Sunday, July 28, 2013

খুনের চেষ্টায় অভিযুক্ত ৩ মন্ত্রী-সহ ৬ বিধায়ক

খুনের চেষ্টায় অভিযুক্ত ৩ মন্ত্রী-সহ ৬ বিধায়ক

খুনের চেষ্টায় অভিযুক্ত ৩ মন্ত্রী-সহ ৬ বিধায়ক
এই সময়: বিধানসভার অধিবেশন কক্ষে রাজ্যের তিন মন্ত্রী ও তৃণমূলের তিন বিধায়ক তাঁকে প্রাণে মেরে ফেলার চেষ্টা করেছিলেন বলে হেয়ার স্ট্রিট থানায় অভিযোগ দায়ের করলেন পাণ্ডবেশ্বরের সিপিএম বিধায়ক গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায়৷ শনিবার বামফ্রন্টের দুই বিধায়ক আনিসুর রহমান এবং সুভাষ নস্করকে সঙ্গে নিয়ে থানায় যান গৌরাঙ্গবাবু৷ ডিসি (সেন্ট্রাল) দেবেন্দ্র প্রতাপ সিং বলেন, আমরা বিধায়কের অভিযোগ খতিয়ে দেখছি৷


অভিযুক্ত তিন মন্ত্রী হলেন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, কৃষি প্রতিমন্ত্রী বেচারাম মান্না এবং মত্স্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ৷ আর তিন বিধায়ক হলেন সমীর পাঁজা, পুলক রায় এবং জয়ন্ত নস্কর৷ বিধানসভার অধিবেশন কক্ষের মধ্যে বিধায়কদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা বেনজির নয়৷ কিন্ত্ত সেই সূত্রে মন্ত্রী-বিধায়কদের বিরুদ্ধে অন্য কোনও বিধায়কের খুনের চেষ্টার অভিযোগ দায়ের করার ঘটনা এ রাজ্যে আগে ঘটেনি৷ স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় রাতে বলেন, 'পুলিশ কী করবে, সে ব্যাপারে আমি কিছু বলব না৷ ' তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, তদন্তের স্বার্থে পুলিশ যদি বিধানসভার অধিবেশন কক্ষে ঢুকতে চায় তা হলে তিনি কি অনুমতি দেবেন? সেই প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে গিয়েছেন স্পিকার৷ প্রসঙ্গত, বিধানসভায় হাতাহাতির ঘটনায় আহত সিপিএম বিধায়ক হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন৷ তাঁর বক্তব্য ছিল, তাঁকে মারধর করা হলেও স্পিকার কোনও ব্যবস্থা নেননি৷ আদালত তাঁকে থানায় অভিযোগ দায়ের করার অনুমতি দেয়৷ আদালতের রায়কে হাতিয়ার করে অভিযোগ দায়ের করায় পুলিশের পক্ষে তা এড়ানো কঠিন বলে মনে করছে প্রশাসনিক মহল৷ যদিও খাদ্যমন্ত্রী অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেন, ঘটনার দিন আমি বিধানসভাতেই ছিলাম না৷ মত্স্যমন্ত্রীর দাবি, তিনিও ঘটনার সময় অধিবেশন কক্ষে ছিলেন না৷ কৃষি প্রতিমন্ত্রী অভিযোগকে রাজনৈতিক বলে দাবি করছেন৷ অভিযুক্ত বিধায়করাও একই কথা বলেছেন৷ 

গত ১১ ডিসেম্বর বিধানসভার ভেতর চিটফাণ্ড নিয়ে একটি বিতর্কের জেরে বিরোধীদের সঙ্গে শাসকদলের বিধায়কদের বিরোধ তুঙ্গে ওঠে৷ সিপিএমের অভিযোগ, তাদের দুই বিধায়ক গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায় এবং দেবলীনা হেমব্রম যখন স্পিকারের কাছে যাচ্ছিলেন তখন তাঁদের আক্রমণ করা হয়৷ 

অধিবেশন কক্ষের ভেতর ফেলে মারধর করা হয় দুই বিধায়ককে৷ তাঁদের এসএসকেএমে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে বলা হয় দু'জনেরই চোট তেমন গুরুতর নয়৷ পরে অবশ্য দক্ষিণ কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালের চিকিত্সায় জানা যায় গৌরাঙ্গবাবুর চোট বেশ গুরুতর৷ ওই দিন তৃণমূলের এক বিধায়কও সিপিএমের হাতে আক্রান্ত হন বলে অভিযোগ৷ 

বেসরকারি হাসপাতালে চিকিত্সার পর গৌরাঙ্গবাবু বিধানসভার স্পিকার এবং রাজ্যের মুখ্যসচিবের কাছে চিঠি দিয়ে তাঁর ওপর আক্রমণের ঘটনায় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন৷ গৌরাঙ্গবাবুর অভিযোগ , 'তাঁর চিঠির কোনও গুরুত্ব দেওয়া হয়নি৷ ' এরপরেই হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন তিনি৷ গত ৯ জুলাই এই মামলায় আদালত নির্দেশ দেয়, যেহেতু বিধানসভার ভেতর ঘটে যাওয়া এই ঘটনায় স্পিকার কোনও ব্যবস্থা নেননি সুতরাং গৌরাঙ্গবাবু ফৌজদারি মামলা করতে পারেন৷ এক্ষেত্রে বিধানসভার ভেতর হামলার ঘটনা ও হাসপাতালের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগও করা যাবে বলে জানিয়ে দেয় আদালত৷ এরপর আইনজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলার পর পুলিশে অভিযোগ দায়ের করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি৷ 

পুলিশে দায়ের করা অভিযোগে কি বলা হয়েছে ? শনিবার দুপুর আড়াইটা নাগাদ হেয়ার স্ট্রিট থানা থেকে বেরিয়ে গৌরাঙ্গবাবু বিস্তারিত কিছু জানাতে চাননি৷ তবে দলীয় সূত্রের খবর, অভিযোগে বলা হয়েছে তৃণমূলের বিধায়ক -মন্ত্রীরা তাকে বিধানসভার ভেতরে প্রাণে মারার চেষ্টা করেছিলেন৷ এমনকি সরকারি হাসপাতালে তাঁর চিকিত্সা পর্যন্ত করা হয়নি৷ পরে বেসরকারি হাসপাতালে স্ক্যান করে তাঁর মাথায় চিড় ধরা পড়ে৷ এদিন পুলিশের কাছে তাঁর লিখিত অভিযোগের সঙ্গে বিধানসভার স্পিকার এবং মুখ্যসচিবকে লেখা চিঠির প্রতিলিপিও জমা দিয়েছেন সিপিএম বিধায়ক৷ পুলিশ সূত্রের খবর, গৌরাঙ্গবাবু যে অভিযোগ দায়ের করেছেন তাতে তৃণমূল নেতা-মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টার অভিযোগে মামলা দায়ের হতে পারে৷ কিন্ত্ত এখনও মামলা শুরু হল না কেন ? জানা গিয়েছে, এ বিষয়ে আইনজ্ঞের পরামর্শ নিচ্ছেন পুলিশকর্তারা৷ তার পরই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে৷

No comments:

Post a Comment