Thursday, October 9, 2014

বিএনপি তাকিয়ে দিল্লির দিকে

বিএনপি তাকিয়ে দিল্লির দিকে



http://www.kalerkantho.com/assets/images/news_images/print/2014/10/09/pic-24_137502.jpg


সরকারের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি থেকে নানাভাবে আন্দোলনের কথা বলা হলেও দলটি এখন অপেক্ষায় রয়েছে বাংলাদেশের ব্যাপারে প্রতিবেশী দেশ ভারতের 'প্রকৃত অবস্থান' দেখার জন্য। বিএনপির নীতিনির্ধারকদের বিশ্বাস, বাংলাদেশ প্রশ্নে একটু সময় নিয়ে হলেও ভারতের বর্তমান বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার 'নিরপেক্ষ' অবস্থানই নেবে। আর এ ধরনের পরিস্থিতি নিশ্চিত হলেই কেবল সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপি সত্যিকারের কঠোর আন্দোলন শুরু করবে। কয়েক দিন ধরে বিএনপির নীতিনির্ধারক পর্যায়ের একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপ করে দলের এ অবস্থানের কথা জানা গেছে।

ওই নেতারা জানান, এর আগ পর্যন্ত সভা-সমাবেশের মাধ্যমে এক ধরনের 'আন্দোলন আন্দোলন' পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হলেও কঠোর আন্দোলনে যাবে না বিএনপি। আর গিয়েও লাভ হবে বলে তাঁরা মনে করেন না। কেননা ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে দলটির সর্বস্তরের নেতা-কর্মীরা এখন বিশ্বাস করে, জনগণের ব্যাপক সমর্থন থাকলেও দিল্লির দিক থেকে এক ধরনের 'নিরপেক্ষ' বার্তা স্পষ্ট না হলে সরকার পতন দূরে থাক, নতুন নির্বাচনে আনার মতো চাপটুকুওই সৃষ্টি করা যাবে না। তাদের মতে, ভারতের সমর্থন এখন আর একতরফাভাবে মহাজোট সরকারের প্রতি নেই- এমন একটি বার্তা আগে দেশের সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসনের মধ্যে স্পষ্ট হতে হবে। আর কেবল সেটা হলেই তখন আর আন্দোলন দমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কঠোর হতে পারবে না। ফলে আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে বেকায়দায় ফেলা যাবে। অন্যথায় বিএনপির আন্দোলনে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের সমর্থন থাকলেও সরকারকে টলানো যাবে না।   

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপি চেয়ারপারসনের একজন উপদেষ্টা কালের কণ্ঠকে বলেন, ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপির দুই সদস্যের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সম্প্রতি ঢাকায় তাঁর সাক্ষাৎ হয়েছে। এ ছাড়া দলগতভাবেও বিজেপির সঙ্গে বিএনপির বিভিন্ন বার্তা আদান-প্রদান হচ্ছে। বাংলাদেশ বিষয়ে ভারতের নীতির পরিবর্তন আস্তে আস্তে হচ্ছে বলে ওই নেতা দাবি করেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির প্রভাবশালী আরেক নেতা কালের কণ্ঠকে বলেন, ভারতে নির্বাচনের অন্তত ছয় মাস আগ থেকে বিজেপির সঙ্গে বিএনপি যোগাযোগ শুরু করে। ফলে এখন তাদের সঙ্গে অত্যন্ত সুসম্পর্ক বিদ্যমান। তবে বড় দেশ ভারতের শক্তিশালী বেসামরিক প্রশাসনসহ ক্ষমতার বিভিন্ন বিকল্প কেন্দ্রের গণ্ডি পেরিয়ে রাজনৈতিক সম্পর্কের ফল পেতে কিছুটা সময় লাগবে। তিনি জানান, বিএনপির পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে সব ধরনের উদ্যোগ ও কাজ চলছে। 

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অবশ্য কোনো বিশেষ দেশের হস্তক্ষেপে যে আন্দোলন ব্যর্থ হয়েছে, এ কথা মানতে নারাজ। তাঁর মতে, যেকোনো আন্দোলন একবারে চূড়ান্ত সফল নাও হতে পারে। তবে ৫ জানুয়ারির আগের আন্দোলন ব্যর্থ হয়েছে- এ কথা বলা যাবে না। কারণ ওই নির্বাচন শতকরা ৯৫ ভাগ মানুষ বর্জন করেছে। সবার অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আন্দোলনের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, 'আশা করি, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবার নিরপেক্ষ থাকবে।'

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. ওসমান ফারুক কালের কণ্ঠকে বলেন, 'বর্তমান অবৈধ সরকারকে ভারতের বিজেপি যে কংগ্রেসের মতো এখনো অন্ধভাবে সমর্থন দিয়ে যাবে তা মনে করি না। অবশ্যই তাদের নীতির পরিবর্তন হবে। কারণ এখানকার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর ভারত নির্ভরশীল। বাংলাদেশে নাজুক পরিস্থিতি সৃষ্টি হোক তা তারা চাইবে না। তারা নিশ্চয়ই এ দেশের জনগণের দাবির প্রতি সমর্থন জানাবে।'

এক প্রশ্নের জবাবে ড. ওসমান ফারুক বলেন, ভারতের দিকে তাকিয়ে বিএনপি আন্দোলন করবে, বিষয়টি ঠিক তা নয়। তবে বিশ্ব রাজনীতি তথা বৃহৎ প্রতিবেশী দেশ ভারতের রাজনীতির গতি-প্রকৃতি অবশ্যই বিএনপির বিবেচ্য বিষয়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. আমেনা মহসিনের মতে, বাংলাদেশ প্রশ্নে ভারতের মোদি সরকার নিরপেক্ষ অবস্থান নেবে বলে মনে হয়। কারণ বাংলাদেশ সফরের সময় সে দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ তাঁর বক্তৃতায় 'ইনক্লুসিভ ইলেকশন' এবং গণতন্ত্র সমুন্নত রাখার কথা বলেছেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপিকে ভারত ক্ষমতায় এনে দেবে- এটা মনে করলে তারা ভুল করবে। বরং বিএনপির উচিত, সঠিক এজেন্ডা ঠিক করে নিজেদের সংগঠিত করা।     
   
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগেও জনগণের ব্যাপক অংশের সমর্থন বিএনপির প্রতি ছিল বলে মনে করা হয়। বিশেষ করে পাঁচটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফলাফল এবং সর্বশেষ উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ধাপের ফলাফলেও এ ধারণার প্রতিফলন স্পষ্ট দেখা গেছে। পাশাপাশি অংশীদারত্বমূলক নির্বাচনের প্রতি সমর্থন জানানোর মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের অবস্থানও ছিল বিএনপির পক্ষে। কিন্তু একমাত্র ভারতের 'সমর্থন' না থাকায় নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তনের দাবির আন্দোলন যৌক্তিক পরিণতি পায়নি, যদিও ওই সময় সারা দেশে আন্দোলনের ব্যাপকতা ছড়িয়ে পড়েছিল। শুধু ঢাকায় ব্যাপকতার অভাবে ওই আন্দোলন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।

বিএনপির বড় একটি অংশের ধারণা, ঢাকার আন্দোলন, বিশেষ করে ২৯ ডিসেম্বরের 'গণতন্ত্রের জন্য অভিযাত্রা' কর্মসূচি ভণ্ডুল এবং ওই দিন খালেদা জিয়াকে গুলশানের বাসায় অবরুদ্ধ করাসহ সার্বিকভাবে আন্দোলন মোকাবিলার সুনিপুণ কৌশল প্রণয়নের নেপথ্যে বড় দু-একটি দেশের হাত ছিল। ফলে দক্ষতার সঙ্গে ওই আন্দোলন দমন করে একতরফা হলেও একটি নির্বাচন সম্পন্ন করে তার সুফল ভোগ করেছে মহজোট সরকার; আর রাজনৈতিকভাবে বেকায়দায় পড়েছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট।

খোদ বিএনপির অনেক নেতাও মানেন, আট মাস পর এখন নতুনভাবে শুরু করে আন্দোলনের ব্যাপকতা সৃষ্টি করা ভীষণ কঠিন কাজ। শত শত মামলা মাথায় নিয়ে নেতা-কর্মীরা দ্বিতীয়বারের ঝুঁকি নিতে চাইবে কি না তা নিয়ে দলের ভেতরে ও বাইরে সংশয় রয়েছে। তা ছাড়া নেতা-কর্মীদেরও বদ্ধমূল ধারণা, ভৌগোলিক অবস্থানের কারণেই যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা শক্তির সমর্থন দিয়েও বিএনপির জন্য কার্যকর কিছু হবে না; ভারতের সমর্থন লাগবেই।

http://www.kalerkantho.com/print-edition/first-page/2014/10/09/137502

No comments:

Post a Comment