আলোচনার জন্য যে গ্রন্থটি হাতে এসেছে তা অতীব সুখপাঠ্য , সাহিত্যের ভিন্ন কৌণিক দিক৷ সুধীর চক্রবর্তীর পাঠকেরা জানেন, চেনেন তাঁর মরমীগভীর গদ্যশৈলী৷ এবং তাঁর জীবনভর অনুসন্ধান , লোকায়ত-জীবন-জরিপ৷ এ কাজে তিনি বিশেষ বড়ো ও দড়৷ তাঁর অর্ধশতাধিক গ্রন্থই লোকায়ত জীবনকে ঘিরে৷ সাহিত্য সম্পর্কিত তাঁর গ্রন্থের সংখ্যা মাত্র দু'টি,তা -ও কবিতাকে ধরে
এ বারের গ্রন্থটি কিন্ত্ত গদ্য সাহিত্যকে ঘিরে , এবং এটিই সম্ভবত এ ধরনের প্রথম গ্রন্থ তাঁর৷ তাঁর মূল চিন্তা ভাবনার প্রসারণ লোকায়ত জীবন৷ সেটাই তাঁর যাপিত লেখক- জীবনের নিউক্লিয়াস৷ নয় নয় করে তাঁর এই পথের গভীরে এবং নির্জনে হাঁটা হয়ে গেল প্রায় চার দশকের বেশি৷ 'সাহিত্যের লোকায়ত পাঠ '--- গ্রন্থে আলোচনার জন্যে তিনি বেছে নিয়েছেন বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'আরণ্যক ', তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'কবি '৷ কালকূটের একাধিক ভ্রমণ -উপন্যাস এবং সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের 'অলীক মানুষ '৷ পরবর্তী কালের লেখকদের কিছু ছোটগল্পও বেছেছেন আলোচনার জন্যে৷ তাঁরা হলেন --- সৈকত রক্ষিত, কিন্নর রায়, স্বপ্নময় চক্রবর্তী এবং অভিজিত্ সেন৷ অবশ্য সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের বিখ্যাত একটি গল্পও এসেছে --- 'গোঘ্ন '৷ গ্রন্থে পুরো একটি অধ্যায় --- বিভূতিভূষণ : ছোটো গল্পের লোকায়ত অনুবিশ্ব৷
বাংলা ভাষায় গদ্য চর্চা , অথবা এ ভাবে বলা যেতে পারে , বাংলার লেখকেরা কি উপন্যাস বা ছোটোগল্প লেখার আগে যথেষ্ট ফিল্ড ওয়ার্ক বা হোমওয়ার্ক করে নেন ? উপন্যাস বা গল্প লেখার আগে কি লেখকও তাঁর 'কর্মী -লেখক 'কে নির্মাণ করে নেন ? পুরোপুরি করে নেন তা বোধ হয় বলা যায় না৷ বাংলা ভাষার লেখকেরা তাঁদের হূদয়কে যতটা প্রসারিত করেন মগজকে বোধ হয় ততটা বিষয়মুখী করেন না৷ এ বার সুধীরবাবুর গ্রন্থ, 'সাহিত্যের লোকায়ত পাঠ ' থেকে খণ্ডাংশ৷ বিখ্যাত ও বহুপঠিত ভ্রমণ উপাখ্যান , কালকূটের 'কোথায় পাবো তারে ' থেকে৷ 'সবচেয়ে দুঃখের বিষয় যে , লেখক মামুদ গাজীর কণ্ঠে লালনগীতির বিকৃত বাণী সচেতন ভাবে ব্যবহার করেছেন৷ গানটি হল , 'সব লোকে কয় লালন কি জাত সংসারে৷ ' মামুদ গাজীর কণ্ঠে এই গান কালকূট রূপান্তরিত করেছেন এই উচ্চারণে যে 'সর্বলোকে কয় , তুমি কী জাত সংসারে৷ ' অথচ সঠিক অভিজ্ঞতা থাকলে জানা যায় গানের (এ ক্ষেত্রে 'মহতের পদ') একটি শব্দও বদলানো অপরাধ এবং পাপ৷ আবার 'চলো মন রূপনগরে ' ভ্রমণ উপাখ্যানে অম্বিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সংলাপে , সহজিয়া বৈষ্ণবের কথায় , কালকূট লেখেন , 'শিষ্যা অনেক, আখড়া চলে ভালো৷ তবে নেহাত নেড়ানেড়ির আখড়া নয়৷ ... রাধা কৃষ্ণ গৌর নিতাই৷ বাউলের সঙ্গে বিশেষ -তফাত নেই৷ ' সর্বনাশ ! বাউল -বৈষ্ণবের তফাত আছে বইকি৷ নেড়ানেড়ি সম্প্রদায়ের বিলয় ঘটেছে অনেক আগেই৷
তবে এই ত্রুটিতে কালকূটের লেখন বাতিল হয় না হতে পারে না , কারণ তা মহত্ কথাসাহিত্য৷ কিন্ত্ত , এক গামলা দুগ্ধে এক বিন্দু গোচনা৷ মহত্ উপন্যাস বা গল্পে যদি তথ্য বিচ্যুতি না ঘটে তবে তা মহত্তর হতে পারে৷ গভীর পাঠকের তা পরম প্রান্তি হয়৷ সমরেশ বসু কালকূটকে সৃষ্টি করেছিলেন৷ এবং কালকূট নির্মাণ করেছিলেন বাংলা ঘরানায় এমন করে চলমান একাধিক ভ্রমণ আখ্যান৷ প্রচুর পাঠক পেয়েছিলেন এবং সম্মানিতও হয়েছিলেন৷ পাঠককুলের চাহিদা মেনে (হয়তো ) তাঁকে প্রতি বছর লিখতে হয়েছিল এমনই ভ্রমণ উপাখ্যান৷ বিষয়ের জন্য সময় এবং রেফারেন্স দেখে নেওয়া সম্ভব ছিল না৷ দায়িত্ববান লেখকের এমন ত্রুটি অনভিপ্রেত৷
গ্রন্থের প্রথম এবং পঞ্চম অধ্যায় , দু'টি দীর্ঘ প্রবন্ধ , বিভূতিভূষণের আরণ্যক ও একাধিক ছোটো গল্প ঘিরে৷ একটি বিষয় খোলসা করে কয়ে নেওয়া যাক৷ এ গ্রন্থে বিভিন্ন লেখকদের লেখায় যে ছোটোখাটো 'বাস্তব ' ত্রুটি তা সুধীরবাবু দেখিয়েছেন এবং সপক্ষে সঠিক যুক্তি রেখেছেন৷ অথচ তা করতে গিয়ে কোনও লেখককেই প্রবন্ধকার আহত করেননি৷
বিভূতিভূষণের বহু লেখাতেই অরণ্য এবং অরণ্য আশ্রিত মানুষের জীবন , তাদের ধর্মবোধ ও বিশ্বাস , তাদের বিনোদন কেন্দ্রিক গ্রামীণ মেলার কথা সুন্দর ও স্বাভাবিক ভাবেই এসেছে৷ এসেছে মেয়েলি রিচ্যুয়াল৷ আরণ্যক উপন্যাসের গোষ্ঠীপতি 'রাজা ' দেবারু পান্না , যার জীবন ধন -সম্পদহীন তবুও গোষ্ঠীর মানুষের কাছে তাঁর সম্মান ষোলো আনা৷ এঁর সঙ্গে সত্যচরণের মোলাকাতকে ব্যাখ্যা করেন সুধীরবাবু, 'তাত্পর্যপূর্ণ অর্ধপরিচয়ের এই সন্ধ্যা শেষ পর্যন্ত কোনও মিলনরাত্রিতে পরিণত হয় না আরণ্যক উপন্যাসে৷ অনুতাপ থাকে উচ্চবর্গের তরফে কিন্ত্ত নিম্নবর্গকে আলিঙ্গনে বাঁধতে পারেন না বিভূতিভূষণ৷ বোধ হয় শিক্ষিত ও লোকায়তে মেলানো অসম্ভব৷ ' একটি ভিন্ন খেদোক্তি বিভূতিভূষণ সম্পর্কে শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের , ঘরোয়া আড্ডায় , 'বিভূতিভূষণ এত মাঠ , অরণ্য ঘুরলেন অথচ তাঁর লেখায় কোথাও একটিও সাপের দেখা নেই৷ ' সত্যিই তো !বেশির ভাগ বঙ্গলেখককুল মধ্যবর্গ বা উচ্চবর্গ থেকে আসেন অথবা প্রান্তবাস থেকে উত্তীর্ণ জীবন , তার পরে লিখতে আসা৷ বিষয়বস্ত্তর সঙ্গে অনেক ক্ষেত্রেই কম -বেশি দূরত্ব থেকে যায়৷ বিষয় ক্ষেত্রের বা বিষয়বস্ত্তর সঙ্গে একাকার হয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না৷ তাই বোধ করি লেখকেরা পাত্রপাত্রীদের কণ্ঠে যে ভাষা বসান তাতে পাঁচমিশেলি , কখনও ধরতাই আঞ্চলিক , শেষ হয় শাহরিক বাক্যবন্ধে৷ এটা ত্রুটি বইকি৷ এ ত্রুটি থেকে উত্তরণ সম্ভব কাঠোর পরিশ্রমে৷ জেনে বুঝে নিতে হয় ধ্বনির বিন্যাস৷ তবেই এ ক্ষেত্রে মহত্ ও ত্রুটিহীন হওয়া সম্ভব৷ কিন্ত্ত , 'দিবেক লিবেক ডায়লগে দিলেই তা মহত্ ও পূর্ণ সাহিত্য না -ও হতে পারে৷ ' এ সাবধানী বাক্য ঘরোয়া আড্ডায় বলেছিলেন রমাপদ চৌধুরী৷ বনপলাশীর পদাবলীর কথা মনে পড়ে৷
তারাশঙ্করকে আলাদা করে ক্ষেত্র সমীক্ষা করতে হয়নি৷ রাঢে়র যে অঞ্চল তিনি উপন্যাসে গল্পে এনেছিলেন , তার ভিতরে তিনি দীর্ঘকালের পরিব্রাজক৷ কবি উপন্যাস সম্পর্কে সুধীরবাবু 'শিক্ষিত তারাশঙ্কর (প্রথম জীবনে কবিতাও লিখতেন৷ বেরিয়েছিল 'ত্রিপত্র ' নামে অপটু কাব্য সংকলন ) কী করে গ্রাম্য কবিয়ালের মতো লিখবেন ? কিন্ত্ত শেষ পর্যন্ত যে লিখতে পারলেন তার কারণ তাঁর দীর্ঘদিনের দেখার ও শোনার অভিজ্ঞতাই তাঁকে বাতলে দিল৷ ' কবি উপন্যাসে গ্রামীণ কবিয়াল নিতাইয়ের জন্য তারাশঙ্করের গানের পদ বাঁধা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে৷
আবার ফিরে আসা যাক লোকায়ত যাপনের আর এক খ্যাতনামা লেখক সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের 'অলীক মানুষ ' প্রসঙ্গে /উদাহরণ অপ্রাসঙ্গিক হবে না , সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের 'রানীরঘাটের বৃত্তান্ত ' গল্পের পঞ্চম বাক্যটি , 'প্রবাদ শোনেন নি 'রানীরঘাটে কে কার বাবা ?'' এমন গল্প লেখকের অলীক মানুষ প্রসঙ্গে সুধীরবাবুর সঠিক মন্তব্য , 'মানুষটি সচল ও পরিপার্শ্ব সচেতন , সমাজবিজ্ঞানের সংজ্ঞায় প্যারাম্বুলেটিং কালচারের অংশীভূত৷ ' লেখকের যাপন ক্ষেত্রের প্রতি এত তীব্রতা যে তাঁর প্রয়াণের পরে , তিনি শায়িত ওই মাটিতেই৷ এটি অবশ্য তাঁর পূর্ব ঘোষণা বা আর্তি৷
গ্রন্থের শেষ প্রবন্ধ বাংলা সাহিত্যের সমরেশ বসু, মুস্তাফা সিরাজের পরবর্তী প্রজন্মের গল্পলেখকদের নিয়ে আলোচনা৷ এঁদের মধ্যে সবচেয়ে বেশিকাল কাটিয়েছেন 'স্বভূমি '-তে সৈকত রক্ষিত৷ সৈকতের সমস্ত লেখায় পুরুলিয়া এবং পুরুলিয়া৷ পাত্র -পাত্রীর মুখে নির্ভুল কথ্য , পুরুলিয়ার ভাষা৷ গল্পের নাম 'হাম্বা '৷ গরু ও গরুর মালিক সম্পর্কিত৷ একই বিষয় বলে সিরাজ সাহেবের 'গোঘ্ন ' গল্পটি এসেছে আলোচনায়৷ কিন্নর রায়ের 'আবহমানে ছবি ', স্বপ্নময় চক্রবর্তীর 'দুলালচাঁদ ', অভিজিত্ সেনের 'ঈশানী মেঘ ' গল্প এসেছে৷ একটি করে মাত্র গল্প , ছোটো আসরে খিদে মেটে না৷ যেমন মেটে না এই কারণেও যে বাংলা ভাষায় বেশ ক'জন প্রয়াত ও জীবিত লেখকদের সম্পর্কে আলোচনা ঠাঁই পেল না এই গ্রন্থে৷ হয়তো আরও একটু সময় নিয়ে সুধীরবাবুর এ গ্রন্থ কলেবরে বৃদ্ধি পাবে পরে এবং বৃত্তটি সম্পূর্ণ হবে , 'সাহিত্যের লোকায়ত পাঠ '৷
গরু নিয়ে গল্প লিখেছেন এক লেখক৷ বিচালি -খড় চিবানোর বর্ণনা দিতে গিয়ে লেখক গরুর দু'পাটি দাঁতের কথা বললেন৷ এটি ত্রুটি৷ গরু তা সে জার্সি, ভাগলপুরী , হাইব্রিড যাই হোক না কেন গরুর উপরের পাটিতে দাঁত থাকে না৷ কি বলবেন লেখক ?এ বছর বিখ্যাত সাম্যবাদী কবি দিনেশ দাসের জন্মশতবর্ষ৷ তাঁর বিখ্যাত কবিতা 'কাস্তে ' বহুপঠিত৷ বলতে গেলে দিনেশ দাসের সঙ্গে কাস্তে যেন জুড়ে গিয়েছে৷ 'কাস্তেটা ধার দিও বন্ধু,/ কাস্তেটা শান দিও বন্ধু!' শতবর্ষে কবিকে প্রণাম ও শ্রদ্ধা জানিয়েই বলি , কাস্তেকে মনোযোগ দিয়ে দেখেননি কবি৷ (এক যদি না পূর্ববঙ্গের কাস্তে অন্যরকম হয় ) কাস্তেকে শান বা ধার দেওয়া যায় না৷ কাস্তের দাঁত হয়৷ ঈষত্ উত্তন্তাবস্থায় ছোটো ছেনি দিয়ে দাঁত তৈরি হয়৷ এ ত্রুটিতে অবশ্য কাব্যকর্মের ঘাটতি ঘটে না৷ আবার শুধু দিনেশ দাসই নন , সলিল চৌধুরী গানেও তো আমরা পাই 'হেই সামালো ধান হো / কাস্তেটা দাও শান হো৷ ' মৃণাল সেনের মতো প্রণম্য চলচ্চিত্রকার গ্রামের প্রেক্ষিতে করা তাঁর ছবিতে সে গান দিব্যি ব্যবহার করেছেন৷ কিন্ত্ত কোনও কামার যদি প্রশ্ন করেন ? কী উত্তর থাকবে আমাদের ?এমনই ছোটো ছোটো ত্রুটি উল্লেখিত হয়েছে মুজতবা আলির রচনাবলির চতুর্থ খণ্ডে৷ করেছেন দীর্ঘ ভূমিকায় আর এক মানী সম্পাদক --- লেখক পরিমল গোস্বামী৷ এই ভুল শোধন হতে পারে প্রকাশকদের সম্পাদকমণ্ডলীর হাতে৷ একটি পাণ্ডুলিপি বই হয়ে প্রকাশের আগে তার বানান পরখ করাই বুঝি শেষ কাজ ! জানি না প্রকাশক পাড়ায় , তাঁদের সংস্থায় সম্পাদকমণ্ডলী থাকেন কি না৷ তাঁরা মনোযোগী হলে এমন সব ছোটো ছোটো ত্রুটি যা লেখকের পাণ্ডুলিপিতে অনবধানবশত থেকে যায় তা সংশোধন হতে পারে৷ তা না হলে এ রকমই চলবে৷ শেষ কথা , লেখককে মনোযোগী এবং উদার হতে হবে এই ভেবে যে তাঁর সাহিত্যকর্মে বিষয়বস্ত্তর বাস্তব ত্রুটি কাম্য নয় , প্রয়োজনে সংশোধন দরকার৷
বিনা মন্তব্যে : 'তার কারণ এই নয় যে আমাদের দেশে শক্তিমান লেখকের অভাব , বেদনাটা সেখানে নয় , আসল বেদনা হচ্ছে আমাদের লেখকেরা খাটতে রাজী নয়৷ ... যখন শাগরেদ মোপাসাঁর ভিতরে ফ্লবের গুণের সন্ধান পেলেন তখন মোপাসাঁর লেখার উপর নির্মম র্যাঁদা চালাতে আরম্ভ করলেন৷ ... দশ লাইনে বর্ণনা লেখো , পনেরো লাইনে বীররস বাত্লাও , এটা ছিঁড়ে ফেলে দাও , ওটা ছাপিও না ...' (সৈয়দ মুস্তাফা আলি রচনাবলি , সংখ্যা -এক৷ পৃষ্ঠা -২৬৷
'মোপাসাঁ-চেখফ্-রবীন্দ্রনাথ৷ ')সুমুদ্রিত গ্রন্থ৷ বানান ভুল খুব কম৷ প্রচ্ছদ সাদা -কালো৷ হয়তো লোকালয় বলেই , ইছামতীর মজা খালের কচুরিপানা সহ ফোটো৷ ভাগ্যিস চার কালারের নয়৷ গ্রন্থ ছাপাইয়ের ক্ষেত্রে এখন এত রং ! যা অনেক ক্ষেত্রেই বিরক্তিকর এবং বিষয়বস্ত্তর সঙ্গে বেমানান৷ তবে এ ক্ষেত্রে গ্রন্থের মলাট জমেনি৷ মগজ আর মাউসের দাপট যতটা , ততটা নেই হূদয়ের সঙ্গে চোখের সঙ্গত৷
সাহিত্যের লোকায়ত পাঠসুধীর চক্রবর্তীপত্রলেখা ৷ ১৫০ টাকাযথেষ্ট দরদ সত্ত্বেও নিম্নবর্গের জীবনকে খুঁটিয়ে জানার পরিশ্রম করেননি বাংলার বহু বিখ্যাত সাহিত্যিকই৷ সুধীর চক্রবর্তীর একটি বইয়ের পাঠ প্রসঙ্গে অনুসন্ধান করলেন অশোককুমার কুণ্ডুবেশির ভাগ বঙ্গলেখককুল মধ্যবর্গ বা উচ্চবর্গ থেকে আসেন অথবা প্রান্তবাস থেকে উত্তীর্ণ জীবন , তার পরে লিখতে আসা৷ তাই বোধ করি লেখকেরা পাত্রপাত্রীদের কণ্ঠে যে ভাষা বসান তাতে পাঁচমিশেলি , কখনও ধরতাই আঞ্চলিক , শেষ হয় শাহরিক বাক্যবন্ধে৷ এটা ত্রুটি বইকি৷
এ বারের গ্রন্থটি কিন্ত্ত গদ্য সাহিত্যকে ঘিরে , এবং এটিই সম্ভবত এ ধরনের প্রথম গ্রন্থ তাঁর৷ তাঁর মূল চিন্তা ভাবনার প্রসারণ লোকায়ত জীবন৷ সেটাই তাঁর যাপিত লেখক- জীবনের নিউক্লিয়াস৷ নয় নয় করে তাঁর এই পথের গভীরে এবং নির্জনে হাঁটা হয়ে গেল প্রায় চার দশকের বেশি৷ 'সাহিত্যের লোকায়ত পাঠ '--- গ্রন্থে আলোচনার জন্যে তিনি বেছে নিয়েছেন বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'আরণ্যক ', তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'কবি '৷ কালকূটের একাধিক ভ্রমণ -উপন্যাস এবং সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের 'অলীক মানুষ '৷ পরবর্তী কালের লেখকদের কিছু ছোটগল্পও বেছেছেন আলোচনার জন্যে৷ তাঁরা হলেন --- সৈকত রক্ষিত, কিন্নর রায়, স্বপ্নময় চক্রবর্তী এবং অভিজিত্ সেন৷ অবশ্য সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের বিখ্যাত একটি গল্পও এসেছে --- 'গোঘ্ন '৷ গ্রন্থে পুরো একটি অধ্যায় --- বিভূতিভূষণ : ছোটো গল্পের লোকায়ত অনুবিশ্ব৷
বাংলা ভাষায় গদ্য চর্চা , অথবা এ ভাবে বলা যেতে পারে , বাংলার লেখকেরা কি উপন্যাস বা ছোটোগল্প লেখার আগে যথেষ্ট ফিল্ড ওয়ার্ক বা হোমওয়ার্ক করে নেন ? উপন্যাস বা গল্প লেখার আগে কি লেখকও তাঁর 'কর্মী -লেখক 'কে নির্মাণ করে নেন ? পুরোপুরি করে নেন তা বোধ হয় বলা যায় না৷ বাংলা ভাষার লেখকেরা তাঁদের হূদয়কে যতটা প্রসারিত করেন মগজকে বোধ হয় ততটা বিষয়মুখী করেন না৷ এ বার সুধীরবাবুর গ্রন্থ, 'সাহিত্যের লোকায়ত পাঠ ' থেকে খণ্ডাংশ৷ বিখ্যাত ও বহুপঠিত ভ্রমণ উপাখ্যান , কালকূটের 'কোথায় পাবো তারে ' থেকে৷ 'সবচেয়ে দুঃখের বিষয় যে , লেখক মামুদ গাজীর কণ্ঠে লালনগীতির বিকৃত বাণী সচেতন ভাবে ব্যবহার করেছেন৷ গানটি হল , 'সব লোকে কয় লালন কি জাত সংসারে৷ ' মামুদ গাজীর কণ্ঠে এই গান কালকূট রূপান্তরিত করেছেন এই উচ্চারণে যে 'সর্বলোকে কয় , তুমি কী জাত সংসারে৷ ' অথচ সঠিক অভিজ্ঞতা থাকলে জানা যায় গানের (এ ক্ষেত্রে 'মহতের পদ') একটি শব্দও বদলানো অপরাধ এবং পাপ৷ আবার 'চলো মন রূপনগরে ' ভ্রমণ উপাখ্যানে অম্বিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সংলাপে , সহজিয়া বৈষ্ণবের কথায় , কালকূট লেখেন , 'শিষ্যা অনেক, আখড়া চলে ভালো৷ তবে নেহাত নেড়ানেড়ির আখড়া নয়৷ ... রাধা কৃষ্ণ গৌর নিতাই৷ বাউলের সঙ্গে বিশেষ -তফাত নেই৷ ' সর্বনাশ ! বাউল -বৈষ্ণবের তফাত আছে বইকি৷ নেড়ানেড়ি সম্প্রদায়ের বিলয় ঘটেছে অনেক আগেই৷
তবে এই ত্রুটিতে কালকূটের লেখন বাতিল হয় না হতে পারে না , কারণ তা মহত্ কথাসাহিত্য৷ কিন্ত্ত , এক গামলা দুগ্ধে এক বিন্দু গোচনা৷ মহত্ উপন্যাস বা গল্পে যদি তথ্য বিচ্যুতি না ঘটে তবে তা মহত্তর হতে পারে৷ গভীর পাঠকের তা পরম প্রান্তি হয়৷ সমরেশ বসু কালকূটকে সৃষ্টি করেছিলেন৷ এবং কালকূট নির্মাণ করেছিলেন বাংলা ঘরানায় এমন করে চলমান একাধিক ভ্রমণ আখ্যান৷ প্রচুর পাঠক পেয়েছিলেন এবং সম্মানিতও হয়েছিলেন৷ পাঠককুলের চাহিদা মেনে (হয়তো ) তাঁকে প্রতি বছর লিখতে হয়েছিল এমনই ভ্রমণ উপাখ্যান৷ বিষয়ের জন্য সময় এবং রেফারেন্স দেখে নেওয়া সম্ভব ছিল না৷ দায়িত্ববান লেখকের এমন ত্রুটি অনভিপ্রেত৷
গ্রন্থের প্রথম এবং পঞ্চম অধ্যায় , দু'টি দীর্ঘ প্রবন্ধ , বিভূতিভূষণের আরণ্যক ও একাধিক ছোটো গল্প ঘিরে৷ একটি বিষয় খোলসা করে কয়ে নেওয়া যাক৷ এ গ্রন্থে বিভিন্ন লেখকদের লেখায় যে ছোটোখাটো 'বাস্তব ' ত্রুটি তা সুধীরবাবু দেখিয়েছেন এবং সপক্ষে সঠিক যুক্তি রেখেছেন৷ অথচ তা করতে গিয়ে কোনও লেখককেই প্রবন্ধকার আহত করেননি৷
বিভূতিভূষণের বহু লেখাতেই অরণ্য এবং অরণ্য আশ্রিত মানুষের জীবন , তাদের ধর্মবোধ ও বিশ্বাস , তাদের বিনোদন কেন্দ্রিক গ্রামীণ মেলার কথা সুন্দর ও স্বাভাবিক ভাবেই এসেছে৷ এসেছে মেয়েলি রিচ্যুয়াল৷ আরণ্যক উপন্যাসের গোষ্ঠীপতি 'রাজা ' দেবারু পান্না , যার জীবন ধন -সম্পদহীন তবুও গোষ্ঠীর মানুষের কাছে তাঁর সম্মান ষোলো আনা৷ এঁর সঙ্গে সত্যচরণের মোলাকাতকে ব্যাখ্যা করেন সুধীরবাবু, 'তাত্পর্যপূর্ণ অর্ধপরিচয়ের এই সন্ধ্যা শেষ পর্যন্ত কোনও মিলনরাত্রিতে পরিণত হয় না আরণ্যক উপন্যাসে৷ অনুতাপ থাকে উচ্চবর্গের তরফে কিন্ত্ত নিম্নবর্গকে আলিঙ্গনে বাঁধতে পারেন না বিভূতিভূষণ৷ বোধ হয় শিক্ষিত ও লোকায়তে মেলানো অসম্ভব৷ ' একটি ভিন্ন খেদোক্তি বিভূতিভূষণ সম্পর্কে শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের , ঘরোয়া আড্ডায় , 'বিভূতিভূষণ এত মাঠ , অরণ্য ঘুরলেন অথচ তাঁর লেখায় কোথাও একটিও সাপের দেখা নেই৷ ' সত্যিই তো !বেশির ভাগ বঙ্গলেখককুল মধ্যবর্গ বা উচ্চবর্গ থেকে আসেন অথবা প্রান্তবাস থেকে উত্তীর্ণ জীবন , তার পরে লিখতে আসা৷ বিষয়বস্ত্তর সঙ্গে অনেক ক্ষেত্রেই কম -বেশি দূরত্ব থেকে যায়৷ বিষয় ক্ষেত্রের বা বিষয়বস্ত্তর সঙ্গে একাকার হয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না৷ তাই বোধ করি লেখকেরা পাত্রপাত্রীদের কণ্ঠে যে ভাষা বসান তাতে পাঁচমিশেলি , কখনও ধরতাই আঞ্চলিক , শেষ হয় শাহরিক বাক্যবন্ধে৷ এটা ত্রুটি বইকি৷ এ ত্রুটি থেকে উত্তরণ সম্ভব কাঠোর পরিশ্রমে৷ জেনে বুঝে নিতে হয় ধ্বনির বিন্যাস৷ তবেই এ ক্ষেত্রে মহত্ ও ত্রুটিহীন হওয়া সম্ভব৷ কিন্ত্ত , 'দিবেক লিবেক ডায়লগে দিলেই তা মহত্ ও পূর্ণ সাহিত্য না -ও হতে পারে৷ ' এ সাবধানী বাক্য ঘরোয়া আড্ডায় বলেছিলেন রমাপদ চৌধুরী৷ বনপলাশীর পদাবলীর কথা মনে পড়ে৷
তারাশঙ্করকে আলাদা করে ক্ষেত্র সমীক্ষা করতে হয়নি৷ রাঢে়র যে অঞ্চল তিনি উপন্যাসে গল্পে এনেছিলেন , তার ভিতরে তিনি দীর্ঘকালের পরিব্রাজক৷ কবি উপন্যাস সম্পর্কে সুধীরবাবু 'শিক্ষিত তারাশঙ্কর (প্রথম জীবনে কবিতাও লিখতেন৷ বেরিয়েছিল 'ত্রিপত্র ' নামে অপটু কাব্য সংকলন ) কী করে গ্রাম্য কবিয়ালের মতো লিখবেন ? কিন্ত্ত শেষ পর্যন্ত যে লিখতে পারলেন তার কারণ তাঁর দীর্ঘদিনের দেখার ও শোনার অভিজ্ঞতাই তাঁকে বাতলে দিল৷ ' কবি উপন্যাসে গ্রামীণ কবিয়াল নিতাইয়ের জন্য তারাশঙ্করের গানের পদ বাঁধা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে৷
আবার ফিরে আসা যাক লোকায়ত যাপনের আর এক খ্যাতনামা লেখক সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের 'অলীক মানুষ ' প্রসঙ্গে /উদাহরণ অপ্রাসঙ্গিক হবে না , সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের 'রানীরঘাটের বৃত্তান্ত ' গল্পের পঞ্চম বাক্যটি , 'প্রবাদ শোনেন নি 'রানীরঘাটে কে কার বাবা ?'' এমন গল্প লেখকের অলীক মানুষ প্রসঙ্গে সুধীরবাবুর সঠিক মন্তব্য , 'মানুষটি সচল ও পরিপার্শ্ব সচেতন , সমাজবিজ্ঞানের সংজ্ঞায় প্যারাম্বুলেটিং কালচারের অংশীভূত৷ ' লেখকের যাপন ক্ষেত্রের প্রতি এত তীব্রতা যে তাঁর প্রয়াণের পরে , তিনি শায়িত ওই মাটিতেই৷ এটি অবশ্য তাঁর পূর্ব ঘোষণা বা আর্তি৷
গ্রন্থের শেষ প্রবন্ধ বাংলা সাহিত্যের সমরেশ বসু, মুস্তাফা সিরাজের পরবর্তী প্রজন্মের গল্পলেখকদের নিয়ে আলোচনা৷ এঁদের মধ্যে সবচেয়ে বেশিকাল কাটিয়েছেন 'স্বভূমি '-তে সৈকত রক্ষিত৷ সৈকতের সমস্ত লেখায় পুরুলিয়া এবং পুরুলিয়া৷ পাত্র -পাত্রীর মুখে নির্ভুল কথ্য , পুরুলিয়ার ভাষা৷ গল্পের নাম 'হাম্বা '৷ গরু ও গরুর মালিক সম্পর্কিত৷ একই বিষয় বলে সিরাজ সাহেবের 'গোঘ্ন ' গল্পটি এসেছে আলোচনায়৷ কিন্নর রায়ের 'আবহমানে ছবি ', স্বপ্নময় চক্রবর্তীর 'দুলালচাঁদ ', অভিজিত্ সেনের 'ঈশানী মেঘ ' গল্প এসেছে৷ একটি করে মাত্র গল্প , ছোটো আসরে খিদে মেটে না৷ যেমন মেটে না এই কারণেও যে বাংলা ভাষায় বেশ ক'জন প্রয়াত ও জীবিত লেখকদের সম্পর্কে আলোচনা ঠাঁই পেল না এই গ্রন্থে৷ হয়তো আরও একটু সময় নিয়ে সুধীরবাবুর এ গ্রন্থ কলেবরে বৃদ্ধি পাবে পরে এবং বৃত্তটি সম্পূর্ণ হবে , 'সাহিত্যের লোকায়ত পাঠ '৷
গরু নিয়ে গল্প লিখেছেন এক লেখক৷ বিচালি -খড় চিবানোর বর্ণনা দিতে গিয়ে লেখক গরুর দু'পাটি দাঁতের কথা বললেন৷ এটি ত্রুটি৷ গরু তা সে জার্সি, ভাগলপুরী , হাইব্রিড যাই হোক না কেন গরুর উপরের পাটিতে দাঁত থাকে না৷ কি বলবেন লেখক ?এ বছর বিখ্যাত সাম্যবাদী কবি দিনেশ দাসের জন্মশতবর্ষ৷ তাঁর বিখ্যাত কবিতা 'কাস্তে ' বহুপঠিত৷ বলতে গেলে দিনেশ দাসের সঙ্গে কাস্তে যেন জুড়ে গিয়েছে৷ 'কাস্তেটা ধার দিও বন্ধু,/ কাস্তেটা শান দিও বন্ধু!' শতবর্ষে কবিকে প্রণাম ও শ্রদ্ধা জানিয়েই বলি , কাস্তেকে মনোযোগ দিয়ে দেখেননি কবি৷ (এক যদি না পূর্ববঙ্গের কাস্তে অন্যরকম হয় ) কাস্তেকে শান বা ধার দেওয়া যায় না৷ কাস্তের দাঁত হয়৷ ঈষত্ উত্তন্তাবস্থায় ছোটো ছেনি দিয়ে দাঁত তৈরি হয়৷ এ ত্রুটিতে অবশ্য কাব্যকর্মের ঘাটতি ঘটে না৷ আবার শুধু দিনেশ দাসই নন , সলিল চৌধুরী গানেও তো আমরা পাই 'হেই সামালো ধান হো / কাস্তেটা দাও শান হো৷ ' মৃণাল সেনের মতো প্রণম্য চলচ্চিত্রকার গ্রামের প্রেক্ষিতে করা তাঁর ছবিতে সে গান দিব্যি ব্যবহার করেছেন৷ কিন্ত্ত কোনও কামার যদি প্রশ্ন করেন ? কী উত্তর থাকবে আমাদের ?এমনই ছোটো ছোটো ত্রুটি উল্লেখিত হয়েছে মুজতবা আলির রচনাবলির চতুর্থ খণ্ডে৷ করেছেন দীর্ঘ ভূমিকায় আর এক মানী সম্পাদক --- লেখক পরিমল গোস্বামী৷ এই ভুল শোধন হতে পারে প্রকাশকদের সম্পাদকমণ্ডলীর হাতে৷ একটি পাণ্ডুলিপি বই হয়ে প্রকাশের আগে তার বানান পরখ করাই বুঝি শেষ কাজ ! জানি না প্রকাশক পাড়ায় , তাঁদের সংস্থায় সম্পাদকমণ্ডলী থাকেন কি না৷ তাঁরা মনোযোগী হলে এমন সব ছোটো ছোটো ত্রুটি যা লেখকের পাণ্ডুলিপিতে অনবধানবশত থেকে যায় তা সংশোধন হতে পারে৷ তা না হলে এ রকমই চলবে৷ শেষ কথা , লেখককে মনোযোগী এবং উদার হতে হবে এই ভেবে যে তাঁর সাহিত্যকর্মে বিষয়বস্ত্তর বাস্তব ত্রুটি কাম্য নয় , প্রয়োজনে সংশোধন দরকার৷
বিনা মন্তব্যে : 'তার কারণ এই নয় যে আমাদের দেশে শক্তিমান লেখকের অভাব , বেদনাটা সেখানে নয় , আসল বেদনা হচ্ছে আমাদের লেখকেরা খাটতে রাজী নয়৷ ... যখন শাগরেদ মোপাসাঁর ভিতরে ফ্লবের গুণের সন্ধান পেলেন তখন মোপাসাঁর লেখার উপর নির্মম র্যাঁদা চালাতে আরম্ভ করলেন৷ ... দশ লাইনে বর্ণনা লেখো , পনেরো লাইনে বীররস বাত্লাও , এটা ছিঁড়ে ফেলে দাও , ওটা ছাপিও না ...' (সৈয়দ মুস্তাফা আলি রচনাবলি , সংখ্যা -এক৷ পৃষ্ঠা -২৬৷
'মোপাসাঁ-চেখফ্-রবীন্দ্রনাথ৷ ')সুমুদ্রিত গ্রন্থ৷ বানান ভুল খুব কম৷ প্রচ্ছদ সাদা -কালো৷ হয়তো লোকালয় বলেই , ইছামতীর মজা খালের কচুরিপানা সহ ফোটো৷ ভাগ্যিস চার কালারের নয়৷ গ্রন্থ ছাপাইয়ের ক্ষেত্রে এখন এত রং ! যা অনেক ক্ষেত্রেই বিরক্তিকর এবং বিষয়বস্ত্তর সঙ্গে বেমানান৷ তবে এ ক্ষেত্রে গ্রন্থের মলাট জমেনি৷ মগজ আর মাউসের দাপট যতটা , ততটা নেই হূদয়ের সঙ্গে চোখের সঙ্গত৷
সাহিত্যের লোকায়ত পাঠসুধীর চক্রবর্তীপত্রলেখা ৷ ১৫০ টাকাযথেষ্ট দরদ সত্ত্বেও নিম্নবর্গের জীবনকে খুঁটিয়ে জানার পরিশ্রম করেননি বাংলার বহু বিখ্যাত সাহিত্যিকই৷ সুধীর চক্রবর্তীর একটি বইয়ের পাঠ প্রসঙ্গে অনুসন্ধান করলেন অশোককুমার কুণ্ডুবেশির ভাগ বঙ্গলেখককুল মধ্যবর্গ বা উচ্চবর্গ থেকে আসেন অথবা প্রান্তবাস থেকে উত্তীর্ণ জীবন , তার পরে লিখতে আসা৷ তাই বোধ করি লেখকেরা পাত্রপাত্রীদের কণ্ঠে যে ভাষা বসান তাতে পাঁচমিশেলি , কখনও ধরতাই আঞ্চলিক , শেষ হয় শাহরিক বাক্যবন্ধে৷ এটা ত্রুটি বইকি৷
No comments:
Post a Comment