শুধু নাগরিকত্ব নয়,দেশভাগের ক্ষতিপূরণ চাই!
বাণভাসি সোনার বাংলা,বাণভাসি সারা ভারতবর্ষ,ফড়িং শুধোয়,কত জল?
বাঁকুড়া থেকে পূর্ব মেদিনীপুর, বীরভূম থেকে বর্ধমান, বন্যায় ভাসছে বাংলা!
২০২০–র মধ্যে হিন্দু রাষ্ট্র হবে ভারত: সিঙ্ঘল
পলাশ বিশ্বাস
জলাধারের ছাড়া জলে প্লাবিত গ্রামের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে ঘরছাড়া মানুষের সংখ্য..
সৌজন্যঃ এই সময়
তেমন বিপর্যয় জার্জিলিংএ হলেও,আমাদের বাংলায় এখনো হযনি তাই ত ঈলিশ পার্বণ।
সংবাদে প্রকাশ,বন্যায় ভাসছে রাজ্যের বহু জেলা। বানভাসী বাংলার আঁচ পড়েছে বাজারেও। সব্জি থেকে মাছ,মাংস সবেরই দাম চড়ছে কয়েকগুন। কেজি প্রতি কাঁচা লঙ্কা ১০০ টাকা। পটলের দাম কেজি প্রতি পঞ্চাশ থেকে ষাট টাকা। ঝিঙে পঞ্চাশ টাকা, ঢেঁড়স প্রতি কেজি পঞ্চাশ থেকে ষাট টাকা। বেগুন ষাট টাকা। টমেটো কেজি প্রতি চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ টাকা। ফুলকপি পঞ্চাশ টাকা। আগুন বাজারে হিমশিম অবস্থা ক্রেতাদের।
এদিকে, ভয়াবহ আকার নিয়েছে মুর্শিদাবাদের বন্যা পরিস্থিতিও। পুকুরের সঙ্গে মিশে গেছে রাস্তা। কান্দিতে পুকুরে তলিয়ে যায় ক্লাস ফাইভের ছাত্রী। হিজল, ভরতপুর, খড়গ্রাম, নবগ্রাম কার্যত জলের তলায়। নবগ্রামে ভেঙে গিয়েছে নদীবাঁধ। কান্দি-সালার রাজ্য সড়ক বন্ধ। গতকাল বড়ঞায় ত্রাণশিবিরে যান তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী। ত্রাণ নিয়ে ক্ষোভ বাড়ছে দুর্গতদের।
খবরে চোখ রাখছেন নিশ্চয়ই। জলবন্দী জনজীবন নদী মাতৃক দেশের কঠিন সমাজ বাস্তব,শুধু জমিহারা,ভিটেছাড়া আমরা সাঁতার কাটতেই ভুলে গেছি বেমালূম,তাই হড়কা বাণে প্রাণ যায় যায়।
খড়কুটো ধরে বেঁচে থাকার মুরোদ নেই।
না আছে কেয়া পাতার নৌকো কোথাও,না আছে পদ্মা নদীর মাঝে,না আছে সেই তিতাস একটি নদীর নাম।
পুতুল নাচের ইতিকথাই শেষ পর্যন্ত আমাদের জীবন যাত্রা।
দিদি ত মহারানী ,যুবরাজ বা ব্রিটিশ প্রাইম মিনিস্টারের সঙ্গে দেখা না করেি ফিরে এলেন,আমাদের প্রাণের প্রাণ তিনি। প্রাণ যায় বা থেকে যায়,তিনি ভালো থাকুন।
লন্ডনে এত্তা এত্তা জন্জাল,আমাদের তবু সোনার কোলকাত্তা আছে।
পূব আমরা প্রায় সত্তর বছর আগে,এখন পশ্চিমে আমাদের সূর্যোদয়।
পশ্চিম আমাদের ভূগোল,পশ্টিম আমাদের ইতিহাস,পশ্চিম আমাদের সাহিত্য,আমাদের সংস্কৃতি,আমাদের মাতৃভাষা।
প্রাণে যে গ্রীষ্মের প্রচন্ড দহন,জলে থই থই কোলাকাতা এবং সোনার বাংলায় প্রাণ জুড়োয়।
বৃষ্টি হয়। অতিবৃষ্টিতে বানভাসিও হয় বাংলা। চেনা ছবি দেখা যায় প্রায় প্রতি বর্ষাতেই। কিন্তু এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন। এবার জল জমছে এমন সব জায়গায়, যে এলাকার মানুষ সাধারণত বানভাসি হন না।
তবু ভালো,এই বিপর্যয়ে সীমান্তের কাঁটাতার ভেসে যায় এবং দেশ ভাগের ইতিহাস মুছে যায়।
বিপর্যয়ে তবু ত অখন্ড ভারতবর্ষ।
আমরা তবু হিন্দু রাষ্ট্র।
তাই ত রাজস্থানে স্কুলের পাঠ্যবইতে বিবেকানন্দ, গৌতম বুদ্ধের সঙ্গে একাসনে আসারাম
ইয়াকুবের শেষযাত্রায় সামিল অনেকেই সন্ত্রাসবাদী, বিতর্কিত টুইট তথাগত রায়ের
খবরে প্রকাশ,দেশের বিখ্যাত মনীষীদের উদাহরণ দিতে গিয়ে রাজস্থানের পাঠ্যবইতে এল আসারাম বাপুর প্রসঙ্গ। রাজস্থানের তৃতীয় শ্রেণীর পাঠ্যবইতে গৌতম বুদ্ধ, নানক, মাদার টেরেসা, বিবেকানন্দের সঙ্গে স্থান দেওয়া হল যৌন কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত আসারামকে। তৃতীয় শ্রেণীর বইতে বিবেকানন্দের ছবির ঠিক পাশেই হাসিমুখে থাকা হাজতবাসে থাকা আসারামের ছবি জ্বলজ্বল করছে।
খবর প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে অস্বস্তিতে পড়ে যায় রাজস্থানের শিক্ষা মন্ত্রক। ব্যাপরটা প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের ভুল বলেও অস্বস্তি এড়ানো যাচ্ছে না। প্রথমে বলা হয়েছিল এটা ছাপার ভুলে হয়েছে। কিন্তু ছাপার ভুল যে এত বড় হতে পারে না সেটাও পরে স্বীকার করে নেওয়া হয়।
স্বঘোষিত গডম্যান আসারামের সঙ্গে রাজস্থান সরকারের সম্পর্ক নিয়ে বেশ কয়েকমাস আগে জল্পনা শুরু হয়েছিল। তখন অস্বস্তি পড়েছিল বসুন্ধরা রাজের সরকার। এই ঘটনা ফের আসারাম কাণ্ডের ছায়া ফিরিয়ে আনল রাজস্থানে।
মুক্ত বাজার হয়ত চাইনি কোনো দিন,যদিও বাজার আমাদের গর্ব। বাজার আমাদের ভিত। বাজার আমাদের ভবিষত্।
আধিপাত্যবাদের মুখে ছাই দিয়ে দিল্লী থেকে বাংলা হস্তক্ষেপ শুরু করেছিলাম প্রান্তিক স্বজনকথা দেশ দুনিয়াংকে জানান দেওয়ার জন্য। ওপার বাংলার লেখায় মেলবা্ক্স ভরে যায়,এপার বাংলা ও বহির্বাংলা লিখতে পারে না ,পড়তে ও পারে না। বাজার ছাড়া কিছুই পোছে না। যারা লিখছেন গুচ্ছের পিন্ডি পিডিএফ পাছিয়ে দিচ্ছেন,যা ছাপা হয়না।
ঘেন্না ধরে গেছে মসাই। উদ্বাস্তুর ছেলেঝন্মেছি নৈনীতালের তরাইয়ে বাদাবনে উদ্বাস্তু উপনিবেশে। পাহাড়ের সেই আন্দামানে হিন্দুস্তানী হিসাবেই শিক্ষা দীক্ষা,তবু বাংলায় ফিরেছিলাম বাঙালি হব বলে। তবু ত বাঙাল ছিলাম। ভদ্র বাংলায় ভদ্র স্বজনদের হতে পারলাম না কিন্তু। ছেড়ে চলে যেতে হবে,মাস দশেক বাকী। উদ্বাস্তু ছিলাম,উদ্বাস্তু হয়েই থাকব। বাংলায় লিখতে চেয়েছিলাম,সেইস্বপ্ন মরেনি কোনো দিন। বাণভাসি সেই স্বপ্নও আজ এই প্রবল বরষণে। রবীন্দ্রনাথ হলেও, তবু শ্রাবণের জযগান লিখতে পারতাম। আমি দুর্মুখ,ধ্বংসের বার্তাবাহক।
শুধু নাগরিকত্ব নয়,দেশভাগের ক্ষতিপূরণ চাই!
বাণভাসি সোনার বাংলা,বাণভাসি সারা ভারতবর্ষ,ফড়িং শুধোয়,কত জল?
বাঁকুড়া থেকে পূর্ব মেদিনীপুর, বীরভূম থেকে বর্ধমান, বন্যায় ভাসছে বাংলা!
সংবাদে প্রকাশ,ভারী বৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি জেলায় জেলায়। প্রাকৃতিক দুর্যোগে এখনও পর্যন্ত ৩৯ জনের মৃত্যু রাজ্যে। মৃতদের পরিবারকে চার লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর। সোমবার যাবেন ঝড় বিধ্বস্ত হাবড়ায়।
লাগাতার বৃষ্টিতে প্লাবিত রাজ্যের বিস্তির্ণ এলাকা। পরিস্থিতি যে দিকে এগোচ্ছে তাতে আরও খারাপ হতে পারে অবস্থা।
সরকারি হিসাব বলছে, অন্য বছরের থেকে এ বছর জুন-জুলাই মাসে ৬০ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় ৭ লাখ মানুষ। দুর্যোগে মৃত্যু হয়েছে ৩৯ জনের।
পরিস্থিতি মোকাবিলায় শুক্রবার নবান্নে উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে বসেন মুখ্যমন্ত্রী। মৃতদের পরিবারের জন্য ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছেন তিনি। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ খতিয়ে দেখতে নিজে বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শনে যাওয়ার কথা ঘোষণা করছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার তিনি যাবেন ঝড় বিধ্বস্ত অশোকনগরে।
বিভিন্ন জেলায় নজর রাখতে মন্ত্রীদের মধ্যে দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। সাহায্য চাওয়া হচ্ছে ভারত সেবাশ্রম সংঘ, রামকৃষ্ণ মিশনের। বাঁধে জল ছাড়া হচ্ছে কি না পার্শবর্তী রাজ্য গুলির সঙ্গে তা নিয়ে যোগাযোগ রাখতে বলা হয়ছে মুখ্যসচিবকে। নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে ডিভিসির সঙ্গে। রাজ্যের পরিস্থিতি নিয়ে একটি রিপোর্ট পাঠানো হবে কেন্দ্রকে।
২০১৪–র সাধারণ নির্বাচনে বি জে পি–র নেতৃত্বাধীন এন ডি এ–র জয়কে নতুন বিপ্লবের সূচনা বলে মনে করেন বিশ্ব হিন্দু পরিষদের পৃষ্ঠপোষক অশোক সিঙ্ঘল। তিনি দাবি করেন, ২০২০–র মধ্যে ভারত হিন্দু রাষ্ট্রে রূপান্তরিত হবে।
অশোক সিঙ্ঘল বলেন, আমি একবার সাঁইবাবার আশ্রমে গিয়েছিলাম। সেখানে সাঁইবাবা আমাকে বলেছিলেন, ২০২০–র মধ্যে গোটা দেশটাই হিন্দু হয়ে যাবে। এবং ২০৩০–এর মধে্য গোটা বিশ্ব হবে হিন্দু–প্রভাবিত। অশোক সিঙ্ঘল বলেন, আমি মনে করে, বিপ্লবের সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। বিশ্ব হিন্দু পরিষদের পৃষ্ঠপোষক এক বছর আগে বি জে পি–র নির্বাচনী জয়কে '৮০০ বছরের দাসত্বের' অবসান বলে মনে করেন। তিনি বলেন, এটা কোনও মামুলি বিপ্লব নয়। এর প্রভাব ভারতের গণ্ডিতে আবদ্ধ থাকবে না। ছড়িয়ে পড়বে সারা বিশ্বে। সারা বিশ্বের সামনে নতুন এক আদর্শ তুলে ধরবে। ৮৮ বছর বয়স্ক নেতা সিঙ্ঘল কে এস সুদর্শনের জীবন ও কর্মের ওপর লেখা একটি গ্রন্থের প্রকাশ অনুষ্ঠােন ভাষণ দিচ্ছিলেন। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের প্রাক্তন প্রধান কে এস সুদর্শনের জীবনাবসান হয় গত বছর। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। ভারত সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে সুষমা স্বরাজ এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকলেও অশোক সিঙ্ঘলের বলা হিন্দু রাষ্ট্র সম্পর্কে কিছু বলেননি। উল্লেখ্য, বি জে পি–র আদর্শগত পথপ্রদর্শক রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘেরই অন্যতম অনুমোদিত সংস্থা হল বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। সঙ্ঘ পরিবারের শিখরে আর এস এস। আর এস এসেরই ছাতার নিচে হিন্দু জাতীয়তাবাদী সংগঠনগুলি আশ্রয় নিয়েছে। ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্রে রূপান্তরিত করতে চায় আর এস এস। বি জে পি অবশ্য প্রকাশ্যে তা উচ্চারণ করতে পারে না।
ইফতার নাপসন্দ
রাজনৈতিক দলগুলোর ঘটা করে ইফতার মোটেই পছন্দ নয় সঙ্ঘের। তাদের মত, ইফতারের মতো পবিত্র অনুষ্ঠানের মাহাত্ম্যকে খাটো করছেন এক শ্রেণী রাজনীতিবিদ। আর এস এস মুখপত্র 'অর্গানাইজার'–এ লেখা হয়েছে, ইফতারের নিয়ম গরিব, অভুক্ত মানুষের সঙ্গে বসে সাদামাঠা খাবার খাওয়া। সেই দিকে না গিয়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে সমাজের নামীদামিেদর জন্য এলাহি ভোজের আয়োজন করছে কিছু রাজনৈতিক দল। এটা হাস্যকর, ভারতীয় সংস্কৃতির অবমাননা। একই সঙ্গে একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের অপমানও বটে!
তুমুল বর্ষণে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ
বন্যা পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ চেহারা নিচ্ছে রাজ্যের। তুমুল বর্ষণে থই থই বিস্তর্ণ এলাকা। চাষের জমিতে গলা পর্যন্ত জল, ঘরছাড়া বহু মানুষ। কেউ আশ্রয় নিয়েছেন স্কুলে, কেউ পঞ্চায়েত অফিসে। একে তো ভারী বৃষ্টি, তার ওপর ব্যারেজ থেকে জল ছাড়াও ফলে, যেন আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে পরিস্থিতি। দামোদরের জল ছাড়ায় বাড়ছে নদী ভাঙন। ভেসে গেছে গরু, ছাগলও। জলের তোড়ে লরি, বাসও ভেসে গেছে কোথাও কোথাও। সেই সঙ্গে রোগভোগের আশঙ্কাও বাড়ছে। পরিস্থিতির মোকাবিলায় প্রশাসনিক স্তরে সব রকম চেষ্টা চলছে।
৫৬ হাজার কিউসেক: বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে বর্ধমান জেলায়। টানা ভারী বর্ষণের জেরে আরও বেশি এলাকা জলমগ্ন হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যাও অনেক বেড়ে গেছে। এরই মধ্যে শনিবার ফের ডি ভি সি দুর্গাপুর ব্যারেজ থেকে ৫৬ হাজার কিউসেক জল ছেড়েছে। এতে আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে দামোদর। দামোদরের জল বাড়ায় ভাঙন চলছে অনবরত। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন গ্রামের মানুষজন। এরই মধ্যে বৃষ্টির জল বেড়ে দেওয়াল আলগা হয়ে চাপা পড়ে পঙ্কজিনী ঘোষ (৭৫) নামে এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে আউশগ্রাম থানার দিকনগর গ্রামে। এ ছাড়া ঘুমন্ত অবস্থায় সাপের কামড়ে মৃত্যু হল মহাদেব রেজা (৭৬) নােম এক বৃদ্ধের। মাধবডিহি থানার বড়বৈনানে ঘটনাটি ঘটেছে। এদিকে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় কয়েক দিনেও জলমগ্ন এলাকা থেকে জল নামা তো দূরের কথা, চারদিক জলে থইথই হয়ে পড়ায় অসুবিধার মধ্যে পড়েছেন হাজার হাজার মানুষ। তাই জল সরাতে গ্রামে গ্রামে পাকা রাস্তা কেটে দিচ্ছেন তাঁরা। পর্যাপ্ত ত্রাণ না পাওয়ায় ক্ষোভে ফুঁসছেন জামালপুর, রায়নার দুর্গতরা।
ভেসে গেল বাস: শুক্রবার রাতভর বৃষ্টি হওয়ায় জেলার বহু গ্রাম জলমগ্ন হয়েছে। কোতুলপুর–জয়রামবাটি সড়কে একটি বাস আমোদর খালে ভেসে গেছে। যাত্রীদের অবশ্য ক্ষতি হয়নি। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, জেলার ৯টি ব্লক ক্ষতিগ্রস্ত। এগুলি হল ওন্দা, ইন্দাস, খাতড়া, তালডাংরা, বাঁকুড়া–২, সোনামুখী, পাত্রসায়ের ও সিমলাপাল। ১৮টি কাঁচা বাড়ি পুরোপুরি ধসে গেছে। ১০০টি কাঁচা বাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দ্বারকেশ্বরের জলে কোতুলপুর, ইন্দাসের বহু গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। কোতুলপুরের কয়েক গ্রাম থেকে গ্রামবাসীদের নৌকায় করে উদ্ধার করেছে প্রশাসন। জেলাশাসক মৌমিতা বসু কোতুলপুরের পরিস্থিতি দেখতে সেখানে গেছেন। কংসাবতী নদীর ওপর কেচন্দা কজওয়ে ও শালী নদীর সোনামুখীর নফরভাঙা কজওয়ে জলে ডুবে যান চলাচল ব্যাহত হয়েছে।
ভেসে গেল পড়ুয়া: বানভাসি ঘরের জিনিসপত্র বাঁচাতে গিয়ে মৃত্যু হল এক বিধবা মহিলার৷ মৃতের নাম আশালতা বাগ (৫৫)৷ বাড়ি আরামবাগের সালেপুর-২ নং গ্রাম পঞ্চায়েতের ডহরকুণ্ডুর রায়জলকরপাড়ায়৷ বাড়িতে জল ঢুকে যায় আশালতাদেবীর৷ তিনি তখন বাড়ির জিনিসপত্র বাঁচানোর জন্য পাশের এক বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছিলেন৷ কিন্তু জলে ভর্তি নিকাশি খালে পড়ে যান তিনি৷ খালের জলে স্রোত বইতে থাকায় তিনি আর উঠতে পারেননি৷ আরামবাগ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন৷ গোঘাট-২ নং ব্লকের হলদি মোড়ে হড়পা বানে ভেসে গেল প্রদীপ নন্দী নামে এক ছাত্র৷ বাড়ি কামারপুকুরের মুকুন্দপুর গ্রামে৷ শনিবার স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে সে বন্ধুর সঙ্গে সাইকেলে করে বান দেখতে বেরিয়েছিল৷ হঠাৎই দামোদর নদীতে হড়পা বানে সে সাইকেল–সহ ভেসে যায়৷ এ ছাড়াও কামারপুকুর শ্রীরামকৃষ্ণ সারদা বিদ্যামহাপীঠের দ্বিতীয় বর্ষের চার ছাত্রী আরামবাগ নেতাজি মহাবিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিয়ে এক অভিভাবকের সঙ্গে বাড়ি ফিরছিলেন৷ কামারপুকুরের সাতবেড়িয়ার কাছে হড়পা বানে তাঁরা পাঁচজনেই ভেসে যায়৷ স্থানীয় মানুষ চারজনকে উদ্ধার করলেও ওই অভিভাবক কাজল ঘোষকে খুঁজে পাওয়া যায়নি৷ তাঁর বাড়ি গোঘাটের লস্করপুকুর গ্রামে৷ অন্য দিকে গোঘাটের মান্দারন এলাকায় আরামবাগ-খড়্গপুর রাস্তায় হড়পা বানে একটি বিয়েবাড়ির গাড়ি বাস রাস্তার ধারে নয়ানজুলিতে পড়ে যায়৷ কলেজের ছাত্ররা জলে রাস্তা পার হতে পারছিল না৷ তাই দাঁড়িয়ে থাকা ওই বাসটি তাদেরকে বাসে করে পার করে দেওয়ার চেষ্টা করছিল৷ কিন্তু জলের স্রোতে ওই বাসটি ভেসে যায়।
পাঁচিল চাপা পড়ে মৃত্যু: পাঁচলার সাহাপুরের মাটির দেওয়াল চাপা পড়ে মহিলার মৃত্যু হয়েছে। নাম হালিমা বেগম (৪৩)। স্বামী মারাত্মক জখম হয়ে উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি। শনিবার ভোর রাতের ঘটনা। হাওড়া পুর এলাকায় অধিকাংশ এলাকা জলমগ্ন। সীতারাম বসু লেন, মহীনাথ পোড়েল লেন, বেনারস রোড, দশরথ ঘোষ লেন, বামুনগাছি, ডি রোড, সি রোড, টিকিয়াপাড়া, বেলিলিয়াস রোড, বেলিলিয়াস লেন, নীলমণি মল্লিক লেন, দেশপ্রাণ শাসমল রোড, পঞ্চাননতলা–সহ মধ্য হাওড়ার শিবপুরের বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন। হাওড়া কারশেডে জল জমে ট্রেন চলাচল ব্যাহত। লিলুয়া, বেলুড়, বালির বেশকিছু অংশ জলের তলায়। বেলুড় আন্ডারপাসে জল জমেছে। পাশাপাশি আমতা, উদয়নারায়ণপুরের বিস্তীর্ণ এলাকা জলবন্দী। আমতা–১ ব্লকের অনেক মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন ত্রাণশিবিরে। সেখানে কোমর সমান জল। আমতা, উদয়নারায়ণপুরের বিভিন্ন রাস্তায় জলের স্রোত বইছে। সেখানকার মাঠের ফসল চলে গেছে জলের তলায়। আমতা–১ ব্লকের বসন্তপুর, বালিচক, আনুলিয়া, ঘোষালপুর, রসপুর, কানপুর–সহ ২৫টি গ্রাম জলে ভাসছে। ওই এলাকায় ২৫টি ত্রাণশিবির খোলা হয়েছে। প্রায় ১ হাজার পরিবার ঠাঁই নিয়েছেন সেখানে। উদয়নারায়ণপুরের খিলা–হরিশপুর পঞ্চায়েতের প্রায় অধিকাংশ গ্রামই ভাসছে জলে। সেখানে খোলা হয়েছে ১৪টি ত্রাণশিবির। হাজার দুয়েক মানুষ ত্রাণশিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন। বৃষ্টির জল, খালের জল উপচে পড়ায় এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। উদয়নারায়ণপুর, আমতায় দামোদরের বাঁধ আপাতত অটুট রয়েছে। প্রশাসন ব্যবস্থা নেওয়ায় বাঁধ অক্ষত।
কুয়ের জলে প্লাবিত ৩০ গ্রাম: লাগাতার বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত বীরভূম। তবে বৃষ্টির প্রাবল্য কমায় শনিবার জেলায় নতুন করে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়নি। শুক্রবারের তুলনায় জেলার নদীগুলির জলাধার থেকে এদিন জল ছাড়ার পরিমাণ অনেক কমে যাওয়ায় জেলা প্রশাসন অনেকটাই স্বস্তিতে। তবে লাভপুরের লাঘাটার বিস্তীর্ণ নিচু এলাকা এখনও জলমগ্ন। কুয়ে নদীর জলে প্লাবিত এই এলাকার ৩০টি গ্রামের হাজার পাঁচেক মানুষ এখনও লাভপুরের বিভিন্ন স্কুলে অস্থায়ী ৫টি ত্রাণশিবিরে দিন কাটাচ্ছেন। সেচ দপ্তর জানিয়েছে, এদিন সকালে ময়ূরাক্ষী নদীর তিলপাড়া এবং মশানজোড় জলাধার থেকে জল ছাড়া হয় যথাক্রমে ৩১,০৪২ এবং ১৯,৭৭৮ কিউসেক। শুক্রবার তিলপাড়া থেকে জল ছাড়া হয়েছিল ৬২ হাজার কিউসেক। শনিবার ব্রাহ্মণী, দ্বারকা ও হিংলো নদীর জলাধার থেকে জল ছাড়া হয় যথাক্রমে ৪৯২১, ৩৮১৮ ও ৩১৮০ কিউসেক। শুক্রবারের তুলনায় যা অর্ধেকেরও কম। তবে তিলপাড়া (ময়ূরাক্ষী) ও বৈধরা (ব্রাহ্মণী) জলাধার থেকে শুক্রবারে ছাড়া জলে শনিবারও প্লাবিত অবস্থায় রয়েছে মহম্মদবাজার ব্লকের ভেজেনা, নরসিংহপুর, গোবিন্দপুর, বেহেরা, দোমানি, কুলিয়াড়া, বড়াম, সাঁইথিয়া ব্লকের রানীপুর, রায়হাট, দেকোটা, ভবানীপুর, মতিপুর এবং নলহাটি ২ নম্বর ব্লকের বলরামপুর, সাহেবনগর, ন'পাড়া, রামপুরহাট–২ নম্বর ব্লকের গোপালপুর, টিঠিডাঙা প্রভৃতি গ্রাম। জলবন্দী গ্রাম থেকে হাসপাতালে আসার কোনও উপায় না থাকায় সাঁইথিয়া ব্লকের গোবিন্দপুর গ্রামে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়া বছর দশেকের আদিবাসী শিশু কৃষ্ণ কিস্কু একেবারে বিনা চিকিৎসায় মারা যায়, দাবি মৃত শিশুর বাবা কঙ্কা কিস্কুর।
প্লাবিত পাঁশকুড়া: ক্ষিরাই নদীর বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হল পাঁশকুড়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চল৷ শুক্রবার বিকেলে চৈতন্যপুর ২ পঞ্চায়েতের বিজয়রামচক এলাকায় ক্ষিরাইয়ের বাঁধে ফাটল দেখা দেয়৷ এর পর রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ প্রায় ২০ ফুট এলাকা জুড়ে বাঁধ ভেঙে যায়৷ হু হু করে জল ঢুকতে শুরু করে চৈতন্যপুরে ৷ এর পর শনিবার ভোরে চৈতন্যপুর ১ গ্রাম পঞ্চায়েতে মাগুরি জগন্নাথচক এলাকায় পিঁয়াজখালির বাঁধ প্রায় ২৫ ফুট ভেঙে যায়৷ প্লাবিত হয় লক্ষ্যাকুড়ি, চাউলকুড়ি, হরিনারায়ণচক, নীলমণি রামচক, দুমনান, বাহারকুড়ি, উদয়পুর–সহ প্রায় ২০টি গ্রাম৷ এক দিকে সকাল থেকে নিম্নচাপের অতিবৃষ্টি, অন্য দিকে ক্ষিরাইয়ের বাঁধ ভেঙে বন্যার জল ঢুকতে শুরু করায় চরম দুর্ভোগে বানভাসিরা৷ এই ঘটনা বছর দুয়েক আগে পাঁশকুড়ায় কংসাবতীর ভাঙনের স্মৃতি উসকে দিয়েছে বাসিন্দাদের মধ্যে৷ তীব্র আতঙ্কে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটছেন তাঁরা৷ বাঁধের ওপর ত্রিপল টাঙিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন বহু মানুষ৷ এদিকে রাজ্যের জলসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী তথা এলাকার বাসিন্দা সৌমেন মহাপাত্র জানান, পাঁশকুড়ায় প্লাবন এলাকা থেকে গ্রামবাসীদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে৷ পাঁশকুড়ার মাগুরি জগন্নাথচক, ভগবানপুর–সহ জেলার সর্বত্র খোলা হচ্ছে ত্রাণশিবির৷
জাতীয় সড়কে ধস: পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। একটানা প্রবল বর্ষণ ও নদীর জল গ্রামে ঢুকে লক্ষাধিক মানুষ জলবন্দী হয়ে পড়েছেন। দাসপুরের নাড়াজলে পারাং নদীর জলের স্রোতে ভেসে মৃত্যু হয়েছে চণ্ডীপুর গ্রামের দুর্গা দাসের (৫৭)। কেশপুরের ঝলকা চাথাল জলে ডুবে থাকায় মেদিনীপুর–কেশপুর রুটে বাস চলাচল বন্ধ। দাসপুরের সামাট চাথাল জলে ডুবে থাকায় কেশপুর–দাসপুর রুটে, মুগবসান চাথাল জলে ডুবে থাকায় চন্দ্রকোনা টাউন–কেশপুর রুটে, চন্দ্রকোনার মনসাতলা চাথাল জলে ডুবে থাকায় ঘাটাল–চন্দ্রকোনা রুটে, ২ নম্বর চাথাল জলে ডুবে থাকায় মেদিনীপুর–ঘাটাল রুটে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কে লালবনির ফার্ম রোডের কাছে জল জমে রাস্তায় ধস পড়ে রাস্তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সকাল থেকে যানবাহন চলাচল বন্ধ। শনিবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত সবং ও পিংলার বন্যা কবলিত বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখেন সবং–এর বিধায়ক ডাঃ মানস ভুঁইয়া। কংসাবতী, শিলাবতী, কুবাই, পারাং, বুড়িগঙ্গা, তমাল নদী বিপদসীমার ওপর দিয়ে বইছে। ঘাটালের মনসুখা, অজবনগর, সুলতানপুর, দেওয়ানচক–সহ ১২টি ব্লক, ঘাটাল পুরসভার সবক'টি ওয়ার্ড জলমগ্ন। কংসাবতী ব্যারেজ থেকে এদিন নতুন করে ১০ হাজার কিউসেক জল ছাড়ায় বিপদ বাড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
তথ্যসুত্র: বিজয় প্রকাশ দাস, আলোক সেন, তুফান মণ্ডল, প্রিয়দর্শী বন্দ্যোপাধ্যায়, অনুপম বন্দ্যোপাধ্যায়, সৈকত মাইতি, বুদ্ধদেব দাস।
বৃষ্টিতে ব্যাহত ট্রেন–চলাচল
তুমুল বৃষ্টির জেরে ব্যাহত হল ট্রেন–চলাচল। শুক্রবার রাত থেকে ভারী বৃষ্টি হয়েছে শহর কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকাগুলিতে৷ হাঁটুজল জমে যায় বিভিন্ন জায়গায়। ব্যাহত হয়েছে মেট্রো–চলাচলও। রাস্তায় জল জমে যাওয়ায় যানবাহনও কমে যায়। ব্যারাকপুর টিটাগড়ের মাঝে রেললাইনে জল জমে শিয়ালদহ মেন শাখার ডাউন লাইনের ট্রেন–চলাচল ব্যাহত হয়। শনিবার একাধিক ট্রেন বাতিল করা হয়৷ আবার অনেক এক্সপ্রেস ট্রেনের সময়সীমা পরিবর্তন করা হয়েছে। ফলে চরম নাজেহাল অফিসযাত্রী থেকে বহু আগন্তুকেরা। শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখাতেও গড়িয়া স্টেশনে ওভারহেডের তার ছিঁড়ে যাওয়ায় ট্রেন–চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। অন্যদিকে, এদিন ফের ব্যাহত হয় মেট্রো–চলাচল। রবীন্দ্র সরোবর স্টেশনে মেট্রোর রেকে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা যায়৷ ব্যাক ড্রাইভিং করে রেকটিকে কালীঘাট স্টেশন নিয়ে আসেন চালক৷ কালীঘাটেই নামিয়ে দেওয়া হয় যাত্রীদের৷ এরপরে ব্যাক ডাইভিং করেই রেকটিকে দমদম হয়ে নোয়াপাড়া কারশেডে নিয়ে যাওয়া হয়৷ দমদমে এলে ফের সমস্যা দেখা দেয় রেকটিতে। বৃষ্টির কারণে শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখার ট্রেন–চলাচলে নাজাহাল হয়ে পড়েন যাত্রীরা। তার ওপর মেট্রোতেও গোলযোগ দেখা দেওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েন নিত্যযাত্রীরা৷
বৃষ্টির জেরে দক্ষিণ-পূর্ব শাখায় হাওড়া-হায়দারাবাদ এক্সপ্রেসের সময়সূচি পরিবর্তন করতে হয়। হাওড়া-মুম্বই গীতাঞ্জলি এক্সপ্রেসের সময় পরিবর্তন হয়। ফলে যাত্রীদের স্টেশনেই অপেক্ষা করতে হয় দীর্ঘক্ষণ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রেল কর্তৃপক্ষ তৎপরতার সঙ্গে কাজ শুরু করেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে হাওড়া, টিকিয়াপাড়া, সঁাতরাগাছি স্টেশনগুলিতে অতিরিক্ত কর্মী নামানো হয়।
ওয়েব ডেস্ক: জেলায় জেলায় বন্যা পরিস্থিতি কোন জায়গায় এক নজরে দেখে নেওয়া যাক---
বাঁকুড়া- শুক্রবার রাতে দুর্গাপুর ব্যারেজ থেকে বাহান্ন হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়। সঙ্গে তুমুল বৃষ্টি। প্লাবিত সোনামুখীর বিস্তীর্ণ এলাকা। বাকুঁড়ার কোতুলপুরে জলের তোড়ে ভেসে যায় বাস। গাছে আটকে যাওয়ায় রক্ষা পান বাসের যাত্রীরা। কোতুলপুর-জয়রামবাটি সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়।
বীরভূম- ঝাড়খণ্ড, বিহারে বৃষ্টি। সঙ্গে জলাধার থেকে ছাড়া জল। বিপর্যস্ত প্রায় গোটা বীরভূম। তিলপাড়া, বইধারা, মাসাঞ্জোর, হিংলো, দেউচা থেকে দফায় দফায় জল ছাড়া হয়েছে। তিলপাড়া ব্যারেজ থেকে আচমকা ছাড়া জলে সাঁইথিয়ায় উল্টে যায় ছটি ট্রাক। প্রশাসনের তরফে মিলেছে সাহায্যের আশ্বাস।
বর্ধমান- লাগাতার বৃষ্টিতে জলমগ্ন বর্ধমানের জামালপুরের কুড়িটি গ্রাম। মেমারির বিস্তীর্ণ এলাকা জলের তলায়। কালনার বন্যা পরিস্থিতিও জটিল । জল জমেছে ভাতারেও। পূর্বস্থলী, কেতুগ্রামের অবস্থাও শোচনীয়। ভাগীরথীর সঙ্গে কুনুর এবং খড়ি নদীর জলও বাড়ছে।
পূর্ব মেদিনীপুর- পরিস্থিতির অবনতি হয়নি। তবে এখনও জলমগ্ন কোলাঘাট, তমলুক, ময়না, এগরা, ভগবানপুর সহ পূর্ব মেদিনীপুরের বিস্তীর্ণ এলাকা। ডিভিসির ছাড়া জলে ক্ষীরাইয়ের বাঁধ ভেঙেছে। প্লাবিত হয়েছে কুড়িটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা। টিউবয়েলগুলি জলের তলায় চলে যাওয়ায় পানীয় জলের হাহাকার তীব্র আকার ধারণ করেছে দুর্গতদের মধ্যে।
দীর্ঘদিন সংস্কার হয়নি ঘিয়া ,কুন্তী, সরস্বতী, কানা নদীর। নদীনালার জলধারণ ক্ষমতা কমছে। সঙ্গে একটানা প্রবল বৃষ্টি আর ডিভিসির ছাড়া জল। প্লাবিত পাণ্ডুয়া, বলাগড়, পোলবা-দাদপুর, ধনেখালি, দশঘড়া, হরিপাল, জাঙ্গিপাড়া, চন্দনপুরের বিস্তীর্ণ এলাকা। পোলবা-দাদপুরে ভেঙে পড়ছে নির্মীণমাণ সেতু। চন্দনপুরের ঘিয়া নদীর বাঁধ ভেঙেছে। ধনেখালিতে মাটির দেওয়াল চাপা পড়ে মৃত্যু হয়েছে এক প্রৌঢ়ের।
বনগাঁ- বনগাঁ গাইঘাটার জল নামছে নিচের দিকে। উপচে পড়ছে যমুনা ও ইছামতী নদী। প্লাবিত হয়েছে স্বরূপনগরের বিস্তীর্ণ এলাকা। দুর্ভোগ বাড়ছে মানুষের। বৃষ্টি বাড়লে দুর্ভোগ আরও বাড়বে। তাই আগাম সতর্ক প্রশাসন।
নদিয়া- তিলপাড়া ব্যারেজের ছাড়া জলে বিপদসীমা ছাড়িয়েছে গঙ্গা। চাকদা ব্লকের বেশ কয়েকটি গ্রাম জলের তলায়। চরবীরপাড়ায় জলে ডুবে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। জল থইথই নবদ্বীপ। প্লাবিত নাকাশিপাড়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চল। জল জমে রয়েছে অগ্রদ্বীপঘাট, জগত্খালি, হাটচাপড়ায়।
http://zeenews.india.com/bengali/zila/flood-situation-in-west-bengal_130145.html
জলের বাজারে আগুন
নীলাঞ্জনা সান্যাল: আরও দুর্যোগের আশঙ্কায় খাবার দাবার মজুত করার হিড়িক পড়েছে। মানুষ আতঙ্কিত হয়ে প্রয়োজনীয় নিত্যনৈমিত্তিক জিনিসপত্র বেশি করে কিনে রাখতে চেষ্টা করছেন। শুক্রবার সারারাত বৃষ্টির পর শনিবার সকালে কলকাতা আর জেলা শহরের বহু মানুষ দোকান–বাজারে ছোটেন। আগামী কয়েকদিনের দুর্যোগে যাতে খাবার, দুধ, ওযুধের সমস্যা না হয়। এখনই বাজার থেকে সবজি, মাছ, ডিম প্রায় উধাও। যা পাওয়া যাচ্ছে তার দাম আকাশছোঁয়া। যদিও আবহাওয়া দপ্তর থেকে কিন্তু শুক্রবার রাতেও বারবার বলা হয়েছিল আতঙ্কিত হওয়ার মতো কিছু হয়নি। কিন্তু অতীতের অভিজ্ঞতায় কলকাতা ও শহরতলির মানুষ এই আশ্বাসে ভরসা রাখতে পারেননি। তা ছাড়া এক নাগাড়ে হয়ে যাওয়া বৃষ্টি আতঙ্ক আরও বাড়িয়েছে। ভারী বৃষ্টির পর বহুবারই দেখা গেছে বাজারে শাকসবজি থেকে শুরু করে বহু প্রয়োজনীয় জিনিস অমিল। দামও অনেক বেশি হয়ে যায়। প্রশাসনের কোনও নিয়ন্ত্রণ থাকে না। এর সঙ্গে থাকে জমা জলের সমস্যা। সেই জল ভেঙে দোকান–বাজারে যাওয়া দুষ্কর হয়ে ওঠে। দোকান–বাজারও বসে না।
কোমেন ঘূর্ণিঝড়ের অস্থির গতিপ্রকৃতির জন্য সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত। সেই ঘূর্ণিঝড় কখনও সাগরে থমকে গেছে, কখনও শক্তি বাড়িয়েছে, কখনও আবার বাংলাদেশের ওপর ঘুরপাক খেয়েছে। প্রায় এক সপ্তাহ ধরে রাজে্যর মানুষ শুনছে ঘূর্ণিঝড় ধেয়ে আসছে। কোনও সন্দেহ নেই এতে যেমন সাধারণ মানুষ, প্রশাসন সতর্ক হয়েছে তেমন আতঙ্কিতও হয়েছে। শহরের মানুষ বারবার টিভি খুলে জানতে চেষ্টা করছে ঘূর্ণিঝড়ের অবস্থান কী। যদিও শেষ পর্যন্ত পাওয়া খবরে জানা যায় ঘূর্ণিঝড় গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। অঝোরে বৃষ্টি হয়েছে। আগামী দু'দিনেও আরও বৃষ্টি হবে। এই খবর শুনেই বিভিন্ন বাজারে ভিড় জমান সাধারণ মানুষ। এখনই বাজারে সবজি প্রায় নেই বললেই চলে। মাছও প্রায় নেই। ডিমই ভরসা। কিন্তু তার দামও হঠাৎ বেড়ে গেছে। ৯ টাকা জোড়া ডিম কোথাও বিক্রি হয়েছে ১২ টাকায়, কোথাও ১৫ টাকায়। জ্যোতি আলুর দাম ১০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে কোথাও ১২ কোথাও ১৫ টাকা কেজি। চন্দ্রমুখী আলুর কেজি ১৮ টাকা। বাজারে আলুর মজুতও প্রায় শেষ। অধিকাংশ বাজারে ঝিঙে, ঢেঁড়শ, পটলের দেখা মেলেনি। পটলের কেজি দাঁড়িয়েছে ৭০ টাকায়। মাছের বাজার ফাঁকা। ছোট মাছ নেই বললেই চলে। মাছ যে আসবে সে উপায়ও নেই। কারণ যে পথে বাজারে আসবে সেই রাস্তাই জলের তলায়। এমনকী শহর, শহরতলির বাজারগুলোতেও এই বৃষ্টিতে জল ঢুকেছে। ফলে অনেক দোকান খোলেওনি। আগামী কয়েকদিন আরও ভারী বৃষ্টির আশঙ্কায় চাল–ডাল মজুতের হিড়িক দেখা গেছে। যাতে খিচুড়ি রান্না করে খাওয়া যায়। ওষুধের দোকানেও দরকারি ওষুধ কিনে রাখতে ভিড় করেন সাধারণ মানুষ।
No comments:
Post a Comment