Thursday, November 27, 2014

লতিফ কে গ্রেফতারে বিলম্ব হলো কেন?এ প্রশ্ন জন্ম দিয়েছে আরো অনেক জোরালো, জটিল এবং জোরদার প্রশ্নের।

মুরতাদ লতিফ কাজ্জাবীর গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে জনরোষ সাময়িক লাঘব হলেও অনেক জোরালো প্রশ্নের অবসান হবে না। আর এসব প্রশ্নগুলো শুধু প্রাসঙ্গিকই নয়; পাশাপাশি দেশের নিরাপত্তা, প্রধানমন্ত্রীর স্বচ্ছতা, মন্ত্রীদের যোগ্যতা, তথা সরকারের নীতি নির্ধারকদের সচেতনতা, সক্রিয়তা ও সমন্বয়হীনতার প্রকট অভাব প্রতিভাত করেছে।
প্রসঙ্গতঃ প্রথম যে প্রশ্নটি জনমনে ব্যাপক আলোড়ন তুলেছে, তা হলো: ঢাকাসহ দেশের ১৮টি জেলার ২২টি আদালতে মুরতাদ লতিফের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা থাকা সত্ত্বেও বিমানবন্দরে পুলিশ গোয়েন্দাদের সাথে মোলাকাত হবার পরও তখন মুরতাদ লতিফকে কেন সাথে সাথে গ্রেফতার করা হলো না? এ প্রশ্ন সরকারের ক্ষমতার অংশীদারও জোরালোভাবে করছে।
গত পরশু সংসদে সংসদ সদস্য হাজি মুহম্মদ সেলিম বলেন, 'বিমানবন্দরে আমার জানা মতে সাত-আটটি বিভাগ কাজ করে। তারা কী করলো? আর বিমানে ওখান থেকে আসার আগেই এখানে ফ্যাক্সে একটি তালিকা চলে আসে। আর, সে তো ছদ্মনাম নিয়ে আসে নাই?' হাজি সেলিম আরো বলেন, 'জনগণ বলছে সরকারের গ্রিন সিগন্যাল আছে। 
হাজি সেলিমের বক্তব্যের পর জাতীয় পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু বলেন, যেখানে বহিষ্কৃৃত মন্ত্রী লতিফ কাজ্জাবীর নামে ওয়ারেন্ট আছে, তাহলে কীভাবে সে প্রবেশ করেছে? 
একই অধিবেশনে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ বলেন, লতিফ কাজ্জাবীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকা সত্ত্বেও কি করে পুলিশের সামনে দিয়ে বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে গেল তা বোধগম্য নয়। সে কী আইনেরও উর্ধ্বে? আমরা সরকারের এই ভূমিকার তীব্র প্রতিবাদ জানাই।
উল্লেখ্য, দৈনিক আল ইহসান শরীফ উনার অনুসন্ধানে জানা গেছে, মুরতাদ লতিফ কাজ্জাবীর দেশে ফেরার বিষয়ে আগাম বার্তা ছিল পুলিশ সদর দফতর ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে গত ৫ নভেম্বর পুলিশ সদর দফতরে পাঠানো নিদের্শনাপত্রের সঙ্গে গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে স্পষ্ট করে বলা ছিল, যে কোনো সময় মুরতাদ লতিফ কাজ্জাবী দেশে ফিরতে পারে।
এক্ষেত্রে জোরালো প্রশ্ন হচ্ছে এবং জোরদার প্রশ্ন হচ্ছে- এ গোয়েন্দা প্রতিবেদনের পর স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বিবৃত, "কীভাবে লতিফ বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে গেল, তা খতিয়ে দেখা হবে" অথবা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিবৃত, "লতিফ কাজ্জাবীর দায় নেবে না শাসক দল বা সরকার" ইত্যকার বক্তব্য কিভাবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে?
উল্লেখ্য, গত ১১ অক্টোবর (২০১৪) আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, "আমাদের একজন মন্ত্রী (লতিফ কাজ্জাবী), এখনতো উনি প্রাক্তন মন্ত্রী; যেভাবে ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করেছে, এ ধরনের কটূক্তি মেনে নেয়া সম্ভব নয়। সে যেটা বলেছে সেটা গর্হিত অপরাধ।" শেখ হাসিনা বলেন, "সে যখন এ ধরনের মন্তব্য করেছে তখন আমি দেশের বাইরে ছিলাম। আমার নির্দেশে ফাইল (অপসারণের) তৈরি করা ছিল। প্রশ্ন হলো, তখন যদি বিদেশে অবস্থান করেও প্রধানমন্ত্রী আগে থেকে নির্দেশ দিতে পারেন তবে এবার দেশে থেকে এখন পর্যন্ত মুরতাদ কাজ্জাবের বিরুদ্ধে কোনো নির্দেশ দিচ্ছেন না কেন? 
গত পরশু হাছান মাহমুদ বলেন, 'কেউ পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার বিরুদ্ধে কথা বললে তার বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে কুণ্ঠাবোধ করেন না শেখ হাসিনা।' যদি তাই হয়ে থাকে, তবে লতিফ কাজ্জাবীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে এতো দেরি হলো কেন?
এদিকে গত পরশু বহিষ্কৃত মন্ত্রী মুরতাদ লতিফ কাজ্জাবীকে গ্রেফতার করতে স্পিকারের অনুমতি লাগবে বলে জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। অপরদিকে লতিফ কাজ্জাবীকে গ্রেফতার করতে স্পিকারের অনুমতির প্রয়োজন নেই বলে জানিয়েছেন স্বয়ং স্পিকার। তিনি বলেন, কার্যপ্রণালী বিধি অনুযায়ী শুধুমাত্র সংসদ লবি, গ্যালারি ও চেম্বার থেকে কোনো সংসদ সদস্যকে গ্রেফতার করার ক্ষেত্রে স্পিকারের অনুমতির প্রয়োজন হয়। এছাড়া কোনো অনুমতি লাগে না। 
স্পীকার আরো বলেন, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী যেটা বলেছে তা ভুল। এ সময় তিনি বলেন, নবম জাতীয় সংসদে স্পিকার থাকাকালীন সময়েও সিটিং এমপিকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। আমাকে অবহিত করার পর আমি সেটা সংসদে পাঠ করে শুনিয়েছি। 
প্রশ্ন হলো, যে দেশে খোদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আইন সম্পর্কে ভুল বলেন ও অজ্ঞ থাকেন সে দেশের নিরাপত্তা কতটুকু সুসংহত? অপরদিকে মুরতাদ লতিফ সে তার বক্তব্য থেকে ফিরে আসবে না এবং অতিসত্বরই সে দেশে ফিরে আসবে- এ ধরনেরই ঘোষণা সে দম্ভভরেই দিয়ে আসছিলো। সুতরাং সে দেশে আসলে কি ধরনের আইনি সঙ্কট হতে পারে? এবং কিভাবে তা সমাধান করা যেতে পারে এ ধরনের সিদ্ধান্ত সরকারের নীতি-নির্ধারক মহল আগের থেকেই নিয়ে রাখলো না কেন? এতে কি প্রতিভাত হয় না যে, তাদের সদিচ্ছার অভাব রয়েছে? অথবা মুরতাদ লতিফের বিরুদ্ধে সরকারের অবস্থান কেবলই লোক দেখানো। মুরতাদ লতিফের অতি দ্রুত বিচার করেই সরকারকে প্রমাণ করতে হবে যে, তারা স্বচ্ছ।
পর্যবেক্ষক মহল মন্তব্য করেছেন, গত কয়েক দিনের আওয়ামী লীগ কিংবা ছাত্রলীগের ও যুবলীগের আত্মঘাতী ও সন্ত্রাসী কর্মকা- থেকে সাধারণ জনগণের দৃষ্টি ভিন্ন দিকে প্রভাবিত করার জন্য লতিফ কাজ্জাবীকে নতুন ইস্যু হিসেবে কাজে লাগানো হচ্ছে। কারণ মুরতাদ লতিফ দেশে এলে বিরোধী দলগুলো বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করবে। গণমাধ্যমে বেশ স্থান পাবে মুরতাদ লতিফ কাজ্জাবীকে ঘিরে বিভিন্ন কর্মকা-। ফলে আড়ালে পড়ে যাবে ছাত্রলীগ, যুবলীগের বর্তমান সমালোচিত কুকীর্তি ও জঘন্য কর্ম-কাহিনী এবং এর সাথে চাপা পড়বে আগামী দিনের সরকারবিরোধী কর্মকা- কিংবা রাজনৈতিক কর্মসূচি।
এদিকে অভিজ্ঞমহল আরো মনে করেন, হঠাৎ করে লতিফ কাজ্জাবীর মুরতাদী বক্তব্য প্রদানও আরেক জটিল প্রশ্ন? ঈদ পরবর্তী সময়ে যখন বিরোধী দলের চূড়ান্ত আন্দোলনের সূচনা মুহূর্ত তখন বিরোধী দলে অভিযোগের মুখে ছাই দিয়ে আওয়ামী লীগকে পবিত্র ইসলামবান্ধব প্রচার করাই ছিল লতিফ কাজ্জাবীর ঘটনা প্রবাহ। সত্যিই কী তাই? যদি তাই হয়ে থাকে, তবে তা কত বড় প্রবঞ্চনা ও প্রতারণা? তথাকথিত গণতন্ত্রী রাজনীতিকরা পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনাকে নিয়েও আর কতকাল রাজনীতি করবে? গাফিল ও নিষ্ক্রিয় জনগণ আর কতকাল তাদের সুযোগ দিবে? এখনো কি সময় হয়নি নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হওয়ার? মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, "তোমরা যালিমও হয়ো না এবং মজলুমও হয়ো না।" এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার আমল ছাড়া একজন ব্যক্তি কী করে মুসলমান দাবি করতে পারে? অথবা থাকতে পারে?

মন্সুর হায়দার

Monsur Haider <haidermonsur@gmail.com>

No comments:

Post a Comment