Tuesday, August 18, 2015

আওয়ামী লীগে খুনোখুনি

আওয়ামী লীগে খুনোখুনি


জাতীয় শোক দিবসের দিন শনিবার দুপুরে চাঁপাইনবাবগঞ্জে শিবগঞ্জ পৌর এলাকার মর্দনা গ্রামে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে রবিউল ইসলাম (৩০) নামে এক আওয়ামী লীগ কর্মী নিহত হন। প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে কুপিয়ে আহত করে। আহতাবস্থায় তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেদিনই বিকাল ৫টার দিকে তার মৃত্যু হয়। রবিউল মর্দনা চকপাড়া গ্রামের নুরুল ইসলামের (নজু মুন্নার) ছেলে।    
একই দিন কুষ্টিয়ায় শোক দিবসের র‌্যালি শেষে জেলা আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে যুবলীগ কর্মী সবুজ হোসেন নিহত হন। বেলা সোয়া ১২টার দিকে শহরের মজমপুর রেলগেট এলাকায় শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোমিনুর রহমান মোমিনের কর্মী-সমর্থক ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেনের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। ওই সময় ছুরিকাঘাতে সবুজ (২৫), বিদ্যুৎ (৩৮) ও আজমল হোসেন (২৮) আহত হয়েছিলেন। তিনজনকে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে সবুজের মৃত্যু হয়। শোক দিবসের অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিতে বুধবার রাতে রাজধানীর বাড্ডায় আয়োজিত প্রস্তুতি বৈঠকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে আওয়ামী লীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের দুই নেতাসহ তিনজনকে। পশুর হাটের ইজারা, নতুন নেতৃত্ব ও গার্মেন্টের ঝুট ব্যবসা নিয়ে প্রতিপক্ষ গ্রুপের হাতে এই ট্রিপল মার্ডারের ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন ৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শামসুদ্দিন মোল্লা, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মাহবুবুর রহমান গামা ও ফিরোজ আহমেদ ওরফে মানিক। গুলিবিদ্ধ আরেকজন আবদুস সালাম স্থানীয় যুবলীগ নেতা। বুধবার সিলেটের মদন মোহন কলেজেও নিজ সংগঠনের ক্যাডারের ছুরিকাঘাতে আবদুল আলী (১৯) নামে এক ছাত্রলীগ কর্মী খুন হয়েছেন। এর আগে সোমবার রাজধানীতে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সৈনিক লীগের এক নেতাকে হত্যা করা হয়। সবমিলিয়ে গত দুই মাসে সারা দেশে আওয়ামী লীগের কমপক্ষে ২৫ জন নেতা-কর্মী খুন হন নিজ দলের নেতা-কর্মীদের হাতেই। এ ছাড়া বিভিন্ন স্থানে নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা অহরহ ঘটছে। ঝরছে রক্ত। কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না অভ্যন্তরীণ কোন্দল। স্থানীয় ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ, ক্ষমতার দ্বন্দ্ব, টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ, পদে যেতে প্রতিপক্ষকে সরিয়ে দেওয়াসহ নানা কারণে আওয়ামী লীগ-আওয়ামী লীগ, যুবলীগ-যুবলীগ, ছাত্রলীগ-ছাত্রলীগে এসব হত্যাকাণ্ড ঘটছে। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের ওপর যেন নিয়ন্ত্রণও হারিয়ে ফেলেছে দলটি। 'দলের চেইন অব কমান্ড' ভেঙে পড়ার দশা। সারা দেশেই সৃষ্ট অভ্যন্তরীণ কোন্দলে প্রায়ই বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে পড়তে হচ্ছে সরকারকে। জানা গেছে, দেশব্যাপী আওয়ামী লীগে সৃষ্ট কোন্দলের মূলে রয়েছে পদ আর ক্ষমতার মোহ। পদ না থাকলে ক্ষমতার দাপট থাকে না। ব্যবসা-বাণিজ্য, তদবির, বদলি, দখল, চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজিও করা যায় না। জেলা, মহানগর, উপজেলা এমনকি ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলো নিজেদের ক্ষমতার একক সাম্রাজ্য গড়ে তোলার লড়াইয়ে উঠেপড়ে লেগেছে। তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের ভাষ্যমতে, অভ্যন্তরীণ কোন্দল সৃষ্টিকারী প্রভাবশালী নেতাদের শক্ত হাতে দমন করতে না পারলে সরকারের সব উন্নয়ন কর্মকাণ্ডই প্রশ্নের মুখে পড়বে।সূত্রমতে, মিরপুরে অবস্থিত বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) বিভিন্ন কাজের দালালি নিয়ে দুই গ্রুপের মধ্যে বিরোধ চলছিল। এরই জের ধরে গত ১০ আগস্ট রাতে রাজধানীর কাজিপাড়ায় নিজেদের কোন্দলে খুন হন কাফরুল থানা সৈনিক লীগের সাধারণ সম্পাদক রুবেল। ৭ আগস্ট নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার দেওটি ইউনিয়ন যুবলীগের দফতর সম্পাদক মিলন সরকারকে (২৮) কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। দেওটি ইউনিয়নের মুহুরীগঞ্জ বাজারের কাছে এ ঘটনা ঘটে। নিহত মিলন স্থানীয় সারেংবাড়ির নাদেরুজ্জামানের ছেলে। একই দিন বরিশালের আগৈলঝাড়ায় রাসেল ব্যাপারী (২৩) নামে ছাত্রলীগের এক কর্মীকে কুপিয়ে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষের লোকজন। এ ঘটনায় রিন্টু (২২) নামে আরও এক ছাত্রলীগ কর্মী গুরুতর আহত হয়েছেন। আগৈলঝাড়া উপজেলার ট্যামার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পরে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রাসেল ব্যাপারীর মৃত্যু হয়। ১ আগস্ট সন্দ্বীপের মগধরা ইউনিয়নের নামারবাজার এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে যুবলীগের এক কর্মীকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। 
৫ জুন ঝালকাঠি সদর উপজেলায় তৌহিদুল ইসলাম সিকদার নামে এক যুবলীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। স্থানীয় গগন বাজার-সংলগ্ন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত তৌহিদুল ঝালকাঠির সঞ্জয়পুর গ্রামের আবদুল হাই সিকদারের ছেলে। তিনি বিনয়কাঠি ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। ১৭ জুন লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার বশিকপুর ইউনিয়নের বালাইশপুর গ্রামে মফিজ উল্লাহ (৫৫) নামে এক মুক্তিযোদ্ধা আওয়ামী লীগ নেতাকে গলা কেটে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। নিহত মফিজ উল্লাহ বশিকপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। এ ঘটনার জন্য লাদেন মাছুম বাহিনীকে দায়ী করেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা।      
১৯ জুন ফেনীতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে মোহাম্মদ মানিক (৩০) নামে যুবলীগের এক নেতা নিহত হন। মোহাম্মদ মানিক ফেনী সদর উপজেলার বালিগাঁও ইউনিয়ন যুবলীগের সহসভাপতি। তার বাড়ি ইউনিয়নের কুরুচিয়া গ্রামে। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে কিছু দিন আগে বালিগাঁও ইউনিয়ন যুবলীগের কয়েকজন নেতা-কর্মীর মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। এর জেরে ইউনিয়নের ধোন সাহাদ্দা গ্রামের কয়েকজন যুবলীগ কর্মী বালিগাঁও ইউপি সদস্য ও ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন ওরফে উজ্জ্বল মেম্বারকে মারধর করেন। এ ঘটনার পর মোয়াজ্জেমের সমর্থকরা কুরুচিয়া গ্রামে গিয়ে মোহাম্মদ মানিককে গুলি করেন। স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে প্রথমে ফেনী সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। ২৮ জুন লালমনিরহাট সদর উপজেলা যুবলীগের সদস্য বুলেটকে (৩২) কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগর বাজারে এ ঘটনা ঘটে। নিহত বুলেট সদর উপজেলার এয়ারপোর্ট রোডের মহেন্দ্রনগর এলাকার অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক এনামুল হকের ছেলে। স্থানীয়রা জানান, শত্রুতার জেরে দুর্বৃত্তরা রাতে তাকে ফোন করে মহেন্দ্রনগর বাজারে ডেকে নিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে চলে যায়। পরে স্থানীয়রা মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে নিলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। 
৫ জুলাই কুমিল্লার মনোহরগঞ্জে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইয়াকুব আলী (৫৮) নামে এক আওয়ামী লীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা করে স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা। গাজীপুরের টঙ্গীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই আওয়ামী লীগ নেতার মৃত্যু হয়। ইয়াকুব আলী উপজেলার কেয়ারী গ্রাম আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। ১১ জুলাই রাজবাড়ী সদরের পাঁচুরিয়া ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুস ছাত্তারকে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। পুলিশের ধারণা, জমিজমা-সংক্রান্ত পূর্বশত্রুতার জেরে দুর্বৃত্তরা তাকে হত্যা করেছে। ২১ জুলাই রানীনগরে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে আমজাদ হোসেন (৩৫) নামে আওয়ামী লীগের এক নেতাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। উপজেলার বোঁহার গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহতের স্ত্রী ফাইমা বিবি বাদী হয়ে রানীনগর থানায় ৩৭ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করলে পুলিশ পাঁচ আসামিকে গ্রেফতার করেছে। ২৪ জুলাই পাবনার বেড়া উপজেলার আমিনপুরে এক যুবলীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষের লোকজন। নিহত দানেজ শেখ আমিনপুরের চরপাড়া মালঞ্চি গ্রামের কিয়ামুদ্দিন কেরু সেখের ছেলে এবং আমিনপুর থানা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। ৩১ জুলাই দামুড়হুদা উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক আবদুল হান্নান ছোটকে (৩৫) কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করেছে দুর্বৃত্তরা। তিনি উপজেলার দর্শনা পৌরসভার শ্যামপুর গ্রামের মরহুম তনু মল্লিকের ছেলে। সীমান্তবর্তী ঈশ্বরচন্দ্রপুর কানাপুকুর ব্রিজের অদূরে রাত ১টার দিকে এ ঘটনা।

__._,_.___

--
Pl see my blogs;


Feel free -- and I request you -- to forward this newsletter to your lists and friends!

No comments:

Post a Comment