Thursday, October 30, 2014

আড়ম-ওনাম-ভাইফোঁটা অসুর ধম্ম পালনের লোকোৎসব Saradindu Biswas

আড়ম-ওনাম-ভাইফোঁটা অসুর ধম্ম পালনের লোকোৎসব

শরদিন্দু বিশ্বাস


ছোটবেলায় মেজকাকু গদাধরের সাথে নৌকা করে "আড়ম" বা "আড়ং"য়ে যাওয়া ছিল আমাদের জীবনের একটি অন্যতম আকর্ষণ। এই আড়ং মিলত রামদিয়াতে। বর্তমান বাংলাদেশের ওড়াকান্দি গ্রামের ঠিক পশ্চিম দিকে যে খালটি গোপালগঞ্জ থেকে কাশিয়ানী হয়ে পদ্মার সাথে মিশেছে ওই খালের পাড়েই রামদিয়া। নিজামকান্দি, মাঝকান্দি, ঘেত্তকান্দি, তারাইল, খাগাইল, নড়াইল, ঢিলাইল, সাফলিডাঙ্গা, সাতপাড়, শিঙাসুর, ঘেনাসুর, সুখতোইল, বোলতোইল এরকম কয়েকশো গ্রামের মাঝে এই রামদিয়া। ফলে রামদিয়ার আড়ং ছিল এই বিশাল অঞ্চলের মানুষের কাছে এক বাৎসরিক মিলন ক্ষেত্র শ্রেষ্ঠতম আড়ম্বর। আর এই আড়ংয়ে জনপুঞ্জের আন্তরিক আগ্রহে সাড়ম্বরে অনুষ্ঠিত হত প্রাচীন ভারতের নৌকেন্দ্রিক সভ্যতার শ্রেষ্ঠতম সাংস্কৃতিক উপস্থাপন "নাও বাইচ" বা "নৌকা বাইচ" আমাদের কাছে এই নৌকা  বাইচ দেখার একটা প্রগাঢ় আগ্রহ ছিল। বড় হয়ে ঐ নাও বাইচের একজন প্রতিনিধি হয়ে নিজেদের শৌর্য-বীর্য ও কলা-কৌশল উপস্থাপনের এক পারম্পরিক উন্মাদনা তৈরি হত আমাদের মধ্যে।


আড়মের আবহঃ  

সকাল থেকেই সাজ সাজ রব উঠত প্রত্যেকটি বাড়িতে, বাহান্দে বাহান্দে। দুপুরে খাওয়া দাওয়া শেষ করেই আমরা নতুন পোশাক পরে নিতাম। পারিবারিক নোউকাগুলি বাঁধা থাকত ঘাটে। পাশাপাশি থাকত একটি বাচাড়ি নৌকা।  মেজকাকু তাঁর সাথে যারা আড়ংয়ে যাবে তাদের সকলকে দেখে নিতেন। নাওয়ের চরাটের উপর বয়স অনুসারে সকলকে বসিয়ে দিতেন। নৌকা প্রস্তুত  হলে আমরা মা, পিসিমা আসতেন বরণকুলা নিয়ে। তেল, সিন্দুর, ধানদূর্বা দিয়ে বরণ করা হত নোউকাকে। বরণ শেষে মা তাঁর বা পায়ের হালকা ধাক্কা দিয়ে নৌকাকে একটু ভাসিয়ে দিতেন। আমাদের উদ্দেশ্যে বলতেন, "জয় করে এস"। বাচাড়ি নৌকা বরণ করতেন ঠাকুরমায়েরা কারণ ওই নৌকায় উঠতেন আমাদের জেঠামশাইয়ের নেতৃত্বে ২০-২২ জন বাছাই করা জোয়ান। বরণ শেষ হলে মেয়েরা জুয়াড় দিয়ে নৌকাগুলিকে ভাসিয়ে দিত। জ্যাঠামশাইয়ের হাতের রামদা ও ঢাল। ঝলসে উঠত সড়কি-বল্লম। কাঁসির আওয়াজ, বৈঠার টান ও বাইছাদের হেইয়া- হেইয়া রবে নিমেষে চোখের সমানে থেকে উধাও হয়ে যেত বাচাড়ি।        


নাও বাইচ আড়মের অন্যতম আকর্ষণঃ  


আশ্বিন মাসের মাঝামাঝি চারিদিকে জলমগ্ন গ্রামগুলি তখন এক একটা দ্বীপ। আমন ধান আর দীঘা ধানক্ষেতের পাশের নোলদাঁড়া দিয়ে সারিবদ্ধ ভাবে পারিবারিক নৌকা, ব্যবসায়ীক নৌকাগুলি এসে ভিড়ত রামদিয়ার খালপাড়ে। আসতো করফাই, সাম্পান, পানসি, টাবুরিয়া। আসতো বিদিরা বা বজরার মতো কিছু  শৌখিন নাও।  হাজার হাজার নৌকা নিয়ে লক্ষাধিক মানুষের সমাবেশ হত এই আড়ংয়ে। আসতো বাইচের বাচাড়ি। আমরা তাকিয়ে থাকতাম নদী বক্ষের দিকে কখন ঐ বাইচের বাচাড়িগুলি কাঁসির ছন্দবদ্ধ আওয়াজের সাথে সাথে বৈঠার ঝড় তুলে একে অন্যকে পিছনে ফেলে এগিয়ে যাবার জন্য তীব্র প্রতিযোগিতা শুরু করে এই বাচাড়িগুলির পিছেনে হাল সামলাত হালিয়া, নৌকার গুরার দুপাশে সারিবদ্ধ   ভাবে বসে থাকত বৈঠা হাতে তাগড়া জোয়ান বাইছাগণ। এদের শক্তির জোরে ও বৈঠার টানে জয় পরাজয় নিষ্পত্তি হত। সামনের দিকে থাকত ঢাল, সড়কি, লাঠি ও রামদা হাতে সেরা ঢালি বাহিনী। এ যেন ভাবি কালের জন্য কোন যুদ্ধের প্রস্তুতি অথবা প্রাচীন ঐতিহ্য ও পারম্পরিক  অভিজ্ঞতার এক গর্বিত অভিব্যক্তি। রামদা,  লাঠি, ঢাল ও সড়কির নিপুন কলাকৌশল দেখতে দেখতে একটি সহজাত সাহস আমদেরও সংক্রামিত করত। ওই  বিপুল উদ্দামতা, প্রতিকুলতার মধ্যে স্থির থেকে লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাওয়ার অদম্য আবেগে আমরাও উৎসাহিত হয়ে উঠতাম। সহজাত স্বভাবের টানেই আমদের একান্ত গভীরে সঞ্চারিত হত লোকায়িত সংস্কৃতির এক সহজপাঠ। ঐকান্তিক ইচ্ছার এই বিপুল সমারোহ এই বঙ্গ এই ভারতবর্ষের বিবর্তনের ধারাপাতের সাথে আমরা নিবিড় ভাবে একাত্ত হয়ে যেতাম ছোটবেলা থেকে।


আড়মের সাথে দুর্গা প্রতিমা বিসর্জনঃ

বাংলায় ১৫ শতকের শেষ ভাগে বাংলায় দুর্গা পূজা শুরু হয়। আর সুকৌশলে আড়মের দিনেই এই বিসর্জনের প্রক্রিয়াটিকে সংযুক্ত করা হয় যাতে দুর্গাপূজাও লোকাচারের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে যায় এবং কালক্রমে লোকাচার ও লোকোৎসবের পরিবর্তে দুর্গাপূজাই প্রধান হয়ে ওঠে। আমদের ছোট বেলাতেই দেখেছি প্রতিমা বিসর্জনের জন্য বাইচের প্রতিযোগিতাকে অনেকটাই ছেঁটে ফেলতে হয়েছে। দুর্গা প্রতিমা বোঝাই নৌকাগুলি বাইচের নৌকার গতিপথের মধ্যে ঢুকে পড়েছে এবং বাইচের আনন্দ অনেকটাই মাটি করে দিয়েছে।             


আড়ম বা আড়ং শব্দের তাৎপর্য

প্রাগার্য ভারতের অসুর ভাষার শব্দভাণ্ডারে আড়ম বা আড়ং শব্দের অর্থ প্রচুর, পর্যাপ্ত বা যথেষ্ট পরিমাণ। আড়মধোলাই, আড়ম্বর, সাড়ম্বর সব্দগুলি যে আড়ম বা আড়ং থেকে এসেছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। পুরাকালের জনবহুল গ্রাম ও গঞ্জের নামের সাথেও আড়ং শব্দটি জুড়ে আছে। কিন্তু যে অর্থে আড়মের মেলা বলা হয় তা কেবল প্রচুর বা পর্যাপ্ত অর্থের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সাংস্কৃতিক সমারোহ এবং নিশ্চিত ভাবে এই সমারোহের একটি আর্থসামাজিক উদ্দেশ্য আছে। যা বিবর্তিত হতে হতে লোকাচার ও লোকোৎসবে পরিণত হয়েছে।

যে কাল ও সময়ে আড়মের মেলা হয় সেটাও বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। কেননা শ্রাবণ, ভাদ্র ও আশ্বিনের ঝড়, ঝঞ্ঝা ও বৃষ্টি খানিকটা কেটে গেলে মানুষের জীবনে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের আশংকা অনেকটা কেটে যায়। ক্ষেতের ধানগুলো বাড়ন্ত জলকেও হার মানিয়ে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে। ভাদ্দরের প্রথম দিকে বাড়িতে আসে আউস ধান। অন্যদিকে দীঘা ধান ও আমন ধানের ক্ষেতগুলি চাষির বুক ভরিয়ে তোলে। কাজের চাপ কম। অনেকটা অবসর। প্রিয়জনদের মুখ মনে পড়ে। জানতে ইচ্ছে করে তারা কেমন আছে। জানাতে ইচ্ছে করে নিজের আশা আকাঙ্ক্ষার কথা। স্বজনের সাথে মিলিত হওয়ার এটাই উপযুক্ত কাল। জনপুঞ্জের এই একান্ত আবেগের সম্মিলিত মিলন ক্ষেত্রই আড়ম।  

সাধারণত কৃষিনির্ভর শ্রমজীবী মানুষের জীবনযাপনের জন্য যে সব সামগ্রীর প্রয়োজন তার যোগান দেয় আড়মের মেলা। মনোহারী সামগ্রীরও খামতি থাকেনা। ফলে পুরুষের সাথে সাথে নরীদের অংশগ্রহণও চোখে পড়ার মত। তবে আড়ং থেকে ঘরে ফেরার সময় পর্যাপ্ত পরিমাণ বিভিন্ন ধরণের মিষ্টির সাথে প্রচুর আখ কিনে বাড়ি ফেরে পরিবারকর্তা। চার-পাঁচদিন ধরে চলে খাওয়া দাওয়ার আয়োজন। আত্মীয় স্বজনের বাড়ি বাড়ি চলে নিমন্ত্রণের পালা। মাছ, মাংস, পিঠে, পুলীর ভরপেট আয়োজন।


আড়ম এবং ওনামঃ  


বাংলায় যে সময় আড়ম অনুষ্ঠিত হয় ঠিক একই সময় তামিলনাড়ুর সমুদ্রতটবর্তী অঞ্চল বিশেষত কেরালায় অনুষ্ঠিত হয় ওনাম উৎসব। ওনাম সম্ভবত প্রাচীন অসুর শব্দ আড়মের সংস্কৃতিকরণ। এই ওনাম উৎসবে বাইচের মতোই অনুষ্ঠিত হয় বাল্লাম কেলি (Vallum Kali)। মালাবার উপকুলের নৌপ্রতিযোগিতার সর্বাধিক প্রচলিত প্রচলিত আনন্দদায়ক খেলা। এই প্রতিযোগিতা ওনাম উৎসবের সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। ওনাম একটি কৃষি উৎসব। ফসল ঘরে তোলার পরে উপকুলের মানুষেরা আত্মীয়স্বজনের সাথে নিরলস আনন্দে মেতে ওঠে। চারদিন ধরে চলে নাচ, গান ও ভোজনের উৎসব। এর মধ্যে শ্রেষ্ঠ আকর্ষণ হল বাল্লাম কেলি। রংবেরংয়ের শতাধিক নৌকা নিয়ে আন্নামালাই, কোট্টিয়াম ও কোবালাম অঞ্চলের সাধারণ মানুষ মেতে ওঠে নৌপ্রতিযোগিতায়। কাড়া, নাকাড়া ও করতালের দ্রুত ছন্দে চলে বৈঠার টান। নৌকা বাইচের গানের মতোই বাল্লাম কেলির গানে থাকে একই ছন্দ, একই আবেগ ও একই দ্যোতনা।          

ফলে আড়ম-ওনাম, বাল্লাম কেলি ও বাইচ যে সম সংস্কৃতি সম্পন্ন জনপুঞ্জের লোকায়ত বিদ্যা সে বিষয়ে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই।


অসুর উপাখ্যান ও লোকোৎসবঃ     


অনেক লোক উৎসবের সাথে জুড়ে দেওয়া হয়েছে এক একটি পৌরাণিক কাহিনী। এই পৌরাণিক কাহিনীর বিশ্লেষণ  করলে আড়মের মেলায় যাবার জন্য প্রস্তুত নৌকাগুলিকে বরণ করার সময় মা, পিসিমা  ঠাকুরমায়েরা কেন "জিতে এস" বলতেন তার খানিকটা অর্থ বোধগম্য হতে পারে। এই পৌরাণিক কাহিনীটি ভগবত পুরানে লিপিবদ্ধ হয়েছে।  বিষ্ণু বামন রূপ ধারণ করে কী ভাবে অসুর  রাজা মহাবলীকে হত্যা করেছিল তা এই কাহিনীতে বর্ণিত হয়েছে। কে এই রাজা বলী? যিনি মহা বলী নামে খ্যাত তা জানা প্রয়োজন বলে মনে করি।  রাজা বলীর বংশ পরিচয় জানা যায় কয়েকটি পুজাণে ও রামায়ন কাহিনীতে। বিষ্ণু পুরানে বর্ণিত আছে যে অসুর রাজা হিরণ্যকাশ্যপ ছিলেন দক্ষিণ ভারতের পরাক্রান্ত রাজা। তাঁর কারণেই দক্ষিণ ভারতে ব্রাহ্মন্যবাদী শক্তির প্রসার সম্ভব হচ্ছিলনা। দেবরাজ ইন্দ্র কিছুতেই এটে উঠতে পারছিল না হিরণ্য কাশ্যপের সাথে। হিরণ্য কাশ্যপের ভাই হিরন্যাক্ষ ছিলেন আরো দুর্ধর্ষ। ফলে সম্মুখ সমরে উত্তীর্ণ না হয়ে কৌশল অবলম্বন করলেন দেবশক্তি। বিষ্ণু বরাহ রূপ ধারণ করে  হিরন্যাক্ষকে হত্যা করলেন। নিরপরাধ ভাইকে এই নৃশংস ভাবে হত্যার বদলা নিতে হিরণ্য কাশ্যপ সৈন্যবল আরো বাড়িয়ে দেবশক্তিকে পর্যুদস্ত করতে লাগলেন। ফলে ছলনার আশ্রয় নিতে হল বিষ্ণুকে। বালক প্রহ্লাদকে কবজা করে ঢুকে পড়লেন রাজ প্রাসাদে। সুজোগ বুঝে ব্রাহ্মণ সেনাপতি নরসিংহের মূর্তির ছদ্মবেশ ধারণ করে রাজা হিরণ্যকাশ্যপকে হত্যা করে তাঁর নাবালক পুত্র প্রহ্ললাদ কে সিংহাসনে বসিয়ে দেবনীতি রুপায়নের ষড়যন্ত্র শুরু করলেন। তাদের ধারনা ছিল যে এই ব্যবস্থায় প্রজারা মনে করবে যে প্রহ্ললাদই শাসন করছে। ব্রাহ্মন্যবাদ কায়েম হলে প্রহল্লাদকেও হত্যা করা হবে।   

রাজা হিরন্যকের বোন ছিলেন হোলিকা। এই ষড়যন্ত্রের কথা তিনি জানাতে পেরে যান এবং প্রহল্লাদকে বাঁচানোর জন্য তাকে নিয়ে তিনি সুরক্ষিত স্থানে চলে যান। কিন্তু  আর্য দস্যুদের কুটিল নজর এড়িয়ে যেতে তিনি ব্যর্থ হন। দস্যুরা তাঁকে ঘিরে ফেলে। তাঁকে ধর্ষণ করে। তার রক্ত নিয়ে উন্মত্ত খেলায় মেতে ওঠে দেবশক্তি এবং গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলিয়ে আগুনে পুড়িয়ে মেরে ফেলা হয় হোলিকাকে। এই প্রহ্লাদের ছেলে বিরোচনকে হত্যা করে ইন্দ্র। বিরোচনের পুত্রের নাম বলী ও কন্যার নাম মন্থরা। এই মন্থরা কিন্তু রামায়নে রামের দ্বিতীয় মাতা কৈকেয়ীর কুটিলা দাসী মন্থরা নন। ইনি রাজা মহাবলীর বোন মন্থরা। তবে রামায়নে উত্তরা কান্ডে দেখা যায় রাবণ রাজা বলীর নাতনী বজ্রজ্বালার সাথে কুম্ভকর্ণের বিবাহ দেন। এই সূত্রে কুম্ভকর্ণ মন্থরার নাতজামাই।


বলী কাহিনী ও দীপাবলিঃ  

অসুর রাজা বলী ছিলেন প্রজাপালক কল্যাণকারী রাজা। তাঁর শাসনে প্রজারা অত্যন্ত শান্তিতে বাস করতেন। দানশীল রাজা মহাবলী প্রজাদের সুখদুঃখে পাশে থাকতেন। রাজকোষ থেকে প্রচুর দান করতেন অতিথি ও প্রজাবর্গকে। এনিয়ে প্রজারা ভীষণ গর্ব বোধ করতেন। প্রাজ্ঞতা ও বলবীর্যে মহা বলীর রাজ্য ক্রমে শক্তিশালী রাজ্যে পরিণত হয়ে ওঠে। এতে বিষ্ণুর প্রভাব কমে যায়। তাই বলীর গর্ব খর্ব করার জন্য তিনি বামনের ছদ্মবেশে রাজা বলীর কাছে তিন পা জমি দান পাবার জন্য আবেদন করেন। রাজগুরু শুক্রাচার্য তিন পা জমির মধ্যে গভীর কোন ষড়যন্ত্র লুকিয়ে আছে বলে রাজাকে সতর্ক করেন। মহাবলী আপন পৌরুষ ও মর্যাদা রক্ষার জন্য তিন পা জমি দিতে রাজি হয়ে যান। আর এই সুজোগেই বামনবেশী বিষ্ণু এক পা দিয়ে সমগ্র পৃথিবী ঢেকে ফেলেন, আর এক পা দিয়ে আকাশ আচ্ছাদিত করেন এবং তৃতীয় পা কোথায় রাখবেন বলে বলীকে জিজ্ঞাসা করেন। বলী সবকিছু বামনের করায়ত্ত হয়েগেছে দেখে নিজের মাথা বাড়িয়ে দেন। আর তৃতীয় পা দিয়ে বামন বলীরাজাকে নরকে প্রথিত করেন। কিন্তু লোকায়ত কাহিনী অনুসারে তাকে হত্যা করে লুকিয়ে ফেলা হয়। যাতে প্রজা বিদ্রোহ না ঘটে তার জন্য রটিয়ে দেওয়া হয় যে  বলী নরক থেকে  বছরে একবার চার দিনের জন্য ঘরে ফিরতে পারবে। প্রচলিত ওনাম উৎসবের চারদিন সে প্রিয়জনদের সাথে মিলিত হবে। মহাবলীর এ হেন পরিণতিতে দেবসমাজে  মহা ধুমধামের মধ্য দিয়ে পালিত হয় আলোর উৎসব। এই উৎসবের নাম দীপাবলি।


ভাই ডুজ বা ভাই ফোঁটাঃ  

কিন্তু লোকসাহিত্য বা লোকগাথাগুলিতে লুকিয়ে আছে বলী রাজার অমর কাহিনী। বলী রাজার প্রজাগণ এই জঘন্য হত্যা মেনে নিতে পারেননি। বিশেষত বোন মন্থরা ঘোরতর অসন্তোষ প্রকাশ করতে থাকেন। তিনি দেবলোক ধ্বংস করে দেবার প্রতিজ্ঞা করেন।  রাজ্যের সমস্ত সৈন্যদের ভাই হিসেবে নিমন্ত্রণ করেন মন্থরা। কপালে শ্বেত চন্দনের ফোটা ও মিষ্টি খাইয়ে বাহিনীকে সাজিয়ে তোলন। যে মিষ্টিগুলি মন্থরা তৈরি  করেছিলেন তার প্রত্যেকটি ছিল এক একটি শস্ত্রের আকার। নৌবাহিনীকে সাজিয়ে তোলেন। বিষ্ণু পা দিয়ে বলীকে করেছিলেন তাই বাম পা দিয়ে নৌকা গুলিকে ধাক্কা দিয়ে মহড়ার জন্য ভাসিয়ে দেওয়া হয় বন্দরের জলে। মন্থরা তাদের উৎসাহিত করেছিলেন এই কথা বলে যে, তারাই যুদ্ধে জিতবে। মন্থরার এই যুদ্ধ প্রস্তুতি দেবকুলকে শঙ্কিত করে তোলে। দেবরাজ ইন্দ্র সসৈন্যে মন্থরাকে আক্রমণ করেন এবং হত্যা করেন। কিন্তু লোকায়ত কাহিনী অনুসারে মন্থরার এই দৃঢ় আদেশ নিয়ে শুরু হয় বাল্লাম কেলী। আজও কেরালার ছড়িয়ে থাকা সমুদ্রতট শায়িত অঞ্চলগুলিতে ওনামের চার দিন ধরে চলে বাল্লাম কেলি। বাল্লাম কেলী মালাবার উপকুলের সর্বাধিক প্রচলিত নৌকা প্রতিযোগিতা। বাংলার মা ঠাকুরমায়েদের বাইচের নৌকা  বরণের সাথে কোথায় যেন মন্থরার ওই বরণ একাত্ম হয়ে যায়। মন্থরার ওই শান্ত দৃঢ় কণ্ঠই আমরা শুনতে পেতাম আড়মের মেলাতে যাবার সময় মা ঠাকুরমার মুখে "জিতে এস"।      

মধ্য ভারতের জনসাধারণের মধ্যে বলী রাজার প্রত্যাবর্তনের সমারোহ হিসেবে পালিত হয় ভাই ডুজ বা ভাই ফোঁটা।  বছরের  এই একটি দিন ভাইয়েরা বোনের কাছে ফিরে আসে। বোনের জন্য নিয়ে আসে নতুন পোশাক। বোন একটি আসনের উপর ভাইদের বসিয়ে কপালে ফোঁটা দেয়। 

"ইনা মিনা ডিকা

ভাই কা শরপে টিকা

বহনা কহে ইয়ে মিঠাই লাও

বলী কা রাজ ফির সে লাও" এই ছড়াটি কাটতে কাটতে ভাইয়ের কপালে শ্বেত চন্দন পরিয়ে দেয়। এই ছড়ার বাংলা করলে দাড়ায়ঃ

ইনা মিনা ডিকা,

ভাইয়ের কপালে টিকা

বোন বলে এই মিঠাই খাও

বলীর শাসন ফিরিয়ে দাও।

ঘরে ঘরে বোনেরা লোকাচারের মাধ্যমে বলীর সুশাসন ফিরিয়ে আনার জন্য ভাইয়েদের এভাবে উৎসাহিত করায় প্রমাদ গোনে দেবসমাজ। তাঁরা আবার পৌরাণিক কাহিনীর মধ্যে যম ও যমুনার গল্প ঢুকিয়ে দিয়ে এই বিশাল অঞ্চলের লোকাচারকে ব্রাহ্মন্যবাদী ধারায় প্রবাহিত করার চক্রান্ত শুরু করে। রচিত হয় ভাই ফোঁটার ছড়াঃ

"ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা

যম দুয়ারে পড়ল কাঁটা

যমুনা দেয় যমকে ফোঁটা

আমি দিই আমার ভাইকে ফোঁটা"।


মানুষ যুক্তিবাদী ও সুশিক্ষিত হলে ব্রহ্মন্যবাদ টেকেনাঃ  

ব্রাহ্মন্যবাদ বা দেবসমাজের রচিত কল্পকাহিনীগুলি থেকে একটি বার্তা আমাদের কাছে প্রকট হয়ে ওঠে যে, যখন যখন ভারতে ব্রাহ্মন্যবাদের উপর আক্রমণ এসেছে তখন তখন প্রলয়, সংকট, জিঘাংসা, নৃশংসতা, যুদ্ধ বা গুপ্ত হত্যার আশ্রয় নিয়েছে ব্রাহ্মণসমাজ। ঈশ্বরের নামে, ধর্মের নামে চালিত করা হয়েছে এই সব নরহত্যার জঘন্য ঘটনাগুলিকে। রচিত হয়েছে অবতার কাহিনী। ইতিহাস ধ্বংস করে রচিত হয়েছে মিথ। এই মিথ মিথ্যার বেসাতি কিনা তা কালে বিচার হবে।  তবে এই কল্প কাহিনীগুলিকে চোলাইয়ের মত  গেলাতে  গেলাতে ইতিহাস বানানোর চেষ্টা করা হয়েছে। ব্রাহ্মণসমাজ যে কতটা নৃশংস তা তাদের সৃষ্ট দেব দেবীদের ছবি দেখলেই স্পট বোঝা যায়। আর এই সব দেব দেবীর ভিত্তি হল আজগুবি পৌরাণিক কাহিনীগুলি। অর্থাৎ একথা স্পষ্ট যে বিজ্ঞানের আলোকে ইতিহাসের পর্যালোচনা করলে ব্রাহ্মন্যবাদী আজগুবি তত্ত্বগুলি প্রচুর হাস্যরসের খোরাক যোগায়। প্রজ্ঞা ও যুক্তিবাদের কাছে ধোপে টেকেনা ব্রাহ্মন্যবাদ। এটি কেবল মাত্র টিকে থাকে অজ্ঞতা ও  কুসংস্কারের মধ্য দিয়ে। হিংসা, বীভৎসতা, বিচ্ছিন্নতা, নৃশংসতা, নারীর প্রতি অবমানতা ও কদর্যতার জন্য পৃথিবীর কোথাও ব্রাহ্মন্যবাদের প্রসার ঘটেনি। গায়ের জোরে যেটুকু প্রসারিত হয়েছিল তাও সংকুচিত হতে হতে প্রাদেশিকতায় পরিণত হয়েছে। মানুষ আরো শিক্ষিত হলে, দেশের ও জনগণের আরো আর্থিক সয়ম্ভরতা এলে এই সংকোচন আরো বাড়বে এবং কালে কালে বিলোপ সাধন ঘটবে এই কলঙ্কিত মতবাদের। কিন্তু বিবর্তনের নতুন নতুন বাঁকে এসে শ্রম ও উৎপাদনের সাথে সম্পৃক্ত জনপুঞ্জের মধ্যেই মানবিক কারণেই বেঁচে থাকবে আড়ম, ওনাম, ভাইফোঁটা, নাওবাইচ, বাল্লাম কেলীর মত লোকাচার ও লোকসংস্কৃতি। 

Thursday, October 23, 2014

উন্নয়ন সেকি শুধু টাকার খেলা,যেখানে সভ্যতা সংস্কৃতির আলো নিষিদ্ধ? বাড়ি কি এখন শুধুই বাজার? আমি চাইনা এই মুক্ত বাজার। সেই হিমালয় আর হিমালয় নেই। সেখানেও র্ক্তনদীর প্লাবন। পর্কৃতিতে অকসিজেন নেই। উত্তরাখন্ডের বাঙালিরা অনেকেই এখন কোটিপতি। কিন্তু তাঁরা কতটা বাঙালি আছেন এখনো , জানিনা। পলাশ বিশ্বাস

উন্নয়ন সেকি শুধু টাকার খেলা,যেখানে সভ্যতা সংস্কৃতির আলো নিষিদ্ধ? বাড়ি
কি এখন শুধুই বাজার?
আমি চাইনা এই মুক্ত বাজার।
সেই হিমালয় আর হিমালয় নেই।
সেখানেও র্ক্তনদীর প্লাবন।
পর্কৃতিতে অকসিজেন নেই।
উত্তরাখন্ডের বাঙালিরা অনেকেই এখন কোটিপতি।
কিন্তু তাঁরা কতটা বাঙালি আছেন এখনো , জানিনা।

পলাশ বিশ্বাস


সাত বছর পর উত্তরাখন্ডে বাঙালি উদ্বাস্তু উপনিবেশ দিনেশপুরে ফিরে নিজেকে
আউটসাইডার মনে হচ্ছে।

বাসন্তীপুরে নেজির বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আমি এবং সবিতা থ,নিজের বাড়িই
চিনতে পারছি না।

কাঁচা মাটির দেওয়ালে গাঁথা গাছ গাছালিতে ভরা বাড়ি আর নেই।
ভাইপো টুটুল পাকাবাড়ি বানিয়েছে দোতলা।

দিনেশপুরে আশেপাশের সব গ্রাম এখন দিনেশপুর শহরের মধ্য়ে।

ছত্রিশ বাঙালি গ্রামের আশে পাশে প্রতিটি উদ্বাস্তু গ্রামের পাশে আরও অনেক
বাঙালি গ্রাম।

পুরাতন উদ্বাস্তু কলোনি এবং একাত্তরের পরে যারা এসেছেন ,তাঁরা সকলেই তরাই
অন্চলে জম জায়গা খুইয়ে পরিবর্তে লাখোলাখ টাকা নিয়ে বাড়ি গাড়ি হাঁকিয়ে
প্রতেকেই মহারাজা।

তাঁরা এখন আমায় চিনতে ও পারছেন না।

বাঙালি গ্রামগুলির বুকে এক এক গজিয়ে উঠছে কল কারখানা,নলেজ ইকোনামির নানা
রং বেরং প্রতিষ্ঠান,শপিং মল,হাসপাতাল,আবাসিক কলোনি,বাজার আরো বাজার।

কাল গিয়েছিলাম রুদ্রপুর ট্রান্জিট ক্য়াম্পে,যেখানে এক একড় জমি বিক্রি
করে এক কোটি টাকা পেয়ে প্রত্যেকটি পরিবারই কোটিপতি।

তাঁদের পুনর্বাসনের লড়াই লড়েছেন বাবা,সঙ্গে যতদিন পেরেছি থেকেছি আমি।

সেই ছোটবেলা থেকে প্রতিটি পরিবারে আমার আনাগোনা।
আমি ছিলাম তাঁদের নয়নের মণি।

আজ তাঁরা আমায় চিনবেন না।

আমি কোন ছার ,যে রবীন্দ্রনাথ, নেতাজি, বন্কিম, শরত,
বিবেকানন্দ,নজরুল,ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের পরিচয়ে পাহাড়ে তরাইয়ে তাঁরা
পরিচিত ছিলেন একদা,সেই তাঁদেরও ভুলেছেন তাঁরা।

তাঁরা ভুলেছেন রবীন্দ্র সঙ্গীত,ভুলেচছেন নজরুল সঙ্গীত,অধিকাংশই বাংলায়
কথা বলতে পারেন না।

তাঁরা ভুলেছেন তাঁদের সংগ্রামের,জমির লড়াইয়ের ইতিহাস,ভুলেছেন পুলিনবাবুকে।

যে মুর্তি তাঁরা পুলিনবাবুর গড়েছিলেন,সেই মুর্তির এখন হাত ভাঙ্গা।
আমার ভাইঝি নিন্নি বলল,দাদুর হাতে ফ্রাক্চার।
সব মুর্তিই গড়া হয় বিসর্জনের জন্য়।
আমাদের আবেদন পুলিনবাবুর মুর্তিখানিও বিসর্জনে যাক।
তাঁকে মুক্তি দিলেই হয়।
এই বাঙালি উপনিবেশে পুলিনবাবূ মরেছেন তেরো বছর আগে,তাঁকে বাঁচিয়ে রাখার
প্রয়োজন নেই যখন এই বাঙালি উপনিবেশে বাঙালিয়ানা বলতে দুর্গোত্সব আর
কালিপুজো ছাড়া কিছুই বেঁচে নেই।
বাঙালি গ্রাম একের পর এক কারখানা হয়ে যাচ্ছে।
আমার গ্রাম এখনো বেঁচে আছে,আগামি বার ফিরব যখন,তখন হয়ত দেখতে পাব আমার
গ্রাম বাসন্তীপুরও আস্ত একটি বাজার বা একটি কারখানা।
এই বাজারে আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়।
আমি চাইনা এই মুক্ত বাজার।
সেই হিমালয় আর হিমালয় নেই।
সেখানেও র্ক্তনদীর প্লাবন।
পর্কৃতিতে অকসিজেন নেই।
উত্তরাখন্ডের বাঙালিরা অনেকেই এখন কোটিপতি।
কিন্তু তাঁরা কতটা বাঙালি আছেন এখনো ,জানিনা।
একজন এমবিবিএস ডাক্তার হচ্ছেনা।
একজন অফিসার হচ্ছে না।
একজন প্রোফেসার হচ্ছে না।
একজন শিল্পী হচ্চে না।
একজন সাহিত্যিক হচ্ছে না।
একজন সাংবাদিক হচ্ছে না।
তবে টাকা হয়েছে প্রচুর।
টাকার গরম হয়েছে প্রচুর।
পরিবর্তে স্বজন হারিয়েছি আমরা।
শহরে কারখানায় আমরা শ্রমজীবী বাঙালি হয়ে রয়েচি।
উন্নয়ন সেকি শুধু টাকার খেলা,যেখানে সভ্যতা সংস্কৃতির আলো নিষিদ্ধ? বাড়ি
কি এখন শুধুই বাজার?

Tuesday, October 14, 2014

আমাদের মধ্যে আর নেই সংসদে হরিবোল করা মতুয়া সঙ্ঘাধিপতি কপিল কৃষ্ণ ঠাকুর



আমাদের মধ্যে আর নেই সংসদে হরিবোল করা মতুয়া সঙ্ঘাধিপতি কপিল কৃষ্ণ ঠাকুর

পলাশ বিশ্বাস


আজ সকালের কাগজ পড়েই মাথায হাত

জানতাম তিনি অসুস্থ,কিন্তু তাঁর কর্মক্ষমতার সঙ্গে খানিকটা পরিচিত,তাই বার্ধক্যের হানা এবং দীর্ঘ অসুস্থতা সত্বেও আশা করেছিলাম তিনি আবার সুস্থ হয়ে উঠবেন


তিনি বনগাঁর সাংসদ কপিল কৃষ্ণ ঠাকুর মতুয়া মহাসংঘের বড়মা বীণাপাণি দেবীর বড় ছেলে তিনি। গত তিন মাস ধরে ভুগছিলেন জনডিসে। দিল্লির দুটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিত্‍সার পর আজ সকালে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। দুপুর সাড়ে বারোটা নাগাদ তাঁর জীবনাবসান হয়। বয়স হয়েছিল আটাত্তর ।


ভারতের পশ্চিমবঙ্গের  বনগাঁ কেন্দ্রের সাংসদ কপিল কৃষ্ণ ঠাকুর প্রয়াত হলেন। কোলকাতার একটি বেসরকারি নার্সিং হোমে তিনি আজ (সোমবার) মারা যান।


মৃত্যুর খবর পেয়েই  হাসপাতালে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। হাসপাতালে যান মুকুল রায়, মদন মিত্র, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক সহ  তৃণমূলের নেতা কর্মীরা।  শেষ শ্রদ্ধা জানাতে মঙ্গল ও বুধবার ঠাকুরনগরে রাখা থাকবে তাঁর দেহ। বৃহস্পতিবার তাঁর অন্ত্যেষ্টি ।


Mamata Banerjee

21 hours ago

I am deeply pained at the untimely passing away of Kapil Krishna Thakur, our MP from Bongaon and Head of Matua Mahasangha.


We are with his family and my brothers and sisters of Matua Community at this moment of grief.


May the departed soul rest in peace.



মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল  আটাত্তর বছর। তিনি চলতি বছরের মে মাসে তৃণমূল কংগ্রেসের টিকিটে বনগাঁ (তপশিলি) সংরক্ষিত কেন্দ্রে এমপি নির্বাচিত হন।  



তিনি সারা জীবন বামপন্থী ছিলেন এবং হঠাত লোকসভা ভোটের আগে তৃণমুলে গিযে বাবা প্রমথ রন্জন ঠাকুরের মতই সংসদে গিয়ে হরিবোল জযধ্বনে দিয়েছিলেন


প্রচলিত সংবাদ মাধ্যমের মত,ভাটব্যান্কের অন্ক নিযে আমার মাথা ব্যথা নেই

তিনি মতুয়া সঙ্ঘাধিপতি ছিলেন


পূর্ব বাংলার পূর্ব পুরুষদের মতুয়া আন্দোলনের তিনিই শেষ  ধ্বজাবাহক, সেনাধিপতি মতুয়া বাহিনীর


তিনি মতুয়া আন্দোলনকে কোথায় রেখে গেলেন,সেই চিন্তাটাই সবচেয়ে বড়

শেষপর্যন্ত বাংলার জাতি ধর্ম নির্বিশেষ কৃষক আন্দোলনের মূল প্রতিনিধিত্ব ক্ষমতার রাজমনীতিতে হারিয়ে গেলেই সাঢ়ে সর্বনাশ,হরিচাঁদ গুরুচাঁদ মতাগদর্শের মানুষদের এ কথাটি মনে রাখতে হবে।  


পিআর ঠাকুরের সঙ্গে ঠাকুরনগরে বাবার সঙ্গে গিয়ে একাবর মাত্র দেখা হয়েছিল সেই 1973 সালে,মানুষটি তখন সাংসদ ছিলেন না বোধ হয়,কিন্তু তাঁকে কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয নি।  


আমার জেঠিমার মা,আমার দিদিমা ঔ ঠাকুর বাড়িরই মেয়ে,কপিল কৃষ্ণ ঠাকুর কথাটি মনে রেখেছিলেন,এবং সেই সূত্রে আমার মতামতকতে গুরুত্বও দিতেন,আমার সৌভাগ্য।  


ষাটের দশকে বড়মাকে নিয়ে তিনি বাসন্তীপুরে আমাদের বাড়িতে গিয়েছিলেন এবং ঠাকুরনগরে যখন সবিতা আর আমি যাই শেশবার,সেকথা তিনি মনেও করেছিলেন।  


তবূ সেবার তিনি বলেছিলেন আম্বেডকরকে নিয়ে কোনো আলোচনা করব না

কিন্তু তারপর চন্দ্রপুরে যাই,ত তিনি মতুয়া কেন্দ্রের বাইরে অপেক্ষা করছিলেন

বাহালি উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্বের আন্দোলনে তাঁ পুরোদম সমর্থন ছিল এবং এই প্রসঙ্গেই সেবার তাঁর সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছিল।  


তারপর তিনি ক্ষমতার অলিন্দে কোথায় ধরা ছোঁযার বাইরে চলে গেলেন,আর যোগাযোগ হইনি,তবু তাঁর স্বচ্ছ ভাবমুর্তি ও আন্তরিকতার ছবি এতটুকু ম্লান হয়নি কোনো দিন।  


আজ তাঁকে হারানোর খবর বড়ই বেদনাদাযক।  


সেই কবে ষাটের দশকে তিনি বাসন্তীপুর গিয়েছিলেন এবং ঘটনাচক্রে আজ আবার আমি বাসন্তীপুর যাচ্ছি দীর্ঘ সাত বছর পর,সেখানকার মাটিতে তাঁর পরশ পাইকি না দেখবো।  


পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, কপিলকৃষ্ণ বাবু বার্ধক্যজনিত কারণে কিছুদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। তা ছাড়া তিনি জণ্ডিসেও ভুগছিলেন। তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন বনগাঁর বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস। তিনি জানান, 'তার মৃত্যুতে  দলের অপূরণীয় ক্ষতি হল। তিনি হঠাৎ করে এভাবে চলে যাবেন আমরা বুঝতে পারিনি। এছাড়া কপিল বাবু মতুয়া মহাসংঘের  সংঘাধিপতি ছিলেন। সমস্ত মতুয়া ভক্তের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি।'   

গত মে মাসে লোকসভা নির্বাচনের সময় ঠাকুর নগরের ঠাকুর বাড়ি তথা মতুয়া সম্প্রদায়ের প্রতি সম্মান জানাতে বনগাঁ কেন্দ্রে কপিল কৃষ্ণ ঠাকুরকে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।


বিশেষ করে কপিল বাবুর মা তথা সব মতুয়া ভক্তের শ্রদ্ধাভাজন বীণাপাণি ঠাকুরের (বড় মা) প্রতি  ভালবাসার নিদর্শন হিসাবে  মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কপিলকৃষ্ণ ঠাকুরকে এমপি করবেন বলে মনস্থির করেন।  


এমপি নির্বাচিত হওয়ার তিন মাসের মধ্যেই গত ১ সেপ্টেম্বর তিনি শ্রম বিভাগের স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য হয়েছিলেন।

কপিল কৃষ্ণ ঠাকুরের  ছোট ভাই মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুর  বর্তমানে  পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উদ্বাস্তু পুনর্বাসন দফতরের মন্ত্রী।  

কপিল কৃষ্ণ ঠাকুরের প্রয়াত বাবা প্রমথরঞ্জন ঠাকুর বা পিআর ঠাকুরও ১৯৬২ সালে বিধান চন্দ্র রায়ের মন্ত্রীসভায় উপজাতি কল্যাণ দফতরের রাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন। দু'বার বিধায়কও হয়েছিলেন তিনি। ১৯৬৭  সালে তিনি নবদ্বীপ লোকসভা কেন্দ্র থেকে এমপি নির্বাচিত হন।  

প্রয়াত এমপি কপিল কৃষ্ণ ঠাকুর মতুয়া মহাসংঘের প্রধান ছিলেন। তার  মৃত্যুর খবর ছড়াতেই অসংখ্য ভক্ত অনুরাগী ভিড় জমিয়েছেন গাইঘাটার ঠাকুর নগরের ঠাকুর বাড়িতে। তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর জন্য বহু তৃণমূল নেতা কর্মীরা  ভিড় করে রয়েছেন তার বাসভবনে। সকলেই তার পার্থিব দেহ কোলকাতা থেকে আসার অপেক্ষায় রয়েছেন।#



RIP Kapil Krishna Thakur - Trinamool MP and Matua scion

October 13, 2014


Trinamool Congress Lok Sabha MP Kapil Krishna Thakur (78) breathed his last today in a city hospital. He was one of the scions who had from a very early life fought for upliftment and social welfare of the Matua community. He is survived by his wife.

He was the elder son of Binapani Debi Thakurani (Baroma), the leader of Matua community and great grandson of Shri Shri Guruchand Thakur. He had been the Sanghadhipati of Matua Mahasabha.

Kapil Krishna Thakur had been elected from the Bongaon constituency in the 2014 Lok Sabha elections, defeating his nearest rival by almost one and a half lakh votes.

After being elected as MP, he was a Member of the Standing Committee on Labour.

A graduate of the Calcutta University, he had been a recipient of the prestigious Sri Sri Thakur Harichand-Guruchand prize for his sustained work among the Matuas to uplift them.

---

তৃণমূল লোকসভা সাংসদ শ্রী কপিল কৃষ্ণ ঠাকুর আজ কলকাতায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।  বর্তমানে তাঁর স্ত্রী জীবিত। তিনি মতুয়া সঙ্ঘমাতা বীণাপাণি দেবী ঠাকুরের (বড়মা) বড় ছেলে এবং শ্রী শ্রী গুরুচরণ ঠাকুরের প্রপৌত্র।

তিনি বনগাঁর মনিগ্রাম হাই স্কুল থেকে পাশ করার পরে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হন। তিনি জীবনের প্রথম থেকেই বনগাঁর মতুয়া সম্প্রদায়ের সামাজিক উন্নয়নের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি বনগাঁয় বহু উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন।

কপিল কৃষ্ণ ঠাকুর মতুয়া সঙ্ঘের একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন। মতুয়া গোষ্ঠীর উন্নয়নের জন্য তিনি শ্রী শ্রী ঠাকুর হরিচন্দ্র-গুরুচন্দ্র পুরস্কার পেয়েছিলেন।


संविधान बचाओ देश बचाओ देशभक्तोंं


Monday, October 13, 2014

हिंदुत्व का कारोबार: आनंद तेलतुंबड़े

हिंदुत्व का कारोबार: आनंद तेलतुंबड़े


Posted by Reyaz-ul-haque on 10/12/2014 08:09:00 PM

 
हाशिए की आवाज स्तंभ के तहत समयांतर के अक्तूबर, 2014 अंक में प्रकाशित. अनुवाद:रेयाज उल हक

आनंद तेलतुंबड़े
 

नरेंद्र मोदी ने स्वतंत्रता दिवस के दिन लालकिले की प्राचीर से लोगों से जातिवाद, सांप्रदायिकता और क्षेत्रीयतावाद को दस साल तक स्थगित रखने के लिए बड़ी जोशीली अपील की, लेकिन इसके बावजूद उनके कुनबे की सांप्रदायिक हरकतें कम नहीं हो रही हैं. अपील के उलट, हाल में नौ राज्यों में उपचुनावों के प्रचार अभियान दौरान ये हरकतें इस घटिया स्तर तक पहुंच गईं, कि लोगों को लगने लगा कि भाजपा ने दोमुंहेपन और बेईमानी का अपना पुराना खेल फिर से शुरू कर दिया है. इसने विवादास्पद सांसद योगी आदित्यनाथ को भाजपा के प्रदेश अध्यक्ष लक्ष्मीकांत वाजपेयी और केंद्रीय मंत्री कलराज मिश्र के साथ उत्तर प्रदेश में 11 विधानसभा सीटों और एक लोकसभा सीट के उपचुनाव की कमान सौंप दी. गोरखपुर से पांचवीं बार सांसद बने, भगवा कपड़े में लिपटे इस नौजवान योगी ने बड़े कम वक्त में इतनी बदनामी हासिल कर ली है कि वह भाजपा का हिंदुत्व का चेहरा बन गया है. मोदी के भाषण के महज दो दिन पहले, उसने संसद के भीतर सांप्रदायिक जहर उगलते हुए इस बात पर जोर दिया कि हिंदुओं को अल्पसंख्यकों के खिलाफ एकजुट होने की जरूरत है. गृह मंत्री राजनाथ सिंह इस पर सहमति में सिर हिला रहे थे. भाजपा के प्रवक्ता सुधांशु त्रिवेदी के मुताबिक योगी को सोच-समझ कर उत्तर प्रदेश में भाजपा के अभियान के चेहरे के रूप में चुना गया था. यह बहुत साफ था कि भाजपा सांप्रदायिक रूप से लोगों को बांटना चाहती थी, मानो लोकसभा चुनावों के दौरान अमित शाह ने बड़ी महारत से जो किया था, वह कुछ कुछ उसे दोहराना चाहती थी.

मैंने पिछले स्तंभ में यह चेतावनी दी थी कि अगर हिंदुत्व ब्रिगेड की घटिया बदमाशियों को समय रहते काबू में नहीं किया गया तो वे भाजपा के लिए आत्मघाती साबित होंगी. उपचुनावों के नतीजों ने इसे सचमुच दिखा भी दिया. जिन नौ राज्यों की 32 सीटों पर उपचुनाव हुए उनमें से 26 सीटें भाजपा के पास थीं जिसे महज चार महीने पहले राष्ट्रीय चुनावों में शानदार जीत भी हासिल हुई थी. लेकिन उपचुनावों में वह महज 12 सीटें बचा पाई. सबसे तगड़ा झटका यूपी में लगा जहां अपने चुने हुए प्रचारक आदित्यनाथ के नेतृत्व में इसने 11 में 7 सीटें खो दीं. इसके बाद राजस्थान और गुजरात की बारी थी, जहां इसे लोकसभा चुनावों में पूरी तरह एकतरफा जीत हासिल हुई थी, वहीं उपचुनावों में दोनों राज्यों में 3-3 सीटों का नुकसान उठाना पड़ा. इस हार ने संघी शिविर की बेबुनियाद उन्माद की हवा तो निकाली ही, इसने यह संकेत भी दिए कि भाजपा की भारी जीत के बावजूद इसका मुख्य जनाधार पहले के चुनावों की तरह अब भी करीब 22 फीसदी के आसपास ठहरा हुआ है. आम चुनावों में निर्णायक अंतर पहली बार वोट डाल रहे 4 करोड़ मतदाताओं की वजह से आया था, जो भाजपा की विकास संबंधी लफ्फाजी और रणनीतिक रूप से छिपा कर रखे हुए हिंदुत्व की वजह से उसकी तरफ आकर्षित हुए थे. उपचुनावों ने साफ तौर से यह जाहिर किया कि उन्होंने भाजपा की सांप्रदायिक राजनीति को नकारा है. अगर भाजपा इसे नजरअंदाज करेगी तो वह खुद अपनी कब्र खोदेगी, लेकिन जिस मुद्दे पर इसे जरूर ही आत्मविश्लेषण करना चाहिए, वह यह है कि इसका सांप्रदायिक मुद्दा भविष्य के लिए कितना व्यावहारिक है.

हिंदुत्ववादी हेराफेरी

दूसरे अनगिनत मुद्दों पर भाजपा के लफ्फाजी से भरे हुए दिखावे के बावजूद, अपने मातृ संगठन आरएसएस से विरासत में हासिल किया हुआ हिंदुत्व इसकी बुनियादी विचारधारा है. संघ परिवार इसके बारे में चाहे जितनी गोल-मोल बातें, हिंदुत्व और कुछ नहीं बल्कि ऊंची जाति के कुलीनों द्वारा अपने नस्ली प्रभुत्व को फिर से हासिल करने की योजना है. भारत अंतर्विरोधों की जमीन है, जहां सबसे जमीनी स्तर पर भाषा अपने अर्थ खो देती है, जहां आजादी का मतलब गुलामी हो सकता है, जहां साम्राज्यवाद का मतलब साम्राज्यवाद-विरोध हो सकता है, जहां स्वराज का मतलब बंधुआगिरी हो सकती है और राष्ट्रीय का मतलब राष्ट्र-विरोधी हो सकता है. इसमें और भी चीजें जुड़ सकती हैं, जो इस पर निर्भर करता है कि आप किस जातीय समूह से जुड़े हुए हैं. 1818 में पेशवाई के पतन ने पुणे के चितपावनों को भारी सदमा पहुंचाया, जिसने उनमें से अनेक को ब्रिटिशों के खिलाफ हथियार उठाने को प्रेरित किया. पारंपरिक रूप से इसे एक साम्राज्यवाद-विरोधी और क्रांतिकारी कदम माना जाता था, लेकिन असल में यह एक साम्राज्यवादी और प्रतिक्रियावादी कदम था, जिसे उन्होंने बुनियादी तौर पर अपना खोया हुआ राज हासिल करने के लिए उठाया था. क्योंकि अगर वे साम्राज्यवाद-विरोधी होते तो यकीनन उन्होंने अपनी दो तिहाई जनता के  हर कदम पर होने वाले जातीय उत्पीड़न पर गौर किया होता. 'हिंदुत्व' के जनक विनायक दामोदर सावरकर इन 'वीर क्रांतिकारियों' में आखिरी थे, जिन्होंने अपने लोगों को संगठित होने और उनके सपनों के लिए काम करने का विचारधारात्मक आधार मुहैया कराया. इसमें उनका 'अन्य' मुसलमानों और ईसाइयों को बनना था, जो मुख्यत: निचली जातियों से आते हैं. 1920 के दशक में महाराष्ट्र में दलितों के जो शुरुआती आंदोलन उभरे, उनसे पैदा हुए संभावित खतरे ने भी उनको संगठन के एक फासीवादी स्वरूप में संगठित होने की तरफ धकेला. इस तरह आरएसएस पैदा हुआ.

यूरोप का फासीवाद और नाजीवाद उनकी प्रेरणा रहे हैं. गोलवलकर के विचार-रत्नों की एक झलक देखने भर से पता चलता है कि वे कितने खतरनाक और छल-कपट से भरे हैं. यह महसूस करते हुए कि वे व्यापक जनता का 'ब्राह्मणवादीकरण' किए बिना आगे नहीं बढ़ सकते, इसलिए उन्होंने अनेक ऐसे संगठनों का एक फंदा बनाया, जो ज्यादातर सामाजिक समूहों की जरूरतों को लगातार पूरा करता रह सकता था. इस तरह समय बीतने के साथ, वे आदिवासियों, दलितों और पिछड़ी जातियों के बड़े तबकों का ब्राह्मणवादीकरण करने में कामयाब रहे. एक तरफ जबकि दूसरी छोटी दलित जातियां आसानी से ही इस फंदे में आ गईं, अब तक ब्राह्मणवाद के कटु आलोचक रहे आंबेडकर के अनुयायियों को सामाजिक समरसता मंच के जरिए इस जाल में फांसा गया. आज भाजपा की झोली में सबसे ज्यादा अनुसूचित जातियों/जनजातियों के सांसद और विधायक हैं. एक तरफ जबकि संघ परिवार को अपनी ऐसी चालबाजियों में कामयाबी इत्तेफाक से इसके लिए अनुकूल, नवउदारवादी दौर में हासिल हुई है, वहीं इसके भीतरी अंतर्विरोध भी इस तरह विकसित हुए हैं, कि वे उसके उभार और अस्तित्व को सीमित कर रहे हैं. इसे यह महसूस नहीं होता है कि ये अंतर्विरोध बुनियादी रूप से उसकी विचारधारात्मक उद्देश्य की अस्पष्टता से पैदा हुए हैं. हिंदू, हिंदूवाद, हिंदुत्व, हिंदुस्तान: इसकी यह पसंदीदा शब्दावली असली लग सकती है, लेकिन बुनियादी रूप में ये अवास्तविक और धुंधली है. उनका न तो इतिहास में कोई वजूद था और न ही कहीं और.

हिंदू, हिंदुत्व, हिंदुस्तान

संघ के मुखिया मोहन भागवत का तरीका दो अलग अलग चीजों को बेहद सरलीकृत तरीके से आपस में जोड़-तोड़ कर उनसे एक मनमाना नतीजा निकालने का है. इसके तहत वे कहते हैं कि भारत हिंदुस्तान था, हिंदुस्तान के लोग हिंदू हैं और इस तरह भारत हिंदू राष्ट्र है. उन्हें शायद ही यह बात समझ में आई हो कि उन्होंने न केवल एक बेवकूफी की बात कह दी है, बल्कि वे जिस डाल पर बैठे हैं उसी को काट रहे हैं. क्योंकि इसका सीधा मतलब यह है कि अगर भारत पहले से ही एक हिंदू राष्ट्र है, तो उनका अभियान तो पूरा हो चुका है और इसलिए अब उन्हें अपनी दुकान बंद कर देने की जरूरत है. कोई भी देख सकता है कि संघ परिवार के पूरे अभियान की जड़ें या तो अज्ञानता में धंसी हुई हैं या फिर झूठ-फरेब में. जिस पहचान पर वे इतराते फिरते हैं, वो अपने सबसे बेहतरीन रूप में विदेशियों द्वारा दिया हुआ नाम है और बदतरीन रूप में एक अपमानजनक संबोधन है. इनमें से पहली स्थिति के मुताबिक, हिंदू शब्द फारसी लोगों द्वारा स का गलत उच्चारण करते हुए उसे ह कहने से पैदा हुआ, जो सिंधु नदी के पार रहने वाले लोगों के बारे में बताना चाहते थे. हालांकि यह एक लोकप्रिय धारणा है, लेकिन इसमें आलोचनात्मक नजरिया नहीं है और इसकी पुष्टि मुमकिन नहीं, क्योंकि फारसी भाषा में अनगिनत ऐसे शब्द हैं जो स से शुरू होते हैं (मसलन शिया, सुन्नी, शरीअत, साहिर, सरदार) और उनको सही-सही बोला जाता है. फारसी और तुर्क लोगों ने जिन अर्थों में हिंदू शब्द का इस्तेमाल किया है, वे अर्थ उनके शब्दकोशों में मिलते हैं और वे भागवत और उनके संघ परिवार के लिए भारी शर्मिंदगी का कारण बन सकते हैं. उन शब्दकोशों में हिंदू का मतलब चोर, डकैत, रहजनी करने वाला, गुलाम, हुक्म मानने वाला नौकर और काली चमड़ी वाला भी होता है, जैसा कि हिंदू-ए-फलक का मतलब 'आसमान और शनि का कालापन' से जाहिर होता है. हिंदू शब्द के अपमानजनक होने का एक और पता 'हिंदू कुश' से चलता है, जो मध्य एशिया की सरहद पर स्थित पर्वतीय श्रृंखला है और जिसका मतलब हिंदुओं का हत्यारा है. इनमें से चाहे जो भी मामला हो, यह शब्द संस्कृत में या भारत की किसी भी स्थानीय बोली और भाषा में नहीं मिलता. 


हिंदू का कभी भी कोई धार्मिक मतलब नहीं था. प्राचीन फारसी कीलाक्षर शिलालेख और जेंद आवेस्ता, हिंदू शब्द का हवाला किसी धार्मिक नाम के बजाए एक भौगोलिक नाम के रूप में देते हैं. जब फारस के राजा डेरियस प्रथम ने 517 ईसा पूर्व में भारतीय उपमहाद्वीप की सरहद तक अपनी सल्तनत का विस्तार किया, तो प्राचीन फारसी लोगों ने भारतीय उपमहाद्वीप के लोगों का जिक्र 'हिंदू' कह कर किया था. प्राचीन यूनानी और आर्मेनियाई लोगों ने भी यही उच्चारण अपनाया और इस तरह यह नाम चल पड़ा. जब बात हिंदूवाद की आई तो तिलक और राधाकृष्णन जैसे नायकों ने जो परिभाषा पेश की वह कोई परिभाषा ही नहीं थी. उसमें उन्होंने असल में हर चीज शामिल कर दी थी. आखिर में यह मामला सर्वोच्च न्यायालय के पास आया, जिसे फैसला करना था कि हिंदूवाद क्या है. उसने 1966 में और फिर 1955 में इस पर फैसला दिया भी. स्वामीनारायण (1780-1830) के अनुयायियों द्वारा दायर किए गए मामले में उन्होंने दावा किया था कि वे लोग हिंदू नहीं हैं. ऐसा उन्होंने 1948 बॉम्बे हरिजन (टेंपल एंट्री) एक्ट को चुनौती देने के लिए किया था, जो दलितों को सभी मंदिरों में दाखिल होने का अधिकार देता है. इस मामले में सुप्रीम कोर्ट ने राधाकृष्ण और कुछ यूरोपीय लोगों द्वारा दी गई परिभाषाओं का हवाला देते हुए, हिंदूवाद को इसकी सहिष्णुता और सबको मिला कर चलने के आधार पर परिभाषित किया. यह दिलचस्प बात है कि इसके पीछे असल में कुछ हिंदुओं द्वारा दूसरे हिंदुओं (दलितों) को अपने मंदिरों से बाहर रखने की इच्छा थी. संघ परिवार के दावों के उलट भारत में हरेक के हिंदू होने (या उसे हिंदू होना चाहिए) की बात कभी भी सच नहीं थी. वह सदियों पहले सिंधु घाटी और वेदों के दौर में सच नहीं थी, वह उत्तर भारत में शुरुआती आबादियों के बसने के बाद भी भारत के ज्यादातर हिस्सों के लिए सही नहीं थी, और यह बौद्ध धर्म के उदय के बाद तो यकीनन ही कभी सही नहीं रही.

भारत का विचार

यही मौका है जब संघ परिवार अपनी खामखयाली से बाहर आए और इतिहास के कुछ कठोर तथ्यों को समझे. वे जिस देश पर गर्व करने का नाटक करते हैं, उसे इंडिया या भारत कहा जाता है, हिंदुस्तान नहीं. यह उपनिवेशवादियों की देन है, यह अपनी इस शक्ल और आकार में इससे पहले कभी भी वजूद में नहीं था. जिन मुसलमानों से नफरत करना उन्हें पसंद है, वे तब से इस जमीन का हिस्सा हैं, जब आठवीं सदी में 17 बरस के मुहम्मद बिन कासिम ने सिंध पर कब्जा किया और इस्लाम के विस्तार की राह खोल दी. ऐसा तलवार के दम पर नहीं हुआ, जैसा कि वे (संघ परिवार) यकीन करते हैं, बल्कि इसकी वजह यह थी कि उनके (संघ परिवार के) सनातन धर्म से सताई हुई निचली जातियों पर इस्लाम के बराबरी के पैगाम का असर हुआ था. बेहद समृद्ध इस विशाल उपमहाद्वीप में गुलामी का एक इतिहास रहा है, जिसके पीछे उनमें (संघ परिवार में) पाई जानेवाली श्रेष्ठतावादी सनक है और जिसका नतीजा आखिरकार भयानक तबाही वाले बंटवारे के रूप में सामने आया. इसके बाद भी, भारत में मुसलमानों की आबादी भारत को दुनिया की सबसे बड़ी मुस्लिम आबादी वाले देशों में से एक बनाती है. संघ परिवार जिस भारतीय संस्कृति पर बेकार ही गर्व करता है, उसमें मुसलमानों का योगदान उनकी आबादी के लिहाज से कहीं ज्यादा व्यापक है. असल में भारत की ज्यादातर पुरातात्विक धरोहर मुसलमानों की ही बदौलत है. जिस 'मेहराब' के बारे में प्राचीन या यहां तक कि मध्यकालीन भारत तक में कुछ पता नहीं था, वह उन्हीं की देन है, जिसने इन धरोहरों को इस लायक बनाया कि भारत अब भी उन पर गर्व करता है. कला और संगीत में उनका योगदान भी कहीं ज्यादा है. फिर भारत को आधुनिकता और बुनियादी ढांचा उपनिवेशवादियों ने मुहैया कराया, हालांकि ऐसा करने के पीछे उनके अपने हित काम कर रहे थे. लेकिन उनकी जगह लेने वाले देशी हुक्मरान इसकी आखिरी बूंद तक निचोड़ लेने को बेताब हैं.


अच्छा होगा, अगर संघ परिवार यह समझ ले कि उनका 'हिंदू' का धंधा कभी कारगर साबित नहीं होने वाला है. वे जितना इस प्रभुत्ववादी मंसूबे को आगे बढ़ाएंगे, उतना ही वे लोगों को अपने से दूर करते जाएंगे. यह बेहतर होगा कि वे बाबसाहेब आंबेडकर की इस सलाह को सुनें, जिनको वे 'प्रात:स्मरणीय' मानते हैं:

'हिंदुओं में उस चेतना की निहायत ही कमी है, जिसे समाजशास्त्री 'कॉन्शसनेस ऑफ काइंड' (समग्र वर्ग की चेतना) कहते हैं. हिंदू वर्ग चेतना जैसी कोई चीज नहीं होती. हरेक हिंदू में जो चेतना पाई जाती है, वह उसकी अपनी जाति की चेतना होती है. यही वजह है कि हिंदूओं से एक समाज या राष्ट्र बनने को नहीं कहा जा सकता.'

भारत का विचार इसकी जनता की बहुलता और विविधता का विचार है. सिर्फ इन्हीं शर्तों पर यह बहु-राष्ट्रीय देश वजूद में बना रह सकता है.

JUMP CUT Who Is Going To Be Clean? We are still not ready to accept that cleanliness and sanitation are caste-based. BHASHA SINGH


JUMP CUT
Who Is Going To Be Clean?
We are still not ready to accept that cleanliness and sanitation are caste-based.

Some straight questions. What are we going to clean, who is going to clean and what is our concept of clean­liness? Will this campaign address the most important, most basic and most neglected question of modernisation of our sanitation system? Whose India are we aiming at cleaning up? In India, cleanliness can't be just about Bollywood actor Aamir Khan preaching that we do not throw banana peels by the street or piss on walls nor about PMs, CMs, all manner of ministers and bureaucrats and politicians picking up brooms to clean streets and public toilets and public places that have already been thoroughly cleaned up for them to perform their sham.
Lest we forget, India is divided into different classes and castes and communities. What is our target group? This campaign is not the first and won't be the last. From Gandhi's 'Clean India' to Modi's 'Swachh Bha­rat', the country has seen many a gimmick, but that has not prevented India from being the global capital of open defecation. And we never felt ashamed of it. Why?

 
 
If India is unclean, it is because we will not let our cleaners live with dignity, equality.
 
 
We are still not ready to accept that cleanliness and sanitation are caste-based. Because of our casteist mindsets, we are not willing to break this shackle. None of our earlier campaigns addressed the issue of cleaners. What an irony! India is not clean because we don't want cleaners to live with dignity and equality. We want the 'cleaners' to experience 'the spiritual experience' of cleaning shit!

Even in the melodrama we are witnessing now, the focus is not on the localities which are full of garbage, with drains overflowing, septic tanks and sewers choked. This is because these places are home to the poor and the marginalised. These are the dwellings without toilets. The inhabitants may differ in caste and religion but their distinct class is both an identifier and equaliser. These places are devoid of basic infrastructure. Among those who live here are sanitation workers, whose working hours are spent in removing the garbage from the streets and dumps and landfills. Does this campaign address their well-being? No. Sanitation has been linked to caste and class.
The need is to radically change that mindset. The present system is not ready to do that. As in Nirmal Bharat, the focus is on toilet construction and preaching cleanliness. This can give some people some spiritual solace of washing their guilt and enhance the business of building toilets. But the ground reality will remain. Whatever pomp and show accompanies prime minister Modi's campaign for a clean India, 'Swachh Bharat' appears headed towards the fate of all earlier attempts.

The writer, a chief of bureau at Outlook Hindi, is author of Unseen: The Truth About India's Manual Scavengers. E-mail your columnist: bhasha [AT] outlookindia [DOT] om
COVER STORY: CLEAN INDIA
Cleaning India can't be a superficial thing. Can Modi choke off our industry of filth?
UTTAM SENGUPTA, R.K. MISRA, MINU ITTYIPE
COVER STORY: CLEAN INDIA
'Swachh Bharat' is an extension of 'Nirmal Gujarat', but its cities are no stranger to filth
R.K. MISRA
COVER STORY: CLEAN INDIA
Modi can try, but Benares just doesn't care
AMRITA DASGUPTA
COVER STORY: CLEAN INDIA
Volunteers clear garbage from a colony streetside
OPINION
Build toilets. But more important, get communities to change ways.
SANTOSH MEHROTRA