Monday, October 6, 2014

আব্দুল লতিফ মন্ত্রীত্ব হারাচ্ছেন, কারণ হজ্ব না জয়? ফরীদ আহমদ রেজা

আব্দুল লতিফ মন্ত্রীত্ব হারাচ্ছেন, কারণ হজ্ব না জয়?

ফরীদ আহমদ রেজা

আওয়ামী লীগের মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীর ফাঁসির দাবিতে বাংলাদেশ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। সরকার বিরোধী এক সিনিয়র আইনজীবী তাঁকে ক্রস-ফায়ারে নিয়ে মেরে ফেলার দাবি জানিয়েছেন। কাউকে ক্রসফায়ারে হত্যা করা একটা জঘন্য কাজ। এটা বিনা বিচারে হত্যা এবং নীতিগত কারণে আমরা চাই না কাউকে, সে যত বড় অপরাধী হোক, ক্রসফায়ারে হত্যা করা হোক। এ ধরণের হত্যা কখনো বৈধ হতে পারে না। যে কোন অপরাধীকে আইনের আওতায় এনে আত্মপক্ষ সমর্থনের পূর্ণ সুযোগ দিতে হবে। শুধু ন্যায় বিচার করলে হবে না, ন্যায়বিচার হয়েছে বলে প্রমাণও রাখতে হবে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত মন্ত্রীর বক্তৃতার ভিডিও ফুটেজে দেখেছি মন্ত্রী বলেছেন, জামাতে ইসলামেরও তিনি বিরোধী। তবে হজ্জ এবং তাবলিগ জামাতের ঘোর বিরোধী। এটা দেখার পর ফেইসবুকে আমি একটা স্টেটাস দেই। সেখানে বলেছি, 'জামাতে ইসলামী একটি রাজনৈতিক দল। তবলিগ জামাত একটি অরাজনৈতিক ধর্মীয় দল। এ দু দলের বিরোধিতা করার অধিকার যে কারো আছে। কিন্তু বাংলাদেশের এক মন্ত্রী হজ্জ নিয়ে এবং নবী মুহাম্মদ (স) সম্পর্কে যে কটুক্তি করলেন তা শোনে আমরা অবাক। পৃথিবীর কোন অমুসলিম দেশের কোন সরকারী দায়িত্বশীল হজ্জ এবং নবী মুহাম্মদ (স) সম্পর্কে এ রকম কথা বলেছেন বলে আমাদের জানা নেই। মহানবী মুহাম্মদ (স) হজ্জের বিধান প্রবর্তন করেছেন বলে মন্তব্য করে তিনি মুর্খতার পরিচয়ও দিলেন। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। তবে হ্যাঁ, তিনি সজিব ওয়াজেদ জয় সম্পর্কেও কটুক্তি করেছেন। অন্ততঃ শেষোক্ত কারণে তাঁকে জবাবদিহি করতে হবে এবং মূল্য দিতে হবে।'

গতকাল প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ট লোকেরা সাংবাদিকদের বলেছেন, পবিত্র হজ্জ, মহানবী (স) ও সজিব ওয়াজেদ জয়কে নিয়ে কটুক্তি করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর সরকারের ডাক, টেলিযোগাযোগমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ডলির সদস্য আবদুল লতিফ সিদ্দিকীকে মন্ত্রিসভা ও দল থেকে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। পরে প্রধানমন্ত্রী ঢাকায় সাংবাদিক সম্মেলন করে তা নিশ্চিত করে বলেছেন, নিয়মতান্ত্রিকতা রক্ষার স্বার্থে তা কার্যকরী হতে কিছুটা সময় লাগবে। প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যের পরও সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের বিষয় যাদের মনে আছে তাদের সন্দেহ কাটেনি। টেলিযোগাযোগমন্ত্রীর কোনটা যাবে এবং কোনটা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মতো ফিরে আসবে কেউ বলতে পারে না। তবে মন্ত্রীত্ব চলে গেলেও মিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন থেকে যাবে, কোন অপরাধে তিনি মন্ত্রীত্ব হারাচ্ছেন? হজ্জের বিরুদ্ধে বা রাসুলের বিরুদ্ধে কটুক্তি করার জন্যে, না কি জয়ের বিরুদ্ধে কথা বলার জন্যে? 

পত্রপত্রিকার খবর থেকে আমরা জানতাম সজীব ওয়াজেদ জয় প্রধানমন্ত্রীর এবং কারো মতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর উপদেষ্টা। আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী বলেছেন, জয় সরকারের কেউ নয়। জয় বেতন নেন কি না আমরা জানতাম না। সরকারের কাজ করে কেউ বেতন নিলে দোষের কিছু নয়। তাই বলে এতো বড় বেতন, মাসিক ২ লাখ ডলার? এটা অবিশ্বাস্য। আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী এটা যখন বলেছেন, তখন ধরে নেয়া যায় এর মধ্যে কিছুটা হলেও সত্যতা আছে। সরকারের পক্ষ থেকে এ ব্যপারে সাফাই দিলেও মানুষের মনে সন্দেহ থেকে যাবে। ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনের পর সরকারের মন্ত্রীদের লুটপাঠের খবর মানুষ ভুলে যায়নি। তাই সজীব ওয়াজেদ জয়কে জড়িয়ে বলা অভিযোগ আরো ডালপালা মেলে বড় হবে। আওয়ামী লীগের নেতা-নেত্রীর কাছে যিনি বাংলাদেশের ভবিষ্যত তাঁর বিরুদ্ধে এ রকম ধৃষ্টতামূলক কথা বলে আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী পার পেয়ে যাবেন, এটা হতেই পারে না।

বাংলাদেশে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার অপরাধে শাস্তির বিধান রয়েছে। কিন্তু এ কারণে কাউকে কখনো শাস্তি পেতে হয়নি। যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে আটক জামাতে ইসলামীর কয়েকজন নেতাকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার নাটক তৈরি করেই প্রথমে আটক করা হয়। পরে তাদের যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গ্রেফতার দেখানো হয়। ইসলামের বিরুদ্ধে কথা বলার কারণে অবশ্য এর আগে দাউদ হায়দার এবং তাসলিমা নাসরিন দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। কিছুদিন আগে প্রধানমন্ত্রী এবং বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ব্যঙ্গাত্মক গান রচনা অপরাধে তন্ময় মজুমদার নামক এক তরুণকে সাত বছরের সশ্রম কারাদন্ড দিয়েছে সাইবার অপরাধ ট্রাইবুনালের বিচারক। প্রধানমন্ত্রী এবং বঙ্গবন্ধুর সাথে বেয়াদবী করার কারণেও ইতোপূর্বে কয়েকজনকে শাস্তি দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কথা বললে শাস্তির বিধানকে কেউ কেউ সত্যজিৎ রায়ের বিখ্যাত ছবি 'হীরক রাজার দেশে'র সাথে তুলনা করছেন। প্রধানমন্ত্রী প্রায়ই নিজের ধার্মিকতার কথা প্রচার করেন, সুযোগ পেলে হজ্জ এবং ওমরাহ করতে যান। শেখ হাসিনার এটাও কৃতিত্ব যে যারা এক সময় ইসলাম এবং মুসলমানদের ব্যাপারে ব্যঙ্গ-বিদ্রƒপ করেছেন তাদের অনেকে সরকারী টাকায় হজ্জে যাচ্ছেন। আলোচিত মন্ত্রীও একবার হজ্জ করে এসেছেন। বাংলাদেশের অনেক মানুষের প্রশ্ন, আওয়ামী লীগ সরকারের দৃষ্টিতে প্রধানমন্ত্রী বা বঙ্গবন্ধু কি ইসলাম বা নবী-রাসুল থেকে অধিক সম্মানিত?

কাদের সিদ্দিকী আপত্তিকর বক্তব্যের জন্যে নিজের ভাইকে ক্ষমা প্রার্থনার অনুরোধ করেলেও মেক্সিকো থেকে বিবিসি বাংলাকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী বলেন, স্বাধীন ও আধুনিক মানুষ হিসেবে তিনি হজ্জ সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন। এ বক্তব্য প্রত্যাহার বা এর জন্যে ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্নই ওঠেনা। তবে প্রধানমন্ত্রী যে নির্দেশ দেবেন তা তিনি প্রতিপালন করবেন। এ থেকে বোঝা যায়, আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী প্রধানমন্ত্রীর আনুকল্য অর্জনের আশা পরিত্যাগ করেননি। কাদের সিদ্দিকী শেখ হাসিনার উদ্দেশ্যে বলেছেন, শামিম ওসমানের পক্ষে যদি প্রধানমন্ত্রী দাঁড়াতে পারেন তা হলে তাঁর ভাইয়ের পক্ষে কেন দাঁড়াবেন না? আমরা জানি শুধু শামিম ওসমান নয়, এর আগে সৈয়দ আবুল হোসেন এবং সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের পক্ষেও প্রধানমন্ত্রী কথা বলেছেন। ব্লগার রাজিব নিহত হবার পর দেশবাসী সে হত্যার নিন্দা করার সাথে সাথে নবীর বিরুদ্ধে কটুক্তি করারও নিন্দা করেছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নবীর বিরুদ্ধে কটুক্তির নিন্দা করেননি। দেশের বর্তমান উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীর পক্ষে কোন কথা বলবেন বলে হয় না। তবে তাঁকে শাস্তির আওতায় আনা হবে কি না তা এখনো পরিস্কার নয়।

আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে হাজারো অভিযোগ থাকলেও প্রধানমন্ত্রীর শুভদৃষ্টিতে থাকার কারণে পত্রপত্রিকায় তা তেমন প্রকাশিত হয়নি। তাঁর খুঁটি নড়বড়ে হয়ে যাবার সাথে সাথে এখন তা আলোচনায় আসছে। জানা গেছে, আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী ৪৬টি সরকারি প্রতিষ্ঠান বিনা দরপত্রে এবং কখনো বিনা মূল্যে তাঁর নিজের লোকদের কাছে হস্তান্তর করেছেন। নিজের হাতে সরকারি কর্মকর্তাকে প্রহার করেছেন। হরতালকারীদের বাড়িতে ঢুকে তাঁদের হত্যা করার জন্য ছাত্রলীগের কর্মীদের প্রকাশ্যে নির্দেশ দিয়েছেন। হাইকোর্টের প্রতি চরম অবমাননাকর মন্তব্য করেছেন। সাবেক রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবু সাঈদের পৈতৃক বাড়ি অবৈধভাবে দখল করেছিলেন। সে বাড়ি তাঁর নিকট থেকে পুনরুদ্ধারের জন্যে বঙ্গবন্ধুকে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছিল।

প্রধানমন্ত্রীকে অবমাননা করার কারণে দেশের বিভিন্ন আদালত মানুষকে চাকরিচ্যুত করেছে, সাত বছর কারাদন্ড পর্যন্ত দিয়েছে। আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী বিভিন্ন মহানবী (সা), হাইকোর্ট, বিরোধী দলের নেতা-নেত্রী, সংখ্যালঘু মানুষ, বুদ্ধিজীবী বা সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে যাচ্ছে তাই বলার পরও কোন শাস্তি পেতে হয়নি। ধর্ম এবং ধর্মীয় বিশ্বাস নিয়ে তিনি যেসব মন্তব্য করেছেন এর জন্যে বাংলাদেশের পেনাল কোডের ২৯৫-ক ধারা অনুসারে সর্বোচ্চ দুই বছরের সশ্রম কারাদন্ডের বিধান রয়েছে। কিন্তু তিনি ছিলেন এতদিন আইনের উর্ধে। এখন শোনা যাচ্ছে, বিভিন্ন অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে সরকার ৫০টি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে, সরকার এতোদিন কি করেছে? আপত্তিকর মন্তব্য করার পর মামলা হবার অর্থ হচ্ছে, সরকারে থাকলে তিনি সাধু এবং সরকার থেকে চলে গেলে তিনি চোর? এটা কোন নীতির কথা নয়, এর নাম স্বেচ্ছাচারিতা। 

আমাদের বিরেবচনায়, আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী মন্ত্রীত্ব হারালেও তাঁকে বিচারের আওতায় আনা হবে না, তাঁকে নিয়ে যতই হৈ চৈ হোক না কেন। তিনি বিদেশেই থেকে যাবেন। রাজনৈতিক প্রয়োজনে তাঁর বিরুদ্ধে হুমকি-ধমকি দেয়া হবে। কিন্তু সরকার তাঁকে দেশে ফিরিয়ে এনে শাস্তি দিবে না। এর কারণ, সরকারের হাঁড়ির খবর তাঁর জানা। তাঁকে নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করলে তিনি সরকারের আরো অনেক গোপন তথ্য ফাঁস করে দিতে পারেন। তবে হ্যাঁ, এরশাদের মতো মামলার খড়গ চালু রেখে তাঁকে চাপের মধ্যে রাখা হবে, যাতে তিনি আর বাড়াবাড়ি না করেন।

বাংলাদেশের কোন কোন বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক এবং স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীকে পাগল বা পাগল বংশের লোক বলে অভিহিত করেছেন। পাগল হলে তিনি এতোদিন মন্ত্রীত্ব করতে পারেন না। পাগল হলে তাঁর কোন অপরাধ আর অপরাধ বলে গণ্য হতে পারে না। এ জন্যে যারা তাঁকে পাগল বলছেন তারা ঠিক বলছেন না। তিনি যা করেছেন তা ইচ্ছে করেই করেছেন। কেন করেছেন তা নিশ্চয়তা করে বলা না গেলেও আমরা অনুমান করতে পারি। হতে পারে কোন কারণে জয়ের উপর তিনি সন্তুষ্ট নহেন। জয় এবং হজ্বের বিরুদ্ধে বলে তিনি হয়তো নিজের জন্যে বিদেশে স্থায়ীভাবে বসবাস নিশ্চিত করেছেন। আওয়ামী লীগের নেতারা বিদেশে টাকা পাচার করছেন, বাড়ি করছেন, এ সকল অভিযোগ অনেক দিন থেকেই উচ্চারিত হচ্ছে। আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী এর আগে এক দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছিলেন বলেও খবরে জানা গেছে। কিন্তু সে আবেদন পরিপক্ক হবার আগেই তিনি দেশে চলে আসেন। এবার তিনি কৌশলের সাথে এক-ই সাথে আওয়ামী লীগের ভবিষ্যত নেতা এবং ধর্মপ্রাণ মানুষকে আক্রমণ করেছেন। তিনি জানেন, এর ফলে তাঁর বিরুদ্ধে ফাঁসির আওয়াজ উঠবে। জয়ের বিরুদ্ধে বলার পর সরকারও তাঁর বিরুদ্ধে চলে যাবে। এখন তিনি যে কোন দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করলে এটা প্রমাণ করতে সক্ষম হবেন যে দেশে তাঁর জীবনের নিরাপত্তা নেই।

আইনের আওতায় আনার কথা না বলে অনেকে আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীর ফাঁসি দাবি করছেন। তাদের কাছে প্রশ্ন, আপনারা কেন তাঁর ফাঁসি চান? তিনি কি ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করেছেন? তিনি কি মুসলমান ছিলেন? আপনারা তাঁর সম্পর্কে কতটুকু জানেন? এটা ঠিক, তিনি একবার হজ্ব করেছেন। হজ্ব করলেই কি মুসলমান হওয়া যায়? ঈমান হচ্ছে একটি বিশ্বাসের নাম, কাজের নাম নয়। দেশে মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা না থাকলে কারো চিন্তাধারা জানার উপায় নেই। তাই তাঁর ঈমান ছিল কি না তা আমরা জানি না। কেউ যদি সাবালক হবার পর বুদ্ধি-বিবেচনা প্রয়োগ করে ঈমান গ্রহণ না করে থাকে তা হলে কি তাঁকে মুসলমান বলা যায়? আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী মুসলমান না হলে ধর্মত্যাগী হবার প্রশ্নই আসে না। কেউ স্বেচ্ছায় ইসলাম ত্যাগ করলে তাকে মুরতাদ বা ধর্মত্যাগী বলা হয়। ধর্ম ত্যাগ করলেই কি তাঁকে ফাঁসি দিতে হবে? তিনি কেন ধর্ম ত্যাগ করলেন তা কি আপনারা জানবেন না? তাঁকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিবেন না? তাঁর কোন ভুল ধারণা বা অস্পষ্টতা থাকলে তা দূর করার চেষ্টা করবেন না? তাঁকে তওবা করার সুযোগ না দিয়ে ফাঁসি দিলে অধর্ম হবে। আবার ইসলামের প্রাথমিক যুগে ধর্মত্যাগীর জন্যে রাজনৈতিক বিবেচনায় চালুকৃত আইন বর্তমান যুগে কতটুকু প্রযোজ্য তা কি বিবেচনা করবেন না?

একজন আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীকে ফাঁসি দিয়ে আপনারা কি অর্জন করবেন? ইসলাম সম্পর্কে ঠিক তাঁর মতো মনোভাব পোষণকারী লোক বাংলাদেশে বা সরকারে কি আর নেই? ইসলাম এবং এর বিভিন্ন বিধি-বিধান সম্পর্কে খারাপ ধারণা পোষণকারী লোকের সংখ্যা বাংলাদেশে কম নয়। আপনারা কি আইনের ভয় দেখিয়ে তাদের ইসলাম শিক্ষা দিতে পারবেন? আমরা মনে করি, যাদের মনে ইসলাম সম্পর্কে প্রশ্ন আছে তাদের কথা বলার সুযোগ দেয়া উচিত। কথা বললে তাদের মনোভাব জানা যাবে। কথা বললে তাদের সংখ্যাটাও জানা যাবে। মানুষের মনের জিজ্ঞাসা জানলে এর জবাব দেয়ার সুযোগ থাকবে, তাদের সাথে মতবিনিময় বা ডায়লগ করা যাবে। ইসলাম সম্পর্কে দেশে-বিদেশে হাজারো প্রশ্ন উচ্চারিত হচ্ছে। ধমক দিয়ে মুখ বন্ধ করে অথবা মিছিল করে কি সে সকল প্রশ্নের সমাধান সম্ভব? আলোচনার মাধ্যমে ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করুন। ধমক দিয়ে কারো মুখ বন্ধ করতে যাবেন না। আল্লাহ কাউকে দারোগা করে পাঠাননি।

http://www.bdmonitor.net/newsdetail/detail/49/93318



2014-10-05 11:36 GMT+06:00 Isha Khan <bdmailer@gmail.com>:
জয় ভাইটা কে? তার বেতন কত?

অক্টোবর ৪, ২০১৪

প্রভাষ আমিন॥
অ্যাসোসিয়েট হেড অব নিউজ, এটিএন নিউজ।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অনেক ধন্যবাদ। এই ধন্যবাদটি সব সময়ের জন্য। কারণ শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকার সময় বরাবরই বিদেশ থেকে ফিরে দ্রুততম সময়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন। ইচ্ছামত সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন, সময়েরও কোনো ধরাবাধা থাকে না। আজও প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তারা একাধিকবার তাগাদা দিয়েও প্রধানমন্ত্রীকে বিরত করতে পারেননি।

শেষ পর্যন্ত আজান দেওয়ায় তাকে থামতে হয়। আমার ধারণা সাংবাদিকদের সাথে এই সময় কাটানোটা প্রধানমন্ত্রী উপভোগ করেন। বরাবরই তিনি স্মার্টলি, আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।

নিউইয়র্কে লতিফ সিদ্দিকীর মহা বিতর্কিত বক্তব্যের পর এই প্রথম সাংবাদিকদের মুখোমুখি হলেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু লতিফ সিদ্দিকীর পুরো বিষয়টি পরিস্কার হওয়া গেল না। একাধিক প্রশ্নের পর লতিফ সিদ্দিকীর ভবিষ্যৎ মোটামুটি পরিস্কার।

রিপোর্টিং করার সময় অনেকবার কাভার করার অভিজ্ঞতা থেকে জানি, প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন খুবই উপভোগ্য। তার তীক্ষ্ম রসবোধ, সাংবাদিকদের সাথে মজা করা, খোঁচা দেয়া, আগে-পরে বা চা খাওয়ার সময় নানা টুকরো কথা- সব মিলিয়ে পুরো বিষয়টি চমৎকার অভিজ্ঞতা হয়ে থাকে। বাংলাদেশের অনেক নেত্রীর ক্ষেত্রে যা বিরল। আমি যতদূর জানি, প্রধানমন্ত্রীকে কী প্রশ্ন করা যাবে বা যাবে না; কখনওই তেমন কোনও নির্দেশনা থাকে না। কিন্তু তারপরও প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে আমরা হতাশ হই। সব প্রশ্নের জবাব পাই না। এখানে প্রধানমন্ত্রীর কোনো দায় নেই। যা প্রশ্ন, তাই তো জবাব দেবেন তিনি। নিজে থেকে তো আর উত্তর দিতে পারেন না। ভাসা ভাসা প্রশ্ন হলে তিনি ভাসা ভাসা উত্তরই দেন।

নিউইয়র্কে লতিফ সিদ্দিকীর মহা বিতর্কিত বক্তব্যের পর এই প্রথম সাংবাদিকদের মুখোমুখি হলেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু লতিফ সিদ্দিকীর পুরো বিষয়টি পরিস্কার হওয়া গেল না। একাধিক প্রশ্নের পর লতিফ সিদ্দিকীর ভবিষ্যৎ মোটামুটি পরিস্কার। তিনি সরকার বা দলে আর থাকছেন না। রাষ্ট্রপতি হজ্ব থেকে ফিরলে সংবিধান অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী তার আকাঙ্ক্ষার কথা বলে দিয়েছেন।

আরেকটা প্রশ্ন ছিল। গণমাধ্যমে না দেখলেও গত কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখছি, সজীব ওয়াজেদ জয়ের মাসিক বেতন নিয়ে একটি প্রোপাগাণ্ডা চলছে। জয় নাকি সরকার থেকে মাসে ২ লাখ ডলার, বাংলাদেশি মুদ্রায় এক কোটি ৬০ লাখ টাকা বেতন নেন। এই তথ্যটি যে সত্য নয়, তা জানতে ব্যাপক অনুসন্ধান লাগে না।

সেই অনুষ্ঠানে লতিফ সিদ্দিকী আরও অনেক বিষয়ে বলেছিলেন। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর পুত্র এবং তার তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়কে তাচ্ছিল্য করে কিছু কথা বলেছিলেন। এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে লতিফ সিদ্দিকী বলেছিলেন, জয় ভাইটা কে? সে করার কে? এই উত্তরটাই আমার জানার আকাঙ্ক্ষা ছিল প্রধানমন্ত্রীর কাছে। যদি তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি মন্ত্রী না জানেন, জয় ভাইটা কে? তাহলে প্রধানমন্ত্রীই শুধু পারেন, সরকারে তার অবস্থান পরিস্কার করতে।

আরেকটা প্রশ্ন ছিল। গণমাধ্যমে না দেখলেও গত কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখছি, সজীব ওয়াজেদ জয়ের মাসিক বেতন নিয়ে একটি প্রোপাগাণ্ডা চলছে। জয় নাকি সরকার থেকে মাসে ২ লাখ ডলার, বাংলাদেশি মুদ্রায় এক কোটি ৬০ লাখ টাকা বেতন নেন। এই তথ্যটি যে সত্য নয়, তা জানতে ব্যাপক অনুসন্ধান লাগে না। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা নিশ্চয়ই প্রধানমন্ত্রীর চেয়ে বেশি বেতন পাবেন না বা দেশের রাষ্ট্রপতির চেয়ে বেশি বেতন পাবেন না। তাই এই তথ্যটিকে উড়িয়ে দিতে এক সেকেন্ডও সময় লাগার কথা নয়। কিন্তু কেউ সরকারে জয়ের অবস্থান এবং তার মাসিক বেতন নিয়ে কোনো প্রশ্ন করেননি বলে উত্তরও আসেনি। সরকারে সজীব ওয়াজেদ জয়ের সঠিক অবস্থান কী, আদৌ তিনি সরকারের কাছ থেকে মাসিক সম্মানি নেন কিনা, আমি জানি না। নিলেও সেটা নিশ্চয়ই বাংলাদেশ সরকারের বেতন কাঠামো অনুযায়ীই হবে।

গত বছরের ৫ মে মতিঝিলে শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের অবস্থানের আগে-পরের ঘটনায় ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ মিলে সর্বোচ্চ ২০ লোক মারা গিয়েছিল। এটা হলো তথ্য। সরকারি-বেসরকারি নানা অনুসন্ধানে এরচেয়ে বেশি নিখোঁজ বা নিহতের সন্ধান মেলেনি। কিন্তু ধারণাটি কি? হেফাজত, বিএনপি, জামায়াতসহ একটি মহল বারবার দাবি করে আসছে, মতিঝিলে হাজার হাজার লোক মারা গেছে।

একটা আশঙ্কা থেকে এই প্রশ্ন দুটির উত্তর জানাটা জরুরি বলে মনে করছি। প্রচার-অপপ্রচার, সত্য আর ধারণার মধ্যে অনেক পার্থক্য। কিন্তু সেই পার্থক্য অনেক সময় গুলিয়ে ফেলি আমরা। শেখ কামাল ব্যাংক ডাকাতি করেননি, এটা হলো সত্য। বাংলাদেশেই আমরা দেখেছি, টাকার জন্য একজন প্রধানমন্ত্রীর পুত্রকে ব্যাংক ডাকাতি করতে হয় না। ব্যাংক চাইলে তার ভবনের বারান্দায় চলে আসে। কিন্তু শেখ কামাল ব্যাংক ডাকাতি করেছিলেন বলে দিনের পর দিন অপপ্রচার চালানো হয়েছে। বাংলাদেশে যদি ৫ শতাংশ লোকও এই ধারণাটি বিশ্বাস করে, সেটিও সেই অপপ্রচারকারীদের সাফল্য।

গত বছরের ৫ মে মতিঝিলে শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের অবস্থানের আগে-পরের ঘটনায় ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ মিলে সর্বোচ্চ ২০ লোক মারা গিয়েছিল। এটা হলো তথ্য। সরকারি-বেসরকারি নানা অনুসন্ধানে এরচেয়ে বেশি নিখোঁজ বা নিহতের সন্ধান মেলেনি। কিন্তু ধারণাটি কি? হেফাজত, বিএনপি, জামায়াতসহ একটি মহল বারবার দাবি করে এসেছে, মতিঝিলে হাজার হাজার লোক মারা গেছে। তাহলে লাশ কই? সরকার রাতারাতি হাজার হাজার সরকার মানুষ মেরে আবার সেই লাশ গায়েবও করে ফেলেছে! এই গাজাখুঁড়ি অপ্রপ্রচারটিও বাংলাদেশের কেউ কেউ বিশ্বাস করে। এমনিতে আমরা জানি এবং বিশ্বাস করি, সত্যের চেয়ে শক্তিশালী কিছু নেই। কিন্তু মাঝে মাঝে ধারণা সত্যির চেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্যতা পেয়ে যায়। গোয়েবলসের সেই পুরোনো কায়দায় একটি ধারণাকে বারবার সত্যে মত পরিবেশন করে, এক ধরনের বিভ্রম তৈরি করা হয়।

বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়নে প্রধানমন্ত্রীর পাঁচ উপদেষ্টার তথ্য আছে। রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী এবং নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক। এই তালিকায় সজীব ওয়াজেদ জয়ের নাম নেই।

গত কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সজীব ওয়াজেদ জয়ের বেতন নিয়ে যে অপ্রপ্রচারটি চালানো হচ্ছে, তা দেখে এই শঙ্কাটি আমার জোরালো হচ্ছে। যারা অপপ্রচারটি চালাচ্ছেন, তাদের খুব সংগঠিত মনে হচ্ছে। তাই জয় ভাইটা কে? তার মাসিক বেতন কত? এই দুটি প্রশ্নের উত্তর জানা খুব জরুরি।

সজীব ওয়াজেদ জয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ছেলে, বঙ্গবন্ধুর নাতি। ৭৫এর ১৫ আগস্ট মায়ের সাথে দেশের বাইরে থাকায় ঘাতকরা তার নাগাল পায়নি। বোধগম্য কারণেই তাকে দেশের বাইরে পড়াশোনা করতে হয়েছে। তিনি পড়াশোনা করেছেন, তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে। আনুষ্ঠানিকভাবে তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা হওয়ার আগে থেকেই তিনি মা শেখ হাসিনাকে ডিজিটাল বাংলাদেশের গল্প শুনিয়েছেন, স্বপ্ন দেখিয়েছেন। শেখ হাসিনা নিজে তার প্রযুক্তিপ্রীতির জন্য জয়কে কৃতিত্ব দিয়েছেন। সেই স্বপ্ন আজ বাংলাদেশেকে অনেক এগিয়ে দিয়েছে। কিন্তু এর বিনিময়ে তিনি যদি নিয়মের বাইরে কোনো অর্থ নিয়ে থাকেন, অবশ্যই সেটা নিন্দনীয়। কিন্তু নিচ্ছেন কিনা, সেটা আগে জানতে হবে।

আর সজীব ওয়াজেদ জয় কি ছেলে হিসেবে মায়ের তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা, নাকি আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা নাকি বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা? বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়নে প্রধানমন্ত্রীর পাঁচ উপদেষ্টার তথ্য আছে। রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী এবং নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক। এই তালিকায় সজীব ওয়াজেদ জয়ের নাম নেই।

তবে এর বাইরেও শেখ হাসিনার আরও একাধিক উপদেষ্টাকে চিনি আমরা, তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, সম্ভবত বেসরকারিকরণ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। তারা সম্ভবত আওয়ামী লীগ সভাপতির উপদেষ্টা। জয়ও তেমন হতে পারেন। মন্ত্রিসভার একজন সদস্য যেহেতু প্রশ্নটি তুলেছেন, তাই এই প্রশ্নের উত্তর জানাটা জরুরি। আমরা চাই না কোনো বিভ্রান্তি তৈরি হোক, ঘোলা পানিতে কেউ মাছ শিকারের সুযোগ নিক।

লেখক: সাংবাদিক ও অ্যাসোসিয়েট হেড অব নিউজ, এটিএন নিউজ।

ইমেইল: Probhash2000@gmail.com

http://www.banglatribune.com/%E0%A6%9C%E0%A7%9F-%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%87%E0%A6%9F%E0%A6%BE-%E0%A6%95%E0%A7%87-%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%AC%E0%A7%87%E0%A6%A4%E0%A6%A8-%E0%A6%95%E0%A6%A4/

No comments:

Post a Comment