Wednesday, May 15, 2013

হেডকোয়ার্টারেও দুর্দশা জামায়াতের!গণতন্ত্র রক্ষার দায়িত্ব কি কেবল শেখ হাসিনার একার?আওয়ামী লীগ-বিএনপির ‘আম-ছালা’ দুটাই রক্ষা পাবে কি?আওয়ামী লীগ-বিএনপি: কবে হবে বোধোদয়

News Details - Full Banner_Above

রাশেদ খান মেনন

রাশেদ খান মেনন

বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেছেন, মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার বানচাল করতে সাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর ও মন্দিরে হামলা করে তাদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করা হচ্ছে। এ অপপ্রচার ও অপশক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
আজ বুধবার রাজধানীর পল্টনের কার্যালয়ে ১৪ দলের সভায় রাশেদ খান মেনন এসব কথা বলেন। 
মেনন বলেন, বিএনপি-জামায়াত ধর্মকে ব্যবহার করে স্বতঃস্ফূর্তভাবে গড়ে ওঠা শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চকে বিতর্কিত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের বিভ্রান্ত করে তাদের উসকে দেওয়া হচ্ছে। এ অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সর্বত্র সঠিক বিষয়টি তুলে ধরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন করতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ বিষয়ে পাড়া-মহল্লায় প্রতিরোধ ব্রিগেড গড়ে তুলতে হবে। 
ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় আরও বক্তব্য দেন ওয়ার্কার্স পার্টির কামরুল আহসান, সাম্যবাদী দলের হারুন চৌধুরী, জাসদের আসাদুজ্জামান, গণতন্ত্রী পার্টির মনজুরুল কবীরসহ স্থানীয় নেতারা।


সাঈদীর রায়ের পর সংঘর্ষে প্রাণহানি প্রসঙ্গে খালেদা জিয়া

এই গণহত্যার জন্য ট্রাইব্যুনাল হবে, বিচার হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক | তারিখ: ১৩-০৩-২০১৩


1 2

বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের ধরপাকড় ও 'গণহত্যা' বন্ধের আহ্বান জানিয়ে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, 'না হলে এর পরিণাম হবে ভয়ংকর।' আগামীতে এই 'গণহত্যার' বিচার করতে ট্রাইব্যুনাল করার ঘোষণাও দেন তিনি।
আজ বুধবার সন্ধ্যায় রাজধানীর নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় পরিদর্শনে গিয়ে বিরোধীদলীয় নেতা সরকারের উদ্দেশে এই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। গত সোমবার পুলিশ বিএনপির কার্যালয়ে অভিযান চালানোর পর আজ কার্যালয়ের অবস্থা দেখতে সেখানে যান দলের চেয়ারপারসন। সেখানে তিনি কার্যালয়ের দ্বিতীয় তলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন।
খালেদা জিয়া বলেন, আগামীকাল বৃহস্পতিবারের মধ্যে দলটির কারাবন্দি নেতাদের মুক্তি না দিলে ১৮ ও ১৯ মার্চ সর্বাত্মক হরতাল হবে। তিনি ওই হরতাল সফল করার প্রস্তুতি নিতে দলের নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান। নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে খালেদা বলেন, 'কষ্ট করতে হবে, তা হলে ফল মিলবে ইনশাল্লাহ।' 

'গণহত্যার বিচার হবে'

জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে রায়ের পর জামায়াত-শিবিরের সহিংসতা ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে প্রাণহানির ঘটনাকে 'গণহত্যা' উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, 'এই গণহত্যার জন্য ট্রাইব্যুনাল হবে, বিচার হবে। প্রধানমন্ত্রী নিজেও এর দায় এড়াতে পারেন না।' এই গণহত্যায় ১৭০ জন নিহত হয়েছে দাবি করে বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, 'সরকারের এক নম্বর থেকে শুরু করে সবাইকে মানবতাবিরোধী অপরাধে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হবে।' 
খালেদা জিয়া বলেন, 'সরকারের পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেছে। সরকার ডেসটিনি, হল-মার্ক, শেয়ারবাজার, পদ্মা সেতু ইস্যুগুলো ধামাচাপা দেওয়ার জন্য গণহত্যা চালাচ্ছে।' তিনি বলেন, 'জনগণের আন্দোলন কখনো বৃথা যায় না, যাবে না।'

শাহবাগের সমালোচনা

সরাসরি শাহবাগের নাম উচ্চারণ না করলেও আবারও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে গড়ে ওঠা শাহবাগের আন্দোলনের কড়া সমালোচনা করেছেন খালেদা জিয়া। সরকারের উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেন, 'এই সরকারকে আর সময় দেওয়া যায় না। একদিকে আমাদের মিছিলে গুলি করছে, সমাবেশ করতে দিচ্ছে না। অন্যদিকে নাস্তিকদের পাহারা দিয়ে, খাওয়া-দাওয়া দিয়ে লালন করছে।' মানুষের দৃষ্টি ফেরাতে এটি করা হচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। 
খালেদা আরও বলেন, 'এসব মঞ্চ-ফঞ্চ বানানো বন্ধ করুন। জনগণের মঞ্চ তৈরি হলে রক্ষা পাবেন না।

'

ক্ষমতা ছেড়ে দিন'

সরকারকে উদ্দেশ করে খালেদা জিয়া বলেন, 'পরিষ্কার বলতে চাই, এখনো সময় আছে, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করে ক্ষমতা ছেড়ে দিন।' এ সময় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, 'আপনারা কি রাজি আছেন?' নেতা-কর্মীরা সমর্থন জানালে তিনি বলেন, 'লক্ষ হাত জেগে উঠেছে সরকারকে বিদায় দেওয়ার জন্য। সরকার অবশ্যই বিদায় নেবে।' এ জন্য তিনি নেতা-কর্মীদের প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানান।

বোমা উদ্ধার পরিকল্পিত

গত সোমবার পুলিশ নিজেরাই বোমা ফাটিয়ে বিএনপির সমাবেশ পণ্ড করেছে এবং বিএনপির কার্যালয়ে বোমা রেখে তা উদ্ধার করেছে বলে দাবি করেন বিএনপির চেয়ারপারসন। তিনি সোমবারের ঘটনাকে সরকারের পূর্বপরিকল্পিত বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, 'আমরা রাজনীতি করি, বোমাবাজি করি না।'
পুলিশের সদস্যদের উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেন, 'আপনারা এ দেশের নাগরিক। আপনারা জনগণের ট্যাক্সের টাকায় চলেন। কথায় কথায় গুলি চালানো বন্ধ করুন। এ জন্য আপনাদের জবাব দিতে হবে।' 
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে 'রাজাকার' আখ্যায়িত করে খালেদা জিয়া বলেন, 'আওয়ামী লীগে বহু রাজাকার আছে। তাদের আগে ধরতে হবে।' তিনি বলেন, 'আমরাও মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই। তবে তা হতে হবে স্বচ্ছ ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন।' ক্ষমতায় গেলে সেভাবেই যুদ্ধাপরাধের বিচার করা হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা, তাদের বাড়িঘর ভাঙচুর করার জন্য সরকারকে দায়ী করে বিএনপির চেয়ারপারসন বলেন, 'এর দায় সরকারকে বহন করতে হবে।' তিনি বলেন, 'আমাদের লোকজন খবর রাখছে। সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য সব রকম সহায়তা দেওয়া হবে।'
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আজ বুধবার বিকেল পৌনে ছয়টায় নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পৌঁছান। এ সময় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি উপেক্ষা করেও বিএনপির নেতা-কর্মীরা স্লোগানে স্লোগানে তাঁকে স্বাগত জানান। 
পরে খালেদা জিয়া কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পুলিশি অভিযানে ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন কক্ষ পরিদর্শন করেন।
এর আগে খালেদা জিয়ার আগমনকে কেন্দ্র করে বেলা দুইটার পর বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হতে থাকেন। নেতা-কর্মীরা সরকারবিরোধী স্লোগান দিয়ে নয়া পল্টন এলাকা মুখরিত করে তোলেন।


সময়চিত্র

আওয়ামী লীগ-বিএনপি: কবে হবে বোধোদয়

আসিফ নজরুল | তারিখ: ১৩-০৩-২০১৩

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিএনপির সঙ্গে আলোচনার কথা বলেছিলেন। আমরা তাতে কিছুটা আশ্বস্ত হতে চেয়েছিলাম। কিন্তু এর দুই দিনের মাথায় বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলের বিক্ষোভ সমাবেশ রহস্যজনক ককটেল বিস্ফোরণের পর পণ্ড হয়েছে। পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করেছে। আক্রান্ত হলে এটুকু করার অধিকার পুলিশের রয়েছে। কিন্তু এরপর পুলিশ যা করেছে, তা নজিরবিহীন। বিএনপির অফিসে হামলা করে হাইকোর্টের জামিনে থাকা নেতাদেরসহ বিএনপির উপস্থিত সব নেতা-কর্মীকে পুলিশ গণহারে গ্রেপ্তার করেছে এবং বিএনপি অফিসের বিভিন্ন দরজা ভেঙে ভেতরের কক্ষ তছনছ করেছে।
গত আমলে বিএনপির পুলিশ আওয়ামী লীগ অফিসে ঢুকে কাঁদানে গ্যাসের শেল মেরেছিল। এ ঘটনার নিন্দায় সারা দেশের বিভিন্ন মহল সোচ্চার হয়েছিল। কিন্তু এবারের ঘটনা তাকেও ছাড়িয়ে গেছে। গণতান্ত্রিক আমল দূরের কথা, কোনো সামরিক আমলেও এভাবে প্রধান বিরোধী দলের অফিসে চড়াও হওয়া, জামিনে থাকা নেতাদের গণগ্রেপ্তার ও হাতুড়ি দিয়ে কার্যালয় ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেনি। এই তাণ্ডবের পর পুলিশ যথারীতি মামলা করেছে বিএনপির আক্রান্ত নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধেই!
পুলিশের এই আগ্রাসী ভূমিকার কারণ কী? বিএনপি জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে সমাবেশ করছে বলে? যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এতে বিঘ্নিত হতে পারে বলে? আমার মনে হয় না, এত মহৎ বা আদর্শিকভাবে বিষয়টি দেখার কোনো কারণ আছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে দেশে জামায়াত-শিবিরের তাণ্ডবলীলা শুরু হওয়ার বহু আগেও সরকার বিএনপির বিরুদ্ধে বিভিন্ন নিপীড়ন চালিয়েছিল। বিএনপির নেতা ইলিয়াস আলী ও চৌধুরী আলম গুম হওয়ার ঘটনা, খেলো অভিযোগে বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতাদের গণহারে গ্রেপ্তার করে দিনের পর দিন জেলে আটক রাখা, বিরোধীদলীয় চিফ হুইপকে নির্মমভাবে রাস্তায় ফেলে পেটানোর মতো বহু ঘটনা ঘটেছিল এমন একসময়ে, যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ইস্যু নিয়ে কোনো অনিশ্চয়তা দেশে ছিল না। আবার সিপিবির সভা, তেল-গ্যাস রক্ষা আন্দোলন বা শিক্ষকদের শহীদ মিনারে অনশন কর্মসূচির সঙ্গে জামায়াতকে কোনোভাবে রক্ষা করার কোনো দূরতম সম্পর্কও ছিল না। কিন্তু তখনো আমরা পুলিশকে নির্বিচার আক্রমণ করতে দেখেছি তাদের ওপর। কাজেই প্রকৃতভাবে আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী দল ও ভিন্নমতের প্রতি চরম অসহনশীল, এ জন্য তারা দেশের জনগণের অর্থে পরিচালিত পুলিশকে নিপীড়কের ভূমিকায় নামিয়েছে এবং এরই ধারাবাহিকতায় ১২ মার্চ বিএনপির অফিসে হানা দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে, এটি বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।
সরকারের আসল এজেন্ডা কি তাহলে দেশে একদলীয় আধিপত্য কায়েম করা? আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আগে বলেছিলেন যে তাঁরা বাকশালীয় আদর্শে বিশ্বাস করেন। বাকশালীয় আদর্শ ও চেতনার মানে হচ্ছে, দেশে কোনো বিরোধী দল থাকতে পারবে না, দেশে কোনো ভিন্নমত সহ্য করা হবে না, গণমাধ্যমকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেওয়া হবে না। সরকারকে তার ক্ষমতার শেষ বছরে কিছু ক্ষেত্রে আমরা তা-ই করতে দেখছি আরও স্পষ্টভাবে। আগামী নির্বাচনের দিন যতই এগোচ্ছে, সরকার ততই যেন অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে বিরোধী দল ও মতের প্রতি।
আমাদের মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সবচেয়ে বড় উপাদান হচ্ছে দেশে প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা। একদলীয় আধিপত্য যেকোনো মূল্যে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী। দুর্নীতি, সন্ত্রাস আর দলীয়করণ করে রাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্ভাবনা কুক্ষিগত করা মুক্তিযুদ্ধের আরেকটি বড় চেতনার (অর্থনৈতিক সাম্য প্রতিষ্ঠার) সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। ১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করার উদ্যোগ নিয়ে সরকার সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে। কিন্তু এই বিচার করছে বলে মুক্তিযুদ্ধের অন্য মূল চেতনাগুলো ধূলিসাৎ করার অধিকার তার নেই। দেশ পরিচালনায় সরকারের ব্যর্থতা বা পছন্দমতো আগামী নির্বাচন করে অসৎভাবে আবারও ক্ষমতায় যাওয়ার চেষ্টার প্রতিবাদ বিরোধী দল করবে না, এটিও সরকার আশা করতে পারে না।
এই লেখা তৈরি করার সময় আমরা জেনেছি যে মির্জা ফখরুলসহ বিএনপির আরও তিন নেতাকে পুলিশ ছেড়ে দিয়েছে, আরও কয়েকজনকে হয়তো পরে ছেড়ে দেওয়া হবে। কিন্তু এরপর? বিএনপি বা ১৮ দলীয় জোট কি এরপর নির্বিঘ্নে তাদের কর্মসূচি পালন করতে পারবে? যে প্রশ্নবিদ্ধ মামলা বিএনপির নেতাদের বিরুদ্ধে হয়েছে, সেগুলোর কী হবে? ককটেল-পুলিশি হামলা-গ্রেপ্তার, এরপর মামলা—এই চক্রের অবসান কবে হবে?
আমরা বিশ্বাস করি, যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল ও এর বিচার-প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার যেকোনো তাণ্ডবলীলা আইনগত পন্থায় কঠোর হস্তে দমন করার দায়িত্ব সরকারের রয়েছে। কিন্তু এই দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বা অন্যান্য দলের কর্মসূচি (যেমন ইসলামি দলগুলোর কর্মসূচি) দমন করতে গিয়ে পুলিশ মাত্রাতিরিক্ত বা বেআইনি শক্তি প্রয়োগ করেছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলার অধিকার বিরোধী দলের থাকবে না কেন? আর যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য আওয়ামী লীগ জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন করেছে, সেই একই সরকার পুনর্বহালের জন্য জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপি আন্দোলন করলে আওয়ামী লীগের তাতে রুষ্ট হওয়ার কোনো নৈতিক অধিকার আছে কি?
তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য বিএনপি জোটবদ্ধ আন্দোলন করতেই পারে। তবে এই আন্দোলন করতে গিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রতিরোধে জামায়াতের ষড়যন্ত্রের সহায়ক হওয়া কোনোভাবেই বিএনপির উচিত হবে না। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আমাদের সাংবিধানিক ও আইনি দায়িত্ব। এই বিচার ঠিকমতো হচ্ছে কি না, তা নিয়ে বিরোধী দলগুলো যৌক্তিক প্রশ্ন তুলতে পারে, কিন্তু বিচার ও ট্রাইব্যুনাল বাতিল করার কোনো দাবি তোলা এবং বিশেষ করে এর জন্য জনগণের জানমালের ক্ষতি করার কোনো অধিকার কারও নেই।
বিএনপিকে বুঝতে হবে, এই বিচার আমাদের জাতীয় কর্তব্য। বিএনপি এই বিচার অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার করেছে। কিন্তু এই অঙ্গীকার সুস্পষ্ট নয়, বিশ্বাসযোগ্যও নয়। ভবিষ্যতে ক্ষমতায় গেলে ট্রাইব্যুনাল অব্যাহত ও সচল রাখা এবং দোষীদের রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে ক্ষমা না করার ওয়াদা বিএনপিকে জনগণের কাছে করতে হবে। কয়েকটি বিচারের রায় ঘোষণার পর জামায়াত যেসব স্থানে তাণ্ডবলীলা চালিয়েছে, তার সমালোচনা বিএনপিকে করতে হবে। সরকার তত্ত্বাবধায়কব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় বা অন্য কোনোভাবে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে (যেমন নিরপেক্ষ ব্যক্তির অধীনে সর্বদলীয় নির্বাচনকালীন সরকার, সবার সম্মতির ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন এবং নির্বাচনী আইনের সংস্কার) অর্থবহ আলোচনায় রাজি হলে বিএনপিকে জামায়াতের সঙ্গে সব যৌথ কর্মসূচি পরিহার করতে হবে। 
আওয়ামী লীগ ও বিএনপির এই বোধোদয় প্রয়োজন যে দেশের বর্তমান অচলাবস্থা নিরসনে তাদের মধ্যে সমঝোতার কোনো বিকল্প নেই। এটি না হলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আরও বেশি বিঘ্নিত হতে পারে। দেশে সাম্প্রদায়িক শক্তি, পুলিশ, মাস্তান আর গুপ্তঘাতকদের আরও দৌরাত্ম্য আমাদের দেখতে হতে পারে। দেশের গণতন্ত্র এমনকি ভবিষ্যৎ পর্যন্ত বিপন্ন হতে পারে এতে। বিভক্ত ও ক্ষতবিক্ষত বাংলাদেশকে নানাভাবে শোষণ করার সুযোগ পেতে পারে বহুজাতিক পুঁজি, আন্তর্জাতিক ক্ষমতাবলয় এবং তাদের এ দেশীয় দোসররা।
আমরা রাজনীতিবিদদের বহু সমালোচনা করি। কিন্তু সংকট নিরসনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালনের অবকাশ তাঁদেরই রয়েছে। একসময় দেশে নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যম রাজনৈতিক সংকট নিরসনে যে নিরপেক্ষ ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করত, সেই অবস্থান তাদের এখন আর আছে বলে মনে হচ্ছে না। গত কয়েক বছরে নানা ধরনের সমালোচনা করে সরকার বিচারপতি হাবিবুর রহমান, ড. ইউনূস, কামাল হোসেন, এবিএম মূসা বা আকবর আলি খানদের মতো অভিভাবকসুলভ ব্যক্তিদেরও বিতর্কিত করে ফেলেছে। বাকি যেসব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এই সংকটে সরকার ও প্রধান বিরোধী দলের মধ্যে সমঝোতার জন্য ভূমিকা রাখতে পারত, তাদের অধিকাংশ বরং অন্ধভাবে বিভিন্ন পক্ষ নিয়েছে বা নীরব দর্শকের ভূমিকা গ্রহণ করেছে। সবচেয়ে যা ভয়াবহ, সারা দেশে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হয়েছে যে শাহবাগের গণজাগরণকে নাস্তিকদের আন্দোলন না বললেই কেউ ধর্মবিরোধী হিসেবে অভিহিত হচ্ছেন, আবার সরকারের কোনো কাজের সমালোচনা করলেই কেউ স্বাধীনতাবিরোধী হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছেন।
এই পরিস্থিতির আশু উত্তোরণ প্রয়োজন। সমঝোতার জন্য যা করার, তা-ই করতে হবে প্রধান দুটি দলের রাজনীতিবিদদের। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার অবশ্যই অব্যাহত রাখার এবং সুষ্ঠুভাবে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার প্রশ্নে দুই দল সমঝোতায় পৌঁছাতে পারলে অন্য কোনো শক্তির পক্ষে দেশে অরাজক অবস্থা সৃষ্টি করা সম্ভব নয়। সেই সমঝোতা না হলে আমাদের সবার ভবিষ্যৎ এক ভয়ংকর অনিশ্চয়তার মধ্যে থেকে যাবে।
আসিফ নজরুল: অধ্যাপক, আইন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

শাহবাগে সাইবার যুদ্ধ


হেফাজত ও জামাত-শিবিরের ইসলাম না মানার উদাহরণ - ১৪

হাদিস : নবী (স.) বলেছেন, "শিঙ্গা লাগানো সর্বশ্রেষ্ঠ চিকিৎসা" (আবু দাউদ-২০৯৮), "নবী রোযা, ইহরাম ও স্বাভাবিক অবস্থায় রক্তমোক্ষণ (শিঙ্গা) করিয়েছেন এবং শিঙ্গাকে সবচেয়ে উত্তম চিকিৎসা বলেছেন" (বুখারী-৫২৮২-৪), "মিরাজের রাতে দেখা হওয়া সকল ফিরিস্তা নবীকে ও তার উম্মতকে শিঙ্গা লাগাতে বলেছেন" (তিরমিযী-২০০৩)

এখন ১৩-দফা প্রদান ও সমর্থনকারীগণ দয়া করে বলুন, বাংলাদেশ কিংবা বিশ্বের অন্য কোন দেশে (এমনকি সৌদি আরবসহ মুসলিম দেশগুলোতে) বর্তমানে শিঙ্গা লাগানোর চিকিৎসা আছে কি? আপনারা কি আধুনিক চিকিৎসার বদলে 'শিঙ্গা চিকিৎসা' ব্যবহার করেন? বর্তমান হাসপাতালে-চিকিৎসায় এটা কি বাস্তবায়ন সম্ভব? যদি বর্তমান বাস্তবতায় আপনারা বিষয়টি মানতে না পারেন, তবে অন্যের জন্য ১৩-দফা মানতে বলছেন কেন?

সুতরাং দেশের লাখো কোমলমতি অল্পবয়স্ক মাদরাসা শিক্ষার্থীকে অনুরোধ করবো, রাজনৈতিক স্বার্থে তোমাদেরকে ব্যবহারকারী হেফাজত জামাত-শিবির নেতাদের ফাঁদে পা দিওনা, যারা পবিত্র কোরান পুড়িয়ে বিপদের সময়ে মতিঝিলে তোমাদের একা ফেলে নিজেরা যার-যার নিরাপদ আশ্রমে চলে যায়।
////ড. লজিক্যাল বাঙালি

This Day in The BANGLADESH LIBERATION WAR-1971
15th May-1971
কেমন ছিল মুক্তিযুদ্ধের সেই দিনগুলি?
১৫ মে, ১৯৭১

সিলেটের নালুয়া চা বাগানে সিলেট-ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়কে মুক্তিযোদ্ধারা পাকবাহিনীর একটি বড় সামরিক বহরকে এ্যামবুশ করে এবং ভয়ংকর যুদ্ধ হয়। এতে পাকবাহিনীর একটি ট্রাক সম্পূর্ণ ধ্বংস হয় এবং ২৭জন পাকসেনা নিহত হয়। পাকবাহিনীর পাল্টা আক্রমণে মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন মতিউর রহমান সহযোদ্ধাদের নিয়ে নিরাপদ এলাকায় চলে আসেন।

লে. মোরশেদের নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনীর একদল যোদ্ধা সিলেট-ঢ...See More





হেডকোয়ার্টারেও দুর্দশা জামায়াতের!

মনোয়ার রুবেল, অতিথি লেখক
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: গ্রেফতার হওয়ার কয়েকদিন আগে জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আজম একটি বেসরকারি টেলিভিশনকে দেওয়া সাক্ষাতকারে বলেছিলেন, "জামায়াতের হেড কোয়ার্টার লাহোর, তখনও ছিল লাহোর (১৯৭১), এখনও লাহোর"।

সেই সাক্ষাতকার দেখার পর থেকে তুমুল আগ্রহ ছিল, লাহোরে বা পাকিস্তানে জামায়াতের অবস্থানটা আসলে কি তা জানার? আর সেটি পরিমাপের প্রধান উপায়- নির্বাচন। তাই এবারের পাকিস্তানের নির্বাচনের ফলাফলের উপর চোখ রাখছিলাম।

ভেবেছিলাম জামায়াত আমাদের দেশে ইসলামের নামে যেভাবে তাণ্ডব চালায়, নিশ্চয়ই পাকিস্তানে তাদের হেডকোয়ার্টারেও ভোটের বন্যা বইয়ে দিবে। কিন্তু দুঃখের ও হতাশার ব্যাপার, জামায়াত সেখানে ন্যাশনাল এসেম্বলিতে আসন পেয়েছে মাত্র ৩টি! 

১৯৪১ সালে জামায়াত প্রতিষ্ঠার পর পাকিস্তানের প্রথম নির্বাচন হয় ১৯৫৪ সালে। সেখানে তারা অংশ নেয়নি। এরপর ১৯৬২ তেও নয়। ১৯৬৫ সালে সিওপি'র (কম্বাইন্ড অপজিশন পার্টি) মাধ্যমে নির্বাচনে অংশ নেয়। তারা মূলত একক ও স্বাধীন নির্বাচন করে ১৯৭০ সালে। তখন পুরো পাকিস্তানে জামায়াতের আসন ছিল চারটি, তার মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানে একটিও ছিল না!

৪৩ বছর আগে তারা আসন পেয়েছিল ৪টি, এখন ৩। এই দীর্ঘ সময়ে জামায়াতের অগ্রগতি কি?

তারা আসলে একই জায়গায় স্থির হয়ে চার দশক দাঁড়িয়ে আছে। ভোটে যেমন, মননেও তেমন। ১৯৪১ সালে জামায়াত প্রতিষ্ঠার পর থেকে আজ পর্যন্ত তাদের চলনে, বলনে, কর্মে এবং ধর্মে কোনো পরিবর্তন হয়নি। যা কিছু পরিবর্তন তাদের চর্মে। অর্থাৎ চামড়ার রঙ পরিবর্তন করে, মুখে এনামেল মেখে, মুখোশ পরে বারবার তারা আমাদের সামনে আসে। কিন্তু ভাগ্য এতোটাই খারাপ যে, প্র্রতিবারই তাদের ধরাশায়ী হতে হয় ভোটারদের কাছে। পাকিস্তানের ভোটার হোক, কিংবা বাংলাদেশের। বাংলাদেশের চেয়ে পাকিস্তানে তাদের অবস্থা বেশি মুমূর্ষ‍ু।

প্রশ্ন হতে পারে, হেডকোয়ার্টারে জামায়াতের এই দুর্দশা, কিন্তু বাংলাদেশে তাদের এতো লম্ফঝম্প কিভাবে? এর কারণ আমাদের গ্রামীণ সমাজ ব্যবস্থার ধর্মান্ধতা, মাদ্রাসামুখী অনাধুনিক তরুণ সমাজকে ইসলামের ভয় দেখিয়ে প্রতারিত করা, মানসিকভাবে প্রভাবিত করা।

কিন্তু তাই বলে পাকিস্তান কি ধর্মান্ধ রাষ্ট্র নয়? তারা কি আমাদের চেয়ে বেশি অগ্রসর? আমি বলবো, নির্বাচনের ফলাফলে চোখ রাখুন, সেখানেই উত্তর খুঁজুন।

জামায়াত আমাদের দেশে যে খুব শক্তিশালী অবস্থানে আছে, সেটাও নয়। তারা সর্বশেষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসন পেয়েছে দু'টি। জন্মের পর জামায়াত এখানে নিষিদ্ধ হয়েছিল একবার, স্বাধীনতার পর। পাকিস্তানেও একবার আইয়ুবের আমলে দাঙ্গা বাধানোর দায়ে নিষিদ্ধ হয়েছিল।

শুধু তাই নয়, জন্মের পর থেকে এখন পর্যন্ত এই দলটি আমির-ওমরা পর্যায়ের সব নেতাই হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত। পাকিস্তানে জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা মওদূদী কাদিয়ানি-মুসলিম দাঙ্গা লাগিয়ে প্রায় হাজার লোক হত্যার দায়ে বিচারের সম্মুখীন হয়ে মৃত্যুদণ্ড পেয়েছিলেন। পরে রাজনৈতিক কারণে সাধারণ ক্ষমা পান।

বিভিন্ন সময়ে জামায়াতকে নিয়ে পাকিস্তান চরম বিপদে ছিল এবং এখনও আছে। সেখানে জামায়াতকে নিয়ে সবচেয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি হয় ১৯৭০ সালের পহেলা নভেম্বর। ফিরোজ খান নামে এক জামায়াত কর্মী ট্রাক ড্রাইভার করাচি বিমানবন্দরে পাকিস্তান সফরে থাকা পোলান্ডের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জিগফ্রিড ওলনিয়াকসহ চারজনকে গাড়ি চাপা দিয়ে হত্যা করে। যদিও পরে জামায়াত নেতারা ওই ড্রাইভার তাদের কর্মী নয় বলে দাবি করেন। পাকিস্তান বৈদেশিক সম্পর্ক রক্ষার্থে একে স্রেফ দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দিতে চাইলেও পরে এ নিয়ে পানি কম ঘোলা হয়নি।

শুধু এটিই নয়, ইতিহাসে জামায়াত দিয়ে যতোগুলো হত্যাকাণ্ড হয়েছে, তার সবগুলোরই দায় অস্বীকার করে দলটি। তারা অত্যন্ত কৌশলে মানুষের ভেতরের পশুটিকে জাগিয়ে দেয়। পরে তাকে সরাসরি জঙ্গিতে পরিণত করে। ১৯৭০ সালের সেই ফিরোজ খান থেকে শুরু করে ২০০৭ সালের বাংলা ভাই পর্যন্ত জঙ্গি তালিকায় যুক্ত প্রায় সবাই কোনো না কোনো বয়সে জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। এছাড়া সরাসরি হত্যাকাণ্ডের মদদ দিয়েছেন জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা সৈয়দ আবুল আলা মওদূদী, একেএম ইউসুফ, গোলাম আজম, মতিউর রহমান নিজামী, কাদের মোল্লা, কামারুজ্জামান, চৌধুরী মঈনুদ্দীন প্রমুখ।

ধর্মীয় বিভ্রান্তমূলক অপব্যাখ্যা দিয়ে এসব হত্যাকাণ্ড ও সামাজিক অস্থিতিশীলতা তৈরি করা হয়।
 
এদেশ, ওদেশ- দু'দেশেই নির্বাচনে জামায়াতের পরাজয়ের আরেকটি কারণ হলো সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে না পারা। একাত্তরে যেমন জামায়াতের বাংলাদেশ বিরোধী ভূমিকা ছিল, তেমন ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাজনের প্রথম ভাগেও তাদের পাকিস্তান বিরোধী ভূমিকা ছিল। তারা বরাবরই স্বাধীনতা ও পরিবর্তনের ব্যাপারে গোঁয়ার, নিজেরাই নিজেদের নিয়ে বিভ্রান্ত।

'মাদ্রাসার দেশ' পাকিস্তানে জামায়াতের লোকজনকে ধর্মীয়ভাবে বিভ্রান্ত বা গাফেল মনে করা হয়। মওদূদীকে গাফেল বা ভ্রান্ত ধারণার অনুসারী মনে করা হয়। মুসলমান হলেও তারা ইসলামের অনেক তত্ত্ব বিকৃত ও নিজের সুবিধার মতো করে প্রচার করে। সম্ভবত এসব কারণেই জামায়াতের মতো ভ্রান্ত নীতির দলগুলো পরাজিত হয় দেশে দেশে। পরাজিত হয় তাদের হেডকোয়ার্টারেও।

এবার আমাদের পালা তাদের পরাজিত করার। সামনে নির্বাচন তো আসছেই।

লেখক: ব্লগার ও অনলাইন এক্টিভিস্ট
ইমেইল: monowarrubel@yahoo.com

বাংলাদেশ সময়: ২০০০ ঘণ্টা, মে ১৪, ২০১৩
সম্পাদনা: হাসান শাহরিয়ার হৃদয়, নিউজরুম এডিটর/জেডএম

গণতন্ত্র রক্ষার দায়িত্ব কি কেবল শেখ হাসিনার একার?


মাসুদা ভাট্টি, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
গণতন্ত্র রক্ষার দায়িত্ব কি কেবল শেখ হাসিনার একার?
ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বিগত কয়েকদিন যাবত দেশে এক নতুন হাওয়া বইছে। সন্দেহ নেই হাওয়াটি ইতিবাচক। বহু নেতিবাচক ঘটনার ভেতর দিয়ে বাংলাদেশকে প্রতিনিয়ত এগুতে হচ্ছে, এর ভেতর সামান্য ইতিবাচক ইশারাও মানুষকে আশাবাদী করে তোলার জন্য যথেষ্ট। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন বিরোধী দলী নেতা বেগম খালেদা জিয়াকে হরতাল প্রত্যাহারের আহ্বান জানালেন এবং বেগম জিযা যখন তা গ্রহণ করলেন এবং তারপর প্রধানমন্ত্রী তাকে পাল্টা ধন্যবাদ জানালেন তখন এদেশের মানুষ অনেকদিন পরে প্রাণভরে শ্বাস নিতে পেরেছে। যদিও উন্নত গণতান্ত্রিক দেশে এসব খুবই স্বাভাবিক ঘটনা, সেখানে সরকারি দল ও বিরোধী দল দু'পক্ষই দেশের কথা ভাবে, জাতীয় স্বার্থকে সবার ওপরে স্থান দেয় এবং এ ব্যাপারে ঐকমত্যে পৌঁছুতে না পারলে জনগণের ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে, যার প্রভাব শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে গিয়ে পড়ে। কিন্তু এদেশে এরকম কোনো ঘটনা ঘটে না, এদেশে "স্বাভাবিক" প্রক্রিয়াকে "অস্বাভাবিক" বানিয়ে জনগণকে জিম্মি করে জ্বালাও-পোড়াও-নির্যাতন শেষে, অনেক হত্যাকাণ্ডের পরে দু'পক্ষ ইঙ্গিতের ভাষায় কথা বলেন আর এতেই জনগণকে গদগদ থাকতে হয় - কারণ, এছাড়া জনগণের আর কোনো উপায় নেই।

আমরা একটু পেছনে তাকালেই দেখতে পাই যে, প্রায় আড়াই বছরের একটি অনির্বাচিত সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার শেষে একটি সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো। বরাবরের মতো এই নির্বাচন অনুষ্ঠানে বাধ্য করার সমস্ত কৃতিত্বই আওয়ামী লীগের তথা শেখ হাসিনার। বিএনপি তথা বেগম খালেদা জিয়াকে রাজনীতিতে ফিরিয়ে আনার এই কৃতিত্ব শেখ হাসিনাকে দিতেই হবে। অনেকেই হয়তো এতে দলীয় রাজনীতির গন্ধ পাচ্ছেন কিন্তু একটু পেছনে ফিরে তাকিয়ে দেখুন, বুঝতে পারবেন, এটা কতখানি সত্য। যা হোক নির্বাচন হলো, আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলো, মাত্র এক মাসের মাথায় বিডিআর বিদ্রোহ। একটি নির্বাচিত সরকারের জন্য এই বিদ্রোহের ঘটনা ছিল ভয়ংকর একটি ঘটনা, একই সঙ্গে তা বাংলাদেশের শিশু গণতন্ত্রকে বলতে গেলে "কুঁজো" করে দেয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল। সেই সময় সরকারের অনেক কেষ্টবিষ্টুই সরকার কতোদিন টেকে তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করতেন। তাদের ধারণাকে উড়িয়ে দেয়া সম্ভব ছিল না। সরকার এরপর আসলে আর খুব বেশি সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। বরং এই সুযোগে সরকারের ভেতরে ও বাইরে যে সব চক্র সরকার-বিরোধী হিসেবে কাজ শুরু করেছিল তারা স্বরাজ পেয়ে গিয়েছিল। এবং তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল সরকারের ভুলত্রুটিসমূহ। বিশেষ করে সরকারের মন্ত্রীদের অনেকেরই বালখিল্য ও সরকার-বিরোধী ভূমিকা জনগণকে চরম হতাশ করেছে। এর পরপরই শুরু হয়েছিল বিরোধী দলের বিরোধীতার নামে দেশের অগ্রগতি থামিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্র। 

যে কোনো দেশে দুটি প্রধান বিরোধী পক্ষের রাজনৈতিক বৈরিতা স্বাভাবিক ও গণতান্ত্রিকভাবে বৈধ। কিন্তু তা সীমাবদ্ধ থাকা উচিত নীতিগত ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে কেবল। আগেই উল্লেখ করেছি যে, জাতীয় স্বার্থে  দু'পক্ষের বিরোধিতা আসলে দেশের ক্ষতিরই কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অথচ বাংলাদেশে এই পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। ৭৫-এ বঙ্গবন্ধুকে হত্যার সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন জেনারেল জিয়া (বিভিন্ন সময়ে বক্তৃতা, বিবৃতি, আলোচনা ও সংবাদ মাধ্যমে এমন অভিযোগে এসেছে) এবং এই হত্যাকাণ্ডের ওপর দাঁড়িয়েই তিনি প্রতিষ্ঠা করেন তার দল বিএনপি। ইতিহাস আসলে খুব পুরোনো নয়, তাই এর পুনরুল্লেখের প্রয়োজন নেই খুব বেশি, কিন্তু যাদের নিয়ে তিনি এই দলটি গঠন করেন তারা আর কেউ নয়, চিহ্নিত দেশ-বিরোধী এবং পরবর্তীতে তারা প্রগতি-বিরোধী হিসেবেও চিহ্নিত হন; এমনকি এদের মধ্যে দুর্নীতির দায়গ্রস্তও বটে। জেলহত্যার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রাজনীতিবিদগণ গিয়েও যোগ দেন বিএনপিতেই। আবার এই বিএনপি আমলেই ঘটে ২১শে আগস্টের মতো ভয়ংকর ঘটনা। ১৯৯১ সালের সরকারের কথা বাদ দিই। ২০০১ থেকে ২০০৬ সালের বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের কথা যদি বলি তাহলে আমাদের দুশ্চিন্তায় ফেলে এই ক'বছরে আওয়ামী লীগের বেশ ক'জন গুরুত্বপূর্ণ নেতাকে হত্যার কথা। দেশব্যাপী ঘটে যাওয়া হত্যাকাণ্ডকে না হয় না ধরি কিন্তু এই চিহ্নিত নেতাদের হত্যাকাণ্ডকে কে কিভাবে দেখেন আমি জানি না, কিন্তু দুটি দলের ভেতরে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় এই হত্যাকাণ্ড কোনোদিনই ইতিবাচক সূচক হবে না, ২১শে আগস্ট তো আসলে কফিনে শেষ পেরেক। তারপর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে কৌশলে কাজে লাগিয়ে, জাল ভোটারলিস্ট দিয়ে নির্বাচন করে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতার বাইরে রাখার যে প্রক্রিয়া সেই সরকার শুরু করেছিল তার পরিণতিতে তো বেগম জিয়াকেও জেলে যেতে হলো এবং তার পুত্রদের হতে হলো দেশছাড়া। দেশের গণতন্ত্র এর চেয়ে বড় কোনো দুঃসময় পার করেছে কি না তা এই নিবন্ধের পাঠকমাত্রেরই বোধগম্য বলে বিশ্বাস করি। 

যাহোক, প্রশ্ন হলো, দেশে গণতন্ত্রের দুঃসময়ে অন্য কাউকে কেন খুঁজে পাওয়া যায় না? কিংবা শেখ হাসিনা বা আওয়ামী লীগকেই কেন গণতন্ত্র রক্ষায় ত্রাতার ভূমিকাটি বারবারই গ্রহণ করতে হয়? দেখুন, আমরা আমাদের ব্যক্তি-বিরোধিতার চশমাটি খুলে রেখে যদি দেখার চেষ্টা করি তাহলে একটি সত্য এখানে স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, এই মুহূর্তে আমাদের গণতন্ত্র এবং জাতীয় অগ্রগতি আসলে বিপন্ন। আসুন খুঁজে বের করার চেষ্টা করি কারা এই বিপন্নতায় ভূমিকা পালন করছে? একথায় আমরা যদি এই শত্রুপক্ষকে চিহ্নিত করতে চাই তাহলে প্রথমেই আমাদের ফিরে যেতে হয় একাত্তরে এবং একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে যারা স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল তাদের কাছে। একটা বিষয় লক্ষণীয় যে, প্রতিটি জাতির মুক্তিযুদ্ধেই একটি পক্ষ এর বিরোধিতায় নামে। কিন্তু সফল বিপ্লব শেষে তারা নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় অথবা সমাজে মিশে গিয়ে দেশের অগ্রগতিতে ভূমিকা রাখে। মানুষ তাদের ভুলে যায় কারণ তারা সংখ্যালঘু ছিল। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তা হয়নি। তাদের মাত্র ৫ বছরের মাথায় ফিরিয়ে এনে দেশের রাজনীতিতে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেয়া হয়েছিল। সেক্ষেত্রে তাদের অতীত ভুলে এদেশের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার প্রতি আস্থা স্থাপন করে এদেশের উন্নতি-অগ্রগতিতে ভূমিকা রাখার কথা ছিল। কিন্তু তাও আমরা দেখিনি। ইসলাম প্রতিষ্ঠার নামে রগ কাটার রাজনীতি থেকে শুরু করে জাতীয় পতাকার অবমাননা এবং যা কিছু বাঙালির, তার বিরুদ্ধেই ওদেরকে যুদ্ধ ঘোষণা করতে দেখা গেছে। লোক দেখানো দেশপ্রেম বা সরকারের অংশ হিসেবে বাধ্য হয়ে মুক্তিযুদ্ধের প্রতি সম্মান দেখানোর চেষ্টা করলেও আস্তিনের তলায় যে তাদের দেশ-বিরোধী ছুরি ছিল তা কিন্তু তারা লুকিয়ে রাখতে পারেনি। মজার ব্যাপার হলো তাদের এই দেশ-বিরোধী, স্বাধীনতা-বিরোধী এবং গণতন্ত্র-বিরোধী কর্মকাণ্ডে সর্বাত্মক সহযোগিতা দিয়েছে বেগম জিয়ার বিএনপি, যার সর্বসাম্প্রতিক প্রমাণ যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর জন্য দেশব্যাপী জামায়াত-শিবিরের ধ্বংসযজ্ঞে বিএনপির সমর্থন ও একত্রে কাজ করা। আবারও বিএনপি-জামায়াতের নির্বাচনী ঐক্য দেশ ও স্বাধীনতা-বিরোধীদের বাঁচানোর ষড়যন্ত্রে গিয়ে ঠাঁই করে নিয়েছে।

কিন্তু এখনকার যে পরিস্থিতি আমরা দেখতে পাচ্ছি, বিশেষ করে দেশে হেফাজত নামে নতুন যে উগ্রবাদী শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে তাদের প্রচলিত আইন দিয়েই যদি থামানো না যায় তাহলে আগামী নির্বাচন তো দূরের কথা দেশের গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা টিকিয়ে রাখাই মুশকিল হয়ে যাবে। আজকে বিএনপি হয়তো ধরতেই পারছে না যে, হেফাজতের রাজনীতি তাদেরকে কীভাবে আঘাত হানবে শেষ পর্যন্ত, তারা আগ বাড়িয়ে গিয়ে তাদের পানি-বিরিয়ানি খাইয়েছে, একাত্মতা প্রকাশ করেছে এবং এখনও পর্যন্ত ধর্মভিত্তিক রাজনীতির যে স্বপ্নে তারা বুঁদ হয়ে আছে অচিরেই সে স্বপ্ন ভাঙতে বাধ্য হবে তাদের। মজার ব্যাপার হলো, হেফাজতের ১৩ দফার ভয়াবহতা বিএনপি নেতা বেগম জিয়াকে কোনো ভাবেই স্পর্শ করেনি একথা আমি বিশ্বাস করি না, কিন্তু তারপরও তিনি আশ্চর্যজনকভাবে নীরব এ ব্যাপারে। এখানে সরকারের ভূমিকা প্রথমে আমরা "আপসকামী" দেখলেও ক্রমশ সরকারের বোধোদয় এবং প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা বিবিসিকে সাক্ষাৎকার দিয়ে এই ধর্মভিত্তিক উন্মাদনার সরাসরি বিরোধিতা ও সর্বশেষ সাংবাদিক সম্মেলনে ১৩-দফার দফাওয়ারি বিশ্লেষণে তা নাকচ করে দেয়াকে আমাদের ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে না দেখে উপায় আছে কি? তার মানে কী দাঁড়ালো? যে বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও জাতীয় অগ্রগতি যখনই হুমকির মুখে পড়ে তখন কেবল শেখ হাসিনাকেই এগিয়ে আসতে দেখা যায় এবং বাকি সবাই যে যার অবস্থানে দাঁড়িয়ে খেলা দেখেন এবং শেখ হাসিনা ও তার দল যখন বিজয়ী হয় তখন ক্ষমতার ভাগ বসাতে এগিয়ে আসতে মুহূর্তকাল সময়ও নষ্ট করেন না। আমি নিশ্চিত যে, হেফাজতের এভাবে ধংসাত্মক রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়া, যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর এই জামায়াতি ষড়যন্ত্রের ভেতরে এক লহমাতেই বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা তলিয়ে যেতে পারে এবং সেই তলিয়ে যাওয়া থেকে আবার তাকে পথে ফিরিয়ে আনার সামর্থ্য বেগম জিয়া ও তার দলের নেই, সেই সাংগঠনিক বা নেতৃত্বগত কাঠামোই দলটির নেই। আজকে তারা আওয়ামী-বিরোধিতার নামে যাদেরকে একত্রে নিয়ে মাঠে নেমেছে তারা মূলত বেগম জিয়াকে খোলশ হিসেবে ব্যবহার করছে, এক সময় তাও থাকবে না, সেকথা বলাই বাহুল্য। কিন্তু তাই বলে বিএনপিকে সরকারের ভুল-ভ্রান্তির বিরুদ্ধবাদিতা থেকে সরে আসার কথাও বলছি না, সে কাজটিতো তারা বিগত চার বছর ধরেই করার সুযোগ পেয়েছে, কিন্তু কাজে লাগাতে পারলো কই? এখন যখন গোটা রাষ্ট্র ব্যবস্থাই হুমকির মুখোমুখি তখন বেগম জিয়া সরকার-বিরোধিতার নামে আমেরিকার কাছে চিঠি লিখে জিএসপি সুবিধা বাতিল করার জন্য আবেদন জানাচ্ছেন; সরকার সাভারে লাশ গুম করেছে বলে হুঙ্কার ছাড়ছেন। তবে কি আমরা ধরেই নেবো যে, দেশের অর্থনীতিকে বাঁচানোর জন্য শেখ হাসিনার সরকারকে দেশি ও বিদেশি, দুই প্রকারের শত্রুর সঙ্গেই লড়তে হবে? বেগম জিয়া ও তার দল কি এই দেশের নন?

প্রশ্ন অনেক তোলা যায় কিন্তু এখন সে সময় নয়, সেটা আমরাও বুঝি। কিন্তু আমাদের মতো আম-জনতা বুঝলে কী হবে? বুঝতে তো হবে যারা এই দেশকে চালাচ্ছেন বা ভবিষ্যতে চালাবেন, তাদেরকে, তাই না? আমরা আনন্দিত হতে পারি দু‍'পক্ষের মাঝে সমাঝোতার ইঙ্গিতে কিন্তু এখন এই ইঙ্গিত যথেষ্ট নয়, প্রয়োজন "অ্যাকশন"-এর। 

ঢাকা, ৪ মে, সোমবার॥ ২০১৩॥ 

Masuda-bhatti

 

লেখক: সাংবাদিক, গল্পকার, masuda.bhatti@gmail.com

 বাংলাদেশ সময়: ১১৪৫ ঘণ্টা, মে ০৪, ২০১৩


মুনাফালোভী মালিক ও লাশের মিছিল


মোঃ আতিকুর রহমান, অতিথি লেখক
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
মুনাফালোভী মালিক ও লাশের মিছিল

সম্প্রতি তাজরীন গার্মেন্টে স্মরণকালের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে শতাধিক শ্রমিকের অকালমৃত্যু ও হতাহতের ঘটনা, স্পেকট্রাম গার্মেন্ট কারখানা ধসে প্রায় ৩৮ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু এবং স্মার্ট গার্মেন্টে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের রেশ কাটতে না কাটতেই সাভার বাসস্ট্যান্ডের পাশে 'রানা প্লাজা' নামের ত্রুটিপূর্ণ একটি নয়তলা ভবন ধসে ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পরে শত শত শ্রমজীবী মানুষের বাঁচার আর্তনাদ। তাদের করুণ মৃত্যু ও হতাহতের ঘটনায় সমগ্র জাতি আজ স্তব্ধ। শ্রমিকদের সারি সারি লাশে সাভারের অধরচন্দ্র বিদ্যালয়ের মাঠ এখন যেন এক মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে। স্বজনদের কান্নায় সেখানকার আকাশ-বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে।

ভাবতে কষ্ট লাগে, ভবনে ফাটল ও শিল্প পুলিশের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও নকশা বহির্ভূত উক্ত ফাটলকৃত ৯ তলা ভবনের চারটি ফ্লোরে ৫টি পোশাক কারখানা নিউ ওয়েভ বটমস লিঃ, ফ্যান্টম অ্যাপারেলস লিঃ, ফ্যান্টম ট্যাক লিঃ ও ঈথার টেক্সটাইল লিঃ-এর কাজ শুরু করা হয়। সেদিন কারা দিয়েছিল অই ভবনে পোশাক কারখানাগুলি চালু রাখার অনুমতি। এক রাতের মধ্যেই মুনাফালোভী মালিকরা সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে একপ্রকার বাধ্য করে কারখানায় শ্রমিকদের কাজ 

তথ্য মতে, ৪ তলা ভবনের অনুমোদন নিয়ে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে ৯ তলা ভবন নির্মাণে স্থানীয় এমপি মুরাদকে ব্যবহার করে ভবন নামের এমন মরণফাঁদ তৈরি করেছিল রানা। যার মর্মান্তিক পরিসমাপ্তি হয় শত শত মানুষের নির্মম অকালমৃত্যুতে। রানাকে এই ধরনের অবৈধকাজে সহযোগিতায় স্বজন হারানো মানুষগুলি পুরো ঘটনার জন্য সমানভাবে দায়ী করছে এমপি মুরাদকে। এরকম একটি পরিস্থিতিতে এমপি মুরাদের বিরুদ্ধে আইনি কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে কি না সেটাই এখন দেখার বিষয়।

গত ২০/২১ বছরে অনেক গামের্ন্ট ফ্যাক্টরি ও কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ও ভবন ধসের ঘটনা সংগঠিত হয়েছে। বহু শ্রমজীবী মানুষের রক্তে ফ্যাক্টরি লাল হয়েছে অথবা পুড়ে ছাই হয়েছে কিন্তু এ থেকে আমরা কি কোন সতর্কতামূলক শিক্ষা গ্রহণ করেছি? শ্রমজীবী মানুষের কাজের সার্বিক নিরাপত্তা কারখানায় কি এখন পর্যন্ত দিতে সক্ষম হয়েছি? আমরা কি যথাযথ ইমারত নির্মাণের নীতিমালা অনুযায়ী ভবন নির্মাণ ও পরিবেশবান্ধব কারখানা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছি? বিপরীতে আমরা সক্ষম হয়েছি এমন জায়গায় কারখানা তৈরি করতে যেখানে অ্যামবুলেন্স অথবা ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি প্রবেশের অনুপযোগী। অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, অপরিকল্পিতভাবে যেখানে-সেখানে শিল্প কারখানা তৈরি, ত্রুটিপূর্ণ ভবন নির্মাণ এবং মালিকপক্ষের শ্রমিকদের প্রতি উদাসীনতা, দায়িত্বহীনতা ও মনুষ্যত্বহীন আচরণ এ ধরনের ঘটনার জন্য অধিক দায়ী।

ভাবতে কষ্ট হয় আমরা এখন পর্যন্ত শ্রমিকদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলির ক্ষেত্রে এদেশে কোন উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ গ্রহণ করিনি। ফলে এধরনের ঘটনা প্রতিনিয়তই সংগঠিত হচ্ছে। যা থেকে মুক্তি পাওয়া আমাদের একান্ত জরুরি। এজন্য প্রয়োজন শিল্প সংশ্লিষ্ট সকলের শ্রমবান্ধব কাজের পরিবেশ সৃষ্টির সদিচ্ছা। বৈষম্য ভুলে মালিকদের মানুষ হয়ে এইসব হতদরিদ্র্য মানুষের প্রতি গভীর ভালোবাসা জাগ্রত করা। মনে রাখতে হবে, শ্রমজীবী এই সব মানুষরাই সকল প্রকার বৈরী আবহাওয়ার মধ্যেও দিনরাত চব্বিশ ঘণ্টা কঠোর পরিশ্রম করে নিজেদের রক্তকে পানি করে দেশের অর্থনৈতিক ভীতকে করছে মজবুত। য‍ৎসামান্য বেতন-ভাতার বিপরীতে মালিকদের গড়ে দিচ্ছে টাকার পাহাড়। দেশের প্রবৃদ্ধি আনয়নে যারা রাখছে বড় অবদান, তাদের জন্য কি সংশ্লিষ্টদের তথা সরকারের তরফ থেকে কিছুই করার নেই? যে পোশাক শিল্প দেশের অর্থনীতিতে রাখছে বিরাট অবদান কিন্তু আমরা এখন পর্যন্ত এই শিল্পের মানোন্নয়নে যথাযথ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে এই শিল্প সংশ্লিষ্ট আলাদা কোন মন্ত্রণালয় এখন পর্যন্ত তৈরি করতে পারিনি। এই বিবেকবোধটুকু সকলের মধ্যে জাগ্রত করতে হবে। যদিও মালিকরা শ্রমিকদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দুবেলা দুমুঠো ভাতের ব্যবস্থা নিশ্চিত করছে এ কথা ঠিক। তবে মালিকরা যদি শ্রমিকদের প্রতি আরো একটু উদার ও সদয় হয়ে উপযুক্ত শ্রমবান্ধব কাজের পরিবেশ সৃষ্টি এবং বেতন দেওয়া-নেওয়ার ক্ষেত্রে মালিক শ্রমিকের মধ্যে অধিক বৈষম্য রোধ করতে সক্ষম হয় তবে এর সুফল মনে হয় মালিকরাই বেশি ভোগ করতে পারবে।

যদিও আমাদের এই ঢাকা শহর বর্তমানে অপরিকল্পিত নগরীর শ্রেষ্ঠতম উদাহরণ। যাকে অনেকে মৃত্যুপুরী নামেও অভিহিত করেন। ঘনবসতিপূর্ণ এই ক্ষুদ্র ঢাকা শহরে প্রায় দেড় কোটির বেশি মানুষের বসবাস। অপরিকল্পিত নগরায়ন হওয়ায় যেখানে সেখানে নিয়ম বর্হিভূতভাবে গড়ে উঠছে অবৈধ বড় বড় ইমারত। অধিকাংশ ক্ষেত্রে শহরের আনাচে কানাচে অপরিকল্পিতভাবে শতশত গামের্ন্ট ফ্যাক্টরি ও শিল্প কারখানা তৈরি করা হচ্ছে। সেগুলো যথাযথ আইন, পরিবেশ অধিদপ্তর ও শ্রম আইন এর নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে উপরওয়ালাদের ম্যানেজ করে অবৈধ্য অনুমোদন গ্রহণের মাধ্যমে তৈরি করা হচ্ছে। সেসব কারখানার অধিকাংশতেই নেই শ্রমজীবী মানুষের শ্রমবান্ধব কাজের উপযুক্ত পরিবেশ। ফলে তাতে সেকোন সময়ই ঘটতে পারে এরচেয়ে বড় ধরনের ভয়াবহ হতাহতের ঘটনা। তাই আমাদের আর বসে থাকলে চলবে না, এসব ঘটনা কীভাবে দ্রুততার সাথে প্রতিহত করা যায় এবং এসব অনিয়ম থেকে শ্রমিকদের রক্ষা করা যায় তার জন্য সকলকে সচেষ্ট হতে হবে এবং এ ধরনের ঘটনা মোকাবেলার জন্য প্রশিক্ষণ নিয়ে সর্বদা প্রস্তুত থাকতে হবে। শুধু যখন কোন ঘটনা ঘটে তখন ঐ ঘটনাকে নিতে তৎপর ও হৈচৈই না করে গুরুত্ব বুঝে স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে উক্ত সমস্যাগুলি সমাধানে সকলকে সচেষ্ট হতে হবে। যে কোন ভুলের ঘটনা থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে এবং নিজেদেরকে শুদ্ধি বা সংশোধন করতে হবে। আর তা যদি আমরা করতে না পারি তবে এর  পরিণতি হবে দেশে ও জাতির জন্য সত্যিকারের ভয়াবহ ও বিভীষিকাময়। 

আমরা চাই প্রতিটি কারখানায় শ্রমজীবী মানুষের দাবি এবং কর্মক্ষেত্রে তাদের সার্বিক নিরাপত্তা সর্বোপরি 'লেবার ল' নিশ্চিত হোক। মালিকপক্ষ বা কারখানার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কোন উদাসীনতার কারণে আর যেন কোন শ্রমিককে প্রাণ দিতে না হয়। কারখানার অবকাঠামোগত ক্রটি, শ্রমিকদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অভাবে আর যেন কাউকে এমন মৃত্যুর মুখে পতিত হতে না হয়। সে ব্যবস্থা বাস্তবায়নে সরকার, বিজিএমইএ ও মালিকপক্ষ উভয়কে আরো অধিক সচেষ্ট হতে হবে। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় শ্রমিকদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে 'লেবার ল' এর আলোকে শক্তিশালী দক্ষ ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করতে হবে। যেকোন কারখানা পরিচালনার আগে তা পরিবেশবান্ধব কিনা, শ্রমজীবী মানুষের জন্য উপযুক্ত কাজের পরিবেশ এবং যেকোন ধরনের বিপদ থেকে রক্ষার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় উপকরণ ও তার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা আছে কিনা বিষয়গুলি ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে কারখানা পরিচালনার দায়িত্ব দিতে হবে। 

তাদের মনে রাখতে হবে, তাদের একটি ভুল সিদ্ধান্তে কোনো প্রতিষ্ঠান অনুমোদন পেলে সেই প্রতিষ্ঠান যেকোনো সময় কেড়ে নিতে পারে শত শত মানুষের প্রাণ। 

বর্হিবিশ্বে এই শিল্পকে ঘিরে বর্তমানে যে গুঞ্জন চলছে তা যথাযথ দক্ষতা ও বিচক্ষণতার সাথে মোকাবেলা করতে হবে। সর্বোপরি মনে রাখতে হবে বিশ্বমন্দার সময় সম্ভাবনাময়ী এই পোশাক শিল্পটি আমাদের দেশের অর্থনীতিকে মজবুত ভিতের ওপর দাঁড় করাতে এবং প্রবৃদ্ধি আনয়নে যে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে তা যেন কিছু ভুলের কারণে বিনষ্ট না হয়। 

লেখক: লাইব্রেরিয়ান ও কলাম লেখক, বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজি(বিইউএফটি)

বাংলাদেশ সময়: ১১১২ ঘণ্টা, ০৫ মে ২০১৩


আওয়ামী লীগ-বিএনপির 'আম-ছালা' দুটাই রক্ষা পাবে কি?


জিনিয়া জাহিদ, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আওয়ামী লীগ-বিএনপির 'আম-ছালা' দুটাই রক্ষা পাবে কি?

গতমাসে হেফাজতে ইসলামের লংমার্চের আগে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে হেফাজতে ইসলামের আলোচনার কট্টর সমালোচনা করেছিলেন মহাজোট সরকারের দু'জন সাংসদ। 

এরা হলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য তোফায়েল আহমেদ ও মহাজোটের অন্যতম শরিকদল বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। জনাব মেনন মূলত সেসময় 'আম-ছালা' নামক একটি "কার্যকরী" তত্ত্বও প্রদান করেন।

জনাব মেননের 'আম-ছালা' তত্ত্বমতে সরকার এক দিকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছেন, আবার অন্যদিকে হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে ব্ল্যাসফেমি আইন নিয়ে কথা বলছেন। আর সরকারের এই দুই নীতির ফলে জনগণও একবার এদিক যাচ্ছে, আবার ওদিক যাচ্ছে। তিনি বলেছিলেন, "জনগণ আতঙ্কিত হয়ে গেলে সরকারের আমও যাবে, ছালাও যাবে।"

ঠিক এক মাস পর মেননের 'আম-ছালা' তত্ত্বের বিচারে যদি ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও বিরোধীদলের বর্তমান কর্মকাণ্ড আজ বিশ্লেষণ করি তবে আমরা এই 'আম-ছালা' তত্ত্বের কার্যকরিতা উপলব্ধি করতে পারব।

আওয়ামী লীগ সরকার একদিকে হেফাজতে ইসলামের অবরোধ ও অবস্থান ধর্মঘট কঠোরভাবে মোকাবেলা করে ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে, অন্যদিকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবিতে গত তিন মাস ধরে শাহবাগে যে আন্দোলন চলছিল তা ভেঙে দিয়েছে।
 
সরকার এর আগে হেফাজতের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ৪ জন ব্লগারকে আটক করেও হেফাজতের সাথে সমঝোতা করার চেষ্টা করেছিল। সেই সমঝোতা যে ব্যর্থ হয়েছে তা আমরা হেফাজতের পূর্বঘোষিত কর্মসূচিতে অনড় থাকা থেকেই উপলব্ধি করতে পেরেছি। এখন হেফাজতের দাবি-দাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে গণজাগরণ মঞ্চ ভেঙে দিয়ে সরকার আসলে হেফাজতে ইসলামের দাবিগুলোকে পরোক্ষভাবে মেনে নিয়েছে।

শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ ভেঙে দিয়ে হেফাজতে ইসলামের সাথে সরকার কতখানি সমঝোতায় পৌঁছুতে পারবে, তা আগামী দিনগুলোই বলে দেবে।
 
অন্যদিকে, দিগন্ত টিভি, ইসলামিক টিভি, আমারদেশ পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধ এবং দৈনিকটির সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করে, হেফাজতে ইসলামকে ছত্রভঙ্গ করে সরকার গণজাগরণ মঞ্চের দাবি পরোক্ষভাবে মেনে নিয়েছে।

গণজাগরণ মঞ্চের সাথে সমঝোতার উদ্দেশে সরকার কতখানি সক্ষম হবে সেটাও আগামী দিনগুলোই বলে দেবে।
 
তবে, ব্লগারদেরকে ঢালাওভাবে নাস্তিক খেতাব দেয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ব্লগার গ্রেফতার, শুরুতে তুমুল সমর্থন দেবার পর হঠাৎ করেই শাহবাগের প্রতি সুনজর তুলে নিয়ে বৈরীভাবাপন্ন হওয়া এবং অতপর গণজাগরণ মঞ্চ ভেঙে দেওয়ায় আওয়ামী লীগের ওপর যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারীরা রুষ্ট হবে তা বলাবাহুল্য।
 
অন্যদিকে, ইসলামকে পুঁজি করে গড়ে ওঠা হেফাজতকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দ্বারা মোকাবেলা করে, তাদের সমর্থিত মিডিয়া প্রচারে নিষেধাজ্ঞা জারি করে আগামী দিনগুলোতে আওয়ামী লীগ বাকশালী তকমার সাথে ইসলাম বিরোধী দল হিসেবে সমালোচিত হবে তা সহজেই অনুমেয়।
 
একদিকে হেফাজতকে মোকাবেলা করতে গিয়ে ইসলাম বিরোধী ও বাকশালী দল হিসেবে অন্যদিকে হেফাজতকে শুরুতে আস্কারা দিয়ে এত সংগঠিত হবার জন্য পরোক্ষভাবে মদদ দেয়া, তরুণপ্রজন্মের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আঘাত দেওয়ায় তরুণ প্রজন্মদের কাছেও আওয়ামী লীগের গ্রহণযোগ্যতা কমার প্রবল সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
 
এখন জনাব মেননের 'আম-ছালা' তত্ত্বে যদি ফিরে যাই, তবে দু'পক্ষের দাবি-দাওয়ার সাথে সরকারের ভারসাম্য রক্ষার নীতি, দু'পক্ষ থেকেই সহানুভূতি উইথড্র আমরা দেখতে পারি। 'মাথা ব্যথা করছে, কাজেই ওষুধে যখন কাজ হচ্ছে না, তখন মাথা কেটে ফেলাই হলো সর্বশেষ চিকিত্সা', এই পলিসি কি আদৌ আওয়ামী লীগের 'আম-ছালা' রক্ষা করতে পারবে?

এবার দেখা যাক 'আম-ছালা' তত্ত্বটি প্রধান বিরোধীদলের ওপরও খাটে কি না।

একথা অনস্বীকার্য যে, শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের প্রতি বিএনপি সমর্থন জানায়নি। নিজের দলের যুদ্ধাপরাধী এবং সেইসাথে সার্বক্ষণিক সঙ্গী হিসেবে জামায়াতকে সাথে নেওয়া, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারী তরুণপ্রজন্ম বিএনপির রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড কখনই ভালো দৃষ্টিতে দেখেনি।
 
তারপরও আওয়ামী রাজনীতি যাদের ভীষণভাবে অপছন্দ, আওয়ামী সরকারের দুঃশাসনে যারা ভুক্তভোগী তারা 'নাই মামার থেকে কানা মামা ভালো' প্রবচনের ওপর ভিত্তি করে বিএনপিকেই সমর্থন জানিয়ে আসছিল।

কিন্তু হঠাৎ করেই রাজনীতির অঙ্গনে নতুন সংযোজন হেফাজতকে দেখে বিএনপি-জামায়াত এমনকি জনাব এরশাদও ভীষণভাবে আস্তিক হয়ে উঠলে, বুঝে নিতে কষ্ট হয় না যে, বিরোধী দলগুলো হেফাজতকেই সরকার হঠানোর অস্ত্র ও নিজেদের ক্ষমতায় যাবার চেরাগ পাবার মতো দিবাস্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিল।
 
কে কত ধার্মিক, ইসলামের সেবক, ব্লগারদের ঘৃণাকারী, সে বিষয়ে যেন ট্যালেন্ট হান্ট প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গিয়েছিল দেশে। হেফাজতের পেটের হেফাজতের জন্য নিজেদের পার্টির তহবিল থেকে খানাপিনার ব্যবস্থা করতেও কোনো দলই বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেনি। 

হেফাজতের অবরোধের পরিকল্পনা জেনে বিএনপির দলনেতা যে ৪৮ ঘণ্টার সরকার হটাও আলটিমেটাম দিয়েছেন সে কথা রাজনীতির সাথে বিন্দুমাত্র সংযোগ নেই সেই ব্যক্তিও বুঝতে সক্ষম হবেন।
 
এখন আওয়ামী লীগ কর্তৃক হেফাজতের ছত্র ভঙ্গে বিএনপির ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম যদি বিফলে যায়, তবে কি বিএনপির 'আম ও ছালা' রক্ষা পাবে? 
 
আওয়ামী লীগ-বিএনপি দুই দলের 'আম-ছালা' রক্ষা তথা ক্ষমতা ধরে রাখার কৌশলে আমাদের 'আম-জনতার' জান বের হয়ে যাচ্ছে, আঁটি হয়ে আমরা ধুলায় মিশে যাচ্ছি দিন দিন। এই মৃতপ্রায় 'আম-জনতার' ভোটেই যে আওয়ামী লীগ-বিএনপি দুই দলের আসল 'আম-ছালা' রক্ষা পাবে, সে খবর কি তারা আদৌ রাখেন?

জিনিয়া জাহিদ: বাংলাদেশের এক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। নরওয়ে থেকে "ডেভলপমেন্ট অ্যান্ড রিসোর্স ইকনমিক্স" বিষয়ে এমএস শেষ করে অস্ট্রেলিয়াতে পিএইচডি করছেন। সেখানে বাংলাদেশের "খাদ্যনীতি"নিয়ে গবেষণার পাশাপাশি এক বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে নিয়োজিত আছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৪১৫ ঘণ্টা, মে ০৬, ২০১৩
সম্পাদনা: নূরনবী সিদ্দিক সুইন, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর; জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর

No comments:

Post a Comment