মুনাফা অর্জনের জন্য লালায়িত মানসিকতা, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর শিথিলতা খাদ্যে ভেজাল মেশানো একটা স্বাভাবিক রীতিতে পরিণত হয়েছে
|
যখন তখন যে কোনো কারখানায় ভেজালবিরোধী অভিযান চালানো হবে। ছোট-বড় মাঝারি কোনো কারখানা বাদ যাবে না। এমনকি রাস্তার পাশের সরবত বিক্রেতার বিরুদ্ধেও অভিযান চালানো হবে বলে গত ১৮ জুন-২০১৫ ঈসায়ী, ইয়াওমুল খামীস (বৃহস্পতিবার) সাবধান করেছে শিল্পমন্ত্রী।
শিল্পমন্ত্রী বলেন, অসৎ ব্যবসায়ী-বিক্রেতাদের ভেজাল, নিম্নমানের খাদ্যপণ্য ও পানীয় প্রস্তুত এবং বিপণন হতে বিরত রাখার জন্য বিএসটিআই ও ঢাকা জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ঢাকা মহানগরীতে প্রতিদিন ৪টি করে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে। সিডিউল অনুযায়ী পুরো পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাস জুড়ে মোবাইল কোর্ট চলবে।
কিন্তু বাস্তবে মোবাইল কোর্টের তৎপরতা সত্ত্বেও ভেজালকারীদের লাগাম টানা সম্ভব হচ্ছে না। উপকরণের মধ্যে রয়েছে ছোলা, পিয়াজু, বেগুনি, মুড়ি ও জিলাপি। এ উপকরণগুলোর প্রতিটিই ভেজালের শিকার। মুড়ি আকারে বড় ও সাদা করতে ব্যবহার করা হচ্ছে বিষাক্ত রাসায়নিক সোডিয়াম হাইড্রো সালফাইড। বাজারে বিষমুক্ত মুড়ি পাওয়া এখন সত্যিকার অর্থেই দায়। আম, আপেল, কলা ইত্যাদি ফল রাসায়নিক দিয়ে এসব ফল সংরক্ষণ ও পাকানোর বিষয়টি ওপেন সিক্রেট। প্রশাসনের কড়া নজরদারিতে রাসায়নিকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হলেও অন্যান্য ক্ষেত্রে অবস্থা তথৈবচ।
মিষ্টান্ন তৈরিতে ব্যবহৃত হচ্ছে সোডিয়াম সাইফ্লাসেট নামের ভেজাল চিনি। মিষ্টি ও ইফতারি পণ্য রঙিন করতে ঢালাওভাবে ব্যবহার করা হয় টেক্সটাইল রং। জিলাপি মচমচে রাখার জন্য তেলের সঙ্গে মেশানো হয় মবিল। অসৎ ব্যবসায়ীদের কোনো নীতিবোধ থাকার কথা নয়। ধর্মীয় মূল্যবোধ তাদের কোনোভাবেই উদ্বুদ্ধ করে না।
ফরমালিনের বিরুদ্ধে সরকার রীতিমতো যুদ্ধও ঘোষণা করেছে। কিন্তু খাদ্যদ্রব্যে অন্যান্য রাসায়নিক ব্যবহারের বিরুদ্ধে কার্যত কোনো পদক্ষেপ নেই।
প্রসঙ্গত আমাদের সংবিধানে অনুচ্ছেদ নং ১৫ এবং ১৮-এ বলা আছে সরকার জনগণের খাদ্য নিশ্চিত করবে এবং পুষ্টিকর খাদ্য উৎপাদন বা সরবরাহ-ই হবে সরকারের অন্যতম কাজ। কিন্তু সরকার আজ সেখানে ব্যর্থ। অবাধ প্রতিযোগিতা, মুনাফা অর্জনের জন্য লালায়িত মানসিকতা, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর শিথিলতা ইত্যাদি কারণে বর্তমানে খাদ্যে ভেজাল মেশানো একটা স্বাভাবিক রীতিতে পরিণত হয়েছে।
১৮৬০ সাল থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত ২০টির অধিক ভেজালবিরোধী আইন হয়েছে। তন্মধ্যে জাতীয় খাদ্য নীতি ২০১০-এ নিরাপদ খাদ্য আইনগুলো আধুনিক করতে এবং ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন একত্র করতে বলা হয়েছে। জাতীয় খাদ্য ও পুষ্টিনীতি ১৯৯৭-এ খাদ্য মান মনিটরিং করতে বলা হয়েছে। বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য নীতি-২০০৫ এ বিষাক্ত অথবা ক্ষতিকারক রাসায়নিক যুক্ত খাবার বিক্রি অথবা উৎপাদন বন্ধের জন্য বলা হয়েছে। আমদানি-রপ্তানি নীতি ২০০৬-এ সার্টিফিকেট এবং বিভিন্ন পরীক্ষার কথা বলা হয়েছে। সম্প্রতি ১৯৫৯ সালের "চঁৎবঋড়ড়ফ ঙৎফরহধহপব"কে পরির্বতন ও পরিবর্ধন করে যুগোপযোগী নতুন আইন "নিরাপদ খাদ্য আইন-২০১৩" সংসদে পাস হয়েছে। এই আইনে সর্বোচ্চ ৫ বছরের জেল ও ১০ লক্ষ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে।\
এতগুলো আইন থাকা সত্ত্বেও এর অধিকাংশই বাস্তবায়ন হচ্ছে না। যেমন: হোটেলগুলোতে মৃত মুরগি খাওয়াচ্ছে। আজো ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন একত্র করা হয়নি। ফরমালিন এবং ডিডিটি খাবারে সচরাচর পাওয়া যাচ্ছে। সম্প্রতি প্রাণ কোম্পানির মরিচের গুঁড়ায় বিদেশে রপ্তানি হওয়ার পরও ভেজাল পাওয়া গেছে। যেটা বাংলাদেশে খুব সহজেই পার পেয়ে গেছে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, আইন কিন্তু একটা জড় পদার্থ। আইনের সুফল হবে, নাকি কুফল হবে- তা নির্ভর করে যিনি আইন প্রয়োগ করবেন তার উপর। তিনি যদি দক্ষ এবং স্বচ্ছ না হন, তাহলে মানুষ এর দ্বারা কুফলও পেতে পারে। সুতরাং যাদেরকে এরকম মর্মস্পর্শী অভিযানের দায়িত্ব দেয়া হবে তাদের স্বচ্ছ এবং দক্ষ হওয়া দরকার। এবং তাদের পূর্ব অভিজ্ঞতা, আচরণ এবং কাজের মান দেখে মনোনীত করা উচিত।
দেশে ওষুধে ভেজাল পরীক্ষা করার জন্য যে ড্রাগ-ল্যাবরেটরি তৈরি করা হয়েছে সেখানেই সব রাসায়নিক মিশ্রণ পরীক্ষা করা সম্ভব। সরকারের নতুন করে কোনো অর্থ ব্যয় করতে হবে না। শুধু এর সঙ্গে খাদ্যকে একত্র করে সিদ্ধান্ত নিলেই এটা সম্ভব। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে "ঋড়ড়ফ ধহফ উৎঁম অফসরহরংঃৎধঃরড়হ" একত্রে কাজ করে। আমাদের দেশে শুধু আলাদা।
আইনের বিষয়ে অজ্ঞ থাকলে সেটা কোনো অজুহাত হতে পারে না। ভোক্তাকেও তার অধিকার জানতে হবে।
প্রসঙ্গত আমরা মনে করি যে, শুধু আইনের বল প্রয়োগেই এ ভেজাল প্রবণতা রোধ করা যাবে না। কারণ মানুষের তৈরি আইনের গোলকধাঁধায় মানুষ সহজেই পার পেয়ে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে অত্যাবশ্যকীয় হলো- মানুষের সৃষ্টিকর্তা খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি অনুগত হওয়া ও উনার ভয় লালন করা এবং এ সম্পর্কিত মূল্যবোধ ও চেতনা জাগ্রত করা।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, "সবচেয়ে গরিব কে? অতঃপর তিনি বলেন, সবচেয়ে গরিব ওই ব্যক্তি- যে ক্বিয়ামতের দিনে পাহাড় পরিমাণ নেকী নিয়ে উঠবে। মানুষ মনে করবে সে নিশ্চিত জান্নাতী। কিন্তু এরপর তার একের পর এক পাওনাদাররা আসবে। যাদের হক্ব সে নষ্ট করেছে। তখন তার নেকি দ্বারা তাদের সে হক্ব আদায় করা হবে। এরপরও বাকি থেকে যাবে। তখন পাওনাদারদের গুনাহ তার উপর চাপিয়ে দেয়া হবে। কিছুক্ষণ পূর্বে যে ব্যক্তি ছিল নিশ্চিত জান্নাতী এখন সে ব্যক্তি হয়ে পড়বে নিশ্চিত জাহান্নামী।" পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে এ ব্যক্তিকেই সবচেয়ে গরিব বলা হয়েছে।
মূলত, আজকের যুগে মানুষ যেভাবে অসততায় আর দুর্নীতিতে লিপ্ত হয়েছে, তা দেখেই ভেজালকারী ও দুর্নীতিবাজরা আরো সাহসী ও সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তার পরিণতিতেই সারা দেশব্যাপী এত ভেজাল আর দুর্নীতি ছড়িয়ে পড়েছে
Pl see my blogs;
Feel free -- and I request you -- to forward this newsletter to your lists and friends!
No comments:
Post a Comment