধানকে পাঠানো সারদা কর্তার নির্দেশের এক্সক্লুসিভ কপি ২৪ ঘন্টার হাতে।   

সেভেন সিষ্টার্স পোষ্ট। উত্তর পূর্ব ভারতে সারদা গোষ্ঠীর ইংরেজি দৈনিক। সম্পাদক ছিলেন সারদা কর্ণধার সুদীপ্ত সেন। কিন্তু নানা কাজে ব্যস্ত থাকায় তিনি রোজকার কাজে সময় দিতে পারবেন না জানিয়ে সেভেন সিস্টার্স পোস্টের ম্যানেজিং এডিটরকে চিঠি লেখেন সুদীপ্ত সেন। সেই চিঠিতেই দৈনিকের রাজনৈতিক লাইন ঠিক করে দেন সুদীপ্ত সেন। চিঠিতে তিনি লিখেছিলেন, ম্যানেজিং এডিটর হিসেবে সেভেন সিস্টারর্স পোস্টের সম্পূর্ণ সম্পাদকীয় দায়িত্ব আপনার হাতেই তুলে দেওয়া হচ্ছে। তবে আমরা সম্পাদকীয় লাইন হিসেবে কয়েকটি বিষয় নির্দিষ্ট করেছি। মনে রাখবেন, আমাদের কাগজে যেন  সরকার বিরোধী কোনও প্রচার বা খবর প্রকাশিত না হয়। শাসক দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে আমরা কোনও ভূমিকা নেব না। বিরোধীরা সাহায্য চাইলেও আমরা তা করব না।  

চিঠিতেই স্পষ্ট সংবাদপত্র চালাতে গিয়ে কোনও ভাবেই শাসক দলের বিরাগভাজন হতে চাননি সুদীপ্ত সেন। সংবাদমাধ্যমের মধ্যে দিয়ে শাসক দলের বন্দনা করে আসলে সরকারের কাছাকাছি যেতে চেয়েছিলেন সুদীপ্ত সেন। কারণ শাসক দল পাশে না দাঁড়ালে  প্রতারণার বড় জাল বিছানো যে মুশকিল, সেটা বিলক্ষণ বুঝতেন সুদীপ্ত সেন। প্রশ্ন উঠছে, অসমের মতো উত্তর পূর্বের অন্য রাজ্যগুলি বা পশ্চিমবঙ্গেও সেই একই ফর্মুলা নিয়েছিলেন সুদীপ্ত সেন? 


কলকাতা: সারদাকাণ্ডে চাঞ্চল্যকর মোড়৷ একদিকে যখন ডান-বাম নির্বিশেষে রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে সারদা গোষ্ঠী ও তার মতো লগ্নিকারী সংস্থার যোগাযোগের বিস্ফোরক তথ্য উঠে আসছে, তখন আঙুল উঠল পূর্বতন বাম জমানার দিকেও৷কয়েকদিন আগেই তাঁর আমলে  লগ্নি সংস্থাগুলিকে ধারেকাছে ঘেঁষতে দেননি বলে দাবি করেছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। পাল্টা তাঁকে খোঁচা দিয়ে রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্ট্যোপাধ্যায় কটাক্ষ করেছেন, ২০১০-এর চলচ্চিত্র উতসব কার টাকায় হয়েছে? সারদার টাকায় নয় তো? আর এবার একধাপ এগিয়ে লগ্নি সংস্থা কেলেঙ্কারিতে এবার সিপিএমকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র সরাসরি রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকেই নিশানা করলেন। তিনি অভিযোগ করলেন, রাজ্যে লগ্নি সংস্থার রমরমা শুরু হয় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের আমলেই৷ পরিবহণমন্ত্রীর নিশানায় প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর মেয়েও৷ তবে জবাব দিয়েছে সিপিএমও।দলের শীর্ষনেতা মহম্মদ সেলিম অভিযোগ উড়িয়ে বলেছেন, সারদার সঙ্গে সম্পর্ক সামনে চলে আসায় তা থেকে নজর ঘোরাতেই মদন মিত্র এই সব কথা বলছেন৷ তৃণমূলের আক্রমণের নিশানায় সিপিএমের প্রাক্তন সাংসদ অমিতাভ নন্দীও৷ খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের অভিযোগ, সাংসদ হওয়ার পর সারদার গাড়ি ব্যবহার করতেন সিপিএমের দাপুটে নেতা অমিতাভ নন্দী৷ তবে অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন অমিতাভ নন্দী৷

এর পাশাপাশি সারদাকাণ্ডে শাসক দল ও সরকার কি এবার কি বাম জমানার দুই ডাকসাইটে মন্ত্রী গৌতম দেব ও অসীম দাশগুপ্তকে টার্গেট করেছে, এই প্রশ্নও তুলছে সিপিএমের একাংশই৷

তাদের এমন ধারণা হওয়ার কারণ, বুধবার বিধাননগর কমিশনারেটে ডেকে পাঠানো হয় হিডকোর প্রাক্তন জনসংযোগ আধিকারিক অঞ্জন ভট্টাচার্যকে৷ একই সঙ্গে ডেকে পাঠানো হয় প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্তর আপ্ত সহায়ক গণেশ দে-কেও৷ সারদা কেলেঙ্কারিতে যোগসূত্র নিয়ে দীর্ঘক্ষণ তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করে গোয়েন্দারা৷ পুলিশের দাবি, জেরার মুখে এই দু'জনের নাম করেছেন সুদীপ্ত সেন৷ তিনি জানিয়েছেন, ২০০৭-০৮ সালে তিনি যখন লগ্নি ব্যবসায় পা রাখেন তখন অঞ্জন ভট্টাচার্য এবং গণেশ দে তাঁকে অনেক সাহায্য করেন৷ জমি কেনা, নেটওয়ার্ক বিস্তার এবং তারপর ব্যবসা ফুলেফেঁপে ওঠার ক্ষেত্রেও এই দু'জন তাঁকে সাহায্য করেছেন৷ পুলিশ সূত্রে খবর, সুদীপ্ত সেন পুলিশের কাছে দাবি করেছেন, সাহায্য নেওয়ার বিনিময়ে তিনিও অঞ্জন ও গণেশকে মোটা টাকা দেন৷ গোয়েন্দাদের দাবি, তদন্ত প্রক্রিয়ায় যেহেতু নাম উঠে এসেছে, তাই সুদীপ্ত সেনের কথার সত্যতা খতিয়ে দেখতেই ওই দুজনকে এদিন জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়৷ তাঁদের বয়ানও রেকর্ড করা হয়েছে৷ সুদীপ্ত সেনের বক্তব্যের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হবে সেই বয়ান৷ 
অঞ্জন ভট্টাচার্য যে সময় হিডকোর জনসংযোগ আধিকারিক ছিলেন, তখন হিডকোর চেয়ারম্যান ছিলেন তত্কালীন আবাসনমন্ত্রী গৌতম দেব৷ পুলিশের দাবি, গৌতম দেবের আপ্ত সহায়কের কাজ করেছেন অঞ্জন ভট্টাচার্য৷ যদিও গৌতম দেব সেই দাবি নস্যাত্ করে জানিয়েছেন, অঞ্জন ভট্টাচার্য কোনও দিনই আমার আপ্ত সহায়ক ছিলেন না৷ বিতর্কে অবশ্য আগেও জড়িয়েছেন অঞ্জন৷ ঠিক এক বছর আগেই অবশ্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আত্মীয় পরিচয় দিয়ে প্রতারণার অভিযোগে কাঁথি থেকে গ্রেফতার হন তিনি৷ 

গোটা ঘটনাবলীর জেরে সিপিএমেরই একাংশ প্রশ্ন তুলেছে, সারদা কেলেঙ্কারিতে তৃণমূলের একাংশের নাম জড়িয়ে যাওয়ায় তা থেকে নজর ঘোরাতেই কি গৌতম দেব, অসীম দাশগুপ্তের মতো সিপিএম নেতাদেরও জড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে? বাদ দেওয়া হচ্ছে না বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকেও? প্রসঙ্গত, কয়েকদিন আগেই পার্টির প্রকাশ্য সভায় সারদাকাণ্ডের প্রসঙ্গ টেনে সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিবারকে জড়িয়ে রাজ্যের প্রাক্তন আবাসনমন্ত্রী গৌতম দেব অভিযোগ করেন, মুখ্যমন্তীর ভাইপো তথা তৃণমূলের সংগঠন যুবা-র সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় একটি সংস্থা চালান যা লগ্নিকারী প্রতিষ্ঠান। পাল্টা তাঁর বিরুদ্ধে মামলার পথে হাঁটার কথা ঘোষণা করেছে তৃণমূল।

অন্যদিকে, পুলিশ সূত্রে খবর, সিবিআইকে লেখা চিঠিতে ও জেরায় বারবার সুদীপ্ত সেন জানিয়েছেন, সমাজের বিভিন্ন স্তরে একাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তিকে তিনি টাকা দিয়েছেন৷ কিন্তু, তাঁরা কারা এবং তাঁদের টাকা দেওয়ার বিনিময়ে তিনি কী সুবিধা পেয়েছেন, হিসেব বহির্ভূত ব্যয় সম্পর্কে সেই তথ্যগুলিও জানার চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ৷ 

http://www.abpananda.newsbullet.in/state/34/36230


কলকাতা: তরী যে ডুবতে বসেছে, তা বেশ কয়েক মাস আগে থেকেই বুঝতে পারছিলেন সারদার কর্ণধার সুদীপ্ত সেন৷ তখন থেকেই তিনি ছক কষতে শুরু করেন৷ সুদীপ্তকে জেরা করে এ ব্যাপারে কার্যত অনেকটাই নিশ্চিত পুলিশ৷ পুলিশ সূত্রে খবর, সুদীপ্ত সেনকে জেরা করে জানা গিয়েছে, ফেব্রুয়ারিতেই সুদীপ্ত সেন বুঝতে পেরেছিলেন তাঁর ব্যবসার ভরাডুবি একেবারে দোরগোড়ায়৷ ফেব্রয়ারির শুরু থেকেই সারদার তরফে আমানতকারীদের দেওয়া চেক বাউন্স করা শুরু হয়৷ ওই মাসেরই মাঝামাঝি সল্টলেকের একটি সভাগৃহে সারদার বড় এজেন্টদের নিয়ে বৈঠক করেন সুদীপ্ত সেন-দেবযানী মুখোপাধ্যায়রা৷ সেখানেই নিজেদের ক্ষোভ উগড়ে দেন এজেন্টরা৷ তাঁদের শান্ত করতে সুদীপ্ত-দেবযানীরা আশ্বাস দেন, সংস্থার আর্থিক হাল নিয়ে চিন্তার কিছু নেই৷ চারিদিকে অপপ্রচার চলছে৷ এর কিছুদিন পরে সল্টলেকের ডিএন ব্লকে ফের বড় এজেন্টদের নিয়ে বৈঠক হয়৷ এই বৈঠকে দেবযানী ছিলেন না৷ তবে ছিলেন সুদীপ্ত সেন৷ সেখানে এজেন্টদের ক্ষোভ কার্যত রোষে পরিণত হয়৷ তাঁরা সুদীপ্ত সেনকে ঘিরে ধরেন, জুতো ছুড়ে মারবেন বলে হুমকিও দেন৷ রীতিমতো ধস্তাধস্তি শুরু হয়ে যায়৷ বিপাকে পড়ে হাতজোড় করে পরিস্থিতি সামলানোর চেষ্টা করেন সুদীপ্ত সেন৷ ফের প্রতিশ্রুতি দিয়ে মন গলানোর চেষ্টা করে বলেন, ১৬ এপ্রিল থেকে বকেয়া সব টাকা দেওয়া শুরু করবেন৷ 
সুদীপ্ত সেনকে জেরা করে পুলিশ একপ্রকার নিশ্চিত, ধাপে ধাপে পরিকল্পনা করেই পাততাড়ি গুটিয়ে গা ঢাকা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন তিনি৷ গত বছরের শেষের দিকেই সারদা গোষ্ঠীর বিভিন্ন সংস্থার ডিরেক্টর পদ থেকে দুই স্ত্রী ও ছেলেকে সরিয়ে দেন তিনি৷ এরপর ফেব্রুয়ারিতে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে এজেন্টদের কিছুদিনের জন্য ঠান্ডা করেন৷ ১৬ এপ্রিল থেকে টাকা ফেরত দেবেন বলে আশ্বাস দেন৷ তার কয়েকদিন আগে এপ্রিলের শুরুতে সংস্থার এক রিসেপশনিস্টকে দিয়ে সিবিআই, সেবি, পুলিশ-সহ বিভিন্ন জায়গায় চিঠি পাঠান তিনি৷ তারপর ১০ই এপ্রিল গাড়ি নিয়ে শহর ছাড়েন৷ 
বুধবার সারদা গোষ্ঠীর দুই মহিলা কর্মীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বিধাননগর থানার পুলিশ৷ সুদীপ্ত সেনের দুই স্ত্রী ও ছেলেকে খুঁজছে তারা৷ 
এদিকে, সারদাকাণ্ডে তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে বৃহস্পতিবার আদালতে হলফনামা দিতে হবে রাজ্য সরকারকে৷ তার আগে এ দিন মহাকরণে জরুরি ভিত্তিতে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী৷ বৈঠকে ছিলেন অর্থমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী, মুখ্য ও স্বরাষ্ট্রসচিব এবং রাজ্য পুলিশের ডিজি৷   


সুদীপ্ত সেনের গয়নার বাক্স

সুদীপ্ত সেনের গয়নার বাক্স

এই সময়: 'সেন স্যারের' হাত যথেষ্ট খোলামেলা!

সারদা সাম্রাজ্যে তাঁর ঘনিষ্ঠ কর্মচারীদের কাছে দরাজ হাতের 'বস' বলেই পরিচিত ছিলেন সুদীপ্ত সেন৷ প্রতি সপ্তাহে 'পারফরমেন্সের' ভিত্তিতে সোনার গয়না বিলোতেন তিনি৷ এমনকী, কোন মহিলা কর্মচারী কত টাকার গয়না পেলেন প্রতি সপ্তাহে তা নিয়ে চলত প্রতিযোগিতাও! সূত্রের খবর, গত ছ'মাসে প্রয় দু'কোটি টাকার গয়না 'সেন স্যারের' কাছ থেকে পেয়েছিলেন 'ম্যাডাম' দেবযানী মুখোপাধ্যায়৷ তাঁর সেই গয়নাগুলি কোথায় লুকোন আছে তা খুঁজে দেখছে পুলিশ৷ কলকাতার একটি নামি সোনার দোকান থেকে এই গয়নাগুলি কেনা হত বলে জানা গিয়েছে৷

সচরাচর প্রকাশ্যে না এলেও সরদা কর্তা সুদীপ্ত সেন ঘনিষ্ঠ মহলে যথেষ্ট খোলামেলাই ছিলেন৷ গভীর রাতে কাজের ফাঁকে ফাঁকে আড্ডা মারতেন ঘনিষ্ঠ কর্মচারীদের সঙ্গে৷ সেখানেই মূল্যায়ন হত চলতি সপ্তাহে কে কেমন কাজ করছেন৷ শুধু তাই নয়, সন্তাহের সেরা কর্মচারীকে সুদীপ্ত সেন নিজেই গয়নার দোকানে নিয়ে যেতেন৷ সাধারণত, সেই গয়নার দাম কখনই লাখখানেক টাকার কম হত না৷ দেবযানীকে মুখোপাধ্যায়কে জেরা করে পুলিশ জানতে পেরেছে, গত বছরের গোড়ার দিকে 'সেন স্যারের' কাছে তাঁর 'পয়েন্ট' কমতে থাকে৷ সেই সময় এমনও হয়েছে, টানা মাস দুয়েক সুদীপ্ত সেনের কাছ থেকে সন্তাহের 'সেরা কর্মচারী'র খেতাব পাননি দেবযানী৷ ফলে তাঁর শিঁকয়ে ছেড়েনি দামী সোনার গয়না৷ কিন্ত্ত তাতে ভেঙে পড়েননি দেবযানী৷ তিনি যানতেন অচিরেই 'মোহভঙ্গ' হবে 'সেন স্যারের'৷ কারণ, কোম্পানির অনেক গোপন তথ্য তাঁর হাতে ছিল৷ পুলিশের অনুমান, সংস্থার অন্য কোনও কর্মচারির পক্ষে হাজার চেষ্টা করেও তার হদিশ পাওয়া সম্ভব ছিল না৷

কিন্ত্ত ঠিক কী কারণে ওই দু'মাস 'সেন স্যারের' ব্যাড বুকে চলে গিয়েছিলেন দেবযানী?

ঘণ্টার পর ঘণ্টা জেরা করেও সেই প্রশ্নের কোনও সদূত্তর এখনও পায়নি পুলিশ৷ এবং দেবযানী আবার কীভাবে সুদীপ্তর 'কাছের মানুষ' হয়ে উঠলেও তা-ও এখনও স্পষ্ট নয়৷ দেবযানী অবশ্য পুলিশকে জানিয়েছে, পরিশ্রম, নিষ্ঠা এবং 'সেন স্যারের' প্রতি অনুগত্যই তাঁকে আবার হারানো জমি ফিরে পেতে সাহায্য করেছে৷ হারানো জমি তিনি শুধু ফিরেই পেয়েছিলেন তা নয়, সুদীপ্তর ডান হাত হিসেবেও নিজের জায়গা পাকাপোক্ত করে ফেলেছিলেন তিনি৷ সারদা সাম্রাজ্যের পতনের আগে শেষ ছ'মাসে দু'কোটি টাকার গয়না 'পুরস্কার' পাওয়া অন্তত সেটাই প্রমাণ করছে৷


সুদীপ্তকে জেরা, উঠছে নানা বিতর্কিত প্রশ্ন


সুদীপ্তকে জেরা, উঠছে নানা বিতর্কিত প্রশ্ন

চিত্রদীপ চক্রবর্তী

বহু আই পি এস ছিলেন সারদা গোষ্ঠীর ক্রাইসিস ম্যানেজার৷ তাদের মধ্যে অবসরপ্রাপ্ত আই পি এস রজত মজুমদার ছাড়াও ছিলেন দেবেন বিশ্বাসও৷ ছিলেন আরও অন্তত ৩০ জন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মী৷ এদের মধ্যে আবার সি আই ডির কিছু কর্মী রয়েছেন৷ সারদার অনুষ্ঠানে দেখা গিয়েছে বর্তমান কলকাতার পুলিশ কমিশনার সুরজিত্‍ কর পুরকায়স্থ ছাড়াও সি আই এফের কর্তা কুন্দনলাল টামটাকেও৷ অর্থাত্ পুরনো এবং নতুন পুলিশ কর্তাদের আস্থা অর্জন করে নিজের ক্ষমতা জাহির করা অভ্যাসে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল সারদা গ্রুপের কর্ণধার সুদীপ্ত সেনের৷ পাশাপাশি রাজনৈতিক নেতাদের টাকার জোরে নিজের দিকে টেনে আনার অদ্ভুত ক্ষমতা রপ্ত করেছিলেন সারদা কর্তা৷ সি বি আইকে লেখা সুদীপ্ত সেনের চিঠি এবং তাকে জেরা করে বেশ কিছু রাজনৈতিক নেতার নাম জানতে পেরেছেন বিধাননগর কমিশনারেটের তদন্তকারি অফিসারেরা৷ তারমধ্যে একজন সাংসদকে ইতিমধ্যেই জেরা করেছেন তারা৷ পুলিশ জানিয়েছে, বর্তমান শাসকদলের কিছু নেতা ছাড়ায় কয়েকজন মন্ত্রীদের নামও তিনি বলেছেন৷ কিন্ত্ত এরাজ্যের রাজনৈতিক প্রেক্ষিতে সুদীপ্তবাবু পলিটিক্যাল লবিংয়ের কাজ করেছেন কী না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে৷

বেশ কয়েকটি দেশে এই লবিং বৈধ হলেও আমাদের দেশে তা নিষিদ্ধ৷ ফলে পুলিশ কর্তা এবং রাজনৈতিক নেতারা এই কাজে সুদীপ্ত সেনকে সাহায্য করে থাকলে তাদের বিরুদ্ধে দুনীতি দমন আইনে মামলা দায়ের করা হবে৷ সুদীপ্ত যে এরকম ক্ষমতার অপব্যবহার করতেন তার প্রমাণ মিলেছিল কয়েকবছর আগে৷ কলকাতা পুলিশের এস টি এফ প্রধানের কাছে গিয়ে সুদীপ্ত সেন অভিযোগ জানিয়েছিলেন, আসামের জঙ্গি সংগঠন তাকে ফোনে খুনের হুমকী দিচ্ছে৷ তাঁর নিরাপত্তা প্রয়োজন৷ একজন পুলিশ কর্তার সুপারিশে এলেও লালবাজার থেকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয় আপনি বেসরকারি নিরাপত্তা কর্মী রাখুন৷ বিধাননগর কমিশনারেটের এক কর্তা জানিয়েছেন, অবসরপ্রান্ত এক আই পি এস অফিসার সারদার নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে দশ লক্ষ টাকা পেতেন বলে তদন্তে জানা গিয়েছে৷ তদন্তে দেখা হবে হঠাত্ করে তাকে কেন এত টাকা দেওয়া হোত৷ এর পেছনে কী কারণ ছিল৷ পুলিশ এটাও জানতে পেরেছে, বিভিন্ন চালকদের মাধ্যমে গাড়ি করে বিভিন্ন সরকারি দন্তরের কর্তা ছাড়াও রাজনৈতিক নেতাদের কাছে নিয়মিত টাকা পাঠানো হতো৷ এই ঘটনার তদন্তে সারদা গোষ্ঠীর বোস্টনে থাকা সাফারি সফটওয়্যারের সার্ভারের তথ্য সংগ্রহের জন্য প্রয়োজনে ইন্টারপোলেরও সাহায্য নেওয়া হবে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে৷

বিধাননগর কমিশনারেটের গোয়েন্দা প্রধান অর্ণব ঘোষ জানিয়েছেন, বিদেশে থাকা ওই সফটওয়্যারের জন্য ৪৪ হাজার ইউ এস ডলার ভাড়া দিতে হত৷ সারদার ব্যবহার করা ওই সফটওয়্যারের হার্ডডিস্ক ইতিমধ্যেই সংগ্রহ করেছেন পুলিশ কর্তারা৷ পুলিশের সন্দেহ, বাইরে হাওলা বা হুণ্ডির মাধ্যমে টাকা পাচার হয়েছে কিনা তা জনার জন্য প্রয়োজনে সাসপেন্স ট্রানজেকশন রিপোর্ট তৈরি করা হবে৷ এজন্য সাহায্য নেওয়া হতে পারে কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে থাকা ফ্রড ইনভেস্টমেন্ট ইউনিটের৷ পুলিশ জানিয়েছে,সম্প্রতি দুবাইতে রিয়েল এস্টেটের ব্যবসা করার জন্য পরিকল্পনা করছিলেন সারদা কর্তা৷ গোয়েন্দা প্রধান এদিন জানান, ২০১০ সাল থেকে সারদা সংস্থার কোন সঠিক হিসেবপত্র করানো হত না৷ তবে মাসে চালকদের ভাড়া সহ অন্যান্য খরচের জন্য ২৫ লক্ষ টাকার মতো খরচ করা হোত৷ অন্যান্য ব্যবসা লাটে উঠলেও ওই গোষ্ঠীর একমাত্র এক্সপোর্ট ব্যবসা লাভে চলছিল৷ মূলত দুবাইতে চামড়া পাঠানো এবং ইউরোপে পোষাক পাঠানোর ব্যবসা করত এই ইউনিটটি৷

পুলিশকে জেরায় সুদীন্তবাবু জানিয়েছেন, তিনি নিজেই বেশ কিছুদিন ধরে বুঝতে পারছিলেন তাঁর সংস্থায় পুকুর চুরি চলছে৷ কিন্ত্ত তিনি কেন তা বন্ধ করার চেষ্টা করেননি তা নিয়ে সঠিক কোনও জবাব দেননি সারদা গোষ্ঠীর কর্ণধার৷ পুলিশ জানতে পেরেছে, জেরাতে সুদীপ্ত সেন নিজেকে একজন 'গুড বস' হিসেবে দাবি করলেও গোয়েন্দাদের জেরার জবাবে কর্মীরা জানিয়েছেন তিনি মোটেও তা ছিলেন না৷ রবিবার, পুজোর সময় হঠাত্‍ হঠাত্‍ ডেকে পাঠানো হোত কর্মীদের৷ শুধুমাত্র দেবযানীর ক্ষেত্রে খানিকটা ছাড় ছিল৷ কিছুদিন আগেই সুদীপ্ত সেন তাঁকে জানিয়েছিলেন, 'তুমি একমাসের ছুটি নাও'৷ নিজে এদিন দূর্গাপুর-আসানসোল কমিশনারেটের গোয়েন্দারা জেরা করেন সুদীপ্ত এবং দেবযানীকে৷ জেরা করা হয় সংস্থার আই টির কর্মীদেরও৷

http://eisamay.indiatimes.com/articleshow/19806043.cms


বিনিয়োগ টানতে আশ্বাস, তবে সংস্কারে সাহসী চিদম্বরমের পথের কাঁটা রাজনীতি

বিনিয়োগ টানতে আশ্বাস, তবে সংস্কারে সাহসী চিদম্বরমের পথের কাঁটা রাজনীতি
এই সময়: সেপ্টেম্বরে এক দফা সংস্কারের মুখ দেখেছিল ভারতীয় অর্থনীতি৷ তবে সেটাই নাটকের যবনিকা ছিল না৷ অর্থনীতিকে ফের ঘুরে দাঁড়াতে হলে সংস্কারমূলক নীতির প্রয়োজন দেশে৷ এই ভাবনা থেকেই গত আট মাসে দফায় দফায় আর্থিক সংস্কারের 'চাল' দেখেছে ভারত৷ ডিজেলের আংশিক বিনিয়ন্ত্রণ, চিনির আংশিক বিনিয়ন্ত্রণ, ভর্তুকি যুক্ত রান্নার গ্যাসের ঊর্ধ্বসীমা বেঁধে দেওয়া, বিমান পরিষেবা ও বহুব্র্যান্ডের খুচরো ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ, পেনশন বিল প্রভৃতি পাশ হয়েছে সংসদে৷ অবশ্যই এর নেপথ্যে চিদম্বরম৷ 

চলতি বাজেট অধিবেশনেও বিমায় এফডিআই ও জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত বিল পাশ হওয়ার কথা রয়েছে সংসদে৷ তবে রাজনীতির প্যাঁচে চিদম্বরমের সাহসী সংস্কারের গতি রুদ্ধ আপাতত৷ আগামী ১০ মে শেষ হবে চলতি বাজেট অধিবেশন৷ তবে এরই মধ্যে গত পাঁচদিন সংসদের দুই কক্ষই মুলতুবি হয়ে গিয়েছে৷ ফলে অর্থনৈতিক বিলগুলি পাশ হওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে৷ সেই সঙ্গে চিদম্বরমের আশ্বাস, প্রতিশ্রুতি ও ভারতীয় অর্থনীতির সুদিন ফেরার ইঙ্গিত ক্রমশই ফিকে হয়ে পড়ছে৷ 
বিশেষজ্ঞ মহল বলছে, বিনিয়োগ টানতে কয়েকদিন আগেই উত্তর-আমেরিকা যাত্রা করেছিলেন অর্থমন্ত্রী৷ বস্টনের রোড শোয়ে, নিউ ইয়র্ক, টরোন্টো, ওটাওয়ায় বিনিয়োগকারীদের আশ্বাস দিয়েছেন তিনি৷ বিমা ক্ষেত্রে বিদেশি বিনিয়োগ ২৬ শতাংশ থেকে বেড়ে ৪৯ শতাংশ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন চিদম্বরম৷ গত সন্তাহেও এক সাক্ষাত্কারে তিনি বলেছেন, জমি বিল, বিমা বিল পাশ হয়ে গেলে জিএসটি বিল বা পণ্য পরিষেবা কর বিলও পাশ হওয়ার একটা সম্ভাবনা থাকছে৷ আর সেটা যদি হয়, তা হলে সরকারের এক বিরাট বড় সাফল্য হিসেবে গণ্য হবে এই সংস্কারি পদক্ষেপ৷ কিন্ত্ত কয়লা কেলেঙ্কারি ও টু-জি কেলেঙ্কারির উপর জেপিসির খসড়া রিপোর্ট নিয়ে শুরু দিন থেকেই তুমুল হট্টগোল চলছে সংসদে৷ কয়লা কাণ্ডে সুপ্রিম কোর্টে সিবিআইয়ের দাখিল করা রিপোর্টের জেরে প্রধানমন্ত্রী ও আইনমন্ত্রী অশ্বিনী কুমারের পদত্যাগের দাবি করেছে বিজেপি৷ অন্যদিকে, টু-জির খসড়া রিপোর্ট নিয়ে জেপিসি চেয়ারম্যান পি সি চাকোর পদত্যাগের দাবি করেছে জেপিসির বাকি সদস্যরা৷ 
আগামীকাল মঙ্গলবার সংসদে আর্থিক বিল পেশ করা নিয়ে সর্বসম্মতিতে পৌঁছেছে রাজনৈতিক দলগুলি৷ তবে জমি বিল ও বিমা বিল নিয়ে কোনও মতৈক্য এখনও লক্ষ্য করা যায়নি৷ জমি বিলের বেশ কয়েকটি সংশোধনে বিরোধীরা শাসকদলের সঙ্গে একমত হয়েছে৷ বলা যায়, জমি বিলে নীতিগত সম্মতি রয়েছে বিরোধীদের৷ তবে বিমা বিলের জন্য ইউপিএ-২ বিরোধী পক্ষের কোনও সমর্থনই টানতে পারেনি৷ বিজেপির মুখপাত্র প্রকাশ জাভেড়েকর বলেছেন, 'কংগ্রেস আমাদের বিভ্রান্ত করছে৷ অর্থনীতির টোপ দেখিয়ে এসব বিল পাশ করাতে চাইছে৷ ইউপিএ-২-এর দিন ঘনিয়ে এসেছে৷ এখন আর অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার ক্ষমতা নেই ওঁদের৷' 

তবে এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, অর্থমন্ত্রী এ দেশে বিদেশি বিনিয়োগ টানার চেষ্টা করছেন৷ আর ভারতীয় সংস্থাগুলিই দেশ ছেড়ে দেশের বাইরে বিনিয়োগ করছে৷ পরিসংখ্যান বলছে, ২০১২-১৩ অর্থবর্ষের প্রথম ১১ মাসে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে ৩৮ শতাংশ৷ সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকোনমি জানিয়েছে, জানুয়ারি-মার্চ ত্রৈমাসিকে দেশে নতুন মূলধন বিনিয়োগ কমেছে ৭৫ শতাংশ৷ অন্যদিকে, সরকারের পূর্বাভাস এপ্রিলে এ দেশ থেকে বিদেশে করা কর্পোরেট বিনিয়োগের পরিমাণ ৪৫ শতাংশ বাড়বে৷ 

বিপরীত মহলের দাবি, জোট-রাজনীতিতে থেকেও চিদম্বরম সাহস দেখিয়েছেন৷ তার সাহসে ভর করেই অর্থনীতিতে বেশ কয়েকটি দৃষ্টান্ত স্থাপন হয়েছে৷ যেমন বিমান পরিষেবা এফডিআই দ্বার উন্মুক্ত করায় আবু ধাবির বিমান সংস্থা এতিহাদ জেটের ২৪ শতাংশ শেয়ার কিনছে৷ ফলে দেশে বিনিয়োগ হচ্ছে দু'হাজার কোটি টাকারও বেশি৷ টাটা গোষ্ঠীর সঙ্গে হাত মিলিয়ে দেশে বিমান সংস্থা খুলছে মালয়েশিয়ার এয়ার এশিয়া৷ প্রাথমিক বিনিয়োগ ৮০ কোটি টাকা৷ খুচরোয় এফডিআই অনুমোদিত হওয়ায় দেশে ৭০২ কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে সুইডিশ রিটেল চেন হেনস অ্যান্ড মরিত্জ৷ ৫০টি রিটেল বিপণি খুলবে ভারতে এই সংস্থা৷ বড় প্রকল্পের দ্রুত অনুমোদনের জন্য যে বিনি‌য়োগ সংক্রান্ত ক্যাবিনেট কমিটি গঠিত হয়েছে, সেখানে জানুয়ারি থেকে এখনও পর্যন্ত ২৭০০ কোটি ডলারের প্রকল্পে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে৷ এর ফলে ক্রমশ বাড়তে থাকা আর্থিক ঘাটতিকে রোখা গিয়েছে৷ যার জেরে ভারতের রেটিং কমার সম্ভাবনাও দূরে সরেছে৷ তা হলে এগুলি চিদম্বরমের সাফল্য বলে ধার্য হবে না কেন? 

চিদম্বরমের সাফল্য ও ব্যর্থতার খতিয়ানে মূল কাঁটা হচ্ছে রাজনীতি৷ ২০১৪-য় সাধারণ নির্বাচন৷ তার মধ্যে যতটা সম্ভব আর্থিক সংস্কারের-রথ চালাতে চান অর্থমন্ত্রী৷ কিন্ত্ত সংসদে কোনও কাজই হচ্ছে না৷ শুধু বিরোধীরা কেন খোদ কংগ্রেসি ক্যাবিনেটই চিদম্বরমের সংস্কারের বিপরীতপন্থী৷ যেমন কয়লা খনির নিয়ন্ত্রণে আলাদা কয়লা নিয়ন্ত্রক চান অর্থমন্ত্রী৷ তবে কয়লামন্ত্রক তাতে রাজি নয়৷ কয়লা ও বিদ্যুত্‍ মন্ত্রকের ঝামেলার কারণে জ্বালানির জোগান ব্যাহত হচ্ছে৷ স্থানীয় অঞ্চলে উত্পাদিত তেল ও গ্যাসের দামে সম্পূর্ণ বিনিয়ন্ত্রণ চেয়েছে অর্থমন্ত্রক৷ কিন্ত্ত তাতে বাধা দিয়েছে বাকি মন্ত্রকগুলি৷ সমাজকল্যাণ খাতে বরাদ্দ ছাঁটতে চেয়েছেন চিদম্বরম৷ কিন্ত্ত বাকি মন্ত্রীরা ভোটের জুজু দেখিয়ে সমাজকল্যাণ খাতে বিপুল টাকা খরচ করার নীতিতে অটল৷ 

প্রশ্ন একটাই, বিদেশে করা প্রতিশ্রুতি কতটা রাখতে পারবেন চিদম্বরম? কারণ বিনিয়োগকারীদের আস্থা জিততে না পারলে লগ্নি-লক্ষ্মী এ দেশে পা রাখবে না৷ 

No comments:

Post a Comment