Monday, February 18, 2013

আমরা কি পারিনা ২১ শে ফেব্রুয়ারির দিনকে নতুন করে সংহতির বন্ধনে বেঁধে ফেলতে ? আপনাদের মতামত কি ?



  • মিছিল নগরী কলকাতার বুকে দীর্ঘদিন পর কোনো ''অরাজনৈতিক'' মিছিল দেখে ফুকোশোভিত ল্যান্সডাউনের ফ্ল্যাটে থাকা সমাজতত্ত্বের পন্ডিতদের আল্হাদে আটখানা হয়ে কোটার চেয়ে এক পেগ বেশি খাওয়ার জন্য নয়; কোনো একটা নিছক ছুটির দিনে সময় কাটানোর অভিনব মোড অফ সেলেব্রেসন এর জন্য নয়; '' একদিকে শোষিত মানুষের প্রতি সহানুভুতি দেখানো আর অন্যদিকে শাসকশ্রেনীর প্রতি গোপন আনুগত্য চেপে মুখে প্রগতিশীল মুখোশ পরার জন্য নয় ; সগর্বে ঘোষণা করার জন্য যে এটি একটি রাজনৈতিক মিছিল , যে রাজনীতি ধর্মনিরপেক্ষতার রাজনীতি, যে রাজনীতি দ্বিধান্বিত শহুরে মধ্যবিত্তর সখের বাসর নয় বরং ওপারবাংলার সংগ্রামী মানুষের সাথে গলা মিলিয়ে ঘোষনা করে যে রাজনীতি থেকে ধর্ম কে দুরে সরাও; মৌলবাদ নিপাত যাক। 
    আমরা কি পারিনা সকলে মিলে , এই ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের দখল মুক্ত রাজনীতির দিকে একসাথে পায়ে পা মেলাতে ?
    আমরা কি পারিনা ২১ শে ফেব্রুয়ারির দিনকে নতুন করে সংহতির বন্ধনে বেঁধে ফেলতে ? আপনাদের মতামত কি ?
    শাহবাগ আন্দোলন সংহতি পদযাত্রা : মৌলবাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ; কলেজ স্কোয়ার,বিকেল ৪.৩০, ২১সে ফেব্রুয়ারী

    স্থান : কলেজ স্কোয়ার , কলকাতা 
    দিন : ২১সে ফেব্রুয়ারী (আলোচনা সাপেক্ষে পরিবর্তন হতে পারে )
    সময়:বিকেল ৪.৩০ (আলোচনাসাপেক্ষে পরিবর্তন হতে পারে )


    নাগরিক সমাজের আন্দোলনের সংজ্ঞা নতুন করে লিখছে বাংলাদেশ

    by Hindol Bhattacharjee on Monday, February 18, 2013 at 11:11pm ·

    নাগরিক সমাজের আন্দোলনের সংজ্ঞা  নতুন করে লিখছে  বাংলাদেশ 

    এপার ওপারের কিছু অন্ধকার কিছু স্ফুলিঙ্গ : হার-না মানা লড়াইয়ের আগুন 

     

    দুই দেশের মধ্যে কাঁটাতার। সীমান্তে প্রহরা। কিন্তু দুই দেশের ভাষা একই। দুই দেশের মধ্যে কত মিল। কিন্তু অনেক জায়গাতে সেই মিলগুলো সহজে চোখে পড়ে না। কারণ তথাকথিত ভাবে এই দুই দেশ আলাদা। ভুবনায়নের দুর্বিত্তায়ন এই দুই দেশকেই আক্রমন করলেও, একটি দেশ পারে সব বাধার বিরুদ্ধে নতুন যুগের রচনা করতে। আর এক দেশ শুধু স্বপ্নভঙ্গের বেদনায় ক্রমশ মরে যায়। হারিয়ে যায় তার নিজস্ব শিকড় থেকে। এক দেশে ভালবাসা যদি হয় প্রধান, তবে আরেক দেশে সেই ভালবাসা নামক বিষয়টাই অবলুপ্ত প্রায়। 

     

    নাগরিক সমাজের আন্দোলন আমরা এই দেশেও দেখেছি। এই বাংলায়। ২০০৭ সাল। সিঙ্গুর নন্দীগ্রাম এর আন্দোলনের সময় মানুষ তখন গ্রামে গ্রামে লড়াই করছেন। তাঁদের সমর্থন করতে কিছু মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে কলকাতা শহরের বুকে প্রতিবাদ করতে শুরু করলেন। তাঁদের প্রতিবাদী কন্ঠস্বর পৌছল দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিদেশেও। স্বপ্ন ছড়িয়ে পড়ল মানুষের মধ্যে। কিন্তু এখানকার নাগরিক সমাজের আন্দোলন অনেকটা গ্রামে মানুষের সংগ্রামের আগুনে হাওয়া দেবার মত। আগুন যাতে জ্বলে ওঠে আরও। তার চরম প্রতিফলন দেখা গেল দ্বিতীয়বার নন্দীগ্রাম আক্রমনের পর ১৪ নভেম্বর কলকাতা শহরে মানুষের স্বতস্ফুর্ত মিছিলে, প্রতিবাদে। বীজ বপন হলো ৩৪ বছর ধরে এই বঙ্গে বাম-ভেক ধারী কিছু অ- কমিউনিস্ট কমিউনিস্ট পার্টির সরকার পতনের মাধ্যমে। কিন্তু আসল ব্যাপারটা হলো কি? এখানকার নাগরিক সমাজের পতাকাহীন আন্দোলন পারলনা শহর দিয়ে গ্রামের মনস্তত্বকে ধরতে। তাদের পাশে নিয়ে লড়াই করতে। এ কথা নিশ্চিত ভাবে বলা যায় নাগরিক সমাজ পশ্চিমবঙ্গে তাদের সীমানা থেকে বেরোতে পারেনি। কতিপয় মানুষ হয়ত পেরেছেন, কিন্তু তাদের তো আর নাগরিক সমাজ বলা যায় না। হয়ত তাদের বিপ্লবী বলা যেতে পারে। কিন্তু আমাদের দেশের ঐতিহ্য অনুযায়ী যারা এই আন্দোলনের সঙ্গে কিছুমাত্র যুক্ত ছিলেন না, তারা আন্দোলনকে প্রায় হাইজাক করে নিজেদের পতাকার তলায় নিয়ে গেলেন। বলতে লাগলেন পরিবর্তনের কথা। সেই পরিবর্তনের বেসুর সুরে তাল মেলালেন এখানকার অনেক বুদ্ধিজীবী। দুর্ভাগ্যের বিষয় তাদের অনেক কিছু পাওয়ার ছিল। অনেক কিছু হারানোর ভয় ছিল। তারা এক শাসকের অপশাসনের প্রতি কথা বলে উঠলেও পরবর্তীকালে আসা ( বিশেষ করে যখন পরিবর্তন বিষয়টি তখন হয়ে উঠেছে এখানকার ক্ষমতা দখলের নামান্তর), চুপ করে গেলেন। চোখের সামনে দেখলেন এখানে ধর্ষণ হলেও তা সিপিএম বা মাওবাদীদের চক্রান্ত বলে চালানো হলো। এমনকি ধর্ষিতাকে অপমান করা হলো। কিন্তু তারা কিছুই বললেন না। বিপ্লবী বনধুদের উপর নেমে এলো রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস। গ্রামে গ্রামে তখন আর সিভিল সোসাইটি নেই। আছে আরেক শাসক দল। আছে তাদের তৈরী করা অনুশাসন। অচলায়তন। 

     

    অথচ নাগরিক সমাজ চুপ করেই রইলো। কিছুই পাল্টালো না। পরিবর্তনের নাম পাল্টালো শুধুই ক্ষমতার রং। কবির সুমনের মত কিছু কিছু মানুষ প্রতিবাদ করে উঠলেন। সংখ্যায় কম। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ হলো তাঁরা নিজেদের বিক্রি করতে পারলেন না ক্ষমতাসীন শাসকদলের কাছে। নাগরিক সমাজের আন্দোলন মফস্বল কেন, কলকাতা শহরের বাইরে কথাও পৌছল না। বরং মিশে গেল ব্যবস্থার মধ্যে। 

     

    অপরদিকে আসি আরেক বাংলার প্রসঙ্গে। দেখিনি ৭১ -এর মুক্তিযুদ্ধ। পড়েছি। জেনেছি কীভাবে গ্রামের পর গ্রাম, শহরের পর শহর রাজাকারদের হাতে খুন হয়েছেন বাংলার মানুষেরা। ধর্ষিতা হয়েছেন অগনিত মহিলা। ত্নাদের ভোগ করে গণকবর দেওয়া হয়েছে। তাঁরা ভাষা কে ভালোবেসে প্রাণ দিয়েছেন। তাঁরা দেশকে, মাটিকে ভালোবেসে যুদ্ধ করলেন পাকিস্তান এর সাম্রাজ্যবাদী ফ্যাসিস্ট শক্তির বিরুদ্ধে। এবং জিতলেন। তৈরী হলো এক স্বতন্ত্র রাষ্ট্র বাংলাদেশ। কিন্তু তারা পারলেন না সমাজ থেকে সমস্ত ধর্মীয় উন্মাদ অবশেষ গুলিকে মুছে ফেলতে। বরং দিন যত এগোলো, তারা শক্তিশালী হয়ে বাংলাদেশে চালালেন আরেক ফ্যাসিবাদ। যে স্বপ্ন দেখেছিলেন বঙ্গবন্ধু, তা এলো না দেশে। নিজেদের মনের ভিতরে, প্রজন্মের পর প্রজন্ম ঘৃনা আর রাগ আর অপমান পুষে রেখে দেশে বাস করতে লাগলেন আমাদের এই আরেক দেশের বাঙালি বন্ধুরা। এও হতে পারত তারা আমাদের মতই মেনে নিলেন সবকিছু। হাত গুটিয়ে থাকলেন। কিন্তু তা হলো না। রাষ্ট্র গঠনের ৪২ বছর পরে দেশের যুবক-যুবতীরা দেয়ালে পিঠ থেকে যাওয়া অবস্থায় দাবি করলেন রাজাকারদের ফাঁসির। ক্রমে সেই দাবি দাওয়া ভিত্তিক আন্দোলন রূপ নিল দেশের ব্যবস্থা পরিবর্তনের লড়াই-এ। ঢাকার শাহবাগের প্রজন্ম চত্তরে মিলিত হয়ে তারা স্বপ্ন দেখলেন এক নতুন বাংলাদেশের, যেখানে ধর্মীয় সংগঠন নিষিদ্ধ  করার দাবি জানালেন তাঁরা। জামাতি ইসলামীর বিরুদ্ধে এবং সাম্প্রদায়িকতা মুক্ত বাংলাদেশের জন্য এই জমায়েত ক্রমশ বড় হতে থাকলো। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ল এই আগুন। কারণ এই আগুন কেবল শহরের বিষয় নয়। গ্রামের মনস্তত্বকেও ধরার। শহরের প্রাণকেন্দ্রের এই জমায়েতের আগুন গিয়ে পৌছল দেশের  কোণে কোণে। গ্রাম-বাংলার মানুষেরাও যোগ দিলেন। দেশের বাইরে থাকা মানুষেরাও যোগ দিলেন। বিভিন্ন দেশে নিজেদের মত করে প্রতিবাদ জমায়েত হতে থাকলো। ক্রমে নাগরিক সমাজের এই আন্দোলন ঘিরে নিল সমগ্র বাংলাদেশকে। স্যালুট কীভাবে জনাব এই আন্দোলনকে আমি জানি না। শুধু এই টুকু জানি যে, এদের সাহস পাহাড়ের মত উঁচু, আকাশের মত মহত, সমুদ্রের মত উচ্ছসিত। আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক রাজীব হায়দারকে কুপিয়ে মেরে ফেলল মৌলবাদীরা। কিন্তু তাতে আরও বুক বেঁধে নেমে পড়লেন দেশের সাধারণ মানুষ। হার-না মানা এই যুদ্ধ তাদের জিততেই হবে। গণতন্ত্রের দোহাই, এই উপমহাদেশে যুদ্ধ করে যদি কোথাও গণতন্ত্র এসে থাকে, এমন গণতন্ত্র, যেখানে ধর্মের ভ্রুকুটি নেই, তাহলে তা প্রথম আসবে এই বাংলাদেশেই। 

     

     দুই দেশ . কত অমিল। দেখো, নিজেদের প্রাণকে তুচ্ছ করে আজকের তরুণ প্রজন্ম নাগরিক সমাজের আন্দোলনকে ছড়িয়ে দিতে পেরেছে গ্রামে গ্রামে, দেশের কোনায় কোনায়। আমাদের এই দেশে যদি কেউ প্রশ্ন করতেই ভুলে যায়, তবে ওই দেশে মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে মৌলবাদীদের ভ্রুকুটির তোয়াক্কা না করেই লড়ে যাচ্ছে এক সুন্দর বাংলাদেশ গঠনের জন্য। 

     

    আমি এই বৈপরীত্যের সীমানায় দাঁড়িয়ে আছি। এক নো -ম্যানস ল্যান্ড-এ। আমার গর্ব হচ্ছে আমার বাংলাদেশের জন্য। আমার চলে যেতে ইচ্ছে করছে এই গণজাগরণে অংশ নিতে। আর আমার এই বঙ্গের কথা ভেবে কষ্ট হচ্ছে। কষ্ট হচ্ছে কারণ আমরা এখনো ঘুমিয়ে আছি। কষ্ট হচ্ছে কারণ আমার অসম্ভব হাসি পাছে আমাদের শাসকদলের দ্বিচারিতা আর শাসকদলের  ভজনে  রত বুদ্ধিজীবিদের বীর্যহীনতা দেখে। কিন্তু আমার গর্ব হচ্ছে এ কথা ভেবে যে বাংলাদেশর তরুণ প্রজন্ম পথ দেখাচ্ছে  ঘুরে দাঁড়ানোর। ইতিহাসের ক্লেদকে মুছে ফেলার দায়ত্ব ঘাড়ে তুলে নিয়েছে তারা। 

     

    হয়ত বাংলাদেশেই প্রথম সিভিল সোসাইটি আন্দোলন ছুঁতে পারল গ্রামের মানুষের মনস্তত্ব। নাগরিক সমাজের আন্দোলনের ইতিহাস-কেও দিক দেখালো বাংলাদেশ।  তোমাদের সেলাম। 

     

    হিন্দোল ভট্টাচার্য 


    4Like ·  · 

No comments:

Post a Comment